হেফাজতিদের কপটতা

আবু আফিয়া আহমদ

হেফাজতিরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মের নামে অধর্ম করেই যাচ্ছে। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতিরা যে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে তা থেকে স্পষ্ট প্রমাণ হয় তারা কোন ধর্মীয় সংগঠন নয়। তারা মূলত জঙ্গি সংগঠন। যারা পবিত্র কোরআনকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়, যাদের কাছে কোরআনের কোন মূল্য নেই তারা আবার কেমন ইসলামের হেফাজতকারী? এছাড়া ইসলামের হেফাজতের দায়িত্ব তো স্বয়ং আল্লাহর। এরা আজ ইসলামের হেফাজতের কথা বলে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেই যাচ্ছে।

মোদি যদি তাদের সমস্যা হয় তাহলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের আক্রোশ কেন? সরকারি সম্পত্তি তাদের কি ক্ষতি করেছিল? কথায় কথায় তারা দেশ অচল করে দিবে বলে হুমকি দেয়। এই সাহস এরা কোথা থেকে পায়?

মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ আহমদ বাবুনগরী বলেছিলেন কোন কারণ বশত যদি মোদি বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করে তাহলে এ দেশের ১৬ কোটি মুসলমান চুপ করে বসে তাকবে না। কাফনের কাপড় নিয়ে শাপলা চত্বরে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা করব। বাংলাদেশে কে আসবে, কে যাবে, দেশের রাজনৈতিক বিষয়ে কি হবে না হবেÑএসব নিয়ে কথা বলার সাহস এরা কোথা থেকে পায়। অপর দিকে সুনামগঞ্জের শাল্লায় হেফাজতের অনুসারীরা মন্দিরসহ ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে। যেখানে অসাম্প্রদায়িক চেতনার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সেখানে এরা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেষ্টা করছে।

৩০ লাখ শহীদের রক্তের বন্যায় এবং দুই লাখ মা বোনের ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীন এই বাংলাদেশ। স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পূর্ণ হলেও স্বাধীনতাবিরোধীদের হুঙ্কার আজো শুনতে হয়। এই ধর্মান্ধরা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্যও ভাঙচুর করেছে। এরপূর্বে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করে আসছিল ধর্মান্ধগোষ্ঠীরা।

’৭১-এ এই ধর্মান্ধরা যেভাবে ধর্মের নামে অধর্ম করে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে ঠিক একই কায়দায় আজো দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়াজ মাহফিল, সিরাত মাহফিল, ইসলামী মহাসম্মেলন ইত্যাদি নামে সাধারণ জনগণকে দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য উত্তেজিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। ধর্মীয় ওয়াজেও কেউ যে এতটা উগ্রতা দেখাতে পারে তা হেফাজতের নেতা মামুনুল হকের বক্তৃতা না শুনলে বুঝা যাবে না। যেই মহান ব্যক্তির জন্য বাংলাদেশের জন্ম তার ভাস্কর্য বানালে নাকি সেই ভাস্কর্য এই ধর্মান্ধ এবং স্বাধীনতাবিরোধী চক্র তা বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করবে। এত বড় ধৃষ্টতা দেখানোর সহাস উগ্রধর্মান্ধরা কোথা থেকে পায়? আসলে ভাস্কর্যের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে তার পেছনে রয়েছে এদের সুদূর প্রসারি চিন্তাভাবনা। এরা চায় শান্তিপূর্ণ এ দেশটাকে পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে। এরা মূলত ক্ষমতা দখল ও বলপ্রয়োগের ইসলামে বিশ্বাসী ঠিক তেমনি আফগানিস্তানের তালেবানরাও এই একই পথ অবলম্বন করেছিল।

এই ধর্মান্ধরা যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তা যদি এখনই থামানো না যায় তাহলে এরা দেশটাকে আফগানিস্তান আর পাকিস্তানের দিকে নিয়ে যাবে। ধর্মান্ধতা, চরম সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী মতাদর্শের রাষ্ট্রীয় নীতির কারণেই পাকিস্তান আজ তলানিতে এবং ব্যর্থ রাষ্ট্র। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন এবং সর্বপ্রকার বৈষম্য থেকে মুক্তির মৌলিক সোপান ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতামুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রই প্রকৃতপক্ষে আসল বাংলাদেশ।

আজ পাকিস্তানের দিকে তাকালে মনে হয়, স্বাধীনতা না এলে হয়তো আমাদের অবস্থাও হতো তাদের মতোই। সৌভাগ্য, আমরা এড়াতে পেরেছি সেই পরিস্থিতি। ইতোমধ্যেই সরকার স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, হত্যা, খুন, ধর্ষণ, লুট ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় দেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী লাখো-কোটি মানুষের মনে বিরাট আশার সঞ্চার জাগিয়েছে। এদেশের স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার যারা আমাদের দেশের অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, নারী, শিশু এবং দেশ প্রেমিক জনতাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, ধর্ম রক্ষার নাম দিয়ে যারা কেড়ে নিয়েছিল মা-বোনদের ইজ্জত, তাদের রক্ষা করার জন্য যারাই মাঠে নামবে তারা কখনই সফল হবে না। এটা স্পষ্ট যে, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য যত দল গঠন করুক না কেন কোন শক্তি আজ পারবে না তাদের রক্ষা করতে।

[লেখক : সাংবাদিক]

abu.afia2016@gmail.com

image

হেফাজতের তাণ্ডবের শিকার হয়েছে দেশের বহু স্থাপনা

আরও খবর
মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়
মোর্শেদ আলী : এক নক্ষত্রের প্রস্থান

শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১ , ৪ বৈশাখ ১৪২৮ ৪ রমজান ১৪৪২

হেফাজতিদের কপটতা

আবু আফিয়া আহমদ

image

হেফাজতের তাণ্ডবের শিকার হয়েছে দেশের বহু স্থাপনা

হেফাজতিরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মের নামে অধর্ম করেই যাচ্ছে। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতিরা যে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে তা থেকে স্পষ্ট প্রমাণ হয় তারা কোন ধর্মীয় সংগঠন নয়। তারা মূলত জঙ্গি সংগঠন। যারা পবিত্র কোরআনকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়, যাদের কাছে কোরআনের কোন মূল্য নেই তারা আবার কেমন ইসলামের হেফাজতকারী? এছাড়া ইসলামের হেফাজতের দায়িত্ব তো স্বয়ং আল্লাহর। এরা আজ ইসলামের হেফাজতের কথা বলে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেই যাচ্ছে।

মোদি যদি তাদের সমস্যা হয় তাহলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের আক্রোশ কেন? সরকারি সম্পত্তি তাদের কি ক্ষতি করেছিল? কথায় কথায় তারা দেশ অচল করে দিবে বলে হুমকি দেয়। এই সাহস এরা কোথা থেকে পায়?

মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ আহমদ বাবুনগরী বলেছিলেন কোন কারণ বশত যদি মোদি বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করে তাহলে এ দেশের ১৬ কোটি মুসলমান চুপ করে বসে তাকবে না। কাফনের কাপড় নিয়ে শাপলা চত্বরে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা করব। বাংলাদেশে কে আসবে, কে যাবে, দেশের রাজনৈতিক বিষয়ে কি হবে না হবেÑএসব নিয়ে কথা বলার সাহস এরা কোথা থেকে পায়। অপর দিকে সুনামগঞ্জের শাল্লায় হেফাজতের অনুসারীরা মন্দিরসহ ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে। যেখানে অসাম্প্রদায়িক চেতনার ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সেখানে এরা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেষ্টা করছে।

৩০ লাখ শহীদের রক্তের বন্যায় এবং দুই লাখ মা বোনের ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীন এই বাংলাদেশ। স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পূর্ণ হলেও স্বাধীনতাবিরোধীদের হুঙ্কার আজো শুনতে হয়। এই ধর্মান্ধরা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্যও ভাঙচুর করেছে। এরপূর্বে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করে আসছিল ধর্মান্ধগোষ্ঠীরা।

’৭১-এ এই ধর্মান্ধরা যেভাবে ধর্মের নামে অধর্ম করে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে ঠিক একই কায়দায় আজো দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়াজ মাহফিল, সিরাত মাহফিল, ইসলামী মহাসম্মেলন ইত্যাদি নামে সাধারণ জনগণকে দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্য উত্তেজিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। ধর্মীয় ওয়াজেও কেউ যে এতটা উগ্রতা দেখাতে পারে তা হেফাজতের নেতা মামুনুল হকের বক্তৃতা না শুনলে বুঝা যাবে না। যেই মহান ব্যক্তির জন্য বাংলাদেশের জন্ম তার ভাস্কর্য বানালে নাকি সেই ভাস্কর্য এই ধর্মান্ধ এবং স্বাধীনতাবিরোধী চক্র তা বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করবে। এত বড় ধৃষ্টতা দেখানোর সহাস উগ্রধর্মান্ধরা কোথা থেকে পায়? আসলে ভাস্কর্যের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে তার পেছনে রয়েছে এদের সুদূর প্রসারি চিন্তাভাবনা। এরা চায় শান্তিপূর্ণ এ দেশটাকে পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে। এরা মূলত ক্ষমতা দখল ও বলপ্রয়োগের ইসলামে বিশ্বাসী ঠিক তেমনি আফগানিস্তানের তালেবানরাও এই একই পথ অবলম্বন করেছিল।

এই ধর্মান্ধরা যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তা যদি এখনই থামানো না যায় তাহলে এরা দেশটাকে আফগানিস্তান আর পাকিস্তানের দিকে নিয়ে যাবে। ধর্মান্ধতা, চরম সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদী মতাদর্শের রাষ্ট্রীয় নীতির কারণেই পাকিস্তান আজ তলানিতে এবং ব্যর্থ রাষ্ট্র। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন এবং সর্বপ্রকার বৈষম্য থেকে মুক্তির মৌলিক সোপান ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতামুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রই প্রকৃতপক্ষে আসল বাংলাদেশ।

আজ পাকিস্তানের দিকে তাকালে মনে হয়, স্বাধীনতা না এলে হয়তো আমাদের অবস্থাও হতো তাদের মতোই। সৌভাগ্য, আমরা এড়াতে পেরেছি সেই পরিস্থিতি। ইতোমধ্যেই সরকার স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, হত্যা, খুন, ধর্ষণ, লুট ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় দেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী লাখো-কোটি মানুষের মনে বিরাট আশার সঞ্চার জাগিয়েছে। এদেশের স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার যারা আমাদের দেশের অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, নারী, শিশু এবং দেশ প্রেমিক জনতাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, ধর্ম রক্ষার নাম দিয়ে যারা কেড়ে নিয়েছিল মা-বোনদের ইজ্জত, তাদের রক্ষা করার জন্য যারাই মাঠে নামবে তারা কখনই সফল হবে না। এটা স্পষ্ট যে, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য যত দল গঠন করুক না কেন কোন শক্তি আজ পারবে না তাদের রক্ষা করতে।

[লেখক : সাংবাদিক]

abu.afia2016@gmail.com