রাজধানীর উত্তরায় রাজউক অ্যাপার্টমেন্টে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, কলাম লেখক ও রাজনীতি বিশ্লেষক ড. তারেক শামসুর রেহমানের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরের রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টের চার নম্বর সড়কের দোলনচাঁপা অ্যাপার্টমেন্টের ১২/এ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে তার মরদেহটি উদ্ধার করে তুরাগ থানা পুলিশ। পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ- কমিশনার শহীদুল্লাহ জানান, শনিবার বেলা ১১টার দিকে খবর পেয়ে তুরাগ থানা পুলিশ ঘরের দরজা ভেঙে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে। লাশটি বেডরুমে পড়ে ছিল। তবে দুই পা বাথরুমের দরজার দিকে ছিল। বাম পায়ে মোজা পরা ছিল। পরনে ছিল স্যান্ডো গেঞ্জি ও নীল রঙের প্যান্ট। প্যান্টের দুই পায়ের কাপড় হাঁটু পর্যন্ত ভাঁজ করা ছিল। নাক দিয়ে রক্ত ঝরে তা শুকিয়ে গেছে। ডান কাঁধে ঠেস দিয়ে কাত হয়ে তিনি মেঝেতে পড়ে যান। ডান হাত বুকের সঙ্গে স্পর্শ করা ছিল। মেঝেতে মাথার নিচ থেকে বুক পর্যন্ত বমি পড়েছিল যা শুকিয়ে গেছে। তিনি স্ট্রোক করেছেন নাকি অন্য কোন কারণে তার মৃত্যু হয়েছে তা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তিনি আরও জানান, বছর দুই আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তার স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তিনি উত্তরার ওই ফ্ল্যাটে একাই বসবাস করে আসছিলেন।
রাজউকের উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক মো. মোজাফফর আহমেদ জানান, শনিবার সকালে তারেক শামসুর রেহমানের বাসায় যান তার বাসার গৃহকর্মী। তখন তিনি দরজার বাইরে থেকে কলিংবেল বাজাতে থাকলেও ভেতর থেকে কোন সাড়াশব্দ নেই এবং কেউ দরজা খুলছিল না। পরে গৃহকর্মী নিচে গিয়ে বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীকে বিষয়টি জানান। এরপর ওই ভবনের লোকজন ও আশপাশের সবাই ওই বাসার দরজায় গিয়ে তারেক শামসুর রেহমানকে ডাকাডাকি করলেও তার কোন সাড়াশব্দ পায়নি। পরে বেলা ১১টার দিকে ফোন করে বিষয়টি তুরাগ থানা পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় ভেতর থেকে দরজা আটকানো এবং কোন সাড়াশব্দ নেই। পরে পুলিশ ওই বাসার দরজা ভেঙে তার মরদেহ উদ্ধার করে।
তুরাগ থানার ওসি মেহেদী হাসান জানান, স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই বাসার দরজা ভেঙে মরদেহটি উদ্ধার করে। তিনি স্ট্রোক করেছেন নাকি অন্য কোন কারণে তার মৃত্যু হয়েছে তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে। উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার শহীদুল্লাহ আরও বলেন, গত শুক্রবার সকালে অধ্যাপক তারেক বাজার করার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। সর্বশেষ শুক্রবার রাত ১০টার দিকে পিরোজপুরে বসবাসরত তার ভাতিজির কাছে ফোন করে তার শরীরে অসুস্থতার কথা জানায়। তিনি তার ভাতিজিকে ফুড পয়জনিংয়ের বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তখন ভাতিজি তাকে ওষুধ খেতে পরামর্শ দেন। এরপর তার মোবাইল ফোনে কারও সঙ্গে কথা হয়নি। প্রসঙ্গত বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক সদস্য তারেক শামসুর রেহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতি, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক ও বৈদেশিক নীতি এবং তুলনামূলক রাজনীতি নিয়ে তার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রয়েছে। বই লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখতেন তিনি। দেশের অন্যতম সেরা রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে খ্যাতি রয়েছে তারেক শামসুর রেহমানের। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছেÑ ইরাক যুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক রাজনীতি, গণতন্ত্রের শত্রু-মিত্র, নয়া বিশ্বব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, বিশ্ব রাজনীতির চালচিত্র, উপ-আঞ্চলিক জোট, ট্রানজিট ইস্যু ও গ্যাস রফতানি প্রসঙ্গ, বাংলাদেশ : রাষ্ট্র ও রাজনীতি, বাংলাদেশ : রাজনীতির ২৫ বছর, বাংলাদেশ : রাজনীতির চার দশক, গঙ্গার পানি চুক্তি : প্রেক্ষিত ও সম্ভাবনা, সোভিয়েত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর ইত্যাদি।
রবিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২১ , ৫ বৈশাখ ১৪২৮ ৫ রমজান ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
রাজধানীর উত্তরায় রাজউক অ্যাপার্টমেন্টে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, কলাম লেখক ও রাজনীতি বিশ্লেষক ড. তারেক শামসুর রেহমানের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরের রাজউক অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টের চার নম্বর সড়কের দোলনচাঁপা অ্যাপার্টমেন্টের ১২/এ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে তার মরদেহটি উদ্ধার করে তুরাগ থানা পুলিশ। পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ- কমিশনার শহীদুল্লাহ জানান, শনিবার বেলা ১১টার দিকে খবর পেয়ে তুরাগ থানা পুলিশ ঘরের দরজা ভেঙে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে। লাশটি বেডরুমে পড়ে ছিল। তবে দুই পা বাথরুমের দরজার দিকে ছিল। বাম পায়ে মোজা পরা ছিল। পরনে ছিল স্যান্ডো গেঞ্জি ও নীল রঙের প্যান্ট। প্যান্টের দুই পায়ের কাপড় হাঁটু পর্যন্ত ভাঁজ করা ছিল। নাক দিয়ে রক্ত ঝরে তা শুকিয়ে গেছে। ডান কাঁধে ঠেস দিয়ে কাত হয়ে তিনি মেঝেতে পড়ে যান। ডান হাত বুকের সঙ্গে স্পর্শ করা ছিল। মেঝেতে মাথার নিচ থেকে বুক পর্যন্ত বমি পড়েছিল যা শুকিয়ে গেছে। তিনি স্ট্রোক করেছেন নাকি অন্য কোন কারণে তার মৃত্যু হয়েছে তা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তিনি আরও জানান, বছর দুই আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তার স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তিনি উত্তরার ওই ফ্ল্যাটে একাই বসবাস করে আসছিলেন।
রাজউকের উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক মো. মোজাফফর আহমেদ জানান, শনিবার সকালে তারেক শামসুর রেহমানের বাসায় যান তার বাসার গৃহকর্মী। তখন তিনি দরজার বাইরে থেকে কলিংবেল বাজাতে থাকলেও ভেতর থেকে কোন সাড়াশব্দ নেই এবং কেউ দরজা খুলছিল না। পরে গৃহকর্মী নিচে গিয়ে বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীকে বিষয়টি জানান। এরপর ওই ভবনের লোকজন ও আশপাশের সবাই ওই বাসার দরজায় গিয়ে তারেক শামসুর রেহমানকে ডাকাডাকি করলেও তার কোন সাড়াশব্দ পায়নি। পরে বেলা ১১টার দিকে ফোন করে বিষয়টি তুরাগ থানা পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় ভেতর থেকে দরজা আটকানো এবং কোন সাড়াশব্দ নেই। পরে পুলিশ ওই বাসার দরজা ভেঙে তার মরদেহ উদ্ধার করে।
তুরাগ থানার ওসি মেহেদী হাসান জানান, স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই বাসার দরজা ভেঙে মরদেহটি উদ্ধার করে। তিনি স্ট্রোক করেছেন নাকি অন্য কোন কারণে তার মৃত্যু হয়েছে তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে। উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার শহীদুল্লাহ আরও বলেন, গত শুক্রবার সকালে অধ্যাপক তারেক বাজার করার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। সর্বশেষ শুক্রবার রাত ১০টার দিকে পিরোজপুরে বসবাসরত তার ভাতিজির কাছে ফোন করে তার শরীরে অসুস্থতার কথা জানায়। তিনি তার ভাতিজিকে ফুড পয়জনিংয়ের বিষয়টি জানিয়েছিলেন। তখন ভাতিজি তাকে ওষুধ খেতে পরামর্শ দেন। এরপর তার মোবাইল ফোনে কারও সঙ্গে কথা হয়নি। প্রসঙ্গত বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক সদস্য তারেক শামসুর রেহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতি, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক ও বৈদেশিক নীতি এবং তুলনামূলক রাজনীতি নিয়ে তার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রয়েছে। বই লেখার পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখতেন তিনি। দেশের অন্যতম সেরা রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে খ্যাতি রয়েছে তারেক শামসুর রেহমানের। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছেÑ ইরাক যুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক রাজনীতি, গণতন্ত্রের শত্রু-মিত্র, নয়া বিশ্বব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, বিশ্ব রাজনীতির চালচিত্র, উপ-আঞ্চলিক জোট, ট্রানজিট ইস্যু ও গ্যাস রফতানি প্রসঙ্গ, বাংলাদেশ : রাষ্ট্র ও রাজনীতি, বাংলাদেশ : রাজনীতির ২৫ বছর, বাংলাদেশ : রাজনীতির চার দশক, গঙ্গার পানি চুক্তি : প্রেক্ষিত ও সম্ভাবনা, সোভিয়েত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর ইত্যাদি।