আগে জীবন পরে জীবিকা প্রধান বিচারপতি

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ভার্চুয়াল বেঞ্চ আরও বাড়ানো গেলেও এখন জীবিকার চেয়ে জীবন বাঁচানোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার সময় প্রসঙ্গক্রমে প্রধান বিচারপতি এ মন্তব্য করেন।

আপিল বিভাগের বিভিন্ন মামলার শুনানি চলাকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘আমি তো বারের সম্পাদক। আইনজীবীরা আমাকে বিভিন্নভাবে হাইকোর্টে বেঞ্চের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন। অনেক আইনজীবী অর্থনৈতিক কষ্টে আছেন। আইনজীবীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই হাইকোর্টে বেঞ্চ বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছি। কারণ, আমাদের তো আপনি (প্রধান বিচারপতি) ছাড়া আবেদন করার আর কোন জায়গা নেই।’

এ সময় সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি মো. অজি উল্লাহ বলেন, ‘হাইকোর্টে জামিন ও রিট মোশনের বেঞ্চ বাড়ানোর জন্য আবেদন জানাই।’ পরে আইনজীবীদের আবেদনের জবাবে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আগে জীবন না জীবিকা? আমার তো মনে হয়, আগে জীবন পরে জীবিকা। করোনায় যেভাবে আক্রান্ত হচ্ছে, এ অবস্থায় তো আমরা সব কোর্ট খুলে দিতে পারি না। আমরা যদি এ অবস্থায় হাইকোর্টে ভার্চুয়াল বেঞ্চের সংখ্যা বাড়াতে যাই, তাহলে অনেক স্টাফকে সশরীরে কোর্টে আসতে হবে। এতে জনবল বেড়ে যাবে এবং করোনা আক্রান্তের ঝুঁকিও বাড়বে।’

তিনি বলেন, আমাদের জুডিশিয়াল অফিসার (বিচারিক কর্মকর্তা) দরকার দ্বিগুণ ও তিনগুণ। আইনজীবীরা যদি ভার্চুয়াল কোর্ট করেন, তাহলে একমাত্র উত্তরণের পথ আছে। তা না হলে ত্রিশ লাখ মামলা কোন দিন শেষ হবে না।

এ সময় আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘ভার্চুয়াল কোর্টের সংখ্যা বাড়িয়ে দেন মাই লর্ড।’

তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারক নিয়োগ, বিচারক ডাবল-ট্রিপল করা দরকার। বিচার বিভাগ পৃথককরণ হয়েছে ২০০৭ সালে, এখনও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বিল্ডিংয়ের জন্য সব জায়গা অধিগ্রহণ হয়নি। গাজীপুরের মতো জায়গায়-মন্ত্রী সাহেবকে বারবার বলি এটি তাড়াতাড়ি শেষ করেন। জায়গা নিয়ে গোলমাল, দুই-তিন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এটি সুরাহা হয় না। ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ পৃথক হয়েছে, আজকে ২০২১। এখনও জায়গা অধিগ্রহণ হয়নি, তারপরে বিল্ডিং করতে হবে। আমি আর কত বলব?

আদালতে ভার্চুয়ালি যুক্ত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএফ হাসান আরিফ বলেন, বহুতলবিশিষ্ট ভবনের জন্য নির্দেশনা দিতে পারেন। এছাড়া উপায় নেই, কেননা আমাদের জমিও কম। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, যেভাবে মামলা বিচারাধীন, দরকার হচ্ছে দুই থেকে তিনগুণ বেশি জজ।

ভার্চুয়ালি উপস্থিত অন্য আইনজীবী মো. ওজি উল্লাহ বলেন, মামলা দায়েরের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। আগের চেয়ে এখন মামলা দায়েরের হারও বেশি। তাকে উদ্দেশে করে প্রধান বিচারপতি বলেন, নি¤œ আদালতে দুইটার পরে আইনজীবীরা সব বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে যায়। আইনজীবী ওজি উল্লাহ বলেন, দেওয়ানি মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীরা এটি করে থাকেন।

এই পর্যায়ে সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস বলেন, রোজা, সামনে ঈদ, হাইকোর্টের বেঞ্চ বাড়ানোর বিষয়টি যদি একটু বিবেচনা করতেন।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, আমি পুরো আদালত বন্ধ করি নাই। এ অবস্থায় পুরো আদালত বন্ধ থাকা উচিত ছিল, তাও কোর্ট চলছে। ধন্যবাদ জানাবেন সরকারকে যে আইনটি (আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইন) করে দিয়েছে। এখনও ভারতে ও পাকিস্তানে আইন হয়নি।

আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, মি. রুহুল কুদ্দুস সমস্যা হচ্ছে কি এখন হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে ১৪০-১৪৫ জন স্টাফ আসেন। যদি হাইকোর্টে এখন ৩০-৪০ কোর্ট বা হাইকোর্ট সব ভার্চুয়ালি খুলে দেয়া হলে আমাদের যে প্রায় আড়াই হাজার স্টাফ আছে, সব চলে আসতে হবে। তা না হলে কোর্ট চালানো যাবে না।

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আপিল বিভাগ চলে মাত্র ৪০ জন স্টাফ দিয়ে। ছয় বিচারপতির জন্য ৪০ জন নয় ৩৬ জন স্টাফ আসে। তাও বয়স্ক ও মহিলা বাদ দিয়ে আপিল বিভাগে ৩৬ জন স্টাফ এবং হাইকোর্টে বিভাগে আসে ১০০ জন। প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনজীবীদের অসুবিধা হচ্ছে এটি আমরা বুঝি। কিন্তু জীবনও তো আছে। জীবনের সঙ্গে জীবিকাও লাগবে। দুটি লাগবে একসঙ্গে। জীবন-জীবিকা পাশাপাশি যায়। প্রথম জীবন তারপরে জীবিকা।

সমিতির সম্পাদকের উদ্দেশে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, আমাদের যে স্টাফ আছে, তাদের প্রত্যেকের পরিবার আছে। সব স্টাফ যদি আমরা কোর্টে নিয়ে আসি, আক্রান্ত যদি হয়, এর দায়িত্ব কে নেবে? প্রধান বিচারপতি বলেন, দশটি বেঞ্চের জন্য স্টাফ আনতে হবে এক হাজার। এখন এক হাজার স্টাফ আনতে আমি সাহস করি না। পরে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘দেখেন আগামী বুধবার কী হয়। সবাই ভালো থাকেন এবং বাসায় থাকেন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার কথা বলছি- ‘স্টে হোম, স্টে সেফ।’ পরে আদালত কার্যতালিকায় থাকা মামলাগুলোর ওপর শুনানি করেন।

আরও খবর
করোনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে
আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাতিল ফ্লাইটের টিকিট পাওয়া নিয়ে দুর্ভোগ প্রবাসীদের
অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান কাদের
নাট্যজন এসএম মহসীনের জীবনাবসান
চিত্রনায়ক ওয়াসিম বনানী কবরস্থানে সমাহিত
উপস্থাপক শফিউজ্জামান লোদির মৃত্যু
ইলিয়াস আলীর ‘গুম’ নিয়ে ‘সরল মনের’ বক্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছে বলে অভিযোগ মির্জা আব্বাসের
মোদি-মমতা বাদ-প্রতিবাদ
সরিয়ে নিতে স্টেকহোল্ডারদের চিঠি
বাগেরহাটে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ ধর্ষক গ্রেপ্তার
মোট রসুনের অর্ধেকই উৎপাদন হয় চলনবিল এলাকায় তবে দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
সাংবাদিককে জানানোর অপরাধে হাসপাতাল থেকে নাম কেটে দেয়া হলো!

সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১ , ৬ বৈশাখ ১৪২৮ ৬ রমজান ১৪৪২

আগে জীবন পরে জীবিকা প্রধান বিচারপতি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ভার্চুয়াল বেঞ্চ আরও বাড়ানো গেলেও এখন জীবিকার চেয়ে জীবন বাঁচানোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার সময় প্রসঙ্গক্রমে প্রধান বিচারপতি এ মন্তব্য করেন।

আপিল বিভাগের বিভিন্ন মামলার শুনানি চলাকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘আমি তো বারের সম্পাদক। আইনজীবীরা আমাকে বিভিন্নভাবে হাইকোর্টে বেঞ্চের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন। অনেক আইনজীবী অর্থনৈতিক কষ্টে আছেন। আইনজীবীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই হাইকোর্টে বেঞ্চ বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছি। কারণ, আমাদের তো আপনি (প্রধান বিচারপতি) ছাড়া আবেদন করার আর কোন জায়গা নেই।’

এ সময় সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি মো. অজি উল্লাহ বলেন, ‘হাইকোর্টে জামিন ও রিট মোশনের বেঞ্চ বাড়ানোর জন্য আবেদন জানাই।’ পরে আইনজীবীদের আবেদনের জবাবে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আগে জীবন না জীবিকা? আমার তো মনে হয়, আগে জীবন পরে জীবিকা। করোনায় যেভাবে আক্রান্ত হচ্ছে, এ অবস্থায় তো আমরা সব কোর্ট খুলে দিতে পারি না। আমরা যদি এ অবস্থায় হাইকোর্টে ভার্চুয়াল বেঞ্চের সংখ্যা বাড়াতে যাই, তাহলে অনেক স্টাফকে সশরীরে কোর্টে আসতে হবে। এতে জনবল বেড়ে যাবে এবং করোনা আক্রান্তের ঝুঁকিও বাড়বে।’

তিনি বলেন, আমাদের জুডিশিয়াল অফিসার (বিচারিক কর্মকর্তা) দরকার দ্বিগুণ ও তিনগুণ। আইনজীবীরা যদি ভার্চুয়াল কোর্ট করেন, তাহলে একমাত্র উত্তরণের পথ আছে। তা না হলে ত্রিশ লাখ মামলা কোন দিন শেষ হবে না।

এ সময় আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘ভার্চুয়াল কোর্টের সংখ্যা বাড়িয়ে দেন মাই লর্ড।’

তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারক নিয়োগ, বিচারক ডাবল-ট্রিপল করা দরকার। বিচার বিভাগ পৃথককরণ হয়েছে ২০০৭ সালে, এখনও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বিল্ডিংয়ের জন্য সব জায়গা অধিগ্রহণ হয়নি। গাজীপুরের মতো জায়গায়-মন্ত্রী সাহেবকে বারবার বলি এটি তাড়াতাড়ি শেষ করেন। জায়গা নিয়ে গোলমাল, দুই-তিন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এটি সুরাহা হয় না। ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ পৃথক হয়েছে, আজকে ২০২১। এখনও জায়গা অধিগ্রহণ হয়নি, তারপরে বিল্ডিং করতে হবে। আমি আর কত বলব?

আদালতে ভার্চুয়ালি যুক্ত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএফ হাসান আরিফ বলেন, বহুতলবিশিষ্ট ভবনের জন্য নির্দেশনা দিতে পারেন। এছাড়া উপায় নেই, কেননা আমাদের জমিও কম। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, যেভাবে মামলা বিচারাধীন, দরকার হচ্ছে দুই থেকে তিনগুণ বেশি জজ।

ভার্চুয়ালি উপস্থিত অন্য আইনজীবী মো. ওজি উল্লাহ বলেন, মামলা দায়েরের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। আগের চেয়ে এখন মামলা দায়েরের হারও বেশি। তাকে উদ্দেশে করে প্রধান বিচারপতি বলেন, নি¤œ আদালতে দুইটার পরে আইনজীবীরা সব বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে যায়। আইনজীবী ওজি উল্লাহ বলেন, দেওয়ানি মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবীরা এটি করে থাকেন।

এই পর্যায়ে সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস বলেন, রোজা, সামনে ঈদ, হাইকোর্টের বেঞ্চ বাড়ানোর বিষয়টি যদি একটু বিবেচনা করতেন।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, আমি পুরো আদালত বন্ধ করি নাই। এ অবস্থায় পুরো আদালত বন্ধ থাকা উচিত ছিল, তাও কোর্ট চলছে। ধন্যবাদ জানাবেন সরকারকে যে আইনটি (আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইন) করে দিয়েছে। এখনও ভারতে ও পাকিস্তানে আইন হয়নি।

আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, মি. রুহুল কুদ্দুস সমস্যা হচ্ছে কি এখন হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে ১৪০-১৪৫ জন স্টাফ আসেন। যদি হাইকোর্টে এখন ৩০-৪০ কোর্ট বা হাইকোর্ট সব ভার্চুয়ালি খুলে দেয়া হলে আমাদের যে প্রায় আড়াই হাজার স্টাফ আছে, সব চলে আসতে হবে। তা না হলে কোর্ট চালানো যাবে না।

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আপিল বিভাগ চলে মাত্র ৪০ জন স্টাফ দিয়ে। ছয় বিচারপতির জন্য ৪০ জন নয় ৩৬ জন স্টাফ আসে। তাও বয়স্ক ও মহিলা বাদ দিয়ে আপিল বিভাগে ৩৬ জন স্টাফ এবং হাইকোর্টে বিভাগে আসে ১০০ জন। প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনজীবীদের অসুবিধা হচ্ছে এটি আমরা বুঝি। কিন্তু জীবনও তো আছে। জীবনের সঙ্গে জীবিকাও লাগবে। দুটি লাগবে একসঙ্গে। জীবন-জীবিকা পাশাপাশি যায়। প্রথম জীবন তারপরে জীবিকা।

সমিতির সম্পাদকের উদ্দেশে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, আমাদের যে স্টাফ আছে, তাদের প্রত্যেকের পরিবার আছে। সব স্টাফ যদি আমরা কোর্টে নিয়ে আসি, আক্রান্ত যদি হয়, এর দায়িত্ব কে নেবে? প্রধান বিচারপতি বলেন, দশটি বেঞ্চের জন্য স্টাফ আনতে হবে এক হাজার। এখন এক হাজার স্টাফ আনতে আমি সাহস করি না। পরে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘দেখেন আগামী বুধবার কী হয়। সবাই ভালো থাকেন এবং বাসায় থাকেন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার কথা বলছি- ‘স্টে হোম, স্টে সেফ।’ পরে আদালত কার্যতালিকায় থাকা মামলাগুলোর ওপর শুনানি করেন।