স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা সর্বত্র

রাজধানীর অনেক শপিং সেন্টারসহ পরিবহন, দোকানপাটে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। এজন্য মার্কেট কর্তৃপক্ষ ক্রেতাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। আর ক্রেতারা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি কিংবা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা মার্কেট কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে। গতকাল সকাল থেকে নিউমার্কেট, ওয়ারী, মিরপুর ও উত্তরার বেশ কয়েকটি শপিংমল ঘুরে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে উদাসীনতা দেখা যায় শপিংমলগুলোতে। মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের কোন মনিটরিং ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। মিরপুরের বাগদাদ শপিং কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হাত ধোয়ার জন্য একটি পানির ট্যাংক রাখা আছে, সঙ্গে সাবানও রয়েছে। তবে এ বিষয়টি দেখভাল করার জন্য ছিলেন না কেউ। ফলে যে যার মতো মার্কেটে প্রবেশ করছেন। মার্কেটের সিকিউরিটি গার্ড আবদুল বাতেন বলেন, মার্কেট খোলার পর থেকেই হাত ধোয়ার জন্য এই ব্যবস্থা। লোকজনের হাত ধোয়ার কথা বললে উল্টো আমাকে বলে আপনি হাত ধোন।

মার্কেটে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা হাত ধোয়ার পানির ট্যাংক দেখতে পাননি। আগেই মার্কেটের ভেতরে ঢুকে পড়েছেন। মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, হাত ধোয়া কিংবা স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা নেই। পাওয়া যায়নি কোন সিকিউরিটি গার্ড। আর মার্কেটের ভেতরেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে মার্কেট কর্তৃপক্ষের কোন তৎপরতাও চোখে পড়েনি। এই মার্কেটের সিকিউরিটি গার্ড পান্না বলেন, গত শুক্রবার মার্কেট খুললেও স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য হাত ধোয়ার ব্যবস্থা কিংবা স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা মার্কেট থেকে করা হয়নি। যদি করা হতো তাহলে আমার নিজেরও উপকার হতো। মার্কেট কর্তৃপক্ষ এসব জিনিসের ব্যবস্থা না করায় তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মিরপুর রোডের নিউমার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে, মার্কেটের প্রবেশমুখে নেই কোন জীবাণুনাশক যন্ত্র কিংবা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। মার্কেটের সিকিউরিটি ইনচার্জ মহিবুল আলাম বলেন, শুক্রবার মার্কেট খোলার পর থেকে হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার কিংবা জীবাণুনাশক কোন যন্ত্র এখানে নেই। তবে বিভিন্ন শোরুমগুলো স্বাস্থ্যবিধি মানছে। মার্কেট কর্তৃপক্ষ থেকে আমাদের কিছু দেয়া হয়নি। নেই শরীরের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র কিংবা স্যানিটাইজার। মিরপুর শপিং সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে, এখানে রয়েছে জীবাণুনাশক যন্ত্র। এছাড়া রয়েছে স্যাভলন মিশ্রিত হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। যারাই ঢুকছেন তাদের হাতে ছিটিয়ে দেয়া হচ্ছে এই পানি। তবে এটা কতটুকু কার্যকরী কিংবা পরবর্তীতে কোন সমস্যা হবে কিনা, সে বিষয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন মার্কেটে আসা অনেকেই।

উত্তরা রাজলক্ষ্মী শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, মার্কেটে ঢুকতে নেই কোন জীবাণুনাশক প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা, স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। পাওয়া যায়নি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কাউকে। মাস্ক ছাড়া নোএন্ট্রি’বিষয়ক স্টিকার গেটের সামনে লাগানো থাকলেও এ যেন দেখার কেউ নেই। এখানে শুধু কাগজেই স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়েছে। কার্যত দৃশ্যমান কিছু দেখা যায়নি। বিক্রেতারা বলছেন, মার্কেটে ঢোকার সময় স্বাস্থ্যবিধি মানার যেসব বিষয় রয়েছে, যেমন স্যানিটাইজার কিংবা জীবাণুনাশক যন্ত্র, তা চোখে পড়েনি।

এদিকে গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিউমার্কেটসহ পাশাপাশি গাউছিয়া, চাদনী চক, নূরজাহান মার্কেটে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। আগের মতোই গাদাগাদি করে কিনতে হচ্ছে প্রয়োজনীয় পণ্য, তবে এই ভিড়েও ক্রেতারা মানছে না কোন স্বাস্থ্যবিধি। এদের দেখে বোঝার উপায় নেই, গোটাদেশই এখন মহামারীর হুমকিতে রয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও মার্কেট খুলে দেয়ার কারণ ব্যবসা। তবে খুলে দেয়ার আগে যথাযত স্বাস্থবিধি মানতে তাদের শর্ত দেয়া হয়েছিল। বিক্রয়কর্মীরা স্বাস্থ্যবিধি মানলেও মূলত এটি মানছেন না ক্রেতারা। নিউমার্কেটের এক দোকানকর্মী রায়সুল বলেন, আমাদের এখানে ধানমন্ডি থেকেই বেশি মানুষ কেনাকাটা করতে আসেন। এরা শিক্ষিত এবং পয়সাওয়ালা। এরা স্বাস্থবিধি না মানলে আমরা কি বলতে পারি? বললেও এরা শুনতে চায় না। জামাল নামের আরেক দোকানি বলেন, বেশিরভাগ লোকজনই থুতনিতে মাস্ক রেখে কথা বলে। দোকানে ঢুকে হাঁচি দেয়। না করি। সচেতন করার চেষ্টা করি। ওরা শিক্ষিত মানুষ, আমরা সেটা না। এজন্য হয়তো আমাদের কথা শুনে না। তবে অনেকে আবার দারুণ সচেতন। এদের আলাদাভাবে কিছু বলতে হয় না। এরা বরং উল্টো আমাদের সচেতন থাকতে বলে। নিউমার্কেটে গতকাল সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে তৈজসপত্রের দোকানগুলোতে। এরপর ভিড় ছিল কাপড় আর কাঁচাবাজারে। ভিড় ছিল ফুটপাতেও। তবে চশমা, ঘরি আর রঙতুলির দোকানে ক্রেতা ছিল কম। মডার্ন স্টেশনারিতে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় রঙতুলি আর ক্যানভাসের বিক্রি কম। ক্যাম্পাস খুলে দিলে এই আকাল কেটে যাবে। পাশের চশমার দোকান অপটিক ওয়ার্ল্ড বলছে, আমাদের বেশির ভাগ ক্রেতারা বয়স্ক মানুষ, এরা এই সময়ে বের হওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছে না তাই কাজ কম।

যাত্রাবাড়ী মার্কেটের পোশাক ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল বলেন, আমরা করোনার কারণে খুবই লোকসানের মধ্যে আছি। সরকার লকডাউনের মধ্যেও আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে। আমরা সরকারের আস্থার প্রতি সম্মান দেখাতে চাই। ক্রেতাদের অনেকে মাস্ক না পরলে তাদের মাস্ক পরতে অনুরোধ করছি। তবে অনেক ক্রেতাই এখনও সচেতন নন। তাদের সচেতন করার চেষ্টাও করছি আমরা। রাজধানী সুপার মার্কেটের পোশাক বিক্রেতা সুমন মিয়া বলেন, সামনে রোজা, আমাদের ব্যবসার প্রকৃত সময়। এমন সময়ে মার্কেট বন্ধ থাকলে সমস্যায় পড়ে যাব। এমনিতেই গত বছরের ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী গত শুক্রবার থেকে মার্কেট খুলেছি। আমরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বিক্রি করছি। ক্রেতারাও আমাদের সযোগিতা করছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, দেশে ৯০ ভাগ মানুষ এখন মাস্ক পরছেন, পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এত সংখ্যক মানুষ মাস্ক পরেন না। আর মাস্ক পরে দোকানে প্রবেশ করা ক্রেতার সংখ্যা শতভাগ। দোকানিরা এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে দোকানিরা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। এর আগে বিধিনিষেধের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত শুক্রবার সকাল ৯টায় শপিংমল-দোকানপাট খুলে দেয় সরকার। সরকারের নির্দেশনায় বলা হয়, প্রাথমিকভাবে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শপিংমল ও দোকানপাট খোলা রাখা যাবে। তবে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য আরও কঠোর লকডাউন দেয়া হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে গত বছরের মতোই বন্ধ করে দেয়া হতে পারে গোটা দেশ। এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেয়া হতে পারে।

রবিবার, ১১ এপ্রিল ২০২১ , ২৮ চৈত্র ১৪২৭ ২৭ শাবান ১৪৪২

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা সর্বত্র

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি, সাধারণ মানুষ ছুটছে নায্যমূল্যে পেঁয়াজ-তেল কিনতে। গতকাল রাজধানীতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় টিসিবির একটি ট্রাকের পেছনে, নেই কোন সংক্রমণের ভয়, মানছে না স্বাস্থ্যবিধি -সোহরাব আলম

রাজধানীর অনেক শপিং সেন্টারসহ পরিবহন, দোকানপাটে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। এজন্য মার্কেট কর্তৃপক্ষ ক্রেতাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। আর ক্রেতারা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি কিংবা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা মার্কেট কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে। গতকাল সকাল থেকে নিউমার্কেট, ওয়ারী, মিরপুর ও উত্তরার বেশ কয়েকটি শপিংমল ঘুরে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে উদাসীনতা দেখা যায় শপিংমলগুলোতে। মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের কোন মনিটরিং ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। মিরপুরের বাগদাদ শপিং কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হাত ধোয়ার জন্য একটি পানির ট্যাংক রাখা আছে, সঙ্গে সাবানও রয়েছে। তবে এ বিষয়টি দেখভাল করার জন্য ছিলেন না কেউ। ফলে যে যার মতো মার্কেটে প্রবেশ করছেন। মার্কেটের সিকিউরিটি গার্ড আবদুল বাতেন বলেন, মার্কেট খোলার পর থেকেই হাত ধোয়ার জন্য এই ব্যবস্থা। লোকজনের হাত ধোয়ার কথা বললে উল্টো আমাকে বলে আপনি হাত ধোন।

মার্কেটে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা হাত ধোয়ার পানির ট্যাংক দেখতে পাননি। আগেই মার্কেটের ভেতরে ঢুকে পড়েছেন। মিরপুরের মুক্তিযোদ্ধা সুপার মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, হাত ধোয়া কিংবা স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা নেই। পাওয়া যায়নি কোন সিকিউরিটি গার্ড। আর মার্কেটের ভেতরেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে মার্কেট কর্তৃপক্ষের কোন তৎপরতাও চোখে পড়েনি। এই মার্কেটের সিকিউরিটি গার্ড পান্না বলেন, গত শুক্রবার মার্কেট খুললেও স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য হাত ধোয়ার ব্যবস্থা কিংবা স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা মার্কেট থেকে করা হয়নি। যদি করা হতো তাহলে আমার নিজেরও উপকার হতো। মার্কেট কর্তৃপক্ষ এসব জিনিসের ব্যবস্থা না করায় তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মিরপুর রোডের নিউমার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে, মার্কেটের প্রবেশমুখে নেই কোন জীবাণুনাশক যন্ত্র কিংবা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। মার্কেটের সিকিউরিটি ইনচার্জ মহিবুল আলাম বলেন, শুক্রবার মার্কেট খোলার পর থেকে হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার কিংবা জীবাণুনাশক কোন যন্ত্র এখানে নেই। তবে বিভিন্ন শোরুমগুলো স্বাস্থ্যবিধি মানছে। মার্কেট কর্তৃপক্ষ থেকে আমাদের কিছু দেয়া হয়নি। নেই শরীরের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র কিংবা স্যানিটাইজার। মিরপুর শপিং সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে, এখানে রয়েছে জীবাণুনাশক যন্ত্র। এছাড়া রয়েছে স্যাভলন মিশ্রিত হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। যারাই ঢুকছেন তাদের হাতে ছিটিয়ে দেয়া হচ্ছে এই পানি। তবে এটা কতটুকু কার্যকরী কিংবা পরবর্তীতে কোন সমস্যা হবে কিনা, সে বিষয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছেন মার্কেটে আসা অনেকেই।

উত্তরা রাজলক্ষ্মী শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, মার্কেটে ঢুকতে নেই কোন জীবাণুনাশক প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা, স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। পাওয়া যায়নি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কাউকে। মাস্ক ছাড়া নোএন্ট্রি’বিষয়ক স্টিকার গেটের সামনে লাগানো থাকলেও এ যেন দেখার কেউ নেই। এখানে শুধু কাগজেই স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়েছে। কার্যত দৃশ্যমান কিছু দেখা যায়নি। বিক্রেতারা বলছেন, মার্কেটে ঢোকার সময় স্বাস্থ্যবিধি মানার যেসব বিষয় রয়েছে, যেমন স্যানিটাইজার কিংবা জীবাণুনাশক যন্ত্র, তা চোখে পড়েনি।

এদিকে গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিউমার্কেটসহ পাশাপাশি গাউছিয়া, চাদনী চক, নূরজাহান মার্কেটে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। আগের মতোই গাদাগাদি করে কিনতে হচ্ছে প্রয়োজনীয় পণ্য, তবে এই ভিড়েও ক্রেতারা মানছে না কোন স্বাস্থ্যবিধি। এদের দেখে বোঝার উপায় নেই, গোটাদেশই এখন মহামারীর হুমকিতে রয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও মার্কেট খুলে দেয়ার কারণ ব্যবসা। তবে খুলে দেয়ার আগে যথাযত স্বাস্থবিধি মানতে তাদের শর্ত দেয়া হয়েছিল। বিক্রয়কর্মীরা স্বাস্থ্যবিধি মানলেও মূলত এটি মানছেন না ক্রেতারা। নিউমার্কেটের এক দোকানকর্মী রায়সুল বলেন, আমাদের এখানে ধানমন্ডি থেকেই বেশি মানুষ কেনাকাটা করতে আসেন। এরা শিক্ষিত এবং পয়সাওয়ালা। এরা স্বাস্থবিধি না মানলে আমরা কি বলতে পারি? বললেও এরা শুনতে চায় না। জামাল নামের আরেক দোকানি বলেন, বেশিরভাগ লোকজনই থুতনিতে মাস্ক রেখে কথা বলে। দোকানে ঢুকে হাঁচি দেয়। না করি। সচেতন করার চেষ্টা করি। ওরা শিক্ষিত মানুষ, আমরা সেটা না। এজন্য হয়তো আমাদের কথা শুনে না। তবে অনেকে আবার দারুণ সচেতন। এদের আলাদাভাবে কিছু বলতে হয় না। এরা বরং উল্টো আমাদের সচেতন থাকতে বলে। নিউমার্কেটে গতকাল সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে তৈজসপত্রের দোকানগুলোতে। এরপর ভিড় ছিল কাপড় আর কাঁচাবাজারে। ভিড় ছিল ফুটপাতেও। তবে চশমা, ঘরি আর রঙতুলির দোকানে ক্রেতা ছিল কম। মডার্ন স্টেশনারিতে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় রঙতুলি আর ক্যানভাসের বিক্রি কম। ক্যাম্পাস খুলে দিলে এই আকাল কেটে যাবে। পাশের চশমার দোকান অপটিক ওয়ার্ল্ড বলছে, আমাদের বেশির ভাগ ক্রেতারা বয়স্ক মানুষ, এরা এই সময়ে বের হওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছে না তাই কাজ কম।

যাত্রাবাড়ী মার্কেটের পোশাক ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল বলেন, আমরা করোনার কারণে খুবই লোকসানের মধ্যে আছি। সরকার লকডাউনের মধ্যেও আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে। আমরা সরকারের আস্থার প্রতি সম্মান দেখাতে চাই। ক্রেতাদের অনেকে মাস্ক না পরলে তাদের মাস্ক পরতে অনুরোধ করছি। তবে অনেক ক্রেতাই এখনও সচেতন নন। তাদের সচেতন করার চেষ্টাও করছি আমরা। রাজধানী সুপার মার্কেটের পোশাক বিক্রেতা সুমন মিয়া বলেন, সামনে রোজা, আমাদের ব্যবসার প্রকৃত সময়। এমন সময়ে মার্কেট বন্ধ থাকলে সমস্যায় পড়ে যাব। এমনিতেই গত বছরের ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী গত শুক্রবার থেকে মার্কেট খুলেছি। আমরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বিক্রি করছি। ক্রেতারাও আমাদের সযোগিতা করছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, দেশে ৯০ ভাগ মানুষ এখন মাস্ক পরছেন, পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এত সংখ্যক মানুষ মাস্ক পরেন না। আর মাস্ক পরে দোকানে প্রবেশ করা ক্রেতার সংখ্যা শতভাগ। দোকানিরা এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে দোকানিরা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। এর আগে বিধিনিষেধের মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত শুক্রবার সকাল ৯টায় শপিংমল-দোকানপাট খুলে দেয় সরকার। সরকারের নির্দেশনায় বলা হয়, প্রাথমিকভাবে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শপিংমল ও দোকানপাট খোলা রাখা যাবে। তবে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য আরও কঠোর লকডাউন দেয়া হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে গত বছরের মতোই বন্ধ করে দেয়া হতে পারে গোটা দেশ। এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেয়া হতে পারে।