বিশ্ববাজারে পোশাকের ৭০ শতাংশ পলিস্টারের দখলে

ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের বস্ত্র ও পোশাক খাত প্রাকৃতিক আঁশ তথা কটন সুতানির্ভর। কিন্তু বিশ্ববাজারে বস্ত্র ও পোশাক খাতের একটি বড় পরিবর্তন গত ১০ বছরে ঘটে গেছে। সেটা হলো বস্ত্র ও পোশাকের বাজার এখন ৭০ শতাংশ দখল করে আছে কৃত্রিম সুতা বা মেন মেড ফাইবার। আর ৩০ শতাংশ কটন সুতা দিয়ে তৈরি কাপড়ের দখলে। সম্প্রতি বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারে বস্ত্র ও পোশাক শিল্পখাত দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ প্রাকৃতিক আঁশ তথা কটন সুতা। আরেক ভাগ কৃত্রিম আঁশ তথা ম্যান মেড ফাইবার (পলিস্টার/নাইলন/ভিসকোস ইত্যাদি) সুতা দিয়ে তৈরি কাপড়ের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্ববাজারের এই রূপান্তরকে মাথায় রেখে বাংলাদেশকেও এগোতে হবে। গত ২৫ থেকে ৩০ বছর আমাদের কটন খাত সরকারের নীতি সহায়তা পেলেও পলিস্টার বা ম্যান মেড ফাইভার খাত উপেক্ষিত। এর আগে প্রধানমন্ত্রী তার সমাপনী বাজেট বক্তব্যে সব প্রকার সুতার ওপর উৎপাদন ও বিক্রয় পর্যায়ে সমান হারে ভ্যাট নির্ধারণের নির্দেশনা দেন। সে নির্দেশনার পরও গেজেট নোটিফিকেশনে শুধুমাত্র কটন সুতার ওপর প্রতি কেজিতে ৪ টাকা ভ্যাট নির্ধারণ করে দেয়া হয়। আর ম্যান মেড ফাইভার বা পলিস্টার সুতাসহ অন্যান্য সুতার ওপর উৎপাদন ও বিক্রয় পর্যায়ে ৬ টাকা ভ্যাট নির্ধারণ করা হয়, যেটা সরকারের নীতি ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দশনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেন নুরুল ইসলাম।

সূত্র আরও জানায়, এর জন্য যতটুকু না সরকারের নীতিনির্ধারকরা দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। বিজিএমইএ বা বিটিএমএ কেউ বিষয়টা নিয়ে তেমন করছে না। গত বাজেটের আগে বিটিএমএর সভাপতিকে সঙ্গে নিয়ে বিষয়টা বাণিজ্যমন্ত্রী ও এনবিআর চেয়ারম্যানকে জানানো হয়। তারা কথা দেয়ার পরও বাজেটে ম্যান মেড ফাইভার নির্ভর বস্ত্রখাতের জন্য কোন সুবিধা দেয়া হয়নি। বিশ্ববাজারে ম্যান মেড ফাইভার বা পলিস্টার সূতা দিয়ে তৈরি কাপড় ও পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। সেই চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বস্ত্রখাত ও পোশাক শিল্পকে তৈরি করতে হবে দ্রুততার সঙ্গে। এবারের বাজেটে ম্যান মেড ফাইভার তথা পলিস্টার সূতা তৈরির উপাদানের ওপর সব প্রকার আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার, উৎপাদন ও বিক্রয় পর্যায়ে শূন্য হারে ভ্যাট নির্ধারণসহ আরও কিছু সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করলে দেশের বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের নতুন বিপ্লব ঘটবে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় কমেছে তৈরি পোশাক খাতে। এ সময় তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৪৯৫ কোটি ৬ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ২ হাজার ৩৪৮ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় প্রায় ৬ শতাংশ কমেছে। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে একই সময় আয় হয়েছিল ২ হাজার ৪১০ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। সে ক্ষেত্রে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সূত্র জানায়, রপ্তানি খাতে আরও একটি ধাক্কা এগিয়ে আসছে। এ নিয়ে শঙ্কিত তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান, ইতালি, কানাডা, স্পেনে লকডাউন চলছে। যে কারণে রপ্তানি কমেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পোশাক শিল্পের ওপর।

বিকেএমইএ সূত্র জানায়, করোনার তৃতীয় ধাক্কায় এ খাতটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রপ্তানির কার্যাদেশ কমে গেছে। করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাক্কায় কিছু আদেশ স্থগিত হয়েছিল, কিন্তু পরে ক্রেতারা সেগুলো পুনরায় দেন। সেপ্টেম্বরের পর পরিস্থিতি আবার খারাপ হয়ে যায়। করোনার প্রভাবে বিক্রি না হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে আগের পণ্য মজুত রয়ে গেছে। এ অবস্থায় আগামীতে রপ্তানি আদেশ আরও আশঙ্কাজনক হারে কমে যেতে পারে।

এদিকে ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, তৈরি পোশাক ছাড়াও অন্য খাতগুলোতেও রপ্তানি আয় কমেছে। হিমায়িত খাদ্য খাতে চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ৩৬ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। আয় কমেছে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। এছাড়া গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১ , ৪ বৈশাখ ১৪২৮ ৪ রমজান ১৪৪২

বিশ্ববাজারে পোশাকের ৭০ শতাংশ পলিস্টারের দখলে

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের বস্ত্র ও পোশাক খাত প্রাকৃতিক আঁশ তথা কটন সুতানির্ভর। কিন্তু বিশ্ববাজারে বস্ত্র ও পোশাক খাতের একটি বড় পরিবর্তন গত ১০ বছরে ঘটে গেছে। সেটা হলো বস্ত্র ও পোশাকের বাজার এখন ৭০ শতাংশ দখল করে আছে কৃত্রিম সুতা বা মেন মেড ফাইবার। আর ৩০ শতাংশ কটন সুতা দিয়ে তৈরি কাপড়ের দখলে। সম্প্রতি বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারে বস্ত্র ও পোশাক শিল্পখাত দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ প্রাকৃতিক আঁশ তথা কটন সুতা। আরেক ভাগ কৃত্রিম আঁশ তথা ম্যান মেড ফাইবার (পলিস্টার/নাইলন/ভিসকোস ইত্যাদি) সুতা দিয়ে তৈরি কাপড়ের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্ববাজারের এই রূপান্তরকে মাথায় রেখে বাংলাদেশকেও এগোতে হবে। গত ২৫ থেকে ৩০ বছর আমাদের কটন খাত সরকারের নীতি সহায়তা পেলেও পলিস্টার বা ম্যান মেড ফাইভার খাত উপেক্ষিত। এর আগে প্রধানমন্ত্রী তার সমাপনী বাজেট বক্তব্যে সব প্রকার সুতার ওপর উৎপাদন ও বিক্রয় পর্যায়ে সমান হারে ভ্যাট নির্ধারণের নির্দেশনা দেন। সে নির্দেশনার পরও গেজেট নোটিফিকেশনে শুধুমাত্র কটন সুতার ওপর প্রতি কেজিতে ৪ টাকা ভ্যাট নির্ধারণ করে দেয়া হয়। আর ম্যান মেড ফাইভার বা পলিস্টার সুতাসহ অন্যান্য সুতার ওপর উৎপাদন ও বিক্রয় পর্যায়ে ৬ টাকা ভ্যাট নির্ধারণ করা হয়, যেটা সরকারের নীতি ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দশনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেন নুরুল ইসলাম।

সূত্র আরও জানায়, এর জন্য যতটুকু না সরকারের নীতিনির্ধারকরা দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। বিজিএমইএ বা বিটিএমএ কেউ বিষয়টা নিয়ে তেমন করছে না। গত বাজেটের আগে বিটিএমএর সভাপতিকে সঙ্গে নিয়ে বিষয়টা বাণিজ্যমন্ত্রী ও এনবিআর চেয়ারম্যানকে জানানো হয়। তারা কথা দেয়ার পরও বাজেটে ম্যান মেড ফাইভার নির্ভর বস্ত্রখাতের জন্য কোন সুবিধা দেয়া হয়নি। বিশ্ববাজারে ম্যান মেড ফাইভার বা পলিস্টার সূতা দিয়ে তৈরি কাপড় ও পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। সেই চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বস্ত্রখাত ও পোশাক শিল্পকে তৈরি করতে হবে দ্রুততার সঙ্গে। এবারের বাজেটে ম্যান মেড ফাইভার তথা পলিস্টার সূতা তৈরির উপাদানের ওপর সব প্রকার আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার, উৎপাদন ও বিক্রয় পর্যায়ে শূন্য হারে ভ্যাট নির্ধারণসহ আরও কিছু সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করলে দেশের বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের নতুন বিপ্লব ঘটবে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় কমেছে তৈরি পোশাক খাতে। এ সময় তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৪৯৫ কোটি ৬ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ২ হাজার ৩৪৮ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় প্রায় ৬ শতাংশ কমেছে। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে একই সময় আয় হয়েছিল ২ হাজার ৪১০ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। সে ক্ষেত্রে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সূত্র জানায়, রপ্তানি খাতে আরও একটি ধাক্কা এগিয়ে আসছে। এ নিয়ে শঙ্কিত তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান, ইতালি, কানাডা, স্পেনে লকডাউন চলছে। যে কারণে রপ্তানি কমেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পোশাক শিল্পের ওপর।

বিকেএমইএ সূত্র জানায়, করোনার তৃতীয় ধাক্কায় এ খাতটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রপ্তানির কার্যাদেশ কমে গেছে। করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাক্কায় কিছু আদেশ স্থগিত হয়েছিল, কিন্তু পরে ক্রেতারা সেগুলো পুনরায় দেন। সেপ্টেম্বরের পর পরিস্থিতি আবার খারাপ হয়ে যায়। করোনার প্রভাবে বিক্রি না হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে আগের পণ্য মজুত রয়ে গেছে। এ অবস্থায় আগামীতে রপ্তানি আদেশ আরও আশঙ্কাজনক হারে কমে যেতে পারে।

এদিকে ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, তৈরি পোশাক ছাড়াও অন্য খাতগুলোতেও রপ্তানি আয় কমেছে। হিমায়িত খাদ্য খাতে চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ৩৬ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। আয় কমেছে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। এছাড়া গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।