আজিমপুর কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন
বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনয়শিল্পী, নাট্যশিক্ষক এসএম মহসীন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। গতকাল সকালে রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ অভিনয়শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন। এসএম মহসীনের বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। পরে বিকেলে ?‘গার্ড অব অনার’ দিয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয় গুণী এ অভিনেতাকে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, এসএম মহসীন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আইসিইউতে নেয়া হয়েছিল। এপ্রিলের শুরুর দিকে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর তাকে প্রথমে রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, পরে ইসপালস হাসপাতাল কিছুদিন আইসিইউতে চিকিৎসার পর সপ্তাহখানেক আগে বারডেম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল তাকে।
পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমনের পরিচালনায় ‘অন্তরাত্মা’ চলচ্চিত্রে শেষবারের মতো শুটিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন ফেব্রুয়ারি মাসে। পাবনা থেকে মার্চে চলচ্চিত্রের শুটিং শেষের পর ঢাকায় ফিরেই করেনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। টানা ১৩ দিন করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে গতকাল সকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মারা যান।
চার দশকের বেশি সময় ধরে মঞ্চ ও টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এসএম মহসীন। অভিনয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০২০ সালে একুশে পদক প্রদান করে সরকার। দীর্ঘদিন তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্য বিভাগ অনুষদের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। জাতীয় থিয়েটারের প্রথম প্রকল্প পরিচালক হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
অনিমেষ আইচের পরিচালনায় ‘গরম ভাত অথবা নিছক ভূতের গল্প’ নাটকে অভিনয় করে বোদ্ধামহলে প্রশংসিত হয়েছেন এ প্রবীণ অভিনয়শিল্পী। এছাড়া ‘মহর আলী’, ‘সাকিন সারিসুরিসহ বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। ‘কবর’, ‘সুবচন নির্বাসনে’সহ বেশ কয়েকটি মঞ্চনাটকে কাজ করেছেন তিনি।
মহসিনের আত্মীয় ও নির্মাতা মিজানুর রহমান লাবু জানান, দুপুর পৌনে তিনটায় পরীবাগ মসজিদে উনার জানাজা হয়। গার্ড অব অনারও সে সময় দেয়া হয়েছে। এরপরই মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নির্ধারিত স্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেকে। সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন অভিনেতাকে নিয়ে তাদের বিভিন্ন স্মৃতি।
অভিনেত্রী তারানা হালিম লেখেন, ‘বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সদস্য, বিশিষ্ট অভিনেতা প্রিয় এসএম মহসিন ভাইয়ের মৃত্যুতে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি। আল্লাহ তুমি তাকে বেহেশত নসিব কর।’ নাট্যকার মাসুম রেজা লেখেন, ‘আহারে মহসিন ভাই। আপনার মতো ভালো মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। খুব খারাপ লাগছে, খুবই।’ অভিনেত্রী গোলাম ফরিদা ছন্দা লেখেন, ‘মহসিন স্যার আপনিও! কী হলো! অন্তত আপনার বেলায় ভেবেছিলাম এত সুস্থ একজন মানুষ আপনি, যার কোনদিন জ্বর পর্যন্ত হয়নি। ঠিকই সারভাইব করে ফেলবেন। আমরা তো স্যার গতমাসের ৯ তারিখে একসঙ্গে কাজ করলাম! সেই একইভাবে আমাকে ‘বাবু’ বলে কথা বললেন, সতীর্থকে ফোন করলেন। আমার মোবাইলে টাপুর-টুপুরের ছবি দেখলেন! আমার হাত থেকে নিয়ে ঠাণ্ডা কোক খেলেন। ভালো থাকুন স্যার, নিশ্চিন্তে ঘুমান প্রিয় শিল্পী। চিরশান্তিময় হোক এ যাত্রা।’
সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১ , ৬ বৈশাখ ১৪২৮ ৬ রমজান ১৪৪২
আজিমপুর কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনয়শিল্পী, নাট্যশিক্ষক এসএম মহসীন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। গতকাল সকালে রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ অভিনয়শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন। এসএম মহসীনের বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। পরে বিকেলে ?‘গার্ড অব অনার’ দিয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয় গুণী এ অভিনেতাকে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, এসএম মহসীন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আইসিইউতে নেয়া হয়েছিল। এপ্রিলের শুরুর দিকে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর তাকে প্রথমে রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, পরে ইসপালস হাসপাতাল কিছুদিন আইসিইউতে চিকিৎসার পর সপ্তাহখানেক আগে বারডেম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল তাকে।
পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমনের পরিচালনায় ‘অন্তরাত্মা’ চলচ্চিত্রে শেষবারের মতো শুটিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন ফেব্রুয়ারি মাসে। পাবনা থেকে মার্চে চলচ্চিত্রের শুটিং শেষের পর ঢাকায় ফিরেই করেনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। টানা ১৩ দিন করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে গতকাল সকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মারা যান।
চার দশকের বেশি সময় ধরে মঞ্চ ও টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এসএম মহসীন। অভিনয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০২০ সালে একুশে পদক প্রদান করে সরকার। দীর্ঘদিন তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্য বিভাগ অনুষদের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। জাতীয় থিয়েটারের প্রথম প্রকল্প পরিচালক হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
অনিমেষ আইচের পরিচালনায় ‘গরম ভাত অথবা নিছক ভূতের গল্প’ নাটকে অভিনয় করে বোদ্ধামহলে প্রশংসিত হয়েছেন এ প্রবীণ অভিনয়শিল্পী। এছাড়া ‘মহর আলী’, ‘সাকিন সারিসুরিসহ বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। ‘কবর’, ‘সুবচন নির্বাসনে’সহ বেশ কয়েকটি মঞ্চনাটকে কাজ করেছেন তিনি।
মহসিনের আত্মীয় ও নির্মাতা মিজানুর রহমান লাবু জানান, দুপুর পৌনে তিনটায় পরীবাগ মসজিদে উনার জানাজা হয়। গার্ড অব অনারও সে সময় দেয়া হয়েছে। এরপরই মরদেহ আজিমপুর কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নির্ধারিত স্থানে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেকে। সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন অভিনেতাকে নিয়ে তাদের বিভিন্ন স্মৃতি।
অভিনেত্রী তারানা হালিম লেখেন, ‘বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সদস্য, বিশিষ্ট অভিনেতা প্রিয় এসএম মহসিন ভাইয়ের মৃত্যুতে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি। আল্লাহ তুমি তাকে বেহেশত নসিব কর।’ নাট্যকার মাসুম রেজা লেখেন, ‘আহারে মহসিন ভাই। আপনার মতো ভালো মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। খুব খারাপ লাগছে, খুবই।’ অভিনেত্রী গোলাম ফরিদা ছন্দা লেখেন, ‘মহসিন স্যার আপনিও! কী হলো! অন্তত আপনার বেলায় ভেবেছিলাম এত সুস্থ একজন মানুষ আপনি, যার কোনদিন জ্বর পর্যন্ত হয়নি। ঠিকই সারভাইব করে ফেলবেন। আমরা তো স্যার গতমাসের ৯ তারিখে একসঙ্গে কাজ করলাম! সেই একইভাবে আমাকে ‘বাবু’ বলে কথা বললেন, সতীর্থকে ফোন করলেন। আমার মোবাইলে টাপুর-টুপুরের ছবি দেখলেন! আমার হাত থেকে নিয়ে ঠাণ্ডা কোক খেলেন। ভালো থাকুন স্যার, নিশ্চিন্তে ঘুমান প্রিয় শিল্পী। চিরশান্তিময় হোক এ যাত্রা।’