‘হিট শক’-এ ২১ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

সারাদেশে বোরো ক্ষেতের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ‘হিট শক’ বা গরম ঝড়ো বাতাসে তিন লাখ কৃষকের ২১ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। এতে চলতি বছর প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন কম হবে বলে এক পরিসংখ্যানে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক। তবে চলতি মৌসুমে নতুন করে ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হওয়ায় গতবারের চেয়ে ধান উৎপাদন কমবে না। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায়ও কোন প্রভাব পড়বে না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহ ধরে হাওড় অঞ্চলে বোরোর আগাম ফলন কাটাও শুরু হয়েছে। এবার বোরোতে ২ কোটি ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বলে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন। ‘হিট শকে’ ক্ষতিগ্রস্ত যেসব কৃষক আসন্ন আউশ রোপনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের প্রয়োজনীয় এবং পর্যাপ্ত বীজ ও সার দেয়ার পাশাপাশি কৃষি ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তি এবং আগামী বোরো মৌসুমে তাদের বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ বলেন, ‘হিট শকে ২১ হাজার হেক্টর জমির সফল নষ্ট হয়েছে। এতে করে এই বোরো মৌসুমে এক লাখ মেট্রিক টন ধান কম উৎপাদন হতে পারে। কৃষকদের দিক থেকে তিন লাখের মতো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবার সারাদেশে ৭৮ হাজার হেক্টর জমি বেশি আবাদ হয়েছে।

আবার হিট শকে ২১ হাজার হেক্টর জমি যখন ক্ষতি হয়েছে সেই হিসেব করলেও গতবারের চেয়ে এবার আবাদী জমি বেশিই রয়েছে, মাঠে ফলনও ভালো হয়েছে। এই ফসলটি উঠার আগে যদি আর কোন দুর্যোগের কবলে না পড়ে তাহলেও গতবারের চেয়ে এবার ফলন বেশি হবে, ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় কোন ধরনের সমস্যা হবে না।’

বোরো ধানের ফুল ফোটার সময়ে গত ৪ এপ্রিল ‘হিট শক’ বা গরমের হাওয়ায় পুড়ে ফলনের এই ক্ষয়ক্ষতি হয়। গরম ঝড়ো হাওয়ার কারণে ফুল ফোটার অপেক্ষায় থাকা ধানে চিটা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নড়াইল এলাকার কৃষকই বেশি। এছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এই গরম ঝড়ো বাতাসে সামান্য ক্ষতি হয়েছে।

হিট শকের পর কৃষি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মেসবাহুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নেত্রকোনা, মদন, খালিয়াজুড়ি, কেন্দুয়া, কিশোরগঞ্জের নিকলী, করিমগঞ্জ, সদর এলাকা ঘুরে দেখেছেন। ইতোমধ্যে ধান গবেষণা ইনিস্টিটিউট (ব্রি) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে তীব্র তাপদাহের এমন পরিস্থিতি ‘হিট শক’ থেকে ধানের ফুল বাঁচাতে জমিতে পানি ধরে রাখা এবং পরবর্তীতে পাতাপোড়া থেকে রক্ষা বিশেষ স্প্রে ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া চলতি বছর প্রকৃতিতে এক ভিন্ন অবস্থা বা পরিবেশ বিরাজ করছে। গত বর্ষা মৌশুমে দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ব্যাপকভাবে ফসলহানি হয়েছে। খাদ্য বিভাগের হিসেবে গত আমন মৌশুমে ১০ লাখ টন ধান কম উৎপাদন হয়েছে। গত রবি মৌশুমে শাক সবজীর উৎপাদন কম হওয়ায় বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো আলুর দাম বেড়ে ৬০ টাকায় উঠে যায়। ধানের মন একেবারে ভরা মৌশুমেই ১১/১২শ টাকায় ওঠে। ১০ লাখ মেট্রিক টন ধান কম হওয়ায় চালের দামেও রেকর্ড হয়েছে। চালের দাম বাড়তে বাড়তে এখন ৬০ থেকে ৭০ টাকায় ওঠানামা করছে।

মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল ২০২১ , ৭ বৈশাখ ১৪২৮ ৭ রমজান ১৪৪২

‘হিট শক’-এ ২১ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

হিট শকে পুড়ে চিটা হয়ে যাওয়া ধানগুলো পর্যবেক্ষণ করে ক্ষতির পরিমাণ আন্দাজ করছেন একজন কৃষক

সারাদেশে বোরো ক্ষেতের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ‘হিট শক’ বা গরম ঝড়ো বাতাসে তিন লাখ কৃষকের ২১ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। এতে চলতি বছর প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন কম হবে বলে এক পরিসংখ্যানে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক। তবে চলতি মৌসুমে নতুন করে ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হওয়ায় গতবারের চেয়ে ধান উৎপাদন কমবে না। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায়ও কোন প্রভাব পড়বে না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহ ধরে হাওড় অঞ্চলে বোরোর আগাম ফলন কাটাও শুরু হয়েছে। এবার বোরোতে ২ কোটি ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বলে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক জানিয়েছেন। ‘হিট শকে’ ক্ষতিগ্রস্ত যেসব কৃষক আসন্ন আউশ রোপনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের প্রয়োজনীয় এবং পর্যাপ্ত বীজ ও সার দেয়ার পাশাপাশি কৃষি ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তি এবং আগামী বোরো মৌসুমে তাদের বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ বলেন, ‘হিট শকে ২১ হাজার হেক্টর জমির সফল নষ্ট হয়েছে। এতে করে এই বোরো মৌসুমে এক লাখ মেট্রিক টন ধান কম উৎপাদন হতে পারে। কৃষকদের দিক থেকে তিন লাখের মতো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবার সারাদেশে ৭৮ হাজার হেক্টর জমি বেশি আবাদ হয়েছে।

আবার হিট শকে ২১ হাজার হেক্টর জমি যখন ক্ষতি হয়েছে সেই হিসেব করলেও গতবারের চেয়ে এবার আবাদী জমি বেশিই রয়েছে, মাঠে ফলনও ভালো হয়েছে। এই ফসলটি উঠার আগে যদি আর কোন দুর্যোগের কবলে না পড়ে তাহলেও গতবারের চেয়ে এবার ফলন বেশি হবে, ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় কোন ধরনের সমস্যা হবে না।’

বোরো ধানের ফুল ফোটার সময়ে গত ৪ এপ্রিল ‘হিট শক’ বা গরমের হাওয়ায় পুড়ে ফলনের এই ক্ষয়ক্ষতি হয়। গরম ঝড়ো হাওয়ার কারণে ফুল ফোটার অপেক্ষায় থাকা ধানে চিটা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নড়াইল এলাকার কৃষকই বেশি। এছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এই গরম ঝড়ো বাতাসে সামান্য ক্ষতি হয়েছে।

হিট শকের পর কৃষি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মেসবাহুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নেত্রকোনা, মদন, খালিয়াজুড়ি, কেন্দুয়া, কিশোরগঞ্জের নিকলী, করিমগঞ্জ, সদর এলাকা ঘুরে দেখেছেন। ইতোমধ্যে ধান গবেষণা ইনিস্টিটিউট (ব্রি) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে তীব্র তাপদাহের এমন পরিস্থিতি ‘হিট শক’ থেকে ধানের ফুল বাঁচাতে জমিতে পানি ধরে রাখা এবং পরবর্তীতে পাতাপোড়া থেকে রক্ষা বিশেষ স্প্রে ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া চলতি বছর প্রকৃতিতে এক ভিন্ন অবস্থা বা পরিবেশ বিরাজ করছে। গত বর্ষা মৌশুমে দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ব্যাপকভাবে ফসলহানি হয়েছে। খাদ্য বিভাগের হিসেবে গত আমন মৌশুমে ১০ লাখ টন ধান কম উৎপাদন হয়েছে। গত রবি মৌশুমে শাক সবজীর উৎপাদন কম হওয়ায় বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো আলুর দাম বেড়ে ৬০ টাকায় উঠে যায়। ধানের মন একেবারে ভরা মৌশুমেই ১১/১২শ টাকায় ওঠে। ১০ লাখ মেট্রিক টন ধান কম হওয়ায় চালের দামেও রেকর্ড হয়েছে। চালের দাম বাড়তে বাড়তে এখন ৬০ থেকে ৭০ টাকায় ওঠানামা করছে।