একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের মাইলফলক

সাঁথিয়ার ঐতিহাসিক ডাববাগান দিবস আজ

আজ ১৯ এপ্রিল পাবনার সাঁথিয়ার ঐতিহাসিক ডাব বাগান দিবস। ডাববাগানের এই যুদ্ধ ছিল ’৭১-এর এক মাইলফলক। পাবনা শহর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পূর্বে নগরবাড়ির ঘাট ছেড়ে পশ্চিম দিকে কাশিনাথপুর পেরিয়ে বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়কের পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার পাইকরহাটি গ্রামের একটি পাড়ার নাম ডাববাগান। যার বর্তমান নাম ‘শহীদ নগর’। ডাববাগান নামক স্থানে ’৭১-এর ১৯ এপ্রিল সোমবার পাক হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখ প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। যা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাঙালিরা দেশব্যাপী পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলে।

বগুড়া যাওয়ার উদ্দেশে ঢাকা থেকে নগরবাড়ি হয়ে আসা পাক হানাদার বাহিনী উত্তর জনপদের এই স্থানে মুক্তিসেনাদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। মুক্তিসেনাদের পক্ষে এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন ইপিআর সুবেদার গাজী আলী আকবর (যার বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার শান্তিডাঙ্গা গ্রামে)।

এ যুদ্ধে বেশিরভাগ যোদ্ধা ছিলেন বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, পুলিশ বাহিনী, আনসারসহ বাঙালি বিদ্রোহী সেনা ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা। এই রাস্তা দিয়ে পাকসেনারা নগরবাড়ি ঘাট থেকে বগুড়া যাওয়ার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে মুক্তিসেনারা ডাববাগান নামক স্থানেবিভিন্ন জায়গায় বাংকার কেটে অবস্থান নেয়। দুপুর ২টা থেকে যুদ্ধ শুরু হয়ে দিনভর চলে। প্রথমত পাক সেনারা সম্মুখযুদ্ধে টিকতে না পেরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের পর পিছু হটে নগরবাড়ি ঘাটে তাদের ক্যাম্পে ফিরে যায়। যুদ্ধে ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়। চূর্ণ হয় তাদের শক্তি, ধ্বংস হয় তাদের মনোবল। পিছু হটে যাওয়া পাক বাহিনী শক্তি বৃদ্ধি করে আবার আক্রমণ করে। পাক বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধবিমান থেকে মুক্তিসেনাদের উপর গুলি বর্ষণ শুরু হলে মুক্তিসেনারা পিছু হটতে বাধ্য হন। পাকসেনারা স্বাধীনতাবিরোধীদের সহযোগিতায় গ্রামবাসীর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। একে একে পুড়িয়ে দেয় ডাববাগানের পার্শ্ববর্তী গ্রাম রামভদ্রবাটি, ইদ্রাকপুর, মেহেদিনগর, কড়িয়াল, বড়গ্রাম, সাটিয়াকোলা, সমাসনারী, ক্ষুদ্রগোপালপুর, কুশিয়ারা, আতপশোভা, চাকলা, কাশীনাথপুর, বাগজান প্রভৃৃতি গ্রাম। নির্বিচারে গুলি চালায় নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর। বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোকজন ধরে এনে গাছের নিচে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করে গুলি করে শতাধিক স্বাধীনচেতা গ্রামবাসীকে হত্যা করে। বর্বর পাকসেনারা এসব শহীদের দেহে এসিড ঢেলে পুড়িয়ে দেয় এলাকাবাসী জায়গাটির নতুন নামকরণ করেছে ‘শহীদ নগর’। আজও একাত্তরের ১৯ এপ্রিলের সেই ভয়াল রাতের দুঃসহ স্মৃতিতে আঁতকে ওঠে এলাকাবাসী। শহীদ নগরে রয়েছে ‘গণকবর’ । এই গণকবরে যারা শায়িত এদের অনেকেরই কোন নাম গোত্র পরিচয় পাওয়া যায়নি। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এই গণকবরের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে একটি স্মৃতি ভাস্কর্য ‘বীর বাঙালি’। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদের প্রচেষ্টায় স্মৃতি ভাস্বর্যটি নির্মাণ করা হয়।

সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১ , ৬ বৈশাখ ১৪২৮ ৬ রমজান ১৪৪২

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের মাইলফলক

সাঁথিয়ার ঐতিহাসিক ডাববাগান দিবস আজ

প্রতিনিধি, সাঁথিয়া (পাবনা)

image

আজ ১৯ এপ্রিল পাবনার সাঁথিয়ার ঐতিহাসিক ডাব বাগান দিবস। ডাববাগানের এই যুদ্ধ ছিল ’৭১-এর এক মাইলফলক। পাবনা শহর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পূর্বে নগরবাড়ির ঘাট ছেড়ে পশ্চিম দিকে কাশিনাথপুর পেরিয়ে বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়কের পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার পাইকরহাটি গ্রামের একটি পাড়ার নাম ডাববাগান। যার বর্তমান নাম ‘শহীদ নগর’। ডাববাগান নামক স্থানে ’৭১-এর ১৯ এপ্রিল সোমবার পাক হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখ প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। যা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাঙালিরা দেশব্যাপী পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলে।

বগুড়া যাওয়ার উদ্দেশে ঢাকা থেকে নগরবাড়ি হয়ে আসা পাক হানাদার বাহিনী উত্তর জনপদের এই স্থানে মুক্তিসেনাদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। মুক্তিসেনাদের পক্ষে এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন ইপিআর সুবেদার গাজী আলী আকবর (যার বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার শান্তিডাঙ্গা গ্রামে)।

এ যুদ্ধে বেশিরভাগ যোদ্ধা ছিলেন বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, পুলিশ বাহিনী, আনসারসহ বাঙালি বিদ্রোহী সেনা ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা। এই রাস্তা দিয়ে পাকসেনারা নগরবাড়ি ঘাট থেকে বগুড়া যাওয়ার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে মুক্তিসেনারা ডাববাগান নামক স্থানেবিভিন্ন জায়গায় বাংকার কেটে অবস্থান নেয়। দুপুর ২টা থেকে যুদ্ধ শুরু হয়ে দিনভর চলে। প্রথমত পাক সেনারা সম্মুখযুদ্ধে টিকতে না পেরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের পর পিছু হটে নগরবাড়ি ঘাটে তাদের ক্যাম্পে ফিরে যায়। যুদ্ধে ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়। চূর্ণ হয় তাদের শক্তি, ধ্বংস হয় তাদের মনোবল। পিছু হটে যাওয়া পাক বাহিনী শক্তি বৃদ্ধি করে আবার আক্রমণ করে। পাক বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধবিমান থেকে মুক্তিসেনাদের উপর গুলি বর্ষণ শুরু হলে মুক্তিসেনারা পিছু হটতে বাধ্য হন। পাকসেনারা স্বাধীনতাবিরোধীদের সহযোগিতায় গ্রামবাসীর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। একে একে পুড়িয়ে দেয় ডাববাগানের পার্শ্ববর্তী গ্রাম রামভদ্রবাটি, ইদ্রাকপুর, মেহেদিনগর, কড়িয়াল, বড়গ্রাম, সাটিয়াকোলা, সমাসনারী, ক্ষুদ্রগোপালপুর, কুশিয়ারা, আতপশোভা, চাকলা, কাশীনাথপুর, বাগজান প্রভৃৃতি গ্রাম। নির্বিচারে গুলি চালায় নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর। বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোকজন ধরে এনে গাছের নিচে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করে গুলি করে শতাধিক স্বাধীনচেতা গ্রামবাসীকে হত্যা করে। বর্বর পাকসেনারা এসব শহীদের দেহে এসিড ঢেলে পুড়িয়ে দেয় এলাকাবাসী জায়গাটির নতুন নামকরণ করেছে ‘শহীদ নগর’। আজও একাত্তরের ১৯ এপ্রিলের সেই ভয়াল রাতের দুঃসহ স্মৃতিতে আঁতকে ওঠে এলাকাবাসী। শহীদ নগরে রয়েছে ‘গণকবর’ । এই গণকবরে যারা শায়িত এদের অনেকেরই কোন নাম গোত্র পরিচয় পাওয়া যায়নি। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এই গণকবরের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে একটি স্মৃতি ভাস্কর্য ‘বীর বাঙালি’। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদের প্রচেষ্টায় স্মৃতি ভাস্বর্যটি নির্মাণ করা হয়।