ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের ৫ কোটি টাকার ক্ষতি

হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের চালানো তান্ডবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল আলম এমএসসি। গতকাল দুপুরে জেলা পরিষদ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানান তিনি।

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল আলম এমএসসি বলেন, গত ২৬ মার্চ হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে ৪০০ থেকে ৫০০ মাদ্রাসাছাত্র এবং দুষ্কৃতকারীরা শহরের কাউতলি এলাকার জেলা পরিষদের ডাককাংলোর প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় ডাকবাংলোতে অবস্থানরত তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দারোয়ান কাম কেয়ারটেকার কোনরকমে আত্মরক্ষা করে। এছাড়া বাংলোর তৃতীয় তলার উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত একজন শ্রমিক লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয়ে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ২৮ মার্চ হেফাজতে ইসলামের হরতাল চলাকালে বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র ও দুষ্কৃতকারীরা অতর্কিতভাবে জেলা পরিষদ কার্যালয়ের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর তারা ভবনের আঙিনায় থাকা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত করে। পরে তারা কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে কার্যালয়ের নিচতলায় অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় তারা গ্যারেজে থাকা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর দ্বিতীয়তলায় এসে বিভিন্ন কক্ষের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর করে।

জেলা পরিষদে আগুনে ১২টি কম্পিউটার, ৪টি ল্যাপটপ, ৩টি স্ক্যানার, ৩টি ইন্টারনেট সংযোগ, ২ সেট সিসি ক্যামেরা, ১টি জেনারেটর, ১৫টি সিলিং ফ্যান, ৮টি এসি, ৭টি চেয়ার, ৫টি সেক্রেটারি টেবিল, ১২টি কম্পিউটার টেবিল, ১২টি কম্পিউটার চেয়ার, ৩টি স্টিল আলমারি, ৩টি কাঠের আলমারি, ১টি কাঠের রেক, ২টি টেলিফোন স্ট্যান্ড, ১টি ইন্টারকম সিস্টেম, হলরুমের সাউন্ড সিস্টেম ১টি, ক্রোকারিজসামগ্রী, ফটোকপি মেশিন, বেসিন ৫টি, হাই কমোড ৩টি, স্যানিটারি বিভিন্ন ফিটিংস, দরজা ১৫টি, থাই গ্লাসের দরজা এবং পার্টিশন, থাই গ্লাসের ৬টি জানালা, কাচের জানালা ৭টি, থাই গ্লাসের পার্টিশন, ডিজিটাল ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন ১টি, পুরাতন মোটরসাইকেল ১টি, বাইসাইকেল ২টি, কলাপসিবল গেইট ৫টি, গাড়ি রাখার গ্যারেজের সাটার ৩টি, মূল ফটকের গেইট, স্টিলের ফাইল কেবিনেট ৩টি, বারান্দার ভিজিটর চেয়ার, লাইট এলইডি বাল্ব ১০০টিসহ বিল্ডিংয়ের ছাদ ও দেয়ালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে।

ডাকবাংলোর কলাপসিপল গেইট ও বারান্দার গ্রিল ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে ডাকবাংলোটি ব্যাপক ভাঙচুর করে এবং অগ্নিসংযোগ করে। আগুনে ২টি ডাইনিং টেবিল, ১৪টি ডাইনিং টেবিলের চেয়ার, ভিআইপি রুমসহ ৮ সেট সোফা, ৭টি টেবিল, ৬টি ডাবল খাট, ৩০টি চেয়ার, ২টি ও্যায়ারড্রপ, ড্রেসিং ৬টি টেবিল, ৬টি ড্রেস স্ট্যান্ড, ভিআইপি রুমের থাই গ্লাসের পার্টিশন, ৩টি থাই গ্লাসের দরজা, বারান্দার স্লাইডিং থাই গ্লাসের ১টি দরজা, পড়ার টেবিল ৬টি, ৬টি খাটের ম্যাটট্রেস, আলমিরার ভিতরে মজুদকৃত উন্নতমানের ১২টি কম্বল, ২০টি বালিশ, ২০টি চাদর, ৪০টি এলএডি লাইট, ৬টি টেবিল ল্যাম্প, ১২টি বৈদ্যুতিক পাখা, ৮০টি উন্নতমানের পর্দা, ৪টি জেনারেটর ও এসি, ৬টি ৪২ ইঞ্চি এলএডি টিভি, ২টি ফ্রিজ, ২টি ওভেনসহ যাবতীয় ক্রোকারিজ ভেঙে ফেলে।

৬টি রুমের বেসিনসহ স্যানিটারি পাইপ এবং ২টি ২০০০ লিটারের পানির ট্যাংকসহ সব স্যানিটারি ফিটিংস ভেঙে চুরমার করে ফেলে। ডিজিএফআই-এর ১টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে ফেলে। বৈদ্যুতিক মিটারসহ আলোকসজ্জার বাতি পুড়িয়ে ফেলে এবং মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২১ উদযাপন উপলক্ষে সব ব্যানার, ফেস্টুন ছিড়ে ফেলে।

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত জেলা পরিষদ কার্যালয় ও ডাকবাংলো মেরামতে ২ কোটি ৮ লাখ ২০ হাজার টাকার প্রয়োজন হবে।

আর সর্বমোট ক্ষয়ক্ষতি টাকার অঙ্কে আনুমানিক ৫ কোটি টাকা হবে। যারা রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করেছে, তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান চেয়ারম্যান শফিকুল আলম। সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম, সচিব মেহের নিগার, সহকারী প্রকৌশলী আবদুল হামিদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা রতীশ চন্দ্র রায়, হিসাব রক্ষক কাজী সানাউল হক, প্রধান সহকারী মো. নুরুর রহমান, উচ্চমান সহকারী আমির হোসেন, প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল হোসেন আজাদ প্রমুখ।

সোমবার, ১২ এপ্রিল ২০২১ , ২৯ চৈত্র ১৪২৭ ২৮ শাবান ১৪৪২

হেফাজতের তান্ডবে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের ৫ কোটি টাকার ক্ষতি

জেলা বার্তা পরিবেশক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের চালানো তান্ডবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল আলম এমএসসি। গতকাল দুপুরে জেলা পরিষদ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানান তিনি।

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল আলম এমএসসি বলেন, গত ২৬ মার্চ হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে ৪০০ থেকে ৫০০ মাদ্রাসাছাত্র এবং দুষ্কৃতকারীরা শহরের কাউতলি এলাকার জেলা পরিষদের ডাককাংলোর প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় ডাকবাংলোতে অবস্থানরত তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দারোয়ান কাম কেয়ারটেকার কোনরকমে আত্মরক্ষা করে। এছাড়া বাংলোর তৃতীয় তলার উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত একজন শ্রমিক লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয়ে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ২৮ মার্চ হেফাজতে ইসলামের হরতাল চলাকালে বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র ও দুষ্কৃতকারীরা অতর্কিতভাবে জেলা পরিষদ কার্যালয়ের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর তারা ভবনের আঙিনায় থাকা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত করে। পরে তারা কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে কার্যালয়ের নিচতলায় অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় তারা গ্যারেজে থাকা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর দ্বিতীয়তলায় এসে বিভিন্ন কক্ষের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর করে।

জেলা পরিষদে আগুনে ১২টি কম্পিউটার, ৪টি ল্যাপটপ, ৩টি স্ক্যানার, ৩টি ইন্টারনেট সংযোগ, ২ সেট সিসি ক্যামেরা, ১টি জেনারেটর, ১৫টি সিলিং ফ্যান, ৮টি এসি, ৭টি চেয়ার, ৫টি সেক্রেটারি টেবিল, ১২টি কম্পিউটার টেবিল, ১২টি কম্পিউটার চেয়ার, ৩টি স্টিল আলমারি, ৩টি কাঠের আলমারি, ১টি কাঠের রেক, ২টি টেলিফোন স্ট্যান্ড, ১টি ইন্টারকম সিস্টেম, হলরুমের সাউন্ড সিস্টেম ১টি, ক্রোকারিজসামগ্রী, ফটোকপি মেশিন, বেসিন ৫টি, হাই কমোড ৩টি, স্যানিটারি বিভিন্ন ফিটিংস, দরজা ১৫টি, থাই গ্লাসের দরজা এবং পার্টিশন, থাই গ্লাসের ৬টি জানালা, কাচের জানালা ৭টি, থাই গ্লাসের পার্টিশন, ডিজিটাল ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন ১টি, পুরাতন মোটরসাইকেল ১টি, বাইসাইকেল ২টি, কলাপসিবল গেইট ৫টি, গাড়ি রাখার গ্যারেজের সাটার ৩টি, মূল ফটকের গেইট, স্টিলের ফাইল কেবিনেট ৩টি, বারান্দার ভিজিটর চেয়ার, লাইট এলইডি বাল্ব ১০০টিসহ বিল্ডিংয়ের ছাদ ও দেয়ালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে।

ডাকবাংলোর কলাপসিপল গেইট ও বারান্দার গ্রিল ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে ডাকবাংলোটি ব্যাপক ভাঙচুর করে এবং অগ্নিসংযোগ করে। আগুনে ২টি ডাইনিং টেবিল, ১৪টি ডাইনিং টেবিলের চেয়ার, ভিআইপি রুমসহ ৮ সেট সোফা, ৭টি টেবিল, ৬টি ডাবল খাট, ৩০টি চেয়ার, ২টি ও্যায়ারড্রপ, ড্রেসিং ৬টি টেবিল, ৬টি ড্রেস স্ট্যান্ড, ভিআইপি রুমের থাই গ্লাসের পার্টিশন, ৩টি থাই গ্লাসের দরজা, বারান্দার স্লাইডিং থাই গ্লাসের ১টি দরজা, পড়ার টেবিল ৬টি, ৬টি খাটের ম্যাটট্রেস, আলমিরার ভিতরে মজুদকৃত উন্নতমানের ১২টি কম্বল, ২০টি বালিশ, ২০টি চাদর, ৪০টি এলএডি লাইট, ৬টি টেবিল ল্যাম্প, ১২টি বৈদ্যুতিক পাখা, ৮০টি উন্নতমানের পর্দা, ৪টি জেনারেটর ও এসি, ৬টি ৪২ ইঞ্চি এলএডি টিভি, ২টি ফ্রিজ, ২টি ওভেনসহ যাবতীয় ক্রোকারিজ ভেঙে ফেলে।

৬টি রুমের বেসিনসহ স্যানিটারি পাইপ এবং ২টি ২০০০ লিটারের পানির ট্যাংকসহ সব স্যানিটারি ফিটিংস ভেঙে চুরমার করে ফেলে। ডিজিএফআই-এর ১টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে ফেলে। বৈদ্যুতিক মিটারসহ আলোকসজ্জার বাতি পুড়িয়ে ফেলে এবং মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২১ উদযাপন উপলক্ষে সব ব্যানার, ফেস্টুন ছিড়ে ফেলে।

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত জেলা পরিষদ কার্যালয় ও ডাকবাংলো মেরামতে ২ কোটি ৮ লাখ ২০ হাজার টাকার প্রয়োজন হবে।

আর সর্বমোট ক্ষয়ক্ষতি টাকার অঙ্কে আনুমানিক ৫ কোটি টাকা হবে। যারা রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করেছে, তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান চেয়ারম্যান শফিকুল আলম। সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম, সচিব মেহের নিগার, সহকারী প্রকৌশলী আবদুল হামিদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা রতীশ চন্দ্র রায়, হিসাব রক্ষক কাজী সানাউল হক, প্রধান সহকারী মো. নুরুর রহমান, উচ্চমান সহকারী আমির হোসেন, প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল হোসেন আজাদ প্রমুখ।