জান্তা সরকারের বন্দী নির্যাতনের ছবি প্রকাশে বিক্ষুব্ধ জনতা

আটক থাকা ছয় তরুণ বিক্ষোভকারীকে নিপীড়ন করার ছবি প্রকাশ করেছে মায়ানমারের জান্তা সরকার। এসব বিক্ষোভকারীর শরীরে মারাত্মক নিপীড়নের চিহ্ন দেখা গেছে। এরপরই দেশটির অভ্যুত্থানবিরোধীদের নির্যাতন এবং হত্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে একটি পর্যবেক্ষক গ্রুপ। আল জাজিরা

মায়ানমার সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন এমআরটিভিতে প্রকাশ করা ছবিতে ৪ পুরুষ ও ২ নারীর মুখ রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত দেখা গেছে। এক নারীর ফুলে যাওয়া চোয়াল এবং চোখ কালো হয়ে যেতে দেখা গেছে।

পর্যবেক্ষক গ্রুপ অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপিবি) এক টুইট বার্তায় বলেছে, এই জান্তা সরকার নির্যাতনকে নীতি হিসেবে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পদক্ষেপ না নিলে নির্যাতন এবং মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া, স্পষ্টত অব্যাহত থাকবে।

এএপিপি জানিয়েছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পর নিরাপত্তা বাহিনী ৭৩৭ বিক্ষোভকারীকে হত্যা করেছে। এছাড়া আরও তিন হাজার ২২৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রুপটি বলছে, এএপিপি সব আটককৃতকে নিয়ে উদ্বিগ্ন, বিশেষ করে যাদের গোপন স্থানে রাখা হয়েছে।

ওই ছয় আটককৃতকে মায়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনের উপশহর ইয়ানকিন থেকে আটক করা হয়। এমআরটিভির খবরে বলা হয়েছে, ওই ছয়জন গত শনিবার বেলা ২টায় ইয়ানকিনের একটি সরকারি অফিসের বাইরে বোমা বিস্ফোরণে জড়িত। ওই ঘটনায় ৩ সরকারি সেনা আহত হয়। এর বেশি কোন তথ্য তারা প্রকাশ করেনি। আল জাজিরার প্রতিবেদক বলেন, আমরা আরও দেখেছি সামরিক সরকার আরও মারাত্মক ধরনের অপরাধে মানুষকে অভিযুক্ত করছেন। অভ্যুত্থানের পর থেকে আমরা তাদের এই কৌশল ব্যবহার করতে দেখেছি, মানুষকে আটক দেখিয়ে অন্যদের বাইরে বের হওয়া এবং বিক্ষোভ থেকে বিরত রাখার কৌশল।

গত ১ ফেব্রুয়ারি সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং ক্ষমতা দখল করে নেয়ার পর থেকেই মিয়ানমারে অস্থিরতা চলছে। বিক্ষোভ, হত্যা এবং গণগ্রেফতার অব্যাহত থাকায় জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে মায়ানমারের পরিস্থিতি পূর্ণাঙ্গ সংঘাতের দিকে ধাবিত হচ্ছেÑ যেমনটা গৃহযুদ্ধ কবলিত মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়ায় চলছে।

মায়ানমারের বেসামরিক ও সামরিক সম্পর্ক গবেষক কিম জোলিফে বলেন, মায়ানমারের ছয় বিক্ষোভকারীর ছবি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ হলো মানুষকে ভয় দেখানো। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মায়ানমারের জান্তার কৌশল একই নীতির ওপর ভর করেÑ আমরা তোমাদের চেয়েও নৃশংস হতে পারি। আমরা তোমাদের চেয়ে মর্মান্তিক কষ্ট এবং ভয়াবহতা দিতে পারি। এটাই তাদের আছে। কিন্তু এর কোন সীমা নেই।

আটককৃত ছয়জনের গ্রেফতারের আগে ও পরের ছবির সঙ্গে তুলনা করছেন টুইটার ব্যবহারকারীরা। কেউ কেউ বিক্ষোভ অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানাচ্ছেন। টুইটার ব্যবহারকারী সোয়ে-ই লিখেছেন, আমরা যে ধরনের জান্তার মোকাবিলা করছি তাদের ধরনই এটা। স্বাধীনতার জন্য আমরা যা করছি তা অবশ্যই ছেড়ে দেব না। আমাদের ভয় দেখিয়ে দমন করা যাবে না।

image

মায়ানমার জান্তা সরকারের জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে -রয়টার্স

আরও খবর
নাভালনির মৃত্যু হলে রাশিয়াকে ভুগতে হবে : যুক্তরাষ্ট্র
মিসরে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে নিহত ১১ আহত ৯৮

মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল ২০২১ , ৭ বৈশাখ ১৪২৮ ৭ রমজান ১৪৪২

জান্তা সরকারের বন্দী নির্যাতনের ছবি প্রকাশে বিক্ষুব্ধ জনতা

image

মায়ানমার জান্তা সরকারের জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে -রয়টার্স

আটক থাকা ছয় তরুণ বিক্ষোভকারীকে নিপীড়ন করার ছবি প্রকাশ করেছে মায়ানমারের জান্তা সরকার। এসব বিক্ষোভকারীর শরীরে মারাত্মক নিপীড়নের চিহ্ন দেখা গেছে। এরপরই দেশটির অভ্যুত্থানবিরোধীদের নির্যাতন এবং হত্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে একটি পর্যবেক্ষক গ্রুপ। আল জাজিরা

মায়ানমার সামরিক বাহিনীর মালিকানাধীন এমআরটিভিতে প্রকাশ করা ছবিতে ৪ পুরুষ ও ২ নারীর মুখ রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত দেখা গেছে। এক নারীর ফুলে যাওয়া চোয়াল এবং চোখ কালো হয়ে যেতে দেখা গেছে।

পর্যবেক্ষক গ্রুপ অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপিবি) এক টুইট বার্তায় বলেছে, এই জান্তা সরকার নির্যাতনকে নীতি হিসেবে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পদক্ষেপ না নিলে নির্যাতন এবং মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া, স্পষ্টত অব্যাহত থাকবে।

এএপিপি জানিয়েছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পর নিরাপত্তা বাহিনী ৭৩৭ বিক্ষোভকারীকে হত্যা করেছে। এছাড়া আরও তিন হাজার ২২৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রুপটি বলছে, এএপিপি সব আটককৃতকে নিয়ে উদ্বিগ্ন, বিশেষ করে যাদের গোপন স্থানে রাখা হয়েছে।

ওই ছয় আটককৃতকে মায়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনের উপশহর ইয়ানকিন থেকে আটক করা হয়। এমআরটিভির খবরে বলা হয়েছে, ওই ছয়জন গত শনিবার বেলা ২টায় ইয়ানকিনের একটি সরকারি অফিসের বাইরে বোমা বিস্ফোরণে জড়িত। ওই ঘটনায় ৩ সরকারি সেনা আহত হয়। এর বেশি কোন তথ্য তারা প্রকাশ করেনি। আল জাজিরার প্রতিবেদক বলেন, আমরা আরও দেখেছি সামরিক সরকার আরও মারাত্মক ধরনের অপরাধে মানুষকে অভিযুক্ত করছেন। অভ্যুত্থানের পর থেকে আমরা তাদের এই কৌশল ব্যবহার করতে দেখেছি, মানুষকে আটক দেখিয়ে অন্যদের বাইরে বের হওয়া এবং বিক্ষোভ থেকে বিরত রাখার কৌশল।

গত ১ ফেব্রুয়ারি সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং ক্ষমতা দখল করে নেয়ার পর থেকেই মিয়ানমারে অস্থিরতা চলছে। বিক্ষোভ, হত্যা এবং গণগ্রেফতার অব্যাহত থাকায় জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে মায়ানমারের পরিস্থিতি পূর্ণাঙ্গ সংঘাতের দিকে ধাবিত হচ্ছেÑ যেমনটা গৃহযুদ্ধ কবলিত মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়ায় চলছে।

মায়ানমারের বেসামরিক ও সামরিক সম্পর্ক গবেষক কিম জোলিফে বলেন, মায়ানমারের ছয় বিক্ষোভকারীর ছবি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ হলো মানুষকে ভয় দেখানো। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মায়ানমারের জান্তার কৌশল একই নীতির ওপর ভর করেÑ আমরা তোমাদের চেয়েও নৃশংস হতে পারি। আমরা তোমাদের চেয়ে মর্মান্তিক কষ্ট এবং ভয়াবহতা দিতে পারি। এটাই তাদের আছে। কিন্তু এর কোন সীমা নেই।

আটককৃত ছয়জনের গ্রেফতারের আগে ও পরের ছবির সঙ্গে তুলনা করছেন টুইটার ব্যবহারকারীরা। কেউ কেউ বিক্ষোভ অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানাচ্ছেন। টুইটার ব্যবহারকারী সোয়ে-ই লিখেছেন, আমরা যে ধরনের জান্তার মোকাবিলা করছি তাদের ধরনই এটা। স্বাধীনতার জন্য আমরা যা করছি তা অবশ্যই ছেড়ে দেব না। আমাদের ভয় দেখিয়ে দমন করা যাবে না।