পঞ্চম দফার ভোটকে ঘিরেও উত্তপ্ত বাংলা। ভোটে হিংসাই যেন ট্রাডিশন। চতুর্থ দফায় ব্যাপক সহিংসতার পরে নির্বাচন কমিশন অনেক কড়া মনোভাব দেখালেও অশান্তির সেই একই ছবি দেখা গেল শনিবারের ভোটেও। পঞ্চম দফায় উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ১টি, পূর্ব বর্ধমানে ৮, নদিয়ায় ৮, জলপাইগুড়ি ৭, দার্জিলিং ৫ ও কালিম্পং জেলায় ১টি, মোট ৬ জেলার ৪৫টি আসনে ভোটগ্রহণ চলে।
কোথাও সংঘর্ষ, গুলি, বোমাবাজি আবার কোথাও চলে বিক্ষোভ ইত্যাদি। সকালের দিকে ভোট শান্তিপূর্ণভাবে চলতে থাকলেও বেলা বাড়তেই একটার পর একটা সংঘাতের ছবি উঠে আসতে থাকে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র থেকে।
গুলি চলে শান্তিপুরে। গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন এক তৃণমূল কর্মী। অভিযোগ, ভোট দিয়ে বেরোনোর সময় তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতিরা। তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের অভিযোগ, বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতিরা প্রথমে এলাকায় বোমাবাজি করে। যদিও এ ঘটনার কথা অস্বীকার করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। তাদের পাল্টা অভিযোগ, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলেই এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। গুলিতে আহত তৃণমূল কর্মীর নাম সন্তু বাউল। তাকে ভর্তি করা হয়েছে শান্তিপুর হাসপাতালে। নদীয়ার শান্তিপুরের ১৭৫ নম্বর বুথের সামনে এই ঘটনাটি ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে আসে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ। একদিকে যখন বিজেপির বিরুদ্ধে শান্তিপুরে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে তখন আবার অন্যদিকে আজ শান্তিপুরে বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকারকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল সমর্থকরা। পাশাপাশি মৌচাক কলোনির পার্শ্ববর্তী সাহা পুকুর এলাকার একটি পরিত্যক্ত জায়গা থেকে রাজা দেবনাথ নামে এক বিজেপি কর্মীকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে এলাকার মানুষ। তারা তড়িঘড়ি বাড়িতে খবর দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায় তাকে। সব মিলিয়ে পঞ্চম দফার ভোটে উত্তেজনার পারদ চড়েছে শান্তিপুরে।
ভোটের দিন দুপুর ১২টার দিকে জামার নিচে একটি বন্দুক নিয়ে দৌড়াতে দেখা যায় এক দুষ্কৃতিকে। চাকদার নির্দল প্রার্থী কৌশিক ভৌমিক বুথের বাইরে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিরা ভোটারদের পিস্তল নিয়ে ভয় দেখাচ্ছিল। এ ঘটনা পুলিশকে জানানো হলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এরপর কৌশিক ও তার অনুগামীরা নিজেরাই সেই তৃণমূল কর্মীদের তাড়া করেন। সেই সময়ই এক দুষ্কৃতির হাত থেকে বন্দুক রাস্তায় পড়ে যায়। এরপর ওই বন্দুকটি পাঞ্জাবিতে জড়িয়ে নিয়ে পুলিশের কাছে নিয়ে আসতে দেখা যায় কৌশিক ভৌমিককে। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার বাড়িতে গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি যেতে না চাইলে পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো ধস্তাধস্তি শুরু হয়। বকুলতলার ২৭০ নম্বর বুথে বোমার আঘাতে আহত হলেন চৈতন্য ভট্টাচার্য্য নামে এক বিজেপি কর্মী। তাকে কল্যাণীর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ভোট দিয়ে ফেরার পথে তার উপরে হামলা হয়েছিল বলে অভিযোগ। এই বুথে সকালেও বিজেপি বুথ সভাপতিকে মারধর করা হয়ে বলেও অভিযোগ। ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপি এলাকা অবরোধ করে।
ইভিএম কারচুপির অভিযোগ উঠল শিলিগুড়ির ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের হিন্দি হাইস্কুলের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে। অভিযোগ, ভোটাররা এক প্রার্থীকে ভোট দিলে ভোট পাচ্ছে অন্য প্রার্থী। শিলিগুড়ি বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী ওমপ্রকাশ মিশ্রকে দেখে তার সামনে ভোটারদের কয়েকজন এই ইস্যুতে ক্ষোভ দেখান। ওই বুথের ভোটারদের একাংশ জানান, ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ বুথের প্রিসাইডিং অফিসারকে জানানো হলেও কোন ফল হয়নি।
ভোটের দুপুরে অশান্তির খবর আসে সল্টলেকের শান্তিনগর থেকে। এখানে একপক্ষ বলছে, তাদের ভোট দিতে দেয়া হচ্ছে না, অন্য পক্ষ বলছে, এখানে কোন ঝামেলাই নেই কিন্তু এরই জেরে দু’পক্ষের মধ্যে ঘোরতর সংঘর্ষ, ইটবৃষ্টি সল্টলেকের শান্তিনগরে। বিজেপির অভিযোগ, তাদের ভোট দিতে দেয়া হচ্ছে না, ভয় দেখানো হচ্ছে ভোটারদের। অন্যদিকে, তৃণমূলের দাবি, এখানে কোন অশান্তিই ছিল না। ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণই ছিল কিন্তু বিজেপি ঝামেলা পাকানোর প্ররোচনা দেয়া হয়েছে। এক পর্যায়ে তৃণমূল বিজেপি দু’ক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। হয় ইটবৃষ্টি।
রবিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২১ , ৫ বৈশাখ ১৪২৮ ৫ রমজান ১৪৪২
দীপক মুখার্জী, কলকাতা
পঞ্চম দফার ভোটকে ঘিরেও উত্তপ্ত বাংলা। ভোটে হিংসাই যেন ট্রাডিশন। চতুর্থ দফায় ব্যাপক সহিংসতার পরে নির্বাচন কমিশন অনেক কড়া মনোভাব দেখালেও অশান্তির সেই একই ছবি দেখা গেল শনিবারের ভোটেও। পঞ্চম দফায় উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ১টি, পূর্ব বর্ধমানে ৮, নদিয়ায় ৮, জলপাইগুড়ি ৭, দার্জিলিং ৫ ও কালিম্পং জেলায় ১টি, মোট ৬ জেলার ৪৫টি আসনে ভোটগ্রহণ চলে।
কোথাও সংঘর্ষ, গুলি, বোমাবাজি আবার কোথাও চলে বিক্ষোভ ইত্যাদি। সকালের দিকে ভোট শান্তিপূর্ণভাবে চলতে থাকলেও বেলা বাড়তেই একটার পর একটা সংঘাতের ছবি উঠে আসতে থাকে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র থেকে।
গুলি চলে শান্তিপুরে। গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন এক তৃণমূল কর্মী। অভিযোগ, ভোট দিয়ে বেরোনোর সময় তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতিরা। তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের অভিযোগ, বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতিরা প্রথমে এলাকায় বোমাবাজি করে। যদিও এ ঘটনার কথা অস্বীকার করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। তাদের পাল্টা অভিযোগ, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলেই এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। গুলিতে আহত তৃণমূল কর্মীর নাম সন্তু বাউল। তাকে ভর্তি করা হয়েছে শান্তিপুর হাসপাতালে। নদীয়ার শান্তিপুরের ১৭৫ নম্বর বুথের সামনে এই ঘটনাটি ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে আসে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশ। একদিকে যখন বিজেপির বিরুদ্ধে শান্তিপুরে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠে তখন আবার অন্যদিকে আজ শান্তিপুরে বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকারকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল সমর্থকরা। পাশাপাশি মৌচাক কলোনির পার্শ্ববর্তী সাহা পুকুর এলাকার একটি পরিত্যক্ত জায়গা থেকে রাজা দেবনাথ নামে এক বিজেপি কর্মীকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে এলাকার মানুষ। তারা তড়িঘড়ি বাড়িতে খবর দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায় তাকে। সব মিলিয়ে পঞ্চম দফার ভোটে উত্তেজনার পারদ চড়েছে শান্তিপুরে।
ভোটের দিন দুপুর ১২টার দিকে জামার নিচে একটি বন্দুক নিয়ে দৌড়াতে দেখা যায় এক দুষ্কৃতিকে। চাকদার নির্দল প্রার্থী কৌশিক ভৌমিক বুথের বাইরে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিরা ভোটারদের পিস্তল নিয়ে ভয় দেখাচ্ছিল। এ ঘটনা পুলিশকে জানানো হলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এরপর কৌশিক ও তার অনুগামীরা নিজেরাই সেই তৃণমূল কর্মীদের তাড়া করেন। সেই সময়ই এক দুষ্কৃতির হাত থেকে বন্দুক রাস্তায় পড়ে যায়। এরপর ওই বন্দুকটি পাঞ্জাবিতে জড়িয়ে নিয়ে পুলিশের কাছে নিয়ে আসতে দেখা যায় কৌশিক ভৌমিককে। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার বাড়িতে গিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি যেতে না চাইলে পুলিশের সঙ্গে রীতিমতো ধস্তাধস্তি শুরু হয়। বকুলতলার ২৭০ নম্বর বুথে বোমার আঘাতে আহত হলেন চৈতন্য ভট্টাচার্য্য নামে এক বিজেপি কর্মী। তাকে কল্যাণীর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ভোট দিয়ে ফেরার পথে তার উপরে হামলা হয়েছিল বলে অভিযোগ। এই বুথে সকালেও বিজেপি বুথ সভাপতিকে মারধর করা হয়ে বলেও অভিযোগ। ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপি এলাকা অবরোধ করে।
ইভিএম কারচুপির অভিযোগ উঠল শিলিগুড়ির ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের হিন্দি হাইস্কুলের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে। অভিযোগ, ভোটাররা এক প্রার্থীকে ভোট দিলে ভোট পাচ্ছে অন্য প্রার্থী। শিলিগুড়ি বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী ওমপ্রকাশ মিশ্রকে দেখে তার সামনে ভোটারদের কয়েকজন এই ইস্যুতে ক্ষোভ দেখান। ওই বুথের ভোটারদের একাংশ জানান, ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ বুথের প্রিসাইডিং অফিসারকে জানানো হলেও কোন ফল হয়নি।
ভোটের দুপুরে অশান্তির খবর আসে সল্টলেকের শান্তিনগর থেকে। এখানে একপক্ষ বলছে, তাদের ভোট দিতে দেয়া হচ্ছে না, অন্য পক্ষ বলছে, এখানে কোন ঝামেলাই নেই কিন্তু এরই জেরে দু’পক্ষের মধ্যে ঘোরতর সংঘর্ষ, ইটবৃষ্টি সল্টলেকের শান্তিনগরে। বিজেপির অভিযোগ, তাদের ভোট দিতে দেয়া হচ্ছে না, ভয় দেখানো হচ্ছে ভোটারদের। অন্যদিকে, তৃণমূলের দাবি, এখানে কোন অশান্তিই ছিল না। ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণই ছিল কিন্তু বিজেপি ঝামেলা পাকানোর প্ররোচনা দেয়া হয়েছে। এক পর্যায়ে তৃণমূল বিজেপি দু’ক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। হয় ইটবৃষ্টি।