তিনগুণ খাদ্য উৎপাদনে কৃষকরা সব ধরনের সহায়তা পাচ্ছেন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার কৃষকদের সর্বপ্রকার সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন, যাতে তারা অধিক খাদ্য উৎপাদন করতে পারেন এবং কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে চলমান উৎপাদনকে দুই থেকে তিনগুণ বাড়াতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে উৎপাদন যাতে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হতে পারে- তার জন্য যথাযথ- মাটি পরীক্ষা করা থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।’

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাতে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন।

প্রায় পৌনে ৮ মিনিটের ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী চলমান কোভিড-১৯ এর সময় উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সবাইকে স্বাস্থ্যমত বিধি মেনে চলায় তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকেই কৃষকদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় তাদের কষ্ট লাঘব হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্গাচাষিরা যাতে বিনা জামানতে ঋণ পায় আমরা কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের বিনা জামানতে ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সারের দাম যা বিএনপি সরকারের আমলে ৯০ টাকা ছিল, তা আজ ১২ টাকায় আমরা নামিয়ে এনেছি। গবেষণার মাধ্যমে উন্নত বীজ আমরা উৎপাদন করছি এবং সেই বীজ আমরা সরবরাহ করছি।’

কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ- যেটা জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল- তার সরকার সেই লক্ষ্য কার্যকর করে দিচ্ছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা ৭০ শতাংশের ওপর ভর্তুকি দিচ্ছি এবং কৃষি-যান্ত্রিকীকরণ করে যাচ্ছি যাতে আমাদের কৃষকরা আরও অধিক পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা উন্নতমানের বীজ সরবরাহ ও প্রতিটি কৃষি-উপকরণ কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি। সেই সঙ্গে সেচ কাজে কৃষক যে বিদ্যুৎ ব্যাবহার করেন সেখানে আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি এবং কৃষকের বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে নিশ্চিত হয় তার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি এবং বর্তমানে সেচ কাজে আমরা সোলার-প্যানেল ব্যাবহারও আমরা শুরু করে দিয়েছি।

ন্যায্য মূল্য যাতে আমাদের কৃষকরা পায়, তার জন্য সরকার যথাযথ দাম নির্দিষ্ট করেছে এবং কৃষকদের সহায়তা দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষকের গুদামে যাতে খাদ্য সংরক্ষিত থাকে, প্রত্যেক কৃষকের ঘরে খাদ্য যেন থাকে- কারণ যারা উৎপাদন করবে তারা খাবার পাবে না বা তাদের ছেলে-মেয়েরা খাদ্যে কষ্ট পাবে এটা হতে পারে না। আমরা সে ব্যবস্থাও নিয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার ব্যাবস্থা নিয়েছি এবং সেই সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।

তিনি সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, এবারও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সে ধরনের সহযোগিতা পাবেন। তার জন্য থোক বরাদ্দ রাখছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। কৃষক একটা মোবাইল ফোন ধরে ছবি তুলে তার ফসলের কী অবস্থা, মাটির কী অবস্থা বা মাটি পরীক্ষা করা এবং কী ধরনের সার ব্যাবহার করবেন, কতটুকু ব্যাবহার করবেন বা কীটনাশক ব্যবহার করবেন কিনা বা কতটুকু করবেন সেই ধরনের কৃষি তথ্য যাতে তারা পেতে পারেন সে তথ্যকেন্দ্রসমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। সেখান থেকে কৃষক তার প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর মোবাইল ফোনও আমরা সবার হাতে তুলে দিয়েছি।

তার সরকার গবেষণার ওপর সবসময় অধিক গুরুত্বারোপ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন থেকেই কৃষি গবেষণায় আমরা গুরুত্ব দেই। আজকে গবেষণার ফলে আরও নতুন নতুন ধরনের ফসল উৎপাদন- তরি-তরকারি, ফল-মূল এবং দানাদার খাদ্য-শষ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্য যেন উৎপাদন হতে পারে তার জন্য ব্যাপক হারে গবেষণা হচ্ছে এবং উন্নতমানের বীজ আমরা সরবরাহ করছি। এর ফলে আজকে কৃষক খুব অল্প কষ্টে অধিক পরিমাণে খাদ্য উৎপাদন করতে পারছেন। ধান, গম, ভুট্টা এবং সব ধরনের ফসল উৎপাদন করার সুযোগ পাচ্ছেন। তা বাজারজাত করার ব্যবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি।

শেখ হাসিনা করোনায় ধানকাটার সমস্যায় তার দল এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর কথাও স্মরণ করিয়ে দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের সময় যখন ধানকাটা নিয়ে সমস্যা হলো- আমি যখন আমার দলের নেতাকর্মী বিশেষ করে ছাত্রলীগকে আহ্বান করলাম, আমার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ থেকে শুরু করে সবাই মাঠে নেমে পড়লেন। কৃষকের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলে দিলেন।

মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল ২০২১ , ৭ বৈশাখ ১৪২৮ ৭ রমজান ১৪৪২

মহামারীর মধ্যে

তিনগুণ খাদ্য উৎপাদনে কৃষকরা সব ধরনের সহায়তা পাচ্ছেন : প্রধানমন্ত্রী

বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার কৃষকদের সর্বপ্রকার সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন, যাতে তারা অধিক খাদ্য উৎপাদন করতে পারেন এবং কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে চলমান উৎপাদনকে দুই থেকে তিনগুণ বাড়াতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে উৎপাদন যাতে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হতে পারে- তার জন্য যথাযথ- মাটি পরীক্ষা করা থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।’

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাতে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন।

প্রায় পৌনে ৮ মিনিটের ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী চলমান কোভিড-১৯ এর সময় উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে সবাইকে স্বাস্থ্যমত বিধি মেনে চলায় তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকেই কৃষকদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় তাদের কষ্ট লাঘব হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্গাচাষিরা যাতে বিনা জামানতে ঋণ পায় আমরা কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের বিনা জামানতে ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সারের দাম যা বিএনপি সরকারের আমলে ৯০ টাকা ছিল, তা আজ ১২ টাকায় আমরা নামিয়ে এনেছি। গবেষণার মাধ্যমে উন্নত বীজ আমরা উৎপাদন করছি এবং সেই বীজ আমরা সরবরাহ করছি।’

কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ- যেটা জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল- তার সরকার সেই লক্ষ্য কার্যকর করে দিচ্ছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা ৭০ শতাংশের ওপর ভর্তুকি দিচ্ছি এবং কৃষি-যান্ত্রিকীকরণ করে যাচ্ছি যাতে আমাদের কৃষকরা আরও অধিক পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা উন্নতমানের বীজ সরবরাহ ও প্রতিটি কৃষি-উপকরণ কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছি। সেই সঙ্গে সেচ কাজে কৃষক যে বিদ্যুৎ ব্যাবহার করেন সেখানে আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি এবং কৃষকের বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে নিশ্চিত হয় তার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি এবং বর্তমানে সেচ কাজে আমরা সোলার-প্যানেল ব্যাবহারও আমরা শুরু করে দিয়েছি।

ন্যায্য মূল্য যাতে আমাদের কৃষকরা পায়, তার জন্য সরকার যথাযথ দাম নির্দিষ্ট করেছে এবং কৃষকদের সহায়তা দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষকের গুদামে যাতে খাদ্য সংরক্ষিত থাকে, প্রত্যেক কৃষকের ঘরে খাদ্য যেন থাকে- কারণ যারা উৎপাদন করবে তারা খাবার পাবে না বা তাদের ছেলে-মেয়েরা খাদ্যে কষ্ট পাবে এটা হতে পারে না। আমরা সে ব্যবস্থাও নিয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার ব্যাবস্থা নিয়েছি এবং সেই সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।

তিনি সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, এবারও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সে ধরনের সহযোগিতা পাবেন। তার জন্য থোক বরাদ্দ রাখছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। কৃষক একটা মোবাইল ফোন ধরে ছবি তুলে তার ফসলের কী অবস্থা, মাটির কী অবস্থা বা মাটি পরীক্ষা করা এবং কী ধরনের সার ব্যাবহার করবেন, কতটুকু ব্যাবহার করবেন বা কীটনাশক ব্যবহার করবেন কিনা বা কতটুকু করবেন সেই ধরনের কৃষি তথ্য যাতে তারা পেতে পারেন সে তথ্যকেন্দ্রসমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। সেখান থেকে কৃষক তার প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর মোবাইল ফোনও আমরা সবার হাতে তুলে দিয়েছি।

তার সরকার গবেষণার ওপর সবসময় অধিক গুরুত্বারোপ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন থেকেই কৃষি গবেষণায় আমরা গুরুত্ব দেই। আজকে গবেষণার ফলে আরও নতুন নতুন ধরনের ফসল উৎপাদন- তরি-তরকারি, ফল-মূল এবং দানাদার খাদ্য-শষ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্য যেন উৎপাদন হতে পারে তার জন্য ব্যাপক হারে গবেষণা হচ্ছে এবং উন্নতমানের বীজ আমরা সরবরাহ করছি। এর ফলে আজকে কৃষক খুব অল্প কষ্টে অধিক পরিমাণে খাদ্য উৎপাদন করতে পারছেন। ধান, গম, ভুট্টা এবং সব ধরনের ফসল উৎপাদন করার সুযোগ পাচ্ছেন। তা বাজারজাত করার ব্যবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি।

শেখ হাসিনা করোনায় ধানকাটার সমস্যায় তার দল এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর কথাও স্মরণ করিয়ে দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের সময় যখন ধানকাটা নিয়ে সমস্যা হলো- আমি যখন আমার দলের নেতাকর্মী বিশেষ করে ছাত্রলীগকে আহ্বান করলাম, আমার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ থেকে শুরু করে সবাই মাঠে নেমে পড়লেন। কৃষকের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলে দিলেন।