হেফাজতের আহমদ শফীর মৃত্যুতে সম্পৃক্ত বাবুনগরীসহ ৪৩ জন

মাস্টার মাইন্ড মামুনুল হক

হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর বিষয়ে বেশ কয়েকজনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম প্রথম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ কায়সারের আদালতে তাকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। প্রতিবেদনে বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুলসহ সংগঠনটির ৪৩ নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততা পেয়েছে পিবিআই। এছাড়া আহমদ শফীর মৃত্যুর পেছনে মূল মাস্টারমাইন্ড হিসেবে মামুনুল হকের সম্পৃক্ততা পেয়েছে তদন্ত দল।

জানা গেছে, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর আহমদ শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মাঈনুদ্দিন বাদী হয়ে চট্টগ্রামের তৃতীয় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-৩ এ একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল, আহমদ শফীকে মানসিক নির্যাতন এবং তার অক্সিজেন মাস্ক খুলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। মামলার আসামিরা হলেন মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনির, মাওলা মামুনুল হক, মীর ইদ্রিস, হাবিব উল্লাহ (৫৫), আহসান উল্লাহ (৪৫), আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জাকারিয়া নোমান ফয়েজী (৪২), নুরুজ্জামান নোমানী, আবদুল মতিন (২৫), মো. শহীদুল্লাহ, মো. রিজুয়ান আরমান, মো. নজরুল ইসলাম (৩৫), হাসানুজ্জামান (২১), মো. এনামুল হাসান ফারুকী (২২), মীর সাজেদ (২০), মাওলানা জাফার আহমেদ, মীর জিয়াউদ্দিন (১৮), চহমদ (১৯), মাহমুদ (২০), আসাদুল্লাহ (৩০), জুবাইর মাহমুদ (২৪), এইচএম জুনায়েদ, আনোয়ার শাহ (৩৭), মো. আহমদ কামাল (২০), মো. নাছির উদ্দিন (১৯), কামরুল ইসলাম কাছেমী (৩২), মো. হাসান (১৮), ওবায়দুল্লাহ ওবাইদ (৩০), জুবাইর (১৯), মুহাম্মদ (৩৫), আমিনুল হক (৩৩), রফিক সোহেল (৪৩), মবিনুল হক (২১), নাঈম (২০), হাফেজ সায়েম উল্লাহ ও মাওলানা হাসান জামিল। ওই মামলায় ৩৬ জনকে আসামি করা হলেও এতে ৪৩ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পিবিআই। এর মধ্যে আদালতে পরিবারের পক্ষ থেকে দেয়া অভিযোগ থেকে ২৫ নম্বর আসামি নাছির উদ্দীনের সম্পৃক্ততা পায়নি পিবিআই। এছাড়া জুনায়েদ বাবুনগরীসহ নতুন করে সম্পৃক্ত করা হয়েছে আরও ৮ জনকে। মামলার তদন্তে অন্তত ২২ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে পিবিআই। মৃত্যুর পাশাপাশি মাদ্রাসায় ভাঙচুরসহ বিভিন্ন বিষয় তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার এসপি নাজমুল হাসান বলেন, আমরা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত করে যা পেয়েছি তাই আদালতকে জানিয়েছি। এর বাইরে আর কিছু বলতে পারব না।

জানা গেছে, ২৩৯ নম্বর সিআর মামলাটিতে পিবিআইয়ের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ৪৩ আসামির বিরুদ্ধে ৩০৪, ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হলেও বর্তমান সময়ের আলোচিত সমালোচিত হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধেই মূলত আত্মহত্যায় প্ররোচণাসহ নানা অভিযোগ আনার পাশাপাশি তাকে আর এক নম্বর অভিযুক্ত হেফাজতের নায়েবে আমির সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাছির উদ্দীন মুনীরকে এক নম্বর ও মামুনুল হককে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৮০-৯০ জনকে আসামি করা হলেও তাদের কোন খোঁজ পায়নি পিবিআই। আদালতের পেশকার আকতার হোসেন বলেন, পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এ বিষয়ে স্যার এখনও আদেশ দেননি।

তবে মামলার এজহারে বলা হয়, মৃত্যুর আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে আল্লামা আহমদ শফীর অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় কিন্তু তাকে অক্সিজেন দেয়া হয়নি। তখন আসামিরা বলেছিল, আগে বুড়াকে পদত্যাগ করতে বল, পরে বিদ্যুৎ দিব, অক্সিজেন দেব। পরে হাসপাতালে নেয়ার সময় আল্লামা শফীকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে দেয়া হয়। এক ঘণ্টা পর ১ নম্বর ও ১৪ নম্বরসহ অপরাপর আসামিরা অ্যাম্বুলেন্সটি ছেড়ে দেন। ইতোমধ্যে কোমায় চলে গিয়েছিল আল্লামা শাহ আহমদ শফী।

বাদী এজহারে উল্লেখ করেন, আল্লামা আহমদ শফীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনেক দেরিতে নিয়ে যাওয়া হয়। যার কারণে তিনি কোমায় চলে যান। এ কারণে ‘রোগীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এখন আর সম্ভব নয়’ বলে ঘোষণা করেছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে ডাক্তারদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য শাহ আল্লামা আহমদ শফীকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আল্লামা আহমদ শফীকে মৃত ঘোষণা করেন।

এজহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ঘটনার শুরু হয় গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে। তখন থেকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ষড়যন্ত্রমূলক ও পূর্বপরিকল্পিতভাবে আল্লামা আহমদ শফীকে হত্যা করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পিবিআইকে নির্দেশ দেয়। পরে গত ১২ জানুয়ারি পিবিআই টিম হাটহাজারী মাদ্রাসায় গিয়ে বাবুনগরীসহ অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলে। এর তিন মাস পর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল ২০২১ , ৩০ চৈত্র ১৪২৭ ২৯ শাবান ১৪৪২

পিবিআইয়ের প্রতিবেদন দাখিল

হেফাজতের আহমদ শফীর মৃত্যুতে সম্পৃক্ত বাবুনগরীসহ ৪৩ জন

মাস্টার মাইন্ড মামুনুল হক

নিরুপম দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম

হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর বিষয়ে বেশ কয়েকজনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম প্রথম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ কায়সারের আদালতে তাকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। প্রতিবেদনে বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুলসহ সংগঠনটির ৪৩ নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততা পেয়েছে পিবিআই। এছাড়া আহমদ শফীর মৃত্যুর পেছনে মূল মাস্টারমাইন্ড হিসেবে মামুনুল হকের সম্পৃক্ততা পেয়েছে তদন্ত দল।

জানা গেছে, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর আহমদ শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মাঈনুদ্দিন বাদী হয়ে চট্টগ্রামের তৃতীয় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-৩ এ একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল, আহমদ শফীকে মানসিক নির্যাতন এবং তার অক্সিজেন মাস্ক খুলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। মামলার আসামিরা হলেন মাওলানা নাছির উদ্দীন মুনির, মাওলা মামুনুল হক, মীর ইদ্রিস, হাবিব উল্লাহ (৫৫), আহসান উল্লাহ (৪৫), আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জাকারিয়া নোমান ফয়েজী (৪২), নুরুজ্জামান নোমানী, আবদুল মতিন (২৫), মো. শহীদুল্লাহ, মো. রিজুয়ান আরমান, মো. নজরুল ইসলাম (৩৫), হাসানুজ্জামান (২১), মো. এনামুল হাসান ফারুকী (২২), মীর সাজেদ (২০), মাওলানা জাফার আহমেদ, মীর জিয়াউদ্দিন (১৮), চহমদ (১৯), মাহমুদ (২০), আসাদুল্লাহ (৩০), জুবাইর মাহমুদ (২৪), এইচএম জুনায়েদ, আনোয়ার শাহ (৩৭), মো. আহমদ কামাল (২০), মো. নাছির উদ্দিন (১৯), কামরুল ইসলাম কাছেমী (৩২), মো. হাসান (১৮), ওবায়দুল্লাহ ওবাইদ (৩০), জুবাইর (১৯), মুহাম্মদ (৩৫), আমিনুল হক (৩৩), রফিক সোহেল (৪৩), মবিনুল হক (২১), নাঈম (২০), হাফেজ সায়েম উল্লাহ ও মাওলানা হাসান জামিল। ওই মামলায় ৩৬ জনকে আসামি করা হলেও এতে ৪৩ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পিবিআই। এর মধ্যে আদালতে পরিবারের পক্ষ থেকে দেয়া অভিযোগ থেকে ২৫ নম্বর আসামি নাছির উদ্দীনের সম্পৃক্ততা পায়নি পিবিআই। এছাড়া জুনায়েদ বাবুনগরীসহ নতুন করে সম্পৃক্ত করা হয়েছে আরও ৮ জনকে। মামলার তদন্তে অন্তত ২২ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে পিবিআই। মৃত্যুর পাশাপাশি মাদ্রাসায় ভাঙচুরসহ বিভিন্ন বিষয় তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার এসপি নাজমুল হাসান বলেন, আমরা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত করে যা পেয়েছি তাই আদালতকে জানিয়েছি। এর বাইরে আর কিছু বলতে পারব না।

জানা গেছে, ২৩৯ নম্বর সিআর মামলাটিতে পিবিআইয়ের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ৪৩ আসামির বিরুদ্ধে ৩০৪, ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হলেও বর্তমান সময়ের আলোচিত সমালোচিত হেফাজত নেতা মামুনুল হকের বিরুদ্ধেই মূলত আত্মহত্যায় প্ররোচণাসহ নানা অভিযোগ আনার পাশাপাশি তাকে আর এক নম্বর অভিযুক্ত হেফাজতের নায়েবে আমির সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নাছির উদ্দীন মুনীরকে এক নম্বর ও মামুনুল হককে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৮০-৯০ জনকে আসামি করা হলেও তাদের কোন খোঁজ পায়নি পিবিআই। আদালতের পেশকার আকতার হোসেন বলেন, পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এ বিষয়ে স্যার এখনও আদেশ দেননি।

তবে মামলার এজহারে বলা হয়, মৃত্যুর আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে আল্লামা আহমদ শফীর অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় কিন্তু তাকে অক্সিজেন দেয়া হয়নি। তখন আসামিরা বলেছিল, আগে বুড়াকে পদত্যাগ করতে বল, পরে বিদ্যুৎ দিব, অক্সিজেন দেব। পরে হাসপাতালে নেয়ার সময় আল্লামা শফীকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে দেয়া হয়। এক ঘণ্টা পর ১ নম্বর ও ১৪ নম্বরসহ অপরাপর আসামিরা অ্যাম্বুলেন্সটি ছেড়ে দেন। ইতোমধ্যে কোমায় চলে গিয়েছিল আল্লামা শাহ আহমদ শফী।

বাদী এজহারে উল্লেখ করেন, আল্লামা আহমদ শফীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনেক দেরিতে নিয়ে যাওয়া হয়। যার কারণে তিনি কোমায় চলে যান। এ কারণে ‘রোগীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এখন আর সম্ভব নয়’ বলে ঘোষণা করেছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে ডাক্তারদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য শাহ আল্লামা আহমদ শফীকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আল্লামা আহমদ শফীকে মৃত ঘোষণা করেন।

এজহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ঘটনার শুরু হয় গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে। তখন থেকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ষড়যন্ত্রমূলক ও পূর্বপরিকল্পিতভাবে আল্লামা আহমদ শফীকে হত্যা করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পিবিআইকে নির্দেশ দেয়। পরে গত ১২ জানুয়ারি পিবিআই টিম হাটহাজারী মাদ্রাসায় গিয়ে বাবুনগরীসহ অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলে। এর তিন মাস পর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।