ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ গেলে ঘুম ভাঙে প্রশাসনের

ভৈরবে ৪ মাসে নিহত ৫ আহত ১৫

ভৈরবে ছিনতাইকারীদের হাতে গেল ৪ মাসে ৫ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাত থেকে ট্রেনযাত্রী, পথচারী, ব্যবসায়ী, পুলিশ সদস্য, শিক্ষার্থী ও অটোরিকশা চালক কেউ রেহাই পাইনি। ফলে ছিনতাইয়ের নগরী হিসেবে পরিচিত পেয়েছে বন্দরনগরী ভৈরব। আর ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হবার পর ঘুম ভাঙ্গে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের। ফলে লাগামহীন ভৈরবের ছিনতাইকারীরা। আর সন্ধ্যা নামলেই ঘর থেকে বের হতে ভয় পায় শহরের বাসিন্দারা। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে একাধিক ছিনতাইকারী দলের সদস্যদের আটক করে জেলে পাঠিয়েছেন। তবুও কিছুতেই থামছে না ছিনতাই। ফলে বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে শহরের বাসিন্দাদের।

জানাগেছে, শহরের হাতেগুনা কয়েকটি স্পটে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে থাকে। তার মধ্যে শহরের রেলওয়ে স্টেশন সড়কের পলাশ সিনেমা হলের মোড়, পৌর কবরস্থানের সামনে, মনমরা ব্রিজ এলাকা, রেলওয়ে স্কুলের সামনে এবং স্কুলটির পেছনে মন্দিরের সামনে, মেঘনা নদীর পাড় ডিপো এলাকা, নদী বাংলা সেন্টার পয়েন্টের সামনে ও গাছতলা ঘাট ব্রিজ এলাকা, হাজী আসমত কলেজ গেইট, পৌর শহীদ আইভি রহমান স্টেডিয়াম সংলগ্ন। এছাড়াও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নাটাল মোড়, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতুর উপর, সিলেট বাসস্ট্যন্ড, উপজেলার শম্ভুপুর পাক্কার মাথায় (কবরস্থান), পানাউল্লারচর ভূষির মিল এলাকা ও গাজিরটেক এলাকায় প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ফলে শহরের এবং শহরে আসা মানুষজন সব সময় থাকেন আতঙ্কিত।

একাাধিক মামলা সূত্রে জানা গেছে, শহরের ভৈরবপুর, কমলপুর, পঞ্চবটি, চণ্ডিবের এবং জগন্নাথপুরে প্রায় ৩৫ জন চিহ্নিত ছিনতাইকারী রয়েছে। এসব গ্রামের ছিনতাইকারীদের মধ্যে কেউ কেউ প্রভাবশালী বংশের কিংবা বাড়ির। ফলে সহজে কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না। এছাড়াও এসব চিহ্নিত ছিনতাইকারীরা কেউ মাদক ব্যবসা, আবার কেউ মাদকাসক্ত, কেউ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। শুধু তাই নয়, তাদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে।

শহরের সচেতন নাগরিকদের দাবি, ভৈরবের প্রায় ৩ লাখ মানুষ হাতেগুনা কয়েকটি গ্রামের বা মহল্লার কয়েকজন ছিনতাইকারীর কাছে জিম্মী হয়ে পড়েছে। অথচ ভৈরবে ৫টি থানা এবং র‌্যাপিট একশ্যান ব্যটেলিয়ান (র‌্যাব-১৪) সিপিসি-৩ ক্যাম্প রয়েছে। তারপরও ছিনতাই হচ্ছে লাগামহীন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেল ২৮ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুর্জয় মোড়ের পূর্ব পাশে ছিনতাইকারীদের হাতে এক কয়লা শ্রমিক খুন হয়। ভৈরব থেকে কাপড় নিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লাকসাম থেকে হাসান মাহমুদ নামে এক পাইকার ৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টায় নোয়াখালী এক্সপ্রেসযোগে ভৈরব রেলস্টেশনে আসেন। রাত ২টায় রিকশাযোগে ভৈরব বাজার আসার পথে ভৈরব স্টেশন রোড (পলাশ সিনেমা হল তিন রাস্তার মোড়) এলাকায় ছিনতাইকারী তাদের আটক করে নগদ অর্থ, মোবাইল, মানিব্যাগসহ সর্বস্ব লুটে নিয়ে যায়। এরপর ১৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে পাওয়ার হাউস সংলগ্ন রেলওয়ে ও সড়ক সেতু এলাকায় ছিনতাইকারীর উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাতে নিতাই সাহা নামে একজন প্রাণ হারায়। ২৪ ফেব্রুয়ারি রেলওয়ে স্টেশনে প্লাটফর্মে থেকে ছিনতাইকারীরা ব্যাগ ধরে টান দিলে ট্রেন পড়ে এক নারী গুরুতর আহত। এর ৩ দিন পর ২৭ ফেব্রুয়ারি ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক সড়কের পানাউল্লারচর থেকে গলাকাটা এক অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর ৪ দিন পর ৩ মার্চ ভোরে পৌর কবরস্থানের সামনে স্ব-পরিবারে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে এক পুলিশ সদস্য। একই স্থানে গেল পহেলা এপ্রিলে ভোরে এক মেডিকেল পরীক্ষার্থীকে ছরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা। ১০ এপ্রিল শনিবার ভোর রাতে শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুর এলাকায় ছিনতাই করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ে এক ছিনতাইকারী।

এর দু’সপ্তাহ পার না হতে গত ১৬ এপ্রিল শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নাটাল টোল প্লাজার ৫শ গজ সামনে সড়কে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে ফারুক খান নামে এক যুবক খুন হয়। পরের দিন ১৭ এপ্রিল শনিবার সকালে ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক সড়কের গাজীরটেক এলাকা থেকে বস্তাবন্দী এক অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। একইদিন বিকেলে নাটাল মোড়ে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে এক রিকশাচালক। প্রতিনিয়ত একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ফলে কেউ কেউ মালামাল দিয়ে প্রাণে রক্ষা পেলেও কারও কারও প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। ফলে একদিকে যেমন শহরের বাসিন্দারা আতঙ্কিত, তেমনি অন্যদিকে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি চরম ক্ষুব্ধ। তাছাড়া এসব ঘটনায় কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ না দেয়ায় সহজে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না বলে দাবি পুলিশের। এছাড়াও ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণহানির কয়েকটি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারলেও দুটি হত্যাকাণ্ডের এখনো ক্লু বের করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে শহরে একের পর ছিনতাই এবং ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হতাশা আর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।

শহরের জগন্নাথপুরের বাসিন্দা ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তালাওয়াত হোসেন বাবলা লিখেছেন, পুলিশ যদি সোর্সের মাধ্যমে গভীররাতে কিংবা দিনে-দুপুরে কে কখন কোন গাড়ি দিয়ে মাদক নিয়ে আসছে, জানতে পারেন এবং মাদক উদ্ধার করতে পারেন। তাহলে ছিনতাইকারীদের কেন নির্মূল করা যাবে না। ফ্যাশন বাজারের মালিক মনির হোসেন লিখেছেন, ছিনতাইকারীদের হাতে এইভাবে আর কত জীবন যাবে। ধিক্কার জানাই ভৈরব প্রশাসন ও নেতৃবৃন্দকে। শিক্ষক শামীম আহমেদ লিখেছেন, যতদিন মাদকের সরবরাহ থাকবে বহমান, ততদিন ছিনতাইয়ের হবে না অবসান। আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম খান লিখেছেন, পুলিশ ইচ্ছে করলে সবি পারে, কিন্তু করে না।

এ প্রসঙ্গে ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ শাহিন বলেন, কখন কিভাবে একটি অপরাধ সংগঠিত হবে, কেউ বলতে পারবে না। তেমনি পুলিশও পারবে না। তাছাড়া যেকোন ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। এছাড়াও পুলিশ সব সময় তৎপর রয়েছে।

কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কিছুদিন যাবত মাটি কাটছি। বিলে তো অনেকেই জমির মাটি কাটছে আমি তো একা নই? ট্রলির ওভারলোডিংয়ের কারণে সরকারি রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি দম্ভ করে বলেন, রাস্তা ভাঙলে রাস্তা হবে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একাধিকবার বন্ধ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।

শ্রীনগর উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী মো. রাজিউল্লাহ’র কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুনতে পেয়েছি ওভারলোডিংয়ের কারণে রাস্তাটি বেহাল করা হচ্ছে। উপজেলায় আগামী মাসিক সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করবো।

এ ব্যাপরে শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণব কুমার ঘোষের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। কৃষি জমির মাটি কাটা যাবে না। দ্রুত খোঁজ খবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল ২০২১ , ৭ বৈশাখ ১৪২৮ ৭ রমজান ১৪৪২

ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ গেলে ঘুম ভাঙে প্রশাসনের

ভৈরবে ৪ মাসে নিহত ৫ আহত ১৫

সোহেল সাশ্রু, প্রতিনিধি, ভৈরব

ভৈরবে ছিনতাইকারীদের হাতে গেল ৪ মাসে ৫ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাত থেকে ট্রেনযাত্রী, পথচারী, ব্যবসায়ী, পুলিশ সদস্য, শিক্ষার্থী ও অটোরিকশা চালক কেউ রেহাই পাইনি। ফলে ছিনতাইয়ের নগরী হিসেবে পরিচিত পেয়েছে বন্দরনগরী ভৈরব। আর ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হবার পর ঘুম ভাঙ্গে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের। ফলে লাগামহীন ভৈরবের ছিনতাইকারীরা। আর সন্ধ্যা নামলেই ঘর থেকে বের হতে ভয় পায় শহরের বাসিন্দারা। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে একাধিক ছিনতাইকারী দলের সদস্যদের আটক করে জেলে পাঠিয়েছেন। তবুও কিছুতেই থামছে না ছিনতাই। ফলে বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে শহরের বাসিন্দাদের।

জানাগেছে, শহরের হাতেগুনা কয়েকটি স্পটে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে থাকে। তার মধ্যে শহরের রেলওয়ে স্টেশন সড়কের পলাশ সিনেমা হলের মোড়, পৌর কবরস্থানের সামনে, মনমরা ব্রিজ এলাকা, রেলওয়ে স্কুলের সামনে এবং স্কুলটির পেছনে মন্দিরের সামনে, মেঘনা নদীর পাড় ডিপো এলাকা, নদী বাংলা সেন্টার পয়েন্টের সামনে ও গাছতলা ঘাট ব্রিজ এলাকা, হাজী আসমত কলেজ গেইট, পৌর শহীদ আইভি রহমান স্টেডিয়াম সংলগ্ন। এছাড়াও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নাটাল মোড়, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতুর উপর, সিলেট বাসস্ট্যন্ড, উপজেলার শম্ভুপুর পাক্কার মাথায় (কবরস্থান), পানাউল্লারচর ভূষির মিল এলাকা ও গাজিরটেক এলাকায় প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ফলে শহরের এবং শহরে আসা মানুষজন সব সময় থাকেন আতঙ্কিত।

একাাধিক মামলা সূত্রে জানা গেছে, শহরের ভৈরবপুর, কমলপুর, পঞ্চবটি, চণ্ডিবের এবং জগন্নাথপুরে প্রায় ৩৫ জন চিহ্নিত ছিনতাইকারী রয়েছে। এসব গ্রামের ছিনতাইকারীদের মধ্যে কেউ কেউ প্রভাবশালী বংশের কিংবা বাড়ির। ফলে সহজে কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না। এছাড়াও এসব চিহ্নিত ছিনতাইকারীরা কেউ মাদক ব্যবসা, আবার কেউ মাদকাসক্ত, কেউ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। শুধু তাই নয়, তাদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে।

শহরের সচেতন নাগরিকদের দাবি, ভৈরবের প্রায় ৩ লাখ মানুষ হাতেগুনা কয়েকটি গ্রামের বা মহল্লার কয়েকজন ছিনতাইকারীর কাছে জিম্মী হয়ে পড়েছে। অথচ ভৈরবে ৫টি থানা এবং র‌্যাপিট একশ্যান ব্যটেলিয়ান (র‌্যাব-১৪) সিপিসি-৩ ক্যাম্প রয়েছে। তারপরও ছিনতাই হচ্ছে লাগামহীন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেল ২৮ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুর্জয় মোড়ের পূর্ব পাশে ছিনতাইকারীদের হাতে এক কয়লা শ্রমিক খুন হয়। ভৈরব থেকে কাপড় নিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লাকসাম থেকে হাসান মাহমুদ নামে এক পাইকার ৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টায় নোয়াখালী এক্সপ্রেসযোগে ভৈরব রেলস্টেশনে আসেন। রাত ২টায় রিকশাযোগে ভৈরব বাজার আসার পথে ভৈরব স্টেশন রোড (পলাশ সিনেমা হল তিন রাস্তার মোড়) এলাকায় ছিনতাইকারী তাদের আটক করে নগদ অর্থ, মোবাইল, মানিব্যাগসহ সর্বস্ব লুটে নিয়ে যায়। এরপর ১৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে পাওয়ার হাউস সংলগ্ন রেলওয়ে ও সড়ক সেতু এলাকায় ছিনতাইকারীর উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাতে নিতাই সাহা নামে একজন প্রাণ হারায়। ২৪ ফেব্রুয়ারি রেলওয়ে স্টেশনে প্লাটফর্মে থেকে ছিনতাইকারীরা ব্যাগ ধরে টান দিলে ট্রেন পড়ে এক নারী গুরুতর আহত। এর ৩ দিন পর ২৭ ফেব্রুয়ারি ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক সড়কের পানাউল্লারচর থেকে গলাকাটা এক অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর ৪ দিন পর ৩ মার্চ ভোরে পৌর কবরস্থানের সামনে স্ব-পরিবারে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে এক পুলিশ সদস্য। একই স্থানে গেল পহেলা এপ্রিলে ভোরে এক মেডিকেল পরীক্ষার্থীকে ছরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা। ১০ এপ্রিল শনিবার ভোর রাতে শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুর এলাকায় ছিনতাই করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ে এক ছিনতাইকারী।

এর দু’সপ্তাহ পার না হতে গত ১৬ এপ্রিল শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নাটাল টোল প্লাজার ৫শ গজ সামনে সড়কে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে ফারুক খান নামে এক যুবক খুন হয়। পরের দিন ১৭ এপ্রিল শনিবার সকালে ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক সড়কের গাজীরটেক এলাকা থেকে বস্তাবন্দী এক অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। একইদিন বিকেলে নাটাল মোড়ে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে এক রিকশাচালক। প্রতিনিয়ত একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ফলে কেউ কেউ মালামাল দিয়ে প্রাণে রক্ষা পেলেও কারও কারও প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। ফলে একদিকে যেমন শহরের বাসিন্দারা আতঙ্কিত, তেমনি অন্যদিকে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি চরম ক্ষুব্ধ। তাছাড়া এসব ঘটনায় কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ না দেয়ায় সহজে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না বলে দাবি পুলিশের। এছাড়াও ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণহানির কয়েকটি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারলেও দুটি হত্যাকাণ্ডের এখনো ক্লু বের করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে শহরে একের পর ছিনতাই এবং ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হতাশা আর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।

শহরের জগন্নাথপুরের বাসিন্দা ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তালাওয়াত হোসেন বাবলা লিখেছেন, পুলিশ যদি সোর্সের মাধ্যমে গভীররাতে কিংবা দিনে-দুপুরে কে কখন কোন গাড়ি দিয়ে মাদক নিয়ে আসছে, জানতে পারেন এবং মাদক উদ্ধার করতে পারেন। তাহলে ছিনতাইকারীদের কেন নির্মূল করা যাবে না। ফ্যাশন বাজারের মালিক মনির হোসেন লিখেছেন, ছিনতাইকারীদের হাতে এইভাবে আর কত জীবন যাবে। ধিক্কার জানাই ভৈরব প্রশাসন ও নেতৃবৃন্দকে। শিক্ষক শামীম আহমেদ লিখেছেন, যতদিন মাদকের সরবরাহ থাকবে বহমান, ততদিন ছিনতাইয়ের হবে না অবসান। আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম খান লিখেছেন, পুলিশ ইচ্ছে করলে সবি পারে, কিন্তু করে না।

এ প্রসঙ্গে ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ শাহিন বলেন, কখন কিভাবে একটি অপরাধ সংগঠিত হবে, কেউ বলতে পারবে না। তেমনি পুলিশও পারবে না। তাছাড়া যেকোন ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। এছাড়াও পুলিশ সব সময় তৎপর রয়েছে।

কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কিছুদিন যাবত মাটি কাটছি। বিলে তো অনেকেই জমির মাটি কাটছে আমি তো একা নই? ট্রলির ওভারলোডিংয়ের কারণে সরকারি রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি দম্ভ করে বলেন, রাস্তা ভাঙলে রাস্তা হবে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একাধিকবার বন্ধ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।

শ্রীনগর উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী মো. রাজিউল্লাহ’র কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুনতে পেয়েছি ওভারলোডিংয়ের কারণে রাস্তাটি বেহাল করা হচ্ছে। উপজেলায় আগামী মাসিক সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করবো।

এ ব্যাপরে শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণব কুমার ঘোষের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। কৃষি জমির মাটি কাটা যাবে না। দ্রুত খোঁজ খবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।