বাজেট প্রস্তাবনায় করোনা মোকাবিলাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব এফবিসিসিআই’র

আসন্ন বাজেটে করোনা মোকাবিলাকে সর্বচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রস্তাব করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সম্প্রতি সংগঠনটির নেতারা জানিয়েছেন, সরকারের প্রণোদনা ও নীতি সহায়তার ফলে দেশের অর্থনীতে করোনার প্রথম ধাক্কার ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠা গেলেও দ্বিতীয় ধাপে আবারও সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় আসন্ন বাজেট যেন গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় হয় এমন প্রত্যাশা তাদের।

তারা আরও বলেন, এবারের বাজেট হওয়া চাই করোনার বাস্তবাতার আলোকে। পণ্যে মূল্যসংযোজনের ভিত্তিতে ভ্যাট নির্ধারণ করা, অগ্রিম কর ও অগ্রিম আয়কর বিলুপ্ত করা, আমদানি বিকল্প পণ্যভিত্তিক বহুমুখীকরণ ও ভ্যালু চেইন উন্নয়নে যুক্ত শিল্পকে কর অবকাশ সুবিধা দেয়ার দাবি জানিয়েছে এফবিসিসিআই। একই সঙ্গে বিনিয়োগ আকর্ষণে করপোরেট কর কমিয়ে আনার প্রস্তাবও করা হয়েছে।

সংগঠনটির বাজেট প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট হবে সরকারের ভিশন-২০২১, ভিশন-২০৪১ এবং এসডিজি ২০৩০ বাস্তবায়নের আলোকে।

এছাড়া গুরুত্ব দিতে হবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও সরকারঘোষিত কভিড-১৯ প্রণোদনা পাকেজ ও করোনার দ্বিতীয় ধাপের সংকট মোকাবিলাকে। অগ্রিম আয়কর সমন্বয় বা ফেরত না দেয়ায় ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় বাড়ছে। এছাড়া এসব ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত জটিলতাও আছে। তাই এসব জটিলতা নিরসনসহ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) এবং অগ্রিম কর (এটি) বিলুপ্ত করার কথা হয়েছে। এছাড়া ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) অথবা সাপ্লাই অর্ডার (এসও) ব্যবসায়ীদের জন্য প্রযোজ্য সরকারের প্রজ্ঞাপন (এসআরও) বা আয়ের ওপর ভিত্তি করে আয়কর নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। মোট প্রাপ্তির পরিমাণ তিন কোটি টাকা বা তার বেশি হলে লাভলোকসান শেষে মোট প্রাপ্তির ০.৫ শতাংশ হারে ন্যূনতম আয়কর নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রাপ্তির পরিমাণ তিন কোটি টাকার পরিবর্তে পাঁচ কোটি টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটর, রিটেইলার, ফার্স্ট মুভিং কনজ্যুমার গুডস, কাপড়ের ব্যবসা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ভ্যালু অ্যাডিশনের হার প্রায় ২ থেকে ৬ শতাংশ। সব ক্ষেত্রেই যথাযথ পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে ভ্যালু অ্যাডিশনের ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিদ্যমান করপোরেট ট্যাক্স বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতির মাধ্যমে কস্ট-বেনিফিট অ্যানালিসিস এবং অপারচুনিটি কস্ট অ্যানালিসিস করে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ভ্যাট, আয়কর ও শুষ্ক একটি সমন্বিত স্বংয়ক্রিয় ব্যবস্থার অওতায় নিয়ে আসার প্রস্তাব করা হয়। কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বাড়াতে কর অবকাশ সুবিধার তালিকায় আমদানি বিকল্প শিল্প, পণ্যভিত্তিক ডাইভারসিফিকেশন ও ভ্যালু চেইন আপগ্রেডেশনে যুক্ত হওয়া যেকোন নতুন শিল্প যেমন খাদ্য উৎপাদন শিল্প, সিরামিক টাইলসসহ (ফ্লোরওয়াল) সব রকম সিরামিক টেবিলওয়্যার ও স্যানিটারিওয়্যার, রেফ্রিজারেটর, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রি-সাইক্লিং প্রভৃতি শিল্পকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করা হয়েছে। প্রান্তিক কৃষক থেকে বিভিন্ন প্রকার কৃষিজপণ্য যেমন- ধান, ভালো বাদাম, আলু, টমেটো, তরল দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, পেঁয়াজ, মরিচ, সরিষা ইত্যাদি উপকরণ কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংক টু ব্যাংক লেনদেন নিশ্চিত করা এবং উৎসস্থলে কর কর্তনের হার ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া পরিবেশবান্ধব রিসাইক্লিং খাতকে ভ্যাট ও টার্নওভার আওতা বহির্ভুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়।

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরকে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় ও কর অনুপাত বাড়াতে ব্যাংক টু ব্যাংক লেনদেন প্রক্রিয়া চালু করার কথা বলা হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে করের আওতা বাড়াতে কোন ব্যবসায়ী যদি মিস ডিক্লারেশন দেয়, এমন ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ তিনবার সুযোগ দিয়ে শাস্তির আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয়।

সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১ , ৬ বৈশাখ ১৪২৮ ৬ রমজান ১৪৪২

বাজেট প্রস্তাবনায় করোনা মোকাবিলাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব এফবিসিসিআই’র

image

আসন্ন বাজেটে করোনা মোকাবিলাকে সর্বচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রস্তাব করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সম্প্রতি সংগঠনটির নেতারা জানিয়েছেন, সরকারের প্রণোদনা ও নীতি সহায়তার ফলে দেশের অর্থনীতে করোনার প্রথম ধাক্কার ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠা গেলেও দ্বিতীয় ধাপে আবারও সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় আসন্ন বাজেট যেন গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় হয় এমন প্রত্যাশা তাদের।

তারা আরও বলেন, এবারের বাজেট হওয়া চাই করোনার বাস্তবাতার আলোকে। পণ্যে মূল্যসংযোজনের ভিত্তিতে ভ্যাট নির্ধারণ করা, অগ্রিম কর ও অগ্রিম আয়কর বিলুপ্ত করা, আমদানি বিকল্প পণ্যভিত্তিক বহুমুখীকরণ ও ভ্যালু চেইন উন্নয়নে যুক্ত শিল্পকে কর অবকাশ সুবিধা দেয়ার দাবি জানিয়েছে এফবিসিসিআই। একই সঙ্গে বিনিয়োগ আকর্ষণে করপোরেট কর কমিয়ে আনার প্রস্তাবও করা হয়েছে।

সংগঠনটির বাজেট প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট হবে সরকারের ভিশন-২০২১, ভিশন-২০৪১ এবং এসডিজি ২০৩০ বাস্তবায়নের আলোকে।

এছাড়া গুরুত্ব দিতে হবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও সরকারঘোষিত কভিড-১৯ প্রণোদনা পাকেজ ও করোনার দ্বিতীয় ধাপের সংকট মোকাবিলাকে। অগ্রিম আয়কর সমন্বয় বা ফেরত না দেয়ায় ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় বাড়ছে। এছাড়া এসব ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত জটিলতাও আছে। তাই এসব জটিলতা নিরসনসহ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) এবং অগ্রিম কর (এটি) বিলুপ্ত করার কথা হয়েছে। এছাড়া ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) অথবা সাপ্লাই অর্ডার (এসও) ব্যবসায়ীদের জন্য প্রযোজ্য সরকারের প্রজ্ঞাপন (এসআরও) বা আয়ের ওপর ভিত্তি করে আয়কর নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। মোট প্রাপ্তির পরিমাণ তিন কোটি টাকা বা তার বেশি হলে লাভলোকসান শেষে মোট প্রাপ্তির ০.৫ শতাংশ হারে ন্যূনতম আয়কর নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রাপ্তির পরিমাণ তিন কোটি টাকার পরিবর্তে পাঁচ কোটি টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটর, রিটেইলার, ফার্স্ট মুভিং কনজ্যুমার গুডস, কাপড়ের ব্যবসা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ভ্যালু অ্যাডিশনের হার প্রায় ২ থেকে ৬ শতাংশ। সব ক্ষেত্রেই যথাযথ পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে ভ্যালু অ্যাডিশনের ভিত্তিতে মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিদ্যমান করপোরেট ট্যাক্স বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতির মাধ্যমে কস্ট-বেনিফিট অ্যানালিসিস এবং অপারচুনিটি কস্ট অ্যানালিসিস করে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ভ্যাট, আয়কর ও শুষ্ক একটি সমন্বিত স্বংয়ক্রিয় ব্যবস্থার অওতায় নিয়ে আসার প্রস্তাব করা হয়। কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বাড়াতে কর অবকাশ সুবিধার তালিকায় আমদানি বিকল্প শিল্প, পণ্যভিত্তিক ডাইভারসিফিকেশন ও ভ্যালু চেইন আপগ্রেডেশনে যুক্ত হওয়া যেকোন নতুন শিল্প যেমন খাদ্য উৎপাদন শিল্প, সিরামিক টাইলসসহ (ফ্লোরওয়াল) সব রকম সিরামিক টেবিলওয়্যার ও স্যানিটারিওয়্যার, রেফ্রিজারেটর, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রি-সাইক্লিং প্রভৃতি শিল্পকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করা হয়েছে। প্রান্তিক কৃষক থেকে বিভিন্ন প্রকার কৃষিজপণ্য যেমন- ধান, ভালো বাদাম, আলু, টমেটো, তরল দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, পেঁয়াজ, মরিচ, সরিষা ইত্যাদি উপকরণ কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংক টু ব্যাংক লেনদেন নিশ্চিত করা এবং উৎসস্থলে কর কর্তনের হার ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া পরিবেশবান্ধব রিসাইক্লিং খাতকে ভ্যাট ও টার্নওভার আওতা বহির্ভুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়।

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরকে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় ও কর অনুপাত বাড়াতে ব্যাংক টু ব্যাংক লেনদেন প্রক্রিয়া চালু করার কথা বলা হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে করের আওতা বাড়াতে কোন ব্যবসায়ী যদি মিস ডিক্লারেশন দেয়, এমন ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ তিনবার সুযোগ দিয়ে শাস্তির আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয়।