ইন্টারনেটভিত্তিক জুয়া শিলংতীর

জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন পেশার মানুষ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা

‘শিলংতীর।’ শব্দটির সঙ্গে দেশের মানুষের তেমন পরিচয় নেই। তবে সিলেটের সাধারণ মানুষের মুখে মুখে এই নাম। ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে পরিচালিত তীরশিলং জুয়া খেলা, যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। এ জুয়া খেলায় প্রভাবশালী ধনী লোক, রিকশাচালক, জেলে, মাছ ব্যবসায়ী, ড্রাইভার, পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ জড়িয়ে পড়েছে। সিলেট জেলা ও নগরীর বিভিন্ন স্পটে এ জুয়া খেলা চলছে। এ জুয়ার অর্থ পাচার হচ্ছে ভারতে। পুলিশের হাতে মাঝেমধ্যে জুয়াড়িরা ধরা পড়লেও থেমে নেই এর কার্যক্রম।

শিলং থেকে সিলেটে নিজেদের এজেন্ট নিয়োগ করে এ জুয়া খেলায় প্রতিদিন ৮০ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে সিলেটে মহামারী রূপ ধারণ করেছে। এটি ইন্টারনেটভিত্তিক হওয়ায় দ্রুত দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জুয়া খেলা বন্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) দায়িত্ব নিতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেছেন, তাকে সঠিকভাবে তথ্য দিলে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটগুলো তিনি বন্ধ করে দেবেন।

শুরুটা যেভাবে

সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং ও আসামের গৌহাটি থেকে ১৯৯০ সালে চালু হয় তীর খেলাটি। ৩১ বছর ধরে চলা এই জুয়া খেলাটির নাম এখন স্থানীয় ভাষায় ‘শিলংতীর’। শুরুতে এই জুয়া খেলার প্রচলন ছিল কেবল সিলেটের সীমান্তবর্তী কয়েকটি এলাকার মানুষদের মধ্যে। এরপর ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে সিলেটের বিভিন্ন প্রান্তে।

জানা গেছে, এই জুয়া খেলায় ভারত থেকে শিলংয়ের জুয়াড়িরা দেশীয় এজেন্ট নিয়োগ করে দেয়। এতে বাড়তে থাকে সাধারণ জুয়াড়ির সংখ্যা।

শিলংতীর কী : এটি একটি ওয়েবসাইটভিত্তিক খেলা। সপ্তাহে ছয়দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে এ জুয়া খেলা। দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে নম্বর কিনতে হয়। ফলাফল ঘোষণা করা হয় প্রতিদিন বিকেল ৫টায়। প্রতিদিনের শুরুতেই অনেকগুলো কমন নম্বর দেয়া হয়। এই নম্বরগুলোকে কেন্দ্র করে সারাদিন ছুটে বেড়ান তীরশিলং খেলতে আগ্রহীরা। তিন স্তরের লোকদের মাধ্যমে শিলংতীর খেলায় দিনে দু’বার ড্র হয়। একবার বিকেল সাড়ে ৪টা ও দ্বিতীয় ড্র হয় সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে। ভারতের সরকারি ছুটির দিন রোববার এ খেলা হয় না।

জুয়া খেলা সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, প্রথমে যেকোন টাকা মূল্যে দেশীয় এজেন্টদের মাধ্যমে ১ থেকে ৯৯ পর্যন্ত নম্বর বিক্রয় করা হয়। যত মূল্যে নম্বর বিক্রয় হবে বিজয়ীকে এর ৭০ গুণ লাভ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এ খেলায় প্ররোচিত করা হয়। অর্থাৎ এক টাকার বাজিতে নির্দিষ্ট নম্বর বিজয়ী হলে ৭০ টাকা পাওয়া যাবে। শুরুর দিকে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী জাফলং এলাকায় জুয়া খেলাটির প্রচলন হয়।

স্থানীয় ভাষায় বোটকা খেলা, ভাগ্য পরীক্ষা খেলা, টুকা খেলা, নম্বর খেলা, ডিজিটাল নম্বর খেলা ইত্যাদি নামেও পরিচিত এই জুয়াটি। তীরশিলং জুয়া খেলায় এজেন্ট মুহুরির (সংগ্রাহক) মাধ্যমে গ্রাহক সংগ্রহ করা হয়। মুহুরি ছাড়া কোন ব্যক্তি সরাসরি শিলংতীরে অংশ নিতে পারে না। শিলং থেকে অনলাইনে জুয়াটি ছাড়া হয়। এরপর একটি অংশ এই জুয়াটি নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশে। পরে তারা সিলেটে জুয়া থেকে টাকা সংগ্রহ করে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ওয়েবসাইটে গিয়ে শিলংতীর খেলার সুযোগ কম, তাই প্রথমে নির্দিষ্ট সংখ্যার বিপরীতে গ্রাহককে টোকেনের বিনিময়ে খেলায় অংশ নিতে হয়। এজেন্ট নিজেরাই ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট কতগুলো সংখ্যার ওপর বাজি ধরে। এ বাজির জন্য আগের দিন রাত থেকে সিরিয়াল দেয়া শুরু হয়। এভাবে দিনে সর্বোচ্চ একটি নম্বরের কিছুসংখ্যক মানুষ বিজয়ী হয়। আর বাকি সব নম্বরের টাকা এজেন্টরা নিয়ে যায়।

ধারণা করা হয়, এভাবে প্রতিদিন অন্তত কোটি টাকার জুয়া খেলা হয়। অনেকের ধারণা, উল্লিখিত যে পরিমাণ টাকা এজেন্টদের মাধ্যমে টোকেন ফি বাবদ আদায় হয়, এর একটা অংশ তাদের হাতে থেকে যায়। বাকি অংশ বিভিন্ন মাধ্যমে জাফলংয়ে পাঠানো হয় এবং তা ডলারে পরিণত করে সীমান্ত দিয়ে শিলংয়ে পাচার করা হয়। তবে এ বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

কারা কোথায় খেলছে : ৩১ বছরে জাফলং সীমান্তে নীরবে শিলংতীর খেলা হলেও গত পাঁচ বছর ধরে সিলেটে এটি প্রকাশ্যে চলে এসেছে। সীমান্তের এই জুয়া এখন গোটা সিলেটে মহামারী রূপ ধারণ করেছে। রিকশাচালক, জেলে, মাছ ব্যবসায়ী, ড্রাইভার, পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ দিন দিন এ খেলায় আসক্ত হয়ে পড়ছে।

সিলেট নগরীর মেজরটিলা, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, বাদামবাগিচা, পাঠানটুলা, ঘাসিটুলা, দক্ষিণ সুরমা, টিলাগড়, শিবগঞ্জ, কানিশাইল, কাজিরবাজার মাছবাজার, লালবাজার, মেডিকেল রোড, কালিঘাট, আখালিয়া, লাক্কাতুরা চা বাগান, খাদিমপাড়া, খাদিমনগর, শামীমাবাদ, বাগবাড়িসহ সব এলাকায়ই এ জুয়া খেলা চলছে।

জেলার বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, জাফলং, জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট এলাকাসহ সীমান্তঘেঁষা প্রতিটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে এই জুয়া।

এই খেলা কারা খেলছে তা জানলেও স্থানীয়রা প্রতিবাদ করেন না। অভিযোগ রয়েছে, এর পেছনে প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তি জড়িত যারা পুলিশের কতিপয় সদস্যকেও মাসোহারা দিয়ে থাকে। তবে সম্প্রতি এই জুয়া খেলার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে সিলেট মহানগর পুলিশ।

পুলিশের বক্তব্য : সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ আশঙ্কা করছেন এ খেলা দ্রুত দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে। তিনি বলেন, মহানগর পুলিশের অভিযানে অনেক জুয়াড়ি ধরা পড়ছে। তবে এই খেলা বন্ধ করা যাচ্ছে না। তিনি এও বলেন, খেলাটি ইন্টারনেটভিত্তিক হওয়ায় জুয়াড়িরা তা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খেলছে। ফলে তা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এরপরও পুলিশের নজরদারির কারণে অনেকে ধরা পড়ছে।

পুলিশ কমিশনার বলেন, এ বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে লিখিতভাবে জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ খেলা বন্ধ করতে হলে যে ওয়েবসাইটগুলো রয়েছে তা বন্ধ করে দিতে হবে। আর এই কাজটি করতে পারে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে সিলেট জেলা পুলিশ সুপারকে কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী যা বললেন : এ বিষেয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে আমাদের কোন ছাড় নেই। যেমন জুয়া, পর্নো, পাইরেসি ইত্যাদি ওয়েবসাইট আমরা বন্ধ করে দেই।’ তিনি বলেন, ‘সিলেটের শিলংতীর জুয়া বন্ধ করার জন্য সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলেই চলবে। আমাকে ওয়েবসাইটগুলোর লিংক ও বিবরণ দিলে আমি তা চেক করে বন্ধ করে দেব।’ তিনি সিলেটের পুলিশ কমিশনারকে এ বিষয়টি জানানোর জন্য এ প্রতিবেদককে পরামর্শ দেন।

মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল ২০২১ , ৭ বৈশাখ ১৪২৮ ৭ রমজান ১৪৪২

ইন্টারনেটভিত্তিক জুয়া শিলংতীর

জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন পেশার মানুষ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা

আকাশ চৌধুরী, সিলেট

‘শিলংতীর।’ শব্দটির সঙ্গে দেশের মানুষের তেমন পরিচয় নেই। তবে সিলেটের সাধারণ মানুষের মুখে মুখে এই নাম। ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে পরিচালিত তীরশিলং জুয়া খেলা, যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। এ জুয়া খেলায় প্রভাবশালী ধনী লোক, রিকশাচালক, জেলে, মাছ ব্যবসায়ী, ড্রাইভার, পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ জড়িয়ে পড়েছে। সিলেট জেলা ও নগরীর বিভিন্ন স্পটে এ জুয়া খেলা চলছে। এ জুয়ার অর্থ পাচার হচ্ছে ভারতে। পুলিশের হাতে মাঝেমধ্যে জুয়াড়িরা ধরা পড়লেও থেমে নেই এর কার্যক্রম।

শিলং থেকে সিলেটে নিজেদের এজেন্ট নিয়োগ করে এ জুয়া খেলায় প্রতিদিন ৮০ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে সিলেটে মহামারী রূপ ধারণ করেছে। এটি ইন্টারনেটভিত্তিক হওয়ায় দ্রুত দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জুয়া খেলা বন্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) দায়িত্ব নিতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেছেন, তাকে সঠিকভাবে তথ্য দিলে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটগুলো তিনি বন্ধ করে দেবেন।

শুরুটা যেভাবে

সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং ও আসামের গৌহাটি থেকে ১৯৯০ সালে চালু হয় তীর খেলাটি। ৩১ বছর ধরে চলা এই জুয়া খেলাটির নাম এখন স্থানীয় ভাষায় ‘শিলংতীর’। শুরুতে এই জুয়া খেলার প্রচলন ছিল কেবল সিলেটের সীমান্তবর্তী কয়েকটি এলাকার মানুষদের মধ্যে। এরপর ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে সিলেটের বিভিন্ন প্রান্তে।

জানা গেছে, এই জুয়া খেলায় ভারত থেকে শিলংয়ের জুয়াড়িরা দেশীয় এজেন্ট নিয়োগ করে দেয়। এতে বাড়তে থাকে সাধারণ জুয়াড়ির সংখ্যা।

শিলংতীর কী : এটি একটি ওয়েবসাইটভিত্তিক খেলা। সপ্তাহে ছয়দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে এ জুয়া খেলা। দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে নম্বর কিনতে হয়। ফলাফল ঘোষণা করা হয় প্রতিদিন বিকেল ৫টায়। প্রতিদিনের শুরুতেই অনেকগুলো কমন নম্বর দেয়া হয়। এই নম্বরগুলোকে কেন্দ্র করে সারাদিন ছুটে বেড়ান তীরশিলং খেলতে আগ্রহীরা। তিন স্তরের লোকদের মাধ্যমে শিলংতীর খেলায় দিনে দু’বার ড্র হয়। একবার বিকেল সাড়ে ৪টা ও দ্বিতীয় ড্র হয় সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে। ভারতের সরকারি ছুটির দিন রোববার এ খেলা হয় না।

জুয়া খেলা সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, প্রথমে যেকোন টাকা মূল্যে দেশীয় এজেন্টদের মাধ্যমে ১ থেকে ৯৯ পর্যন্ত নম্বর বিক্রয় করা হয়। যত মূল্যে নম্বর বিক্রয় হবে বিজয়ীকে এর ৭০ গুণ লাভ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এ খেলায় প্ররোচিত করা হয়। অর্থাৎ এক টাকার বাজিতে নির্দিষ্ট নম্বর বিজয়ী হলে ৭০ টাকা পাওয়া যাবে। শুরুর দিকে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী জাফলং এলাকায় জুয়া খেলাটির প্রচলন হয়।

স্থানীয় ভাষায় বোটকা খেলা, ভাগ্য পরীক্ষা খেলা, টুকা খেলা, নম্বর খেলা, ডিজিটাল নম্বর খেলা ইত্যাদি নামেও পরিচিত এই জুয়াটি। তীরশিলং জুয়া খেলায় এজেন্ট মুহুরির (সংগ্রাহক) মাধ্যমে গ্রাহক সংগ্রহ করা হয়। মুহুরি ছাড়া কোন ব্যক্তি সরাসরি শিলংতীরে অংশ নিতে পারে না। শিলং থেকে অনলাইনে জুয়াটি ছাড়া হয়। এরপর একটি অংশ এই জুয়াটি নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশে। পরে তারা সিলেটে জুয়া থেকে টাকা সংগ্রহ করে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ওয়েবসাইটে গিয়ে শিলংতীর খেলার সুযোগ কম, তাই প্রথমে নির্দিষ্ট সংখ্যার বিপরীতে গ্রাহককে টোকেনের বিনিময়ে খেলায় অংশ নিতে হয়। এজেন্ট নিজেরাই ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট কতগুলো সংখ্যার ওপর বাজি ধরে। এ বাজির জন্য আগের দিন রাত থেকে সিরিয়াল দেয়া শুরু হয়। এভাবে দিনে সর্বোচ্চ একটি নম্বরের কিছুসংখ্যক মানুষ বিজয়ী হয়। আর বাকি সব নম্বরের টাকা এজেন্টরা নিয়ে যায়।

ধারণা করা হয়, এভাবে প্রতিদিন অন্তত কোটি টাকার জুয়া খেলা হয়। অনেকের ধারণা, উল্লিখিত যে পরিমাণ টাকা এজেন্টদের মাধ্যমে টোকেন ফি বাবদ আদায় হয়, এর একটা অংশ তাদের হাতে থেকে যায়। বাকি অংশ বিভিন্ন মাধ্যমে জাফলংয়ে পাঠানো হয় এবং তা ডলারে পরিণত করে সীমান্ত দিয়ে শিলংয়ে পাচার করা হয়। তবে এ বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

কারা কোথায় খেলছে : ৩১ বছরে জাফলং সীমান্তে নীরবে শিলংতীর খেলা হলেও গত পাঁচ বছর ধরে সিলেটে এটি প্রকাশ্যে চলে এসেছে। সীমান্তের এই জুয়া এখন গোটা সিলেটে মহামারী রূপ ধারণ করেছে। রিকশাচালক, জেলে, মাছ ব্যবসায়ী, ড্রাইভার, পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ দিন দিন এ খেলায় আসক্ত হয়ে পড়ছে।

সিলেট নগরীর মেজরটিলা, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, বাদামবাগিচা, পাঠানটুলা, ঘাসিটুলা, দক্ষিণ সুরমা, টিলাগড়, শিবগঞ্জ, কানিশাইল, কাজিরবাজার মাছবাজার, লালবাজার, মেডিকেল রোড, কালিঘাট, আখালিয়া, লাক্কাতুরা চা বাগান, খাদিমপাড়া, খাদিমনগর, শামীমাবাদ, বাগবাড়িসহ সব এলাকায়ই এ জুয়া খেলা চলছে।

জেলার বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, জাফলং, জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট এলাকাসহ সীমান্তঘেঁষা প্রতিটি গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে এই জুয়া।

এই খেলা কারা খেলছে তা জানলেও স্থানীয়রা প্রতিবাদ করেন না। অভিযোগ রয়েছে, এর পেছনে প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তি জড়িত যারা পুলিশের কতিপয় সদস্যকেও মাসোহারা দিয়ে থাকে। তবে সম্প্রতি এই জুয়া খেলার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে সিলেট মহানগর পুলিশ।

পুলিশের বক্তব্য : সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ আশঙ্কা করছেন এ খেলা দ্রুত দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে। তিনি বলেন, মহানগর পুলিশের অভিযানে অনেক জুয়াড়ি ধরা পড়ছে। তবে এই খেলা বন্ধ করা যাচ্ছে না। তিনি এও বলেন, খেলাটি ইন্টারনেটভিত্তিক হওয়ায় জুয়াড়িরা তা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খেলছে। ফলে তা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এরপরও পুলিশের নজরদারির কারণে অনেকে ধরা পড়ছে।

পুলিশ কমিশনার বলেন, এ বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে লিখিতভাবে জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ খেলা বন্ধ করতে হলে যে ওয়েবসাইটগুলো রয়েছে তা বন্ধ করে দিতে হবে। আর এই কাজটি করতে পারে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে সিলেট জেলা পুলিশ সুপারকে কল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী যা বললেন : এ বিষেয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে আমাদের কোন ছাড় নেই। যেমন জুয়া, পর্নো, পাইরেসি ইত্যাদি ওয়েবসাইট আমরা বন্ধ করে দেই।’ তিনি বলেন, ‘সিলেটের শিলংতীর জুয়া বন্ধ করার জন্য সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলেই চলবে। আমাকে ওয়েবসাইটগুলোর লিংক ও বিবরণ দিলে আমি তা চেক করে বন্ধ করে দেব।’ তিনি সিলেটের পুলিশ কমিশনারকে এ বিষয়টি জানানোর জন্য এ প্রতিবেদককে পরামর্শ দেন।