কবরীর প্রয়াণে তারকাদের শোক

করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৭ এপ্রিল প্রয়াত হলেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবন্তি নায়িকা কবরী সারওয়ার। কবরীর অকাল প্রয়াণে চলচ্চিত্রের অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষরা কবরীর ছবি পোস্ট করে তাদের শোক প্রকাশ করছে। সামাজিক যোগাযোগর এ মাধ্যমটি গতকাল খেকে যেন হয়ে গেছে কবরী ময়। শোকে আক্রান্ত কবরীর দীর্ঘদিনের সহকর্মীরাও।

নায়ক আলমগীর বলেন, ‘কবরী ম্যাডাম কত বড় মাপের একজন শিল্পী ছিলেন তা বলার যোগ্যতা আমি রাখি না। কারণ আমি চলচ্চিত্রে আসার অনেক আগেই তিনি নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। যদিও বা আমাদের বয়স একেবারেই কাছাকাছি। কিন্তু যেহেতু তিনি আমার আগেই সিনেমাতে এসেছিলেন, তাই তিনি আমার বড় বোনই ছিলেন। তার সঙ্গে অনেক স্মৃতি। সিনেমায় এমন প্রাণবন্ত শিল্পী খুব কমই পাওয়া যায়। তার সঙ্গে যখনই কোন সিনেমার আউটডোরে গিয়েছি, মনেই হতো না যে ঢাকার বাইরে আছি। কে কী করছেন, কে কী খেলেন, কে কোথায় ঘুমাবে, সব খবরই তিনি রাখতেন। কিছুদিন আগে আমার আপন ছোট বোনকে হারালাম। আর এখন হারালাম বড় বোনকে। দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্ত নসীব করেন।’

কবরীর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ববিতা বলেন, ‘ভেবেছিলাম কবরী আপার মৃত্যুর খবরটা গুজব। কারণ আমার বিশ^াস ছিল আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনবেন। কিন্তু গভীর রাতে খবরটি পেয়ে আর ঘুমাতে পারিনি। আমি যখন সিনেমায় আসি কবরী আপা তখন নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তারসঙ্গে ১৯৭৯ সালে সিরাজুল ইসলামের ‘সোনার হরিণ’ এবং পরবর্তীতে গাজী মাহবুরের পরিচালনায় ‘রাজা সূর্য খাঁ’ সিনেমাতে অভিনয় করেছিলাম। এই দুটো সিনেমা’র বাইরে আর কোন সিনেমাতেই আমাদের একসঙ্গে কাজ করা হয়ে উঠেনি। যাইহোক, দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্ত নসীব করেন।’

কবরী ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আয়না’ নামের একটি সিনেমা প্রথম নির্মাণ করেন। এতে নায়ক ছিলেন ফেরদৌস। কবরী প্রসঙ্গে ফেরদৌস বলেন, ‘ কিছু কিছু সময় আসে যে সময় মন খারাপের বিষয়টা আসলে ভাষায় প্রকাশের নয়। এতো কাছের একজন মানুষ ছিলেন কবরী আপা, যে তার এই চলে যাওয়াটা অবিশ^াস্যই মনে হচ্ছিল আমার কাছে। একটা অদ্ভূত বিশ^াস কাজ করেছিল যে তিনি হয়তো ফিরে আসবেন। তারসঙ্গে আমার একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। তার প্রথম নির্দেশিত সিনেমার নায়ক হতে পেরেছি, এটা আমার জন্য সত্যিই অনেক বড় সৌভাগ্য। সবচেয়ে বড় কষ্টের বিষয়, এমন মহান একজন মানুষ চলে গেলেন তাকে আমরা রাজসিকভাবে বিদায়ও জানাতে পারলাম না। এটা খুব কষ্টের, যন্ত্রণার।’

‘আয়না’তে নায়িকা হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন সোহানা সাবা। সাবা বলেন, ‘কত বড় সৌভাগ্যবান হলে আমি কবরী আপা নির্দেশিত প্রথম সিনেমাতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমার বাবা মা আমাকে জন্ম দিয়েছেন, সত্যি। কিন্তু আমাকে দর্শকের কাছে সোহানা সাবা হিসেবে জন্ম দিয়েছেন কবরী আপা। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। আমি সবসময়ই বলি, কবরী আপা আমার জীবনের দেবী, এখনও কোথাও যখন যাই মানুষ যে সম্মান করেন, তা তারই সিনেমায় অভিনয় করার কারণে। আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসীব করুন।’

রবিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২১ , ৫ বৈশাখ ১৪২৮ ৫ রমজান ১৪৪২

কবরীর প্রয়াণে তারকাদের শোক

বিনোদন প্রতিবেদক |

image

করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৭ এপ্রিল প্রয়াত হলেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবন্তি নায়িকা কবরী সারওয়ার। কবরীর অকাল প্রয়াণে চলচ্চিত্রের অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষরা কবরীর ছবি পোস্ট করে তাদের শোক প্রকাশ করছে। সামাজিক যোগাযোগর এ মাধ্যমটি গতকাল খেকে যেন হয়ে গেছে কবরী ময়। শোকে আক্রান্ত কবরীর দীর্ঘদিনের সহকর্মীরাও।

নায়ক আলমগীর বলেন, ‘কবরী ম্যাডাম কত বড় মাপের একজন শিল্পী ছিলেন তা বলার যোগ্যতা আমি রাখি না। কারণ আমি চলচ্চিত্রে আসার অনেক আগেই তিনি নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। যদিও বা আমাদের বয়স একেবারেই কাছাকাছি। কিন্তু যেহেতু তিনি আমার আগেই সিনেমাতে এসেছিলেন, তাই তিনি আমার বড় বোনই ছিলেন। তার সঙ্গে অনেক স্মৃতি। সিনেমায় এমন প্রাণবন্ত শিল্পী খুব কমই পাওয়া যায়। তার সঙ্গে যখনই কোন সিনেমার আউটডোরে গিয়েছি, মনেই হতো না যে ঢাকার বাইরে আছি। কে কী করছেন, কে কী খেলেন, কে কোথায় ঘুমাবে, সব খবরই তিনি রাখতেন। কিছুদিন আগে আমার আপন ছোট বোনকে হারালাম। আর এখন হারালাম বড় বোনকে। দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্ত নসীব করেন।’

কবরীর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ববিতা বলেন, ‘ভেবেছিলাম কবরী আপার মৃত্যুর খবরটা গুজব। কারণ আমার বিশ^াস ছিল আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনবেন। কিন্তু গভীর রাতে খবরটি পেয়ে আর ঘুমাতে পারিনি। আমি যখন সিনেমায় আসি কবরী আপা তখন নায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তারসঙ্গে ১৯৭৯ সালে সিরাজুল ইসলামের ‘সোনার হরিণ’ এবং পরবর্তীতে গাজী মাহবুরের পরিচালনায় ‘রাজা সূর্য খাঁ’ সিনেমাতে অভিনয় করেছিলাম। এই দুটো সিনেমা’র বাইরে আর কোন সিনেমাতেই আমাদের একসঙ্গে কাজ করা হয়ে উঠেনি। যাইহোক, দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্ত নসীব করেন।’

কবরী ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আয়না’ নামের একটি সিনেমা প্রথম নির্মাণ করেন। এতে নায়ক ছিলেন ফেরদৌস। কবরী প্রসঙ্গে ফেরদৌস বলেন, ‘ কিছু কিছু সময় আসে যে সময় মন খারাপের বিষয়টা আসলে ভাষায় প্রকাশের নয়। এতো কাছের একজন মানুষ ছিলেন কবরী আপা, যে তার এই চলে যাওয়াটা অবিশ^াস্যই মনে হচ্ছিল আমার কাছে। একটা অদ্ভূত বিশ^াস কাজ করেছিল যে তিনি হয়তো ফিরে আসবেন। তারসঙ্গে আমার একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। তার প্রথম নির্দেশিত সিনেমার নায়ক হতে পেরেছি, এটা আমার জন্য সত্যিই অনেক বড় সৌভাগ্য। সবচেয়ে বড় কষ্টের বিষয়, এমন মহান একজন মানুষ চলে গেলেন তাকে আমরা রাজসিকভাবে বিদায়ও জানাতে পারলাম না। এটা খুব কষ্টের, যন্ত্রণার।’

‘আয়না’তে নায়িকা হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন সোহানা সাবা। সাবা বলেন, ‘কত বড় সৌভাগ্যবান হলে আমি কবরী আপা নির্দেশিত প্রথম সিনেমাতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমার বাবা মা আমাকে জন্ম দিয়েছেন, সত্যি। কিন্তু আমাকে দর্শকের কাছে সোহানা সাবা হিসেবে জন্ম দিয়েছেন কবরী আপা। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। আমি সবসময়ই বলি, কবরী আপা আমার জীবনের দেবী, এখনও কোথাও যখন যাই মানুষ যে সম্মান করেন, তা তারই সিনেমায় অভিনয় করার কারণে। আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসীব করুন।’