ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ

আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। দিবসটি বাঙালি জাতির জীবনের একটি অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি নিয়েছে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর একই বছরের ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়। পরের দিন ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ দেশবাসীর উদ্দেশে বেতারে ভাষণ দেন, যা আকাশবাণী থেকে একাধিকবার প্রচার হয়। এ ভাষণে তিনি দেশব্যাপী পরিচালিত প্রতিরোধ যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন।

এছাড়াও ১৭ এপ্রিল মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তাজউদ্দীনের ভাষণের মধ্য দিয়েই দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারেন বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার লক্ষ্যে একটি আইনানুগ সরকার গঠন করা হয়েছে। এরই পথপরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। একই সঙ্গে প্রবাসী সরকারের এক অধ্যাদেশে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়।

সদ্য প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ১০ এপ্রিল পাকিস্তানের নির্বাচিত জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি গোপন স্থানে মিলিত হয়ে প্রবাসী সরকার গঠন করেন। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি (অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি) নির্বাচিত করা হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম পরে তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেন।

মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা হলেন, এম মনসুর আলী (অর্থবাণিজ্য ও শিল্প) এবং এএইচএম কামারুজ্জামান (স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ, পুনর্বাসন ও কৃষি)। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি খন্দকার মোশতাক আহমদও (পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ) মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী অস্থায়ী সরকারের মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন। মুজিবনগর সরকারকে ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ভাগ করা হয়।

এছাড়া কয়েকটি বিভাগ মন্ত্রিপরিষদের কর্তৃত্বাধীনে থাকে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যুদ্ধরত অঞ্চলকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে প্রতিটিতে একজন করে সেক্টর কমান্ডার নিয়োগ করা হয়। তবে ১০নং বা নৌ সেক্টরে কোন সেক্টর কমান্ডার ছিল না, কমান্ডোরা যখন যে এলাকায় অভিযান করতেন সে সেক্টরের কমান্ডারের অধীনে থাকত। এ ছাড়াও জেড ফোর্স, কে ফোর্স ও এস ফোর্স নামে তিনটি ব্রিগেড গঠন করা হয়। মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী গ্রাম বৈদ্যনাথতলায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আবদুল মান্নান এম.এন.এ এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী এম.এন.এ। নবগঠিত সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে এখানে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠান। আর সেই অনুষ্ঠানে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেছিলেন ১৭ বছরের এক কিশোর মো. বাকের আলী। যিনি কয়েক বছর আগে কলেজ শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন। সেদিন কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে তিনি এই দায়িত্বটি পালন করেছিলেন তার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে। বাকের আলী তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ মুহূর্তটির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বেশ আবেগাল্পুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে তিনি দর্শনা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করলে বিহারীঅধ্যুষিত দর্শনায় থাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সুযোগ বুঝে দীর্ঘপথ হেঁটে ১৬ এপ্রিল বিকেলে বর্তমান মুজিবনগর উপজেলার গৌরীনগর গ্রামের নিজ বাড়িতে চলে আসেন।

তিনি বলেন, ‘ওইদিন রাতে শুনলাম ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথ তলায় এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। কিসের সভা, কী উদ্দেশে হবে সবকিছুই রয়ে গেল অজানা। সকালে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে হেঁটে সভাস্থলে পৌঁছে গেলাম। আমার স্কুলশিক্ষক দোয়াজউদ্দিন স্যার সেখানে ছিলেন। তিনি আমার হাত ধরে বলেন, আমাকে এ অনুষ্ঠানে কুরআন পাঠ করতে হবে।’ এ প্রসঙ্গে বাকের আলীর শিক্ষক দোয়াজউদ্দিন বলেন, ‘বাকের স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সুললিত কণ্ঠে কুরআন তেলোয়াত করত। এ ছাড়াও সে ছিল ধর্মভীরু। তাই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তাকেই টেনে নিয়েছিলাম।’

এদিকে ১৭ এপ্রিল মুজিব নগর সরকারের মন্ত্রীরা শপথ নিলেও ১৮ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদের প্রথম সভায় মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করা হয়। মুজিবনগর সরকারের সফল নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে। শুধু তাই নয়, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের এই প্রথম সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে ভারত এবং ভুটান এই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মুজিবনগর দিবসে দেশবাসীকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ গঠনে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।

বাণীতে রাষ্ট্রপতি দিবসটি উপলক্ষে দেশবাসী ও প্রবাসে অবস্থানরত সব বাংলাদেশিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘপথ পরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল এক স্মরণীয় দিন। তিনি এই মাহেন্দ্রক্ষণে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, মহান স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করেন জাতীয় চারনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে, যাঁদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার পরিচালনার মাধ্যমে নয়মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতা অর্জন হয়। তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী ত্রিশ লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা, শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও সমর্থনকারী সবস্তরের জনগণ ও বিদেশি বন্ধুদের স্মরণ করেন।

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে হলেও ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে হবে। গতকাল এক বাণীতে বলেন, ‘মুজিবনগর দিবসের ৫০ বছর পূর্তিতে আমার আহ্বানÑ সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে হলেও ত্রিশ লাখ শহীদ ও দু’লাখ নির্যাতিত মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে হবে। জাতির পিতা যে অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সব আশুষড়যন্ত্র প্রতিহত করে ঐক্যবদ্ধভাবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখব, ইনশাআল্লাহ।

মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে ই-পোস্টার প্রকাশ

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের জন্য একটি ই-পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে।

মুজিববর্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে তাঁর উক্তি নিয়ে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের ই-পোস্টারের শিরোনাম করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ ইতিহাসে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকবে। বাংলাকে দাবিয়ে রাখতে পারে এমন কোন শক্তি নাই।

ই-পোস্টারটি জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ হতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি

মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। মহামারী করোনাভাইরাসে সৃষ্ট সংকটের কারণে ঐতিহাসিক এই দিনটিতে ব্যাপক জনসমাগম এড়িয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় সীমিত পরিসরে সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ।

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ভোর ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় এবং দেশের সব জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সীমিত পরিসরে ও যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে সকাল ৯টায় ধানম-ি বত্রিশে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।

এছাড়াও মুজিবনগরের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ভোর ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ১০টায় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ (আওয়ামী লীগের পক্ষে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ এমপির নেতৃত্বে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে সীমিত পরিসরে স্থানীয় নেতাকর্মীরা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন)।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বৈশি^ক মহামারী করোনাভাইরাসে সৃষ্ট সংকটের কারণে সীমিত পরিসরে ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালনের জন্য দলের এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

একই সঙ্গে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদ, দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোন, মুক্তিযুদ্ধের সব সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ঘরে বসেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালনের জন্য সর্বস্তরের জনগণ ও দেশবাসীকে আহ্বান জানান।

মেহেরপুরে মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে ‘সীমিত আকারে’র প্রস্তুতি

মেহেরপুরে প্রতিবছর নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। এই দিনে বিভিন্ন নেতা আসেন মুজিবনগরে কিন্তু গত বছরের মতো এবারও ২য় ধাপে করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সীমিত আকারে পালন করা হবে দিবসটি আর দিবসটি পালনে চলছে ছোট পরিসরের প্রস্তুতি। করোনা মহামারী প্রতিরোধে সারাদেশে চলছে লকডাউন। সেই প্রেক্ষাপটে এবার সংক্ষিপ্তভাবে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালন করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মেহেরপুর জেলা প্রশাসন। এবারের কর্মসূচির মধ্যে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা, মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টায় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, গার্ড অব অনার দেয়া হবে।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহামুদ স্বপনের। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

দিবসটি পালনে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ ধোয়ামোছার কাজ এখন শেষ হয়েছে। মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স ও জেলা পর্যায়ে সব সরকারি দপ্তরে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। এছাড়াও জনস্বাস্থ্য, এলজিইডি, গণপূর্ত ও জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক প্রস্তুতি শেষ করেছে।

শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১ , ৪ বৈশাখ ১৪২৮ ৪ রমজান ১৪৪২

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। দিবসটি বাঙালি জাতির জীবনের একটি অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি নিয়েছে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানোর পর একই বছরের ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়। পরের দিন ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ দেশবাসীর উদ্দেশে বেতারে ভাষণ দেন, যা আকাশবাণী থেকে একাধিকবার প্রচার হয়। এ ভাষণে তিনি দেশব্যাপী পরিচালিত প্রতিরোধ যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন।

এছাড়াও ১৭ এপ্রিল মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তাজউদ্দীনের ভাষণের মধ্য দিয়েই দেশ-বিদেশের মানুষ জানতে পারেন বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার লক্ষ্যে একটি আইনানুগ সরকার গঠন করা হয়েছে। এরই পথপরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল সকালে মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। একই সঙ্গে প্রবাসী সরকারের এক অধ্যাদেশে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়।

সদ্য প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ১০ এপ্রিল পাকিস্তানের নির্বাচিত জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি গোপন স্থানে মিলিত হয়ে প্রবাসী সরকার গঠন করেন। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি (অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি) নির্বাচিত করা হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম পরে তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেন।

মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা হলেন, এম মনসুর আলী (অর্থবাণিজ্য ও শিল্প) এবং এএইচএম কামারুজ্জামান (স্বরাষ্ট্র, সরবরাহ, ত্রাণ, পুনর্বাসন ও কৃষি)। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি খন্দকার মোশতাক আহমদও (পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ) মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী অস্থায়ী সরকারের মুক্তিবাহিনীর প্রধান কমান্ডার এবং মেজর জেনারেল আবদুর রব চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন। মুজিবনগর সরকারকে ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ভাগ করা হয়।

এছাড়া কয়েকটি বিভাগ মন্ত্রিপরিষদের কর্তৃত্বাধীনে থাকে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যুদ্ধরত অঞ্চলকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে প্রতিটিতে একজন করে সেক্টর কমান্ডার নিয়োগ করা হয়। তবে ১০নং বা নৌ সেক্টরে কোন সেক্টর কমান্ডার ছিল না, কমান্ডোরা যখন যে এলাকায় অভিযান করতেন সে সেক্টরের কমান্ডারের অধীনে থাকত। এ ছাড়াও জেড ফোর্স, কে ফোর্স ও এস ফোর্স নামে তিনটি ব্রিগেড গঠন করা হয়। মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী গ্রাম বৈদ্যনাথতলায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আবদুল মান্নান এম.এন.এ এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী এম.এন.এ। নবগঠিত সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে এখানে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।

পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠান। আর সেই অনুষ্ঠানে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেছিলেন ১৭ বছরের এক কিশোর মো. বাকের আলী। যিনি কয়েক বছর আগে কলেজ শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছেন। সেদিন কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে তিনি এই দায়িত্বটি পালন করেছিলেন তার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে। বাকের আলী তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ মুহূর্তটির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বেশ আবেগাল্পুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে তিনি দর্শনা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করলে বিহারীঅধ্যুষিত দর্শনায় থাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। সুযোগ বুঝে দীর্ঘপথ হেঁটে ১৬ এপ্রিল বিকেলে বর্তমান মুজিবনগর উপজেলার গৌরীনগর গ্রামের নিজ বাড়িতে চলে আসেন।

তিনি বলেন, ‘ওইদিন রাতে শুনলাম ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথ তলায় এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। কিসের সভা, কী উদ্দেশে হবে সবকিছুই রয়ে গেল অজানা। সকালে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে হেঁটে সভাস্থলে পৌঁছে গেলাম। আমার স্কুলশিক্ষক দোয়াজউদ্দিন স্যার সেখানে ছিলেন। তিনি আমার হাত ধরে বলেন, আমাকে এ অনুষ্ঠানে কুরআন পাঠ করতে হবে।’ এ প্রসঙ্গে বাকের আলীর শিক্ষক দোয়াজউদ্দিন বলেন, ‘বাকের স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সুললিত কণ্ঠে কুরআন তেলোয়াত করত। এ ছাড়াও সে ছিল ধর্মভীরু। তাই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তাকেই টেনে নিয়েছিলাম।’

এদিকে ১৭ এপ্রিল মুজিব নগর সরকারের মন্ত্রীরা শপথ নিলেও ১৮ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদের প্রথম সভায় মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করা হয়। মুজিবনগর সরকারের সফল নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে। শুধু তাই নয়, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের এই প্রথম সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে ভারত এবং ভুটান এই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মুজিবনগর দিবসে দেশবাসীকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ গঠনে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।

বাণীতে রাষ্ট্রপতি দিবসটি উপলক্ষে দেশবাসী ও প্রবাসে অবস্থানরত সব বাংলাদেশিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘপথ পরিক্রমায় ১৭ এপ্রিল এক স্মরণীয় দিন। তিনি এই মাহেন্দ্রক্ষণে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, মহান স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করেন জাতীয় চারনেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে, যাঁদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার পরিচালনার মাধ্যমে নয়মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতা অর্জন হয়। তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী ত্রিশ লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা, শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও সমর্থনকারী সবস্তরের জনগণ ও বিদেশি বন্ধুদের স্মরণ করেন।

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে হলেও ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে হবে। গতকাল এক বাণীতে বলেন, ‘মুজিবনগর দিবসের ৫০ বছর পূর্তিতে আমার আহ্বানÑ সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে হলেও ত্রিশ লাখ শহীদ ও দু’লাখ নির্যাতিত মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে হবে। জাতির পিতা যে অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সব আশুষড়যন্ত্র প্রতিহত করে ঐক্যবদ্ধভাবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখব, ইনশাআল্লাহ।

মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে ই-পোস্টার প্রকাশ

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের জন্য একটি ই-পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে।

মুজিববর্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে তাঁর উক্তি নিয়ে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের ই-পোস্টারের শিরোনাম করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ ইতিহাসে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকবে। বাংলাকে দাবিয়ে রাখতে পারে এমন কোন শক্তি নাই।

ই-পোস্টারটি জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ হতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি

মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। মহামারী করোনাভাইরাসে সৃষ্ট সংকটের কারণে ঐতিহাসিক এই দিনটিতে ব্যাপক জনসমাগম এড়িয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় সীমিত পরিসরে সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ।

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ভোর ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় এবং দেশের সব জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সীমিত পরিসরে ও যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে সকাল ৯টায় ধানম-ি বত্রিশে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।

এছাড়াও মুজিবনগরের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ভোর ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ১০টায় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ (আওয়ামী লীগের পক্ষে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ এমপির নেতৃত্বে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে সীমিত পরিসরে স্থানীয় নেতাকর্মীরা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন)।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বৈশি^ক মহামারী করোনাভাইরাসে সৃষ্ট সংকটের কারণে সীমিত পরিসরে ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালনের জন্য দলের এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

একই সঙ্গে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদ, দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোন, মুক্তিযুদ্ধের সব সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ঘরে বসেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালনের জন্য সর্বস্তরের জনগণ ও দেশবাসীকে আহ্বান জানান।

মেহেরপুরে মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে ‘সীমিত আকারে’র প্রস্তুতি

মেহেরপুরে প্রতিবছর নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। এই দিনে বিভিন্ন নেতা আসেন মুজিবনগরে কিন্তু গত বছরের মতো এবারও ২য় ধাপে করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সীমিত আকারে পালন করা হবে দিবসটি আর দিবসটি পালনে চলছে ছোট পরিসরের প্রস্তুতি। করোনা মহামারী প্রতিরোধে সারাদেশে চলছে লকডাউন। সেই প্রেক্ষাপটে এবার সংক্ষিপ্তভাবে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালন করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মেহেরপুর জেলা প্রশাসন। এবারের কর্মসূচির মধ্যে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা, মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টায় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, গার্ড অব অনার দেয়া হবে।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহামুদ স্বপনের। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

দিবসটি পালনে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ ধোয়ামোছার কাজ এখন শেষ হয়েছে। মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স ও জেলা পর্যায়ে সব সরকারি দপ্তরে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। এছাড়াও জনস্বাস্থ্য, এলজিইডি, গণপূর্ত ও জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক প্রস্তুতি শেষ করেছে।