চট্টগ্রামে চার এলাকা রেডজোন

চট্টগ্রাম মহানগরের চার এলাকাকে উচ্চ সংক্রমিত এলাকা ঘোষণা করে তা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে সিএমপি। সরকার ঘোষিত চলমান লকডাউনের বিধি-নিষেধের মধ্যেও সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনভাবে বাড়তে থাকায় নগরের চার থানার চার এলাকাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ।

নগরের ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ৫৫টি এলাকা ধরে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হিসাব রাখা হয়। সেই ৫৫ এলাকার তালিকায় চকবাজার থানার জয় নগর আবাসিক, পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম আবাসিক, পাহাড়তলীর সরাইপাড়া ও হালিশহর থানার সবুজবাগ আবসিক এলাকাকে উচ্চ সংক্রমিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।

লাখের বিপরীতে করোনা সংক্রমণ এসব এলাকায় ৬০ জনের বেশি রয়েছে। এসব এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। খুব জরুরি ছাড়া কাউকে বাসা থেকে বের হতে দিচ্ছে না পুলিশ। সব ধরনের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে বের হতেও অনুমতি লাগবে পুলিশের। সবাইকে আগামী দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বাসায় থাকতে হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ইতোমধ্যে গতকাল সকাল থেকে মাইকিংও করা হয়েছে।

গতকাল দুপুরে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আক্তার চৌধুরী বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে পুরো সিটি করপোরেশন এলাকার ৪০ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ড বাদ দিয়ে বাকি সব জায়গা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বাস্তবায়নের বিষয়টি পুলিশ দেখছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ৪৫৯ জন কোভিড-১৯ পজেটিভ হয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে নগরে ৩৩৮ জন এবং উপজেলায় মারা গেছেন ১২১ জন। এ পর্যন্ত নগরের কোতোয়ালিতে ৩৪ জন, চান্দগাঁওয়ে ২৫ জন, পাঁচলাইশে ২৪ জন, চকবাজারে ১৮ জন, খুলশীতে ১৭ জন, বন্দর এলাকায় ১০ জন, ডবলমুরিংয়ে ৬ জন, বাকলিয়ায় ৭ জন, বায়েজিদে ৯ জন, আকবর শাহ এলাকায় ১১ জন, পতেঙ্গায় ৬ জন, সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় ২ জন, মোহরায় ৩ জন, লালখান বাজারে ২ জন, মাদারবাড়ীতে ৪ জন, কদমতলীতে একজন, আগ্রাবাদ এলাকায় ১২ জন, পাহাড়তলীতে ১৪ জন, ইপিজেড এলাকায় একজন, সদরঘাটে ৬ জন মারা গেছেন।

এছাড়া এনায়েত বাজারে ২ জন, দামপাড়ায় ১২ জন, ঈদগাঁয়ে ৩ জন, বউবাজার এলাকায় একজন, মোগলটুলীতে একজন, মুরাদপুরে একজন, রাহাত্তারপুল এলাকায় ৪ জন, ফিরোজশাহ কলোনিতে ৩ জন, আসকারদিঘি পাড় এলাকায় ২ জন, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে ৩ জন, কাট্টলীত ৩ জন, ষোলশহর ২নং গেট এলাকায় ২ জন, বিশ্ব কলোনিতে একজন, দেওয়ানবাজারে একজন, বড়পোলে একজন, মনসুরাবাদে একজন, রেয়াজউদ্দিন বাজারে ২ জন, হিলভিউতে একজন, চন্দনপুরায় একজন, দেওয়ানহাটে ২ জন, ব্যাটারি গলিতে একজন, কালুরঘাটে একজন এবং কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকায় একজন মারা গেছেন।

প্রতিবেদনে নগরে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের এলাকা হিসেবে ৫৫টি স্থানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে হালিশহরে সর্বোচ্চ ৩৫ জন রয়েছেন।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ২ জুন নগরের ১২ থানাকে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণের হটস্পট বা রেড জোন হিসেবে শনাক্ত করে স্বাস্থ্য বিভাগ। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ এর উপরে শনাক্ত হওয়ায় এসব থানাকে ওই সময় রেড জোন হিসেবে শনাক্ত করা হয়। প্রথম দিকে ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলীতে রেড জোনে কড়াকড়ি আরোপ করলেও অন্যগুলোতে তা করতে হয়নি।

চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আসিফ খান বলেন, রেড জোন এটা নতুন বিষয় নয়। এটি কখন ঘোষণা করা হবে, হবে না- তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়। রেড জোন হওয়ার সুযোগ নেই তা বলব না। তবে এখন পর্যন্ত আমরা অফিসিয়াল নির্দেশনা পাইনি।

সিএমপির উপকমিশনার (ক্রাইম) জয়নুল আবেদীন বলেন, কোন এলাকায় করোনা সংক্রমণ পরীক্ষায় প্রতি লাখে ৬০ জনের বেশি হলে সেই এলাকাকে রেড জোন ধরা হবে। ৩ থেকে ৫৯ জন হলে ইয়োলো জোন, এর কম হলে গ্রিন জোন। নগরের ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টি এলাকার মধ্যে চারটি এলাকাকে আমরা উচ্চ সংক্রমিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছি।

আসলে লকডাউনের বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ঘোষণা করতে হয় তাই এটাকে আমরা লকডাউন বলছি না। আমলা মূলত উচ্চ সংক্রমিত এলাকায় লকডাউনে কড়াকড়ি করতে যাচ্ছি। যেহেতেু লকডাউন চলমান তাই ওইসব এলাকার জন্য নতুন করে বিধি-নিষেধ দেয়া হয়নি। শুধুমাত্র চারটি এলাকায় আমাদের বিশেষ নজরদারি ও কর্মতৎপরতা থাকবে।

মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল ২০২১ , ৭ বৈশাখ ১৪২৮ ৭ রমজান ১৪৪২

চট্টগ্রামে চার এলাকা রেডজোন

নিরুপম দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম মহানগরের চার এলাকাকে উচ্চ সংক্রমিত এলাকা ঘোষণা করে তা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে সিএমপি। সরকার ঘোষিত চলমান লকডাউনের বিধি-নিষেধের মধ্যেও সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনভাবে বাড়তে থাকায় নগরের চার থানার চার এলাকাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ।

নগরের ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ৫৫টি এলাকা ধরে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হিসাব রাখা হয়। সেই ৫৫ এলাকার তালিকায় চকবাজার থানার জয় নগর আবাসিক, পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম আবাসিক, পাহাড়তলীর সরাইপাড়া ও হালিশহর থানার সবুজবাগ আবসিক এলাকাকে উচ্চ সংক্রমিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে।

লাখের বিপরীতে করোনা সংক্রমণ এসব এলাকায় ৬০ জনের বেশি রয়েছে। এসব এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। খুব জরুরি ছাড়া কাউকে বাসা থেকে বের হতে দিচ্ছে না পুলিশ। সব ধরনের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে বের হতেও অনুমতি লাগবে পুলিশের। সবাইকে আগামী দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বাসায় থাকতে হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ইতোমধ্যে গতকাল সকাল থেকে মাইকিংও করা হয়েছে।

গতকাল দুপুরে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আক্তার চৌধুরী বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে পুরো সিটি করপোরেশন এলাকার ৪০ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ড বাদ দিয়ে বাকি সব জায়গা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বাস্তবায়নের বিষয়টি পুলিশ দেখছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ৪৫৯ জন কোভিড-১৯ পজেটিভ হয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে নগরে ৩৩৮ জন এবং উপজেলায় মারা গেছেন ১২১ জন। এ পর্যন্ত নগরের কোতোয়ালিতে ৩৪ জন, চান্দগাঁওয়ে ২৫ জন, পাঁচলাইশে ২৪ জন, চকবাজারে ১৮ জন, খুলশীতে ১৭ জন, বন্দর এলাকায় ১০ জন, ডবলমুরিংয়ে ৬ জন, বাকলিয়ায় ৭ জন, বায়েজিদে ৯ জন, আকবর শাহ এলাকায় ১১ জন, পতেঙ্গায় ৬ জন, সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় ২ জন, মোহরায় ৩ জন, লালখান বাজারে ২ জন, মাদারবাড়ীতে ৪ জন, কদমতলীতে একজন, আগ্রাবাদ এলাকায় ১২ জন, পাহাড়তলীতে ১৪ জন, ইপিজেড এলাকায় একজন, সদরঘাটে ৬ জন মারা গেছেন।

এছাড়া এনায়েত বাজারে ২ জন, দামপাড়ায় ১২ জন, ঈদগাঁয়ে ৩ জন, বউবাজার এলাকায় একজন, মোগলটুলীতে একজন, মুরাদপুরে একজন, রাহাত্তারপুল এলাকায় ৪ জন, ফিরোজশাহ কলোনিতে ৩ জন, আসকারদিঘি পাড় এলাকায় ২ জন, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে ৩ জন, কাট্টলীত ৩ জন, ষোলশহর ২নং গেট এলাকায় ২ জন, বিশ্ব কলোনিতে একজন, দেওয়ানবাজারে একজন, বড়পোলে একজন, মনসুরাবাদে একজন, রেয়াজউদ্দিন বাজারে ২ জন, হিলভিউতে একজন, চন্দনপুরায় একজন, দেওয়ানহাটে ২ জন, ব্যাটারি গলিতে একজন, কালুরঘাটে একজন এবং কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকায় একজন মারা গেছেন।

প্রতিবেদনে নগরে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের এলাকা হিসেবে ৫৫টি স্থানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে হালিশহরে সর্বোচ্চ ৩৫ জন রয়েছেন।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ২ জুন নগরের ১২ থানাকে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণের হটস্পট বা রেড জোন হিসেবে শনাক্ত করে স্বাস্থ্য বিভাগ। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ এর উপরে শনাক্ত হওয়ায় এসব থানাকে ওই সময় রেড জোন হিসেবে শনাক্ত করা হয়। প্রথম দিকে ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলীতে রেড জোনে কড়াকড়ি আরোপ করলেও অন্যগুলোতে তা করতে হয়নি।

চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আসিফ খান বলেন, রেড জোন এটা নতুন বিষয় নয়। এটি কখন ঘোষণা করা হবে, হবে না- তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়। রেড জোন হওয়ার সুযোগ নেই তা বলব না। তবে এখন পর্যন্ত আমরা অফিসিয়াল নির্দেশনা পাইনি।

সিএমপির উপকমিশনার (ক্রাইম) জয়নুল আবেদীন বলেন, কোন এলাকায় করোনা সংক্রমণ পরীক্ষায় প্রতি লাখে ৬০ জনের বেশি হলে সেই এলাকাকে রেড জোন ধরা হবে। ৩ থেকে ৫৯ জন হলে ইয়োলো জোন, এর কম হলে গ্রিন জোন। নগরের ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টি এলাকার মধ্যে চারটি এলাকাকে আমরা উচ্চ সংক্রমিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছি।

আসলে লকডাউনের বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ঘোষণা করতে হয় তাই এটাকে আমরা লকডাউন বলছি না। আমলা মূলত উচ্চ সংক্রমিত এলাকায় লকডাউনে কড়াকড়ি করতে যাচ্ছি। যেহেতেু লকডাউন চলমান তাই ওইসব এলাকার জন্য নতুন করে বিধি-নিষেধ দেয়া হয়নি। শুধুমাত্র চারটি এলাকায় আমাদের বিশেষ নজরদারি ও কর্মতৎপরতা থাকবে।