রংপুর শহরে প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষায় কোটা নির্ধারণ মাত্র ৫০ জন

বিভাগীয় নগরী রংপুরে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের বাস অথচ রংপুর মেডিকেল কলেজে স্থাপিত আরটি পিসিআর মেশিন প্রতিদিন মাত্র ৫০ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করার কোটা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ফলে শত শত নারী-পুরুষ নমুনা পরীক্ষার জন্য ভিড় করলেও তাদের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে না। অপরদিকে নমুনা নেয়ার পর ৫ থেকে ৭ দিনেও রিপোর্ট মিলছে না। এদিকে গত ৮ দিনে ১০ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর বিভাগীয় নগরী রংপুরে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও নমুনা পরীক্ষা করার জন্য নগরবাসীকে চরম বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। রংপুর মেডিকেল কলেজে স্থাপন করা পিসিআর মেশিনের সক্ষমতা হচ্ছে ১শ’ ৮৮টি নমুনা পরীক্ষার।

সে কারণে রংপুর নগরী ছাড়া পুরো জেলা ও পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট এ চারটি জেলার মানুষের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয় ওই মেশিন থেকে। এতে জেলা উপজেলা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের জন্য কোটা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। রংপুর সিটি করপোরেশন প্রতিদিন ৫০ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য দিতে পারবে। সেই ভাবেই রংপুর সিটি করপোরেশনের নমুনা পরীক্ষার কোটা নির্ধারণ করে হয়েছে।

এ ব্যাপারে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান তার অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করে বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশনের জন্য একটি আলাদা আরটি পিসিআর মেশিন দরকার। দশ লাখ মানুষের জন্য ৫০ জনের কোটা নির্ধারণ করে দেয়ার কারণে বেশিরভাগ মানুষ নমুনা পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে আমরা নমুনা সংগ্রহ করলেও ৫/৭ দিনের আগে রিপোর্ট পাওয়া যায় না।

এদিকে যে হারে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে তাতে আলাদা আরটি পিসিআর মেশিন স্থাপন করা জরুরি। তিনি বলেন, এমনিতেই ৫০ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য কোটা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশ যাত্রী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ভিভিআইপিদের নমুনাই হয়ে যায় ২৫টির বেশি ফলে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ জনের নমুনা পিসিআর ল্যাবে পাঠানো যায়। এমনি অবস্থায় নমুনা জটের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে ৩শ’র বেশি নমুনা পিসিআর ল্যাবে পড়ে আছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান করোনা সংক্রমণের সিমটম দেখা দেয়ার পর সচরাচর নমুনা পরীক্ষা আসত মানুষ। কিন্তু সত্যি সত্যি করোনার আক্রান্ত হয়েছে অথচ তার নমুনার প্রতিবেদন আসে নাই ৫/৭ দিন সময় লাগছে। এই কয়েকদিন আক্রান্ত ব্যক্তি নগরীতে ঘোরাফেরা স্বজনদের সঙ্গে অবস্থান করায় পরিবারের অন্য সদস্যরাও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি রংপুরে আরও একটি সিটি স্ক্যান মেশিন স্থাপন করার দাবি জানান।

সরেজমিন রংপুর নগরীর নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়া এলাকায় বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শতাধিক নারী-পুরুষ করোনার নমুনা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। এদের বেশিরভাগের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছর কারও কারও বয়স আরও কম। ফলে এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অল্প বয়সী ছেলে মেয়েরাই আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এ ব্যাপারে নমুনা সংগ্রহকারী দু’জন স্বাস্থ্যকর্মী জানান, কম বয়সী ছেলে-মেয়েরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে যেহেতু তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি ফলে তারা আক্রান্ত হওয়ার পর তার পরিবারে বয়স্ক মানুষরা আক্রান্ত হচ্ছেন এবং তারাই গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে বলে জানান।

বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নমুনা দেয়ার জন্য অপেক্ষমাণ দুই তরুণী জানান, নমুনা দেয়ার পর ৫/৭ দিনের আগে রিপোর্ট পাওয়া যায় না।

মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল ২০২১ , ৭ বৈশাখ ১৪২৮ ৭ রমজান ১৪৪২

রংপুর শহরে প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষায় কোটা নির্ধারণ মাত্র ৫০ জন

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

বিভাগীয় নগরী রংপুরে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় ১০ লাখেরও বেশি মানুষের বাস অথচ রংপুর মেডিকেল কলেজে স্থাপিত আরটি পিসিআর মেশিন প্রতিদিন মাত্র ৫০ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করার কোটা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ফলে শত শত নারী-পুরুষ নমুনা পরীক্ষার জন্য ভিড় করলেও তাদের নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে না। অপরদিকে নমুনা নেয়ার পর ৫ থেকে ৭ দিনেও রিপোর্ট মিলছে না। এদিকে গত ৮ দিনে ১০ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর বিভাগীয় নগরী রংপুরে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও নমুনা পরীক্ষা করার জন্য নগরবাসীকে চরম বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। রংপুর মেডিকেল কলেজে স্থাপন করা পিসিআর মেশিনের সক্ষমতা হচ্ছে ১শ’ ৮৮টি নমুনা পরীক্ষার।

সে কারণে রংপুর নগরী ছাড়া পুরো জেলা ও পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট এ চারটি জেলার মানুষের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয় ওই মেশিন থেকে। এতে জেলা উপজেলা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের জন্য কোটা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। রংপুর সিটি করপোরেশন প্রতিদিন ৫০ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য দিতে পারবে। সেই ভাবেই রংপুর সিটি করপোরেশনের নমুনা পরীক্ষার কোটা নির্ধারণ করে হয়েছে।

এ ব্যাপারে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান তার অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করে বলেন, রংপুর সিটি করপোরেশনের জন্য একটি আলাদা আরটি পিসিআর মেশিন দরকার। দশ লাখ মানুষের জন্য ৫০ জনের কোটা নির্ধারণ করে দেয়ার কারণে বেশিরভাগ মানুষ নমুনা পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে আমরা নমুনা সংগ্রহ করলেও ৫/৭ দিনের আগে রিপোর্ট পাওয়া যায় না।

এদিকে যে হারে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে তাতে আলাদা আরটি পিসিআর মেশিন স্থাপন করা জরুরি। তিনি বলেন, এমনিতেই ৫০ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য কোটা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশ যাত্রী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ভিভিআইপিদের নমুনাই হয়ে যায় ২৫টির বেশি ফলে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ জনের নমুনা পিসিআর ল্যাবে পাঠানো যায়। এমনি অবস্থায় নমুনা জটের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে ৩শ’র বেশি নমুনা পিসিআর ল্যাবে পড়ে আছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান করোনা সংক্রমণের সিমটম দেখা দেয়ার পর সচরাচর নমুনা পরীক্ষা আসত মানুষ। কিন্তু সত্যি সত্যি করোনার আক্রান্ত হয়েছে অথচ তার নমুনার প্রতিবেদন আসে নাই ৫/৭ দিন সময় লাগছে। এই কয়েকদিন আক্রান্ত ব্যক্তি নগরীতে ঘোরাফেরা স্বজনদের সঙ্গে অবস্থান করায় পরিবারের অন্য সদস্যরাও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি রংপুরে আরও একটি সিটি স্ক্যান মেশিন স্থাপন করার দাবি জানান।

সরেজমিন রংপুর নগরীর নিউ ইঞ্জিনিয়ার পাড়া এলাকায় বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শতাধিক নারী-পুরুষ করোনার নমুনা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। এদের বেশিরভাগের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছর কারও কারও বয়স আরও কম। ফলে এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অল্প বয়সী ছেলে মেয়েরাই আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এ ব্যাপারে নমুনা সংগ্রহকারী দু’জন স্বাস্থ্যকর্মী জানান, কম বয়সী ছেলে-মেয়েরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে যেহেতু তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি ফলে তারা আক্রান্ত হওয়ার পর তার পরিবারে বয়স্ক মানুষরা আক্রান্ত হচ্ছেন এবং তারাই গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে বলে জানান।

বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নমুনা দেয়ার জন্য অপেক্ষমাণ দুই তরুণী জানান, নমুনা দেয়ার পর ৫/৭ দিনের আগে রিপোর্ট পাওয়া যায় না।