কালীগঞ্জে সেই বর্গাচাষি বাপ্পির এবার কাটল শসা গাছ
গত এক বছরে বর্গাচাষি বাপ্পারাজের মাঠের ধরন্ত বেগুন ও ফুলকপির খেত কেটে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এবার কাটাল ওই কৃষকের ধরন্ত শসা গাছ। এ ঘটনা ঘটেছে গত শনিবার রাতে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের মালিয়াট ইউনিয়নের গয়েশপুর মাঠের ওই কৃষকের বর্গা নেয়া খেতে। গতকাল তার খেতের সব সবজির লতাগুলো শুকিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ওই কৃষক ওই গ্রামের আনসার মোল্যার ছেলে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বাপ্পির প্রতিবেশী সিরাজুল ইসলাম জানান, বাপ্পি মূলত একজন দিনমজুর শ্রেণীর মানুষ। কষ্ট করে পয়সা জমিয়ে পরের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেন। সারাদিন পরের খেতে কামলার কাজ করেন। বাড়ি ফিরে বিকেলে গভীর রাত পর্যন্ত নিজের সবজি খেতে কাজ করেন। এভাবে ক্রমেই চাষ বাড়াচ্ছেন। কিন্ত সম্প্রতি তার খেতগুলো শত্রুতা করে কেটে দিচ্ছে। একজন গ্রামের গরিব নিরীহ মানুষটির এভাবে ক্ষতি করে তাদের কী লাভ হচ্ছে।
ভুক্তভোগী বর্গাচাষি বাপ্পি জানান, চলতি বছরে একইভাবে তার একটি বর্গা নেয়া খেতের ধরন্ত বেগুন গাছ একইভাবে কেটে দিয়েছিল। এরপর এ খেতে চাষ করা ফুলকপির তরতাজা গাছ কেটে দেয়। আমি মনে করি আমি খেটে খাওয়া মানুষ। আমার সঙ্গে কেন এত শত্রুতা। চলতি রোজার মাসের প্রথম থেকেই আমি খেতের শসা বিক্রি করছিলাম। চাহিদার সঙ্গে দামও ভালো।
শেষ পর্যন্ত থাকলে বেশ কিছু পয়সা আসত। কিন্তু রোববার সকালে শসা তুলতে গিয়ে দেখি খেতের সব শসা গাছ কেটে দিয়েছে। গাছগুলো মরে শুকিয়ে যাচ্ছে। এখন আমার সব আশা শেষ। বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একরামুল হক সংগ্রাম জানান, একজন কৃষক তার খেতের গাছগুলো নিজের সন্তানের মতো করে লালন করেন। তার আশা থাকে বাজারে বিক্রি করে সংসারের ভোরণপোষন করবেন। কিন্ত সেই খেত কেটে দেয়াটা একটা অমানষিক কাজ ছাড়া কিছুই না। তাছাড়া যারা এমন কাজটি করেছেন তাদেরতো কোন লাভ নেই। এর আগেও পরিশ্রমী দিনমজুর বাপ্পির কষ্টে ফলানো ধরন্ত সবজিখেত রাতের আধারে কে বা কারা কেটে দিয়েছিল। এটা এক ধরনের অমানষিক কর্মকা- ছাড়া আর কিছুই না।
স্থানীয় তত্বিপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রফিকুল ইসলাম বিষয়টি চরম অমানবিক উল্লেখ করে জানান, গ্রামের মানুষের মুখে জানতে পেরে ক্ষতিগ্রস্ত ওই কৃষকের খেত পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। তার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি শুধু খেতে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছেন।
সে সময় কৃষক বাপ্পি বলেছেন, কারা এমন জঘন্য কাজ করেছেন তা তিনি দেখেননি। অনুমাননির্ভরভাবে কারও দোষারোপ করা ঠিক নয়। তাই কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হুমায়ন কবির জানান, একই কৃষকের ভরাখেত বার বার কেটে সাবাড় করছে বিষয়টি দুঃখজনক। উনি যোগাযোগ করলে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে গয়াসপুর গ্রামের সেই বর্গাচাষি বাপ্পির এবার কাটলো ধরন্ত শসা গাছ। খেতে দাঁড়িয়ে তিনি নির্বাক -সংবাদ
আরও খবরমঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল ২০২১ , ৭ বৈশাখ ১৪২৮ ৭ রমজান ১৪৪২
কালীগঞ্জে সেই বর্গাচাষি বাপ্পির এবার কাটল শসা গাছ
সাবজাল হোসেন, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে গয়াসপুর গ্রামের সেই বর্গাচাষি বাপ্পির এবার কাটলো ধরন্ত শসা গাছ। খেতে দাঁড়িয়ে তিনি নির্বাক -সংবাদ
গত এক বছরে বর্গাচাষি বাপ্পারাজের মাঠের ধরন্ত বেগুন ও ফুলকপির খেত কেটে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এবার কাটাল ওই কৃষকের ধরন্ত শসা গাছ। এ ঘটনা ঘটেছে গত শনিবার রাতে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের মালিয়াট ইউনিয়নের গয়েশপুর মাঠের ওই কৃষকের বর্গা নেয়া খেতে। গতকাল তার খেতের সব সবজির লতাগুলো শুকিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ওই কৃষক ওই গ্রামের আনসার মোল্যার ছেলে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বাপ্পির প্রতিবেশী সিরাজুল ইসলাম জানান, বাপ্পি মূলত একজন দিনমজুর শ্রেণীর মানুষ। কষ্ট করে পয়সা জমিয়ে পরের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেন। সারাদিন পরের খেতে কামলার কাজ করেন। বাড়ি ফিরে বিকেলে গভীর রাত পর্যন্ত নিজের সবজি খেতে কাজ করেন। এভাবে ক্রমেই চাষ বাড়াচ্ছেন। কিন্ত সম্প্রতি তার খেতগুলো শত্রুতা করে কেটে দিচ্ছে। একজন গ্রামের গরিব নিরীহ মানুষটির এভাবে ক্ষতি করে তাদের কী লাভ হচ্ছে।
ভুক্তভোগী বর্গাচাষি বাপ্পি জানান, চলতি বছরে একইভাবে তার একটি বর্গা নেয়া খেতের ধরন্ত বেগুন গাছ একইভাবে কেটে দিয়েছিল। এরপর এ খেতে চাষ করা ফুলকপির তরতাজা গাছ কেটে দেয়। আমি মনে করি আমি খেটে খাওয়া মানুষ। আমার সঙ্গে কেন এত শত্রুতা। চলতি রোজার মাসের প্রথম থেকেই আমি খেতের শসা বিক্রি করছিলাম। চাহিদার সঙ্গে দামও ভালো।
শেষ পর্যন্ত থাকলে বেশ কিছু পয়সা আসত। কিন্তু রোববার সকালে শসা তুলতে গিয়ে দেখি খেতের সব শসা গাছ কেটে দিয়েছে। গাছগুলো মরে শুকিয়ে যাচ্ছে। এখন আমার সব আশা শেষ। বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একরামুল হক সংগ্রাম জানান, একজন কৃষক তার খেতের গাছগুলো নিজের সন্তানের মতো করে লালন করেন। তার আশা থাকে বাজারে বিক্রি করে সংসারের ভোরণপোষন করবেন। কিন্ত সেই খেত কেটে দেয়াটা একটা অমানষিক কাজ ছাড়া কিছুই না। তাছাড়া যারা এমন কাজটি করেছেন তাদেরতো কোন লাভ নেই। এর আগেও পরিশ্রমী দিনমজুর বাপ্পির কষ্টে ফলানো ধরন্ত সবজিখেত রাতের আধারে কে বা কারা কেটে দিয়েছিল। এটা এক ধরনের অমানষিক কর্মকা- ছাড়া আর কিছুই না।
স্থানীয় তত্বিপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রফিকুল ইসলাম বিষয়টি চরম অমানবিক উল্লেখ করে জানান, গ্রামের মানুষের মুখে জানতে পেরে ক্ষতিগ্রস্ত ওই কৃষকের খেত পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। তার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি শুধু খেতে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছেন।
সে সময় কৃষক বাপ্পি বলেছেন, কারা এমন জঘন্য কাজ করেছেন তা তিনি দেখেননি। অনুমাননির্ভরভাবে কারও দোষারোপ করা ঠিক নয়। তাই কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হুমায়ন কবির জানান, একই কৃষকের ভরাখেত বার বার কেটে সাবাড় করছে বিষয়টি দুঃখজনক। উনি যোগাযোগ করলে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।