চিত্রনায়ক ওয়াসিম বনানী কবরস্থানে সমাহিত

বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালী দিনের সুপারস্টার, এক সময়ের পর্দা কাঁপানো নায়ক, ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী ওয়াসিমকে গতকাল বাদ জোহর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান জানান, গতকাল বাদ জোহর গুলশানের আজাদ মসজিদে নায়ক ওয়াসিমের প্রথম জানাজা এবং বনানীতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। শনিবার রাত ১২টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ওয়াসিম কিছুদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। অবস্থা এমন দাঁড়ায় তিনি হাঁটতেও পারছিলেন না। বিছানায় শুয়েই দিন কাটছিল তার। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।

ওয়াসিম বিয়ে করেছিলেন চিত্রনায়িকা রোজীর ছোট বোনকে। তাদের দুটি সন্তান হয়- পুত্র দেওয়ান ফারদিন এবং কন্য বুশরা আহমেদ। ২০০০ সালে তার স্ত্রীর অকালমৃত্যু ঘটে। ২০০৬ সালে ওয়াসিমের কন্যা বুশরা আহমেদ চৌদ্দ বছর বয়সে মারা যান। অন্যদিকে পুত্র ফারদিন লন্ডনের কারডিফ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ব্যারিস্টার হিসেবে আইন পেশায় নিয়োজিত।

১৯৫০ সালের ২৩ মার্চ চাঁদপুর মতলব উত্তরের আমিরাবাদ এলাকার ফরাজিকান্দিতে জন্মগ্রহণ করেন। ওয়াসিম নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন এক সময়ের দর্শকপ্রিয় এই নায়ক। কলেজের ছাত্রাবস্থায় তিনি বডি বিল্ডার হিসেবে নাম করেছিলেন। ১৯৬৪ সালে তিনি বডি বিল্ডিং এর জন্য ইস্ট পাকিস্তান খেতাব অর্জন করেছিলেন। তাকে বাংলা চলচ্চিত্রের অ্যাকশন এবং লোক ফ্যান্টাসির নায়ক হিসেবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হতো। প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক এসএম শফীর হাত ধরে চলচ্চিত্র জগতে অভিষেক ঘটে ওয়াসিমের। ১৯৭২ সালে শফী পরিচালিত ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’ চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক হন তিনি। এতে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেন। ১৯৭৪ সালে আরেক প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা মহসিন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ চলচ্চিত্রে প্রথম নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ তার। চলচ্চিত্রটির অসামান্য সাফল্যে রাতারাতি সুপারস্টার বনে যান তিনি। ওয়াসিম ১৫২টির মতো ছবিতে নায়ক ছিলেন। অল্প কিছু ছবি ছাড়া প্রতিটি ছবিই সুপারহিট হয়েছিল। ‘দি রেইন’ তাকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়। পৃথিবীর ৪৬টি দেশে ‘দি রেইন’ মুক্তি পেয়েছিল। ছবিতে ওয়াসিমের নায়িকা অলিভিয়া। পরবর্তী সময়ে ওয়াসিম-অলিভিয়া জুটি বেধে বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন। ‘বাহাদুর’ এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া লুটেরা, লাল মেম সাহেব, বেদ্বীন প্রভৃতিও সফল হয়েছিল। শাবানা, সুচরিতা, অঞ্জু ঘোষ, সুজাতার বিপরীতেও তিনি অভিনয় করেছিলেন। তবে শাবানা আর অলিভিয়ার সঙ্গে ওয়াসিম যেসব ছবিতে অভিনয় করেছেন তার প্রতিটিই ব্যবসাসফল হয়েছিল। ‘রাজ দুলারী’তে ওয়াসিম ও শাবানার অভিনয় সেদিন দর্শকদের দারুণ মুগ্ধ করেছিল। ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রে শীর্ষ নায়কদের একজন ছিলেন ওয়াসিম।

ওয়াসিম অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’, ‘রাতের পর দিন’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘দ্য রেইন’, ‘রাজদুলারী’, ‘বাহাদুর’, ‘মানসী’, ‘সওদাগর’, ‘নরম গরম’ ইত্যাদি।

আরও খবর
করোনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে
আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী
আগে জীবন পরে জীবিকা প্রধান বিচারপতি
বাতিল ফ্লাইটের টিকিট পাওয়া নিয়ে দুর্ভোগ প্রবাসীদের
অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান কাদের
নাট্যজন এসএম মহসীনের জীবনাবসান
উপস্থাপক শফিউজ্জামান লোদির মৃত্যু
ইলিয়াস আলীর ‘গুম’ নিয়ে ‘সরল মনের’ বক্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছে বলে অভিযোগ মির্জা আব্বাসের
মোদি-মমতা বাদ-প্রতিবাদ
সরিয়ে নিতে স্টেকহোল্ডারদের চিঠি
বাগেরহাটে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ ধর্ষক গ্রেপ্তার
মোট রসুনের অর্ধেকই উৎপাদন হয় চলনবিল এলাকায় তবে দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
সাংবাদিককে জানানোর অপরাধে হাসপাতাল থেকে নাম কেটে দেয়া হলো!

সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১ , ৬ বৈশাখ ১৪২৮ ৬ রমজান ১৪৪২

চিত্রনায়ক ওয়াসিম বনানী কবরস্থানে সমাহিত

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালী দিনের সুপারস্টার, এক সময়ের পর্দা কাঁপানো নায়ক, ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী ওয়াসিমকে গতকাল বাদ জোহর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান জানান, গতকাল বাদ জোহর গুলশানের আজাদ মসজিদে নায়ক ওয়াসিমের প্রথম জানাজা এবং বনানীতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। শনিবার রাত ১২টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ওয়াসিম কিছুদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। অবস্থা এমন দাঁড়ায় তিনি হাঁটতেও পারছিলেন না। বিছানায় শুয়েই দিন কাটছিল তার। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।

ওয়াসিম বিয়ে করেছিলেন চিত্রনায়িকা রোজীর ছোট বোনকে। তাদের দুটি সন্তান হয়- পুত্র দেওয়ান ফারদিন এবং কন্য বুশরা আহমেদ। ২০০০ সালে তার স্ত্রীর অকালমৃত্যু ঘটে। ২০০৬ সালে ওয়াসিমের কন্যা বুশরা আহমেদ চৌদ্দ বছর বয়সে মারা যান। অন্যদিকে পুত্র ফারদিন লন্ডনের কারডিফ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ব্যারিস্টার হিসেবে আইন পেশায় নিয়োজিত।

১৯৫০ সালের ২৩ মার্চ চাঁদপুর মতলব উত্তরের আমিরাবাদ এলাকার ফরাজিকান্দিতে জন্মগ্রহণ করেন। ওয়াসিম নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন এক সময়ের দর্শকপ্রিয় এই নায়ক। কলেজের ছাত্রাবস্থায় তিনি বডি বিল্ডার হিসেবে নাম করেছিলেন। ১৯৬৪ সালে তিনি বডি বিল্ডিং এর জন্য ইস্ট পাকিস্তান খেতাব অর্জন করেছিলেন। তাকে বাংলা চলচ্চিত্রের অ্যাকশন এবং লোক ফ্যান্টাসির নায়ক হিসেবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হতো। প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক এসএম শফীর হাত ধরে চলচ্চিত্র জগতে অভিষেক ঘটে ওয়াসিমের। ১৯৭২ সালে শফী পরিচালিত ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’ চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক হন তিনি। এতে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেন। ১৯৭৪ সালে আরেক প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা মহসিন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ চলচ্চিত্রে প্রথম নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ তার। চলচ্চিত্রটির অসামান্য সাফল্যে রাতারাতি সুপারস্টার বনে যান তিনি। ওয়াসিম ১৫২টির মতো ছবিতে নায়ক ছিলেন। অল্প কিছু ছবি ছাড়া প্রতিটি ছবিই সুপারহিট হয়েছিল। ‘দি রেইন’ তাকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়। পৃথিবীর ৪৬টি দেশে ‘দি রেইন’ মুক্তি পেয়েছিল। ছবিতে ওয়াসিমের নায়িকা অলিভিয়া। পরবর্তী সময়ে ওয়াসিম-অলিভিয়া জুটি বেধে বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন। ‘বাহাদুর’ এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া লুটেরা, লাল মেম সাহেব, বেদ্বীন প্রভৃতিও সফল হয়েছিল। শাবানা, সুচরিতা, অঞ্জু ঘোষ, সুজাতার বিপরীতেও তিনি অভিনয় করেছিলেন। তবে শাবানা আর অলিভিয়ার সঙ্গে ওয়াসিম যেসব ছবিতে অভিনয় করেছেন তার প্রতিটিই ব্যবসাসফল হয়েছিল। ‘রাজ দুলারী’তে ওয়াসিম ও শাবানার অভিনয় সেদিন দর্শকদের দারুণ মুগ্ধ করেছিল। ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রে শীর্ষ নায়কদের একজন ছিলেন ওয়াসিম।

ওয়াসিম অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’, ‘রাতের পর দিন’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘দ্য রেইন’, ‘রাজদুলারী’, ‘বাহাদুর’, ‘মানসী’, ‘সওদাগর’, ‘নরম গরম’ ইত্যাদি।