পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই

দেশে নিত্যপণ্যের মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে এবং দাম বৃদ্ধির কোন সম্ভাবনা নেই বলে আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল অনুষ্ঠিত ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এর ‘পবিত্র রমজান মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এ আশ্বাস দেন ব্যবসায়ীরা। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবের পাশাপাশি অতিরিক্ত মজুদকরণের মাধ্যমে বাজারে পণ্যদ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, অপর্যাপ্ত ও সমন্বয়হীন বাজার মনিটরিং, পরিবহনখাতে চাঁদাবাজি এবং অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয় প্রভৃতি কারণে প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসের পূর্বে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা দেয়। করোনা মহামারীর ফলে গত বছরের শেষ নয় মাসে আয় কমে যাওয়া ও কর্মচ্যুতির ফলে অধিকাংশ মানুষ ঋণ করে এবং সঞ্চয় ভেঙে জীবন নির্বাহ করেছেন। এ পরিস্থিতিতে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে দরিদ্ররা কষ্টে পড়বে এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে।’

তিনি আসন্ন রমজানে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ও জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার লক্ষ্যে রমজানে আমদানিনির্ভর ভোগ্যপণ্য বন্দর থেকে কাস্টমস হাউজ ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সহায়তায় দ্রুত খালাসকরণ, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি ও যানজট নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, দেশের সব বাজারে দক্ষ ও পর্যাপ্ত বাজার মনিটরিং-এর মাধ্যমে নিয়মিত ন্যায্যমূল্য তালিকা হালনাগাদ করা এবং মূল্য তালিকা কার্যকর করা, অতি দরিদ্রদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নগদ অর্থ প্রদান প্রভৃতির প্রস্তাব করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘রোজা আসলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ে এবং অনেক সময় পণ্যের সাপ্লাই ও চাহিদার সমন্বয় থাকে না। পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধের সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট সচেতনভাবে কাজ করছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে বিএসটিআইসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর থাকতে হবে। ব্যবসায়ী সমাজকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘এটি একটি ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে জনগণকে আসন্ন রমজান মাসে সুফল দেয়া যাবে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে ৯ সদস্যবিশিষ্ট ‘বাজার মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ’ বিষয়ক স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা শ্রীঘ্রই তাদের কাজ শুরু করবেন এবং এর ফলে বাজার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হবে। লকডাউন সময়ে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। ব্যবসায়ী সমাজের মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে এবং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে রমজান মাসে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে। ঢাকা মহানগরী হাসাপাতালের মাধ্যমে নগরের জনগণকে সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে এবং সামনের দিনগুলোতে এ সেবা আরও বৃদ্ধি করা হবে।’

মুক্ত আলোচনায় ডিএনসিসি কাঁচা ও সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দীন মোহাম্মদ, কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সহ-সভাপতি এসএম নাজির হোসেন, বাংলাদেশ সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইনাম আহমেদ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, র‌্যাব-৩ অধিনায়ক রাকিবুল হাসান, বিএসটিআই-এর পরিচালক (প্রশাঃ) তাহের জামিল এবং ডিএমপির এডিসি মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. গোলাম মওলা এবং মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েতুল্লাহ প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।

ডিএনসিসি কাঁচা ও সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যমান নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশ যথাযথ পালন করা হবে।’

ক্যাবের সহ-সভাপতি নাজের হোসেন বলেন, ‘রমজানে ভোগ্যপণ্যের বাজার অসহনীয় হয়ে পড়ে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সব সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে বাজার তদারকি বাড়ানোর প্রয়োজন। ব্যবসা পরিচালনায় আপনারা সীমিত মুনাফা করুন।’

বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. গোলাম মওলা বলেন, ‘পাইকারি পর্যায়ে করোনা পরিস্থিতিতে ভোগ্যপণ্যের মজুদের কোন ঘাটতি নেই। শুধু ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাড়ায় সেটা স্থানীয় বাজারে বেড়েছে। পাইকারি পর্যায় থেকে খুচরা পর্যায়ে মুনাফা কতো হবে তা নির্ধারণে একটি নির্দেশনা প্রদানের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। লকডাউন সময়ে পাইকারি বাজারগুলোতে বিশেষ করে রাতে নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রস্তাব করছি।’

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনাতুল্লাহ জানান, ‘গরম মসলার মজুদের কোন স্বল্পতা নেই। তাই এ ধরনের পণ্যের কোন দাম বৃদ্ধি পাওয়া উচিত নয়। নিত্যপণ্যের পাইকারি বাজার সীমিত পর্যায়ে খোলা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মধ্যে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য কাজ করছে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে কোন পণ্যের মজুদের স্বল্পতা নেই এবং রমজানে তাদের সবগুলো টিম সপ্তাহে সাতদিন কাজ করবে। মাংসের দাম নির্ধারণের একটি নির্দেশনা দেয়ার জন্য সিটি করপোরেশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

বিএসটিআই’র পরিচালক (প্রশাসন) তাহের জামিল বলেন, ‘বর্তমানে ২২৭টি পণ্যে বিএসটিআই’র মান নিয়ন্ত্রণ সনদ প্রদান করেছে এবং মানুষের মানসম্মত পণ্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে বিএসটিআইর পক্ষ হতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করেছে। সার্ভিলেন্স কার্যক্রম বৃদ্ধি ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’

র‌্যাব-৩ অধিনায়ক রাকিবুল হাসান বলেন, ‘বাজার, ব্যাংকসহ অন্যান্য জায়গায় নিরাপত্তার জন্য র‌্যাব কাজ করছে এবং বিপণী বিতানগুলো খোলা রাখার সময়সীমা নির্ধারিত থাকলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’

ডিএমপির এডিসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযেগিতা প্রদান করা হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কার্যক্রম জোরদার করা হবে। বর্তমানে ডিএমপি’র ১৫৪ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং ইতোমধ্যে ২৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দ্রব্যমূল্যেবিষয়ক সব তথ্য পুলিশকে প্রদানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি এবং ডিএমপির পক্ষ হতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সব জনগণকে নগদ টাকা পরিবহনে নিরাপত্তা প্রদান করবো।’ বাংলাদেশ সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইনাম আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা শহরের ভিতরে সুপারশপের ২০০টি কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে না। সুপারশপে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হচ্ছে।’

সোমবার, ১২ এপ্রিল ২০২১ , ২৯ চৈত্র ১৪২৭ ২৮ শাবান ১৪৪২

ঢাকা চেম্বারের ওয়েবিনারে ব্যবসায়ীদের আশ্বাস

পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

দেশে নিত্যপণ্যের মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে এবং দাম বৃদ্ধির কোন সম্ভাবনা নেই বলে আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল অনুষ্ঠিত ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এর ‘পবিত্র রমজান মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এ আশ্বাস দেন ব্যবসায়ীরা। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবের পাশাপাশি অতিরিক্ত মজুদকরণের মাধ্যমে বাজারে পণ্যদ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, অপর্যাপ্ত ও সমন্বয়হীন বাজার মনিটরিং, পরিবহনখাতে চাঁদাবাজি এবং অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয় প্রভৃতি কারণে প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসের পূর্বে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা দেয়। করোনা মহামারীর ফলে গত বছরের শেষ নয় মাসে আয় কমে যাওয়া ও কর্মচ্যুতির ফলে অধিকাংশ মানুষ ঋণ করে এবং সঞ্চয় ভেঙে জীবন নির্বাহ করেছেন। এ পরিস্থিতিতে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে দরিদ্ররা কষ্টে পড়বে এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে।’

তিনি আসন্ন রমজানে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ও জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার লক্ষ্যে রমজানে আমদানিনির্ভর ভোগ্যপণ্য বন্দর থেকে কাস্টমস হাউজ ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সহায়তায় দ্রুত খালাসকরণ, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি ও যানজট নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, দেশের সব বাজারে দক্ষ ও পর্যাপ্ত বাজার মনিটরিং-এর মাধ্যমে নিয়মিত ন্যায্যমূল্য তালিকা হালনাগাদ করা এবং মূল্য তালিকা কার্যকর করা, অতি দরিদ্রদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নগদ অর্থ প্রদান প্রভৃতির প্রস্তাব করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘রোজা আসলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ে এবং অনেক সময় পণ্যের সাপ্লাই ও চাহিদার সমন্বয় থাকে না। পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধের সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট সচেতনভাবে কাজ করছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে বিএসটিআইসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর থাকতে হবে। ব্যবসায়ী সমাজকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘এটি একটি ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে জনগণকে আসন্ন রমজান মাসে সুফল দেয়া যাবে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে ৯ সদস্যবিশিষ্ট ‘বাজার মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ’ বিষয়ক স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা শ্রীঘ্রই তাদের কাজ শুরু করবেন এবং এর ফলে বাজার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হবে। লকডাউন সময়ে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। ব্যবসায়ী সমাজের মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে এবং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে রমজান মাসে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে। ঢাকা মহানগরী হাসাপাতালের মাধ্যমে নগরের জনগণকে সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে এবং সামনের দিনগুলোতে এ সেবা আরও বৃদ্ধি করা হবে।’

মুক্ত আলোচনায় ডিএনসিসি কাঁচা ও সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দীন মোহাম্মদ, কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সহ-সভাপতি এসএম নাজির হোসেন, বাংলাদেশ সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইনাম আহমেদ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, র‌্যাব-৩ অধিনায়ক রাকিবুল হাসান, বিএসটিআই-এর পরিচালক (প্রশাঃ) তাহের জামিল এবং ডিএমপির এডিসি মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. গোলাম মওলা এবং মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েতুল্লাহ প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।

ডিএনসিসি কাঁচা ও সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্যবিধিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যমান নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশ যথাযথ পালন করা হবে।’

ক্যাবের সহ-সভাপতি নাজের হোসেন বলেন, ‘রমজানে ভোগ্যপণ্যের বাজার অসহনীয় হয়ে পড়ে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সব সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে বাজার তদারকি বাড়ানোর প্রয়োজন। ব্যবসা পরিচালনায় আপনারা সীমিত মুনাফা করুন।’

বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. গোলাম মওলা বলেন, ‘পাইকারি পর্যায়ে করোনা পরিস্থিতিতে ভোগ্যপণ্যের মজুদের কোন ঘাটতি নেই। শুধু ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাড়ায় সেটা স্থানীয় বাজারে বেড়েছে। পাইকারি পর্যায় থেকে খুচরা পর্যায়ে মুনাফা কতো হবে তা নির্ধারণে একটি নির্দেশনা প্রদানের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। লকডাউন সময়ে পাইকারি বাজারগুলোতে বিশেষ করে রাতে নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রস্তাব করছি।’

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনাতুল্লাহ জানান, ‘গরম মসলার মজুদের কোন স্বল্পতা নেই। তাই এ ধরনের পণ্যের কোন দাম বৃদ্ধি পাওয়া উচিত নয়। নিত্যপণ্যের পাইকারি বাজার সীমিত পর্যায়ে খোলা রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মধ্যে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য কাজ করছে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে কোন পণ্যের মজুদের স্বল্পতা নেই এবং রমজানে তাদের সবগুলো টিম সপ্তাহে সাতদিন কাজ করবে। মাংসের দাম নির্ধারণের একটি নির্দেশনা দেয়ার জন্য সিটি করপোরেশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

বিএসটিআই’র পরিচালক (প্রশাসন) তাহের জামিল বলেন, ‘বর্তমানে ২২৭টি পণ্যে বিএসটিআই’র মান নিয়ন্ত্রণ সনদ প্রদান করেছে এবং মানুষের মানসম্মত পণ্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে বিএসটিআইর পক্ষ হতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করেছে। সার্ভিলেন্স কার্যক্রম বৃদ্ধি ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’

র‌্যাব-৩ অধিনায়ক রাকিবুল হাসান বলেন, ‘বাজার, ব্যাংকসহ অন্যান্য জায়গায় নিরাপত্তার জন্য র‌্যাব কাজ করছে এবং বিপণী বিতানগুলো খোলা রাখার সময়সীমা নির্ধারিত থাকলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’

ডিএমপির এডিসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযেগিতা প্রদান করা হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কার্যক্রম জোরদার করা হবে। বর্তমানে ডিএমপি’র ১৫৪ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং ইতোমধ্যে ২৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দ্রব্যমূল্যেবিষয়ক সব তথ্য পুলিশকে প্রদানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি এবং ডিএমপির পক্ষ হতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সব জনগণকে নগদ টাকা পরিবহনে নিরাপত্তা প্রদান করবো।’ বাংলাদেশ সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইনাম আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা শহরের ভিতরে সুপারশপের ২০০টি কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে না। সুপারশপে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা হচ্ছে।’