আবার ১০১ জনের মৃত্যু

এক সপ্তাহে মৃত্যু বেড়েছে ৩৯ শতাংশ

টানা দু’দিন দেশে করোনা শনাক্ত কমেছে। কমেনি মৃত্যু। গতকালও ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে মৃত্যু প্রায় ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। স্বস্থির খবর হলো- করোনা আক্রান্তদের মধ্যে এক সপ্তাহে সুস্থতা বেড়েছে ৬১ শতাংশের বেশি। যদিও এক সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা কমেছে ২০ শতাংশ; শনাক্তও কমেছে ২৫ শতাংশের বেশি।

গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে করোনায় ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগের দিনও সমসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়।

সারাদেশে শনিবার করোনা শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ৪৭৩ জনের, যা গত ২২ মার্চের পর সবচেয়ে কম। এর আগের দিন (১৬ এপ্রিল) চার হাজার ৪১৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়।

এ বছরের মার্চের শুরুতে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। ১ মার্চ ৫৮৫ জনের সংক্রমণ শনাক্ত করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর দ্রুত বাড়তে থাকে সংক্রমণ। ২২ মার্চ দুই হাজার ৮০৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ২৮ মার্চ পর্যন্ত দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারের নিচে নামেনি। ২৯ মার্চ শনাক্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ১ এপ্রিল প্রায় সাড়ে ছয় হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর কিছুদিন শনাক্তের সংখ্যা সাত হাজারের বেশি ছিল।

১৩ এপ্রিল থেকে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমে আসছে, যদিও গত কয়েকদিন ধরে দৈনিক নমুনা পরীক্ষাও কম হচ্ছে। ১৩ এপ্রিল ছয় হাজার ২৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। এরপর ১৪ এপ্রিল পাঁচ হাজার ১৮৫ জন, ১৫ এপ্রিল চার হাজার ১৯২ জনের করোনা শনাক্ত করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এক সপ্তাহে মৃত্যু ও সুস্থতা বেড়েছে

‘এপিডেমিওলজিকাল (রোগ বিস্তার সংক্রান্ত) সপ্তাহ ২০২১’ এর ১৫তম সপ্তাহে ১১ এপ্রিল থেকে গতকাল পর্যন্ত ৬২২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৪৪৮ জন। এ হিসেবে এক সপ্তাহে মৃত্যু বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে ৩৬ হাজার ৪৩৭ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। চলতি বছরের ১৪তম সপ্তাহে সুস্থতার সংখ্যা ছিল ২২ হাজার ৬০৩ জন। এ হিসেবে এক সপ্তাহে সুস্থতা বেড়েছে ৬১ দশমিক ২০ শতাংশ।

কমেছে নমুনা পরীক্ষা ও শনাক্ত

১৫তম সপ্তাহে এক লাখ ৭৭ হাজার ১৭৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। ১৪তম সপ্তাহে এই সংখ্যা ছিল দুই লাখ ২০ হাজার ৮২৮টি। এ হিসেবে এক সপ্তাহে ১৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ নমুনা পরীক্ষা কমেছে।

নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ১৫তম সপ্তাহে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৬ হাজার ৩১৫ জনের। এর আগের সপ্তাহে শনাক্ত হয়েছিল ৪৮ হাজার ৬৬০ জনের করোনা সংক্রমণ। এ হিসেবে এক সপ্তাহে শনাক্ত কমেছে ২৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

২৪ ঘণ্টার করোনা শনাক্ত ও মৃত্যু

গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১০১ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট দশ হাজার ২৮৩ জনের মৃত্যু হলো।

আর নতুন শনাক্ত হওয়া তিন হাজার ৪৭৩ জনকে নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল সাত লাখ ১৫ হাজার ২৫২ জনে।

শনিবারে বাসাবাড়ি ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাঁচ হাজার ৯০৭ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়ালো ছয় লাখ আট হাজার ৮১৫ জনে। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে করোনা শনাক্তের দিক থেকে ৩৩তম এবং প্রাণহানীর সংখ্যায় ৩৮তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা শনাক্তের কথা জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। এরপর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম একজনের মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে মোট ২৫৭টি ল্যাবে (পরীক্ষাগার) ১৬ হাজার ১৮৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫১ লাখ ৫০ হাজার ৬৬৩টি।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৪৬ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মোট সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ১২ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

ওই ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে ৬৯ জন পুরুষ আর ৩২ জন নারী। এর মধ্যে ৯৯ জন হাসপাতালে এবং দুইজনের মৃত্যু হয়েছে বাড়িতে।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১০১ জনের মধ্যে ৫৮ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ২৯ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, আটজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, তিনজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং তিনজনের বয়স ছিল ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।

মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৬৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ২৩ জন, রাজশাহী বিভাগের দুইজন, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগের তিনজন করে, বরিশাল বিভাগের একজন এবং সিলেট বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন দুইজন।

করোনায় দেশে মোট মারা যাওয়া ১০ হাজার ২৮৩ জনের মধ্যে সাত হাজার ৬৩৫ জন পুরুষ এবং দুই হাজার ৬৪৮ জন নারী।

রবিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২১ , ৫ বৈশাখ ১৪২৮ ৫ রমজান ১৪৪২

আবার ১০১ জনের মৃত্যু

এক সপ্তাহে মৃত্যু বেড়েছে ৩৯ শতাংশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

টানা দু’দিন দেশে করোনা শনাক্ত কমেছে। কমেনি মৃত্যু। গতকালও ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে মৃত্যু প্রায় ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। স্বস্থির খবর হলো- করোনা আক্রান্তদের মধ্যে এক সপ্তাহে সুস্থতা বেড়েছে ৬১ শতাংশের বেশি। যদিও এক সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা কমেছে ২০ শতাংশ; শনাক্তও কমেছে ২৫ শতাংশের বেশি।

গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে করোনায় ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগের দিনও সমসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়।

সারাদেশে শনিবার করোনা শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ৪৭৩ জনের, যা গত ২২ মার্চের পর সবচেয়ে কম। এর আগের দিন (১৬ এপ্রিল) চার হাজার ৪১৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়।

এ বছরের মার্চের শুরুতে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। ১ মার্চ ৫৮৫ জনের সংক্রমণ শনাক্ত করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর দ্রুত বাড়তে থাকে সংক্রমণ। ২২ মার্চ দুই হাজার ৮০৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ২৮ মার্চ পর্যন্ত দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারের নিচে নামেনি। ২৯ মার্চ শনাক্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ১ এপ্রিল প্রায় সাড়ে ছয় হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর কিছুদিন শনাক্তের সংখ্যা সাত হাজারের বেশি ছিল।

১৩ এপ্রিল থেকে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমে আসছে, যদিও গত কয়েকদিন ধরে দৈনিক নমুনা পরীক্ষাও কম হচ্ছে। ১৩ এপ্রিল ছয় হাজার ২৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। এরপর ১৪ এপ্রিল পাঁচ হাজার ১৮৫ জন, ১৫ এপ্রিল চার হাজার ১৯২ জনের করোনা শনাক্ত করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এক সপ্তাহে মৃত্যু ও সুস্থতা বেড়েছে

‘এপিডেমিওলজিকাল (রোগ বিস্তার সংক্রান্ত) সপ্তাহ ২০২১’ এর ১৫তম সপ্তাহে ১১ এপ্রিল থেকে গতকাল পর্যন্ত ৬২২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৪৪৮ জন। এ হিসেবে এক সপ্তাহে মৃত্যু বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে ৩৬ হাজার ৪৩৭ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। চলতি বছরের ১৪তম সপ্তাহে সুস্থতার সংখ্যা ছিল ২২ হাজার ৬০৩ জন। এ হিসেবে এক সপ্তাহে সুস্থতা বেড়েছে ৬১ দশমিক ২০ শতাংশ।

কমেছে নমুনা পরীক্ষা ও শনাক্ত

১৫তম সপ্তাহে এক লাখ ৭৭ হাজার ১৭৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। ১৪তম সপ্তাহে এই সংখ্যা ছিল দুই লাখ ২০ হাজার ৮২৮টি। এ হিসেবে এক সপ্তাহে ১৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ নমুনা পরীক্ষা কমেছে।

নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ১৫তম সপ্তাহে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৬ হাজার ৩১৫ জনের। এর আগের সপ্তাহে শনাক্ত হয়েছিল ৪৮ হাজার ৬৬০ জনের করোনা সংক্রমণ। এ হিসেবে এক সপ্তাহে শনাক্ত কমেছে ২৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

২৪ ঘণ্টার করোনা শনাক্ত ও মৃত্যু

গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১০১ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট দশ হাজার ২৮৩ জনের মৃত্যু হলো।

আর নতুন শনাক্ত হওয়া তিন হাজার ৪৭৩ জনকে নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল সাত লাখ ১৫ হাজার ২৫২ জনে।

শনিবারে বাসাবাড়ি ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাঁচ হাজার ৯০৭ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়ালো ছয় লাখ আট হাজার ৮১৫ জনে। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে করোনা শনাক্তের দিক থেকে ৩৩তম এবং প্রাণহানীর সংখ্যায় ৩৮তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা শনাক্তের কথা জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। এরপর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনায় প্রথম একজনের মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে মোট ২৫৭টি ল্যাবে (পরীক্ষাগার) ১৬ হাজার ১৮৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৫১ লাখ ৫০ হাজার ৬৬৩টি।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৪৬ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মোট সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ১২ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

ওই ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে ৬৯ জন পুরুষ আর ৩২ জন নারী। এর মধ্যে ৯৯ জন হাসপাতালে এবং দুইজনের মৃত্যু হয়েছে বাড়িতে।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১০১ জনের মধ্যে ৫৮ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ২৯ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, আটজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, তিনজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং তিনজনের বয়স ছিল ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।

মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৬৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ২৩ জন, রাজশাহী বিভাগের দুইজন, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগের তিনজন করে, বরিশাল বিভাগের একজন এবং সিলেট বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন দুইজন।

করোনায় দেশে মোট মারা যাওয়া ১০ হাজার ২৮৩ জনের মধ্যে সাত হাজার ৬৩৫ জন পুরুষ এবং দুই হাজার ৬৪৮ জন নারী।