ঐতিহ্যবাহী বৈসাবি উৎসব

বাংলাদেশে বৈচিত্র্যপূর্ণ্য জীবনধারা ও নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে অসংখ্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসাবাস রয়েছে। এই নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবন, সমাজ, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, জীবিকা, কর্ম-ধর্ম এবং ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন উৎসব রয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী একটি উৎসব ‘বৈসাবি’। ‘বৈসাবি’ শব্দটি বৈসুক, সাংগ্রাই ও বিঝু নামের তিনটি শব্দ দ্বারা গঠিত। বাংলাদেশের পার্বত্য জেলার প্রধান তিনটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে যে অনুষ্ঠানগুলো আয়োজন করে থাকে, সেগুলোকে একত্রে বৈসাবি উৎসব বলা হয়। প্রতি বছর এই উৎসবের মাধ্যমে আদিবাসীদের প্রাত্যহিক জীবনে শান্তি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনে।

প্রতি বছর তারা চৈত্রের শেষদিন ও বৈশাখের দুই দিন নিয়ে এই বৈসাবি উৎসবের আয়োজন করে। সাধারণত ফুলবিঝুর দিনে চাকমা সমপ্রদায়ের ছেলেমেয়েরা ভোরবেলায় ফুল সংগ্রহের জন্য বাড়ি হতে বেরিয়ে পড়ে।। সংগ্রহিত ফুলের একভাগ দিয়ে বুদ্ধকে পূজা করে, আর অন্যভাগ পার্শ্ববর্তী নদীতে গিয়ে নদীর জলে ফুলগুলো ভাসিয়ে দেয়। পহেলা বৈশাখের দিন তারা মূলবিঝু উৎসব পালন করে। এই দিনে সবাই আনন্দ-উল্লাস করেন। এই দিনের আকর্ষণীয় একটা বিষয় হলো পাজোন নামের একটি তরকারি রান্না। প্রায় ৩২ প্রকার সবজি দিয়ে এই তরকারি তৈরি করা হয়।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আর সবুজ পাহাড। বেষ্টিত দৃষ্টিনন্দন পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংখ্যা বিবেচনায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ হল মারমা সম্প্রদায়। মারমাদের প্রধান সামাজিক অনুষ্ঠান হিসেবে সুপরিচিত সাংগ্রাই, ওয়াগ্যোয়াই, ফানুস উড়ানো, মৈত্রিপালা, রথযাত্রা। বাংলা নতুন বছর উপলক্ষে মারমা জনগোষ্ঠী প্রতি বছর সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন করে। উৎসবের প্রথম দিন মারমা সম্প্রদায় বৌদ্ধ বিহারে চন্দনের পানি দিয়ে সমস্ত শরীর ধুয়ে ফেলে। তারপর বোমাং রাজা বা বৌদ্ধ ভিক্ষুর নেতৃত্বে শোভাযাত্রা দিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। সাংগ্রাই অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ হল পানি খেলা কর্মসূচি। তরুণ-তরুণীরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে উৎসব পালন করে। মারমাদের ধারণা এই দিনে একে অপরকে পানি ছিটিয়ে দিলে, অতীতের সব পাপ ধুয়ে মুছে দেহ পবিত্র হয়ে যায়।

পার্বত্য জেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ ত্রিপুরা সম্প্রদায়। ত্রিপুরা সম্প্রদায় নদীতে নানা উৎসাহ উদ্দীপনায় দেবী গঙ্গার উদ্দেশ্য ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব বৈসুক শুরু করে। বৈসুক উৎসবের প্রথম দিনকে ত্রিপুরারা হারিবৈসু বলে থাকে। এদিন সকালে নদী, খাল, পুকুরে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে তারা ফুল ভাসিয়ে দেয়। দ্বিতীয় দিনকে বৈসুম্মা উৎসব পালন করে। সেই এ সম্প্রদায়ের ছোটরা বড়দের গোসল করিয়ে বস্ত্র পরিধান করে দেয় এবং মন্দিরে মন্দিরে পূজা দিয়ে থাকে। তৃতীয় দিনকে বৈসু ভিম উৎসব হিসাবে পালন করে থাকে। এইদিন গুলোতে এই নৃগোষ্ঠীর ছোট থেকে বয়স্করা পযন্ত দেবী গঙ্গা কাছে সুখ ও শান্তি কামনা করে। তাছাড়া ঘরে ঘরে অতিথি দেরকে আপ্যায়ন করা হয়।

[লেখক : আসাদুজ্জামান সম্রাট

বুধবার, ১৪ এপ্রিল ২০২১ , ১ বৈশাখ ১৪২৮ ১ রমজান ১৪৪২

ঐতিহ্যবাহী বৈসাবি উৎসব

বাংলাদেশে বৈচিত্র্যপূর্ণ্য জীবনধারা ও নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে অসংখ্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসাবাস রয়েছে। এই নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবন, সমাজ, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, জীবিকা, কর্ম-ধর্ম এবং ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন উৎসব রয়েছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী একটি উৎসব ‘বৈসাবি’। ‘বৈসাবি’ শব্দটি বৈসুক, সাংগ্রাই ও বিঝু নামের তিনটি শব্দ দ্বারা গঠিত। বাংলাদেশের পার্বত্য জেলার প্রধান তিনটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে যে অনুষ্ঠানগুলো আয়োজন করে থাকে, সেগুলোকে একত্রে বৈসাবি উৎসব বলা হয়। প্রতি বছর এই উৎসবের মাধ্যমে আদিবাসীদের প্রাত্যহিক জীবনে শান্তি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনে।

প্রতি বছর তারা চৈত্রের শেষদিন ও বৈশাখের দুই দিন নিয়ে এই বৈসাবি উৎসবের আয়োজন করে। সাধারণত ফুলবিঝুর দিনে চাকমা সমপ্রদায়ের ছেলেমেয়েরা ভোরবেলায় ফুল সংগ্রহের জন্য বাড়ি হতে বেরিয়ে পড়ে।। সংগ্রহিত ফুলের একভাগ দিয়ে বুদ্ধকে পূজা করে, আর অন্যভাগ পার্শ্ববর্তী নদীতে গিয়ে নদীর জলে ফুলগুলো ভাসিয়ে দেয়। পহেলা বৈশাখের দিন তারা মূলবিঝু উৎসব পালন করে। এই দিনে সবাই আনন্দ-উল্লাস করেন। এই দিনের আকর্ষণীয় একটা বিষয় হলো পাজোন নামের একটি তরকারি রান্না। প্রায় ৩২ প্রকার সবজি দিয়ে এই তরকারি তৈরি করা হয়।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আর সবুজ পাহাড। বেষ্টিত দৃষ্টিনন্দন পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংখ্যা বিবেচনায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ হল মারমা সম্প্রদায়। মারমাদের প্রধান সামাজিক অনুষ্ঠান হিসেবে সুপরিচিত সাংগ্রাই, ওয়াগ্যোয়াই, ফানুস উড়ানো, মৈত্রিপালা, রথযাত্রা। বাংলা নতুন বছর উপলক্ষে মারমা জনগোষ্ঠী প্রতি বছর সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন করে। উৎসবের প্রথম দিন মারমা সম্প্রদায় বৌদ্ধ বিহারে চন্দনের পানি দিয়ে সমস্ত শরীর ধুয়ে ফেলে। তারপর বোমাং রাজা বা বৌদ্ধ ভিক্ষুর নেতৃত্বে শোভাযাত্রা দিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। সাংগ্রাই অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ হল পানি খেলা কর্মসূচি। তরুণ-তরুণীরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটিয়ে উৎসব পালন করে। মারমাদের ধারণা এই দিনে একে অপরকে পানি ছিটিয়ে দিলে, অতীতের সব পাপ ধুয়ে মুছে দেহ পবিত্র হয়ে যায়।

পার্বত্য জেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ ত্রিপুরা সম্প্রদায়। ত্রিপুরা সম্প্রদায় নদীতে নানা উৎসাহ উদ্দীপনায় দেবী গঙ্গার উদ্দেশ্য ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব বৈসুক শুরু করে। বৈসুক উৎসবের প্রথম দিনকে ত্রিপুরারা হারিবৈসু বলে থাকে। এদিন সকালে নদী, খাল, পুকুরে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে তারা ফুল ভাসিয়ে দেয়। দ্বিতীয় দিনকে বৈসুম্মা উৎসব পালন করে। সেই এ সম্প্রদায়ের ছোটরা বড়দের গোসল করিয়ে বস্ত্র পরিধান করে দেয় এবং মন্দিরে মন্দিরে পূজা দিয়ে থাকে। তৃতীয় দিনকে বৈসু ভিম উৎসব হিসাবে পালন করে থাকে। এইদিন গুলোতে এই নৃগোষ্ঠীর ছোট থেকে বয়স্করা পযন্ত দেবী গঙ্গা কাছে সুখ ও শান্তি কামনা করে। তাছাড়া ঘরে ঘরে অতিথি দেরকে আপ্যায়ন করা হয়।

[লেখক : আসাদুজ্জামান সম্রাট