ঈদ পোশাক নিয়ে দিশেহারা কেরানীগঞ্জের গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা

বুড়িগঙ্গা নদীর দক্ষিণ প্রান্তে কেরানীগঞ্জের কালিগঞ্জে গড়ে ওঠেছে দেশের বৃহত্তম গার্মেন্টস পল্লী। এখনে ছেট বড় সব মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দেশের পোশাকের বাজারের বড় সরবরাহ হয় এখান থেকেই। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ী-ক্রেতাদের আনাগোনা থাকে বছরজুড়ে। এখানেই তৈরী হচ্ছে উন্নত মানের জিন্স প্যান্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজ ও বাচ্চাদের নানা বাহারী পোশাক। এবার ঈদকে সামনে রেখে অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এবং নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে গার্মেন্টস পণ্য তৈরী করেছেন। কিন্তু করোনা মহামারীর কারনে লকডাউনে কালিগঞ্জ এলাকার সকল গার্মেন্টস দোকান ও শোরুম বন্ধ হয়ে গেছে। এরফলে কয়েক মাস আগে থেকে তৈরী ঈদের পোশাক নিয়ে বিপাকে পড়েছে এখানকার ব্যবসায়ীরা। এক দিকে ঈদের জন্য তৈরী পোশাক বিক্রি করতে না পারা অপর দিকে ব্যাংক ঋণের চাপে নিঃস্ব হওয়ার পথে কয়েক হাজার ব্যবসায়ী। করোনা ভাইরাসের প্রকোপে লকডাউন পরিস্থিতিতে গত বছর এখানকার ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়ে। ঈদ-উল- ফিতরের আগেই বন্ধ হয়ে যায় মার্কেট। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর গতবারের ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন ব্যবসায়ীরা। ঈদের বাজার ধরতে গত কয়েক মাস কারখানাগুলোর মেশিন সচল ছিল রাতদিন। এরই মধ্যে লকডাউনে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। পুরো পল্লীতে এখন পুঁজি হারানোর আক্ষেপ, বেকারত্বের শঙ্কা, ঋণের বেড়াজালে আটকে থাকার ভয়। কেরানীগঞ্জের পোশাক পল্লী­ ঘুরে এমন হতাশার চিত্র দেখা গেছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগর, আগানগর ছোট মসজিদ রোড, চর কালীগঞ্জ এলাকায় চার দশকের বেশি সময় ধরে গড়ে ওঠা এই পোশাক পল্লীতে ছোট ও মাঝারি আকারের প্রায় ১০ হাজারের মতো কারখানা আছে। দোকানের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। সব মিলিয়ে এখানে প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের আগে আনুমানিক দুই হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয় এখানে। মূলত শবেবরাত থেকে শুরু করে ২৫ রমজান পর্যন্ত পাইকারদের ভিড় থাকে। তাদের ভাষ্য, গত বছর লকডাউনে তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ওই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবার নিষেধাজ্ঞা। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে এবার পোশাক তৈরি করেছেন তারা। এখন ঈদে বিক্রি করতে না পারলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন। আসাদ এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী আসাদ খাঁন জানান জিন্স প্যান্ট এবং টি সাট পাইকারি বিক্রি করেন। তার নিজস্ব কারখানাও রয়েছে। গত বছর ঈদ ও পহেলা বৈশাখের জন্য ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে কয়েক কোটি টাকার পোশাক তৈরী করেন তিনি। এখনও সে পোশাক কিছু রয়ে গেছে। যেগুলো বিক্রি হয়েছে, সেগুলোতেও গুনেছেন লোকসান। এবার বাংলা নববর্ষ ও ঈদ সামনে রেখে নতুন করে প্রস্তুতি নেন আসাদ খান। তবে সাম্প্রতিক আরোপিত লকডাউনের ফলে ব্যবসা বন্ধ থাকায় এখন এসব ঈদ পোশাক গলার ফাঁস হয়ে দেখা দিয়েছে। এছাড়াও রিমি গার্মেন্টস, সেখ সাদী গার্মেন্টস, দি ফাইভ স্টার গার্মেন্টস, নুসরাত ফ্যাশন, মনি মুক্তা পাঞ্জাবী ও জারান ফ্যাসনসহ সকল মালিকদের একই কথা তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এবং নিজেদের সকল মূলধন দিয়ে ঈদ পোশাক তৈরী করেছেন। এখন দোকান ও শো-রুম বন্ধ থাকার করনে ঈদের তৈরী পোশাক বিক্রি করতে পারছেন না। এতে তাদের নিঃস্ব হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। সরকারের কাছে তাদের দাবী শর্ত সাপেক্ষে ঈদের আগ পর্যন্ত তাদের দোকান ও শো-রুম খোলার অনুমতি দেয়া হউক। কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুসলিম ঢালী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর ২৫ মার্চ থেকে লকডাউনে ছিল কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টপল্লী। ১০ মে রোজার ঈদের পর গার্মেন্টপল্লী স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারের নির্দেশে চালু হয়। তবে মার্কেট খুললেও বেচাকেনা তেমন ছিল না। গত বছরের হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্য রয়ে গেছে। এবারও নতুন করে কিছু পণ্য তৈরি হয়েছে। কিন্তু ঈদের আগে হঠাৎ দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড় লোকসান গুনতে হবে। তিনি সীমিত পরিসরে দোকান খোলা রাখার দাবি জানান। এছাড়াও পন্য বহন কারী সকল পরিবহন চলাচল করতে দেয়ার দাবী জানান। কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি স্বাধীন শেখ বলেন, কম-বেশি প্রায় প্রতি মাসেই লোকসান গুনতে হয় এখানে। রোজার ঈদের আগে দুই মাস ব্যবসা করে সারা বছরের লোকসান মিটিয়ে মুনাফা হয় তাদের। লকডাউনের কারনে সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবার ঈদ মৌসুমে ব্যবসায়ীরা তৈরী ঈদ পোশাক বিক্রি করতে না পারলে পুজি হারিয়ে ও ব্যাংক ঋণের বোঝায় নিঃস্ব হয়ে যাবে কয়েক হাজার ব্যবসায়ী ।

মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল ২০২১ , ৭ বৈশাখ ১৪২৮ ৭ রমজান ১৪৪২

ঈদ পোশাক নিয়ে দিশেহারা কেরানীগঞ্জের গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা

শহীদুল ইসলাম বিপ্লব, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)

image

বুড়িগঙ্গা নদীর দক্ষিণ প্রান্তে কেরানীগঞ্জের কালিগঞ্জে গড়ে ওঠেছে দেশের বৃহত্তম গার্মেন্টস পল্লী। এখনে ছেট বড় সব মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান রয়েছে। দেশের পোশাকের বাজারের বড় সরবরাহ হয় এখান থেকেই। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ী-ক্রেতাদের আনাগোনা থাকে বছরজুড়ে। এখানেই তৈরী হচ্ছে উন্নত মানের জিন্স প্যান্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজ ও বাচ্চাদের নানা বাহারী পোশাক। এবার ঈদকে সামনে রেখে অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এবং নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে গার্মেন্টস পণ্য তৈরী করেছেন। কিন্তু করোনা মহামারীর কারনে লকডাউনে কালিগঞ্জ এলাকার সকল গার্মেন্টস দোকান ও শোরুম বন্ধ হয়ে গেছে। এরফলে কয়েক মাস আগে থেকে তৈরী ঈদের পোশাক নিয়ে বিপাকে পড়েছে এখানকার ব্যবসায়ীরা। এক দিকে ঈদের জন্য তৈরী পোশাক বিক্রি করতে না পারা অপর দিকে ব্যাংক ঋণের চাপে নিঃস্ব হওয়ার পথে কয়েক হাজার ব্যবসায়ী। করোনা ভাইরাসের প্রকোপে লকডাউন পরিস্থিতিতে গত বছর এখানকার ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়ে। ঈদ-উল- ফিতরের আগেই বন্ধ হয়ে যায় মার্কেট। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর গতবারের ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন ব্যবসায়ীরা। ঈদের বাজার ধরতে গত কয়েক মাস কারখানাগুলোর মেশিন সচল ছিল রাতদিন। এরই মধ্যে লকডাউনে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। পুরো পল্লীতে এখন পুঁজি হারানোর আক্ষেপ, বেকারত্বের শঙ্কা, ঋণের বেড়াজালে আটকে থাকার ভয়। কেরানীগঞ্জের পোশাক পল্লী­ ঘুরে এমন হতাশার চিত্র দেখা গেছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগর, আগানগর ছোট মসজিদ রোড, চর কালীগঞ্জ এলাকায় চার দশকের বেশি সময় ধরে গড়ে ওঠা এই পোশাক পল্লীতে ছোট ও মাঝারি আকারের প্রায় ১০ হাজারের মতো কারখানা আছে। দোকানের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। সব মিলিয়ে এখানে প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের আগে আনুমানিক দুই হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয় এখানে। মূলত শবেবরাত থেকে শুরু করে ২৫ রমজান পর্যন্ত পাইকারদের ভিড় থাকে। তাদের ভাষ্য, গত বছর লকডাউনে তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ওই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবার নিষেধাজ্ঞা। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে এবার পোশাক তৈরি করেছেন তারা। এখন ঈদে বিক্রি করতে না পারলে বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন। আসাদ এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী আসাদ খাঁন জানান জিন্স প্যান্ট এবং টি সাট পাইকারি বিক্রি করেন। তার নিজস্ব কারখানাও রয়েছে। গত বছর ঈদ ও পহেলা বৈশাখের জন্য ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে কয়েক কোটি টাকার পোশাক তৈরী করেন তিনি। এখনও সে পোশাক কিছু রয়ে গেছে। যেগুলো বিক্রি হয়েছে, সেগুলোতেও গুনেছেন লোকসান। এবার বাংলা নববর্ষ ও ঈদ সামনে রেখে নতুন করে প্রস্তুতি নেন আসাদ খান। তবে সাম্প্রতিক আরোপিত লকডাউনের ফলে ব্যবসা বন্ধ থাকায় এখন এসব ঈদ পোশাক গলার ফাঁস হয়ে দেখা দিয়েছে। এছাড়াও রিমি গার্মেন্টস, সেখ সাদী গার্মেন্টস, দি ফাইভ স্টার গার্মেন্টস, নুসরাত ফ্যাশন, মনি মুক্তা পাঞ্জাবী ও জারান ফ্যাসনসহ সকল মালিকদের একই কথা তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এবং নিজেদের সকল মূলধন দিয়ে ঈদ পোশাক তৈরী করেছেন। এখন দোকান ও শো-রুম বন্ধ থাকার করনে ঈদের তৈরী পোশাক বিক্রি করতে পারছেন না। এতে তাদের নিঃস্ব হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। সরকারের কাছে তাদের দাবী শর্ত সাপেক্ষে ঈদের আগ পর্যন্ত তাদের দোকান ও শো-রুম খোলার অনুমতি দেয়া হউক। কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুসলিম ঢালী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর ২৫ মার্চ থেকে লকডাউনে ছিল কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টপল্লী। ১০ মে রোজার ঈদের পর গার্মেন্টপল্লী স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারের নির্দেশে চালু হয়। তবে মার্কেট খুললেও বেচাকেনা তেমন ছিল না। গত বছরের হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্য রয়ে গেছে। এবারও নতুন করে কিছু পণ্য তৈরি হয়েছে। কিন্তু ঈদের আগে হঠাৎ দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড় লোকসান গুনতে হবে। তিনি সীমিত পরিসরে দোকান খোলা রাখার দাবি জানান। এছাড়াও পন্য বহন কারী সকল পরিবহন চলাচল করতে দেয়ার দাবী জানান। কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি স্বাধীন শেখ বলেন, কম-বেশি প্রায় প্রতি মাসেই লোকসান গুনতে হয় এখানে। রোজার ঈদের আগে দুই মাস ব্যবসা করে সারা বছরের লোকসান মিটিয়ে মুনাফা হয় তাদের। লকডাউনের কারনে সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবার ঈদ মৌসুমে ব্যবসায়ীরা তৈরী ঈদ পোশাক বিক্রি করতে না পারলে পুজি হারিয়ে ও ব্যাংক ঋণের বোঝায় নিঃস্ব হয়ে যাবে কয়েক হাজার ব্যবসায়ী ।