সংক্রমণ কমলেও ঝুঁকি রয়েছে

টানা চারদিন দৈনিক শতাধিক মানুষের মৃত্যুর পর গতকাল তা ৯১ জনে নেমে এসেছে। এই চারদিনে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় করোনা শনাক্তের হারও কিছুটা কমেছে। তবে জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, তিন-চার দিন শনাক্ত কিছুটা কমেছে তার মানে এই নয়, পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়েছে। সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি এখনও রয়ে গেছে। মানুষ যদি স্বাস্থ্যবিধি এবং ‘লকডাউন’র বিধিনিষেধ পুরোপুরি মেনে চলেন তাহলে সংক্রমণ নিচে নামার প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। অন্যতায় যেকোন সময় সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ২৯ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ওই সময় দৈনিক সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে সাড়ে সাত হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরপর থেকে শনাক্তের সংখ্যা ও শনাক্তের হার কমেছে। যদিও গত কিছুদিন ধরে নমুনা পরীক্ষাও কম হচ্ছে। সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিল ৩৪ হাজার ৯৬৮টি নমুনা পরীক্ষার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর থেকে নমুনা পরীক্ষা কমেছে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘সংক্রমণ কমছে এটা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ গত কয়েকদিনে রোগী কিছু কমেছে, শনাক্তের হারও কিছুটা কমেছে। পাশাপাশি নমুনা পরীক্ষাও কমেছে। পরীক্ষার সংখ্যা যদি না কমত, তাহলে বলা যেত শনাক্তের সংখ্যা বা হার কমেছে। এখন যতগুলো নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে সে অনুপাতে রোগী শনাক্ত হচ্ছে। পরীক্ষা বেশি হলে শনাক্তের হার কমেছে কিনা সেটি বুঝা যেত।’

‘খুব শীঘ্রই ভালো কিছু দেখতে পাব’, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে এই জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, লকডাউন যেভাবেই বাস্তবায়ন হোক না কেন, এতে গণভাবে মানুষের চলাচল কমেছে। এতে সংক্রমণের চক্র কিছুটা হলেও দুর্বল হচ্ছে।

গত কয়েকদিন ধরে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘এখন যারা মারা যাচ্ছেন, তারা আক্রান্ত হয়েছিলেন দুই-তিন সপ্তাহ আগেই। তারা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন... ঘুরতে গিয়েছিলেন। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই মৃত্যুও কমে আসবে বলে আশা করা যায়।’

শনাক্তের সংখ্যা কমতে থাকায় গত চার-পাঁচদিনে রাজধানীর ‘কোভিড ডেডিকেটেড’ হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির চাপও এর আগেই দুই সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তবে ‘আইসিইউ’ শয্যার সংকট রয়েই গেছে। রাজধানীর প্রায় সবকটি ‘কোভিড ডেডিকেটেড’ সরকারি হাসপাতালেই গতকাল পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাধারণ শয্যা খালি ছিল।

রাজধানীর হাসপাতালের চিত্র

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ৪৮৫টি সাধারণ শয্যার মধ্যে খালি ছিল ২৪৮টি। এর আগে ১৯ এপ্রিল খালি ছিল ২৩৩টি, ১৮ এপ্রিল ২২৫টি, ১৭ এপ্রিল ২১৫টি এবং ১৬ এপ্রিল খালি ছিল ১৮৯টি সাধারণ শয্যা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার ১৩টি সরকারি এবং কেরানীগঞ্জের একটি, নারায়ণগঞ্জের একটি এবং গাজীপুরের একটিসহ ‘কোভিড ডেডিকেটেড’ ১৬টি সরকারি হাসপাতালে তিন হাজার ৫২৩টি সাধারণ শয্যার মধ্যে এক হাজার ২৯৭টি শয্যা খালি ছিল। এসব হাসপাতালের ২২০টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে খালি ছিল ৪৬টি।

রাজধানীর ‘কোভিড ডেডিকেটেড’ হাসপাতালগুলোতে বিপুল সংখ্যক শয্যা খালি থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘করোনার প্রকোপ কমেছে, এটা বলার সময় এখনও আসেনি। তবে ঢাকায় করোনার পেশেন্ট (রোগী) কিছুটা কমেছে। নতুন হাসপাতাল করা হয়েছে, বিদ্যমান হাসপাতালগুলোতেও বেড (শয্যা) বাড়ানো হয়েছে।’

আগামী ৭-৮ দিনের মধ্যে সংক্রমণ আরও কমে আসবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে সিভিল সার্জন বলেন, ‘কিছুদিন আগেও দৈনিক ছয় থেকে সাত হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে, এখন এটি চার হাজারের কাছাকাছি নেমে এসেছে। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করলে, সবাই মাস্ক পরলে, সচেতন থাকলে সংক্রমণ কমে আসবে।’

সর্বোচ্চ মৃত্যু হলেও শনাক্ত নিচে নেমেছে গত ৫ দিনে

গত পাঁচ দিনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৬ এপ্রিল থেকে দৈনিক শনাক্ত পাঁচ হাজারের নিচেই রয়েছে। তবে ১৬ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত এই পাঁচদিনই রেকর্ড শতাধিক করে মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

গত ১৬ এপ্রিল চার হাজার ৪১৭ জনের করোনা শনাক্ত ও ১০১ জনের মৃত্যু হয়, ওইদিন শনাক্তের হার ছিল ২৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ১৭ এপ্রিল শনাক্তের সংখ্যা তিন হাজার ৪৭৩ জন, শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং করোনায় মৃত্যু হয় ১০১ জনের।

এরপর গত ১৮ এপ্রিল তিন হাজার ৬৯৮ জনের করোনা শনাক্ত এবং ১০২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওইদিন শনাক্তের হার ছিল ১৯ দশমিক ০৬ শতাংশ। ১৯ এপ্রিল শনাক্তের সংখ্যা চার হাজার ২৭১ জন, রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যু এবং শনাক্তের হার ছিল ১৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। সর্বশেষ গতকাল চার হাজার ৫৫৯ জনের করোনা শনাক্ত এবং ৯১ জনের মৃত্যু হয়। গতকাল নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় করোনা শনাক্তের হার ছিল ১৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

২৪ ঘণ্টার সংক্রমণ ও মৃত্যু

গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ২৬৫টি ল্যাবে ২৭ হাজার ৫৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৫২ লাখ ২১ হাজার ২৭৫টি নমুনা।

ওই ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে চার হাজার ৫৫৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েেেছ। এ নিয়ে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো সাত লাখ ২৭ হাজার ৭৮০ জনে।

গত একদিনে সুস্থ হয়েছেন ছয় হাজার ৮১১ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ছয় লাখ ২৮ হাজার ১১১ জনে।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

গত মার্চের শুরুতেই দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। এরপর কয়েক দিন দৈনিক ছয় হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়ে আসছিল। গত ৭ এপ্রিল রেকর্ড সাত হাজার ৬২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে করোনা শনাক্তের দিক থেকে ৩৩তম এবং মৃত্যুর সংখ্যায় ৩৮তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

গত একদিনে মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ৫৮ জন এবং নারী ৩৩ জন। তাদের ৫২ জন সরকারি হাসপাতালে, ৩৬ জন বেসরকারি হাসপাতালে, দু’জন বাড়িতে এবং একজন হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৯১ জনের মধ্যে ৫৪ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ১৮ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, ১১ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর, সাত জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর এবং একজনের বয়স ছিল ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।

বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হওয়া লোকজনের সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগের, ৬০ জন। অন্যদের মধ্যে ১৭ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, তিনজন রাজশাহী বিভাগের, পাঁচজন খুলনা বিভাগের, চারজন বরিশাল বিভাগের এবং দুইজন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

এ পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু হওয়া দশ হাজার ৫৮৮ জনের মধ্যে পুরুষ সাত হাজার ৮২৭ জন এবং নারী দুই হাজার ৭৬১ জন।

বুধবার, ২১ এপ্রিল ২০২১ , ৮ বৈশাখ ১৪২৮ ৮ রমজান ১৪৪২

সংক্রমণ কমলেও ঝুঁকি রয়েছে

রাকিব উদ্দিন

image

টানা চারদিন দৈনিক শতাধিক মানুষের মৃত্যুর পর গতকাল তা ৯১ জনে নেমে এসেছে। এই চারদিনে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় করোনা শনাক্তের হারও কিছুটা কমেছে। তবে জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, তিন-চার দিন শনাক্ত কিছুটা কমেছে তার মানে এই নয়, পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়েছে। সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি এখনও রয়ে গেছে। মানুষ যদি স্বাস্থ্যবিধি এবং ‘লকডাউন’র বিধিনিষেধ পুরোপুরি মেনে চলেন তাহলে সংক্রমণ নিচে নামার প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। অন্যতায় যেকোন সময় সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ২৯ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ওই সময় দৈনিক সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে সাড়ে সাত হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরপর থেকে শনাক্তের সংখ্যা ও শনাক্তের হার কমেছে। যদিও গত কিছুদিন ধরে নমুনা পরীক্ষাও কম হচ্ছে। সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিল ৩৪ হাজার ৯৬৮টি নমুনা পরীক্ষার কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর থেকে নমুনা পরীক্ষা কমেছে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘সংক্রমণ কমছে এটা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ গত কয়েকদিনে রোগী কিছু কমেছে, শনাক্তের হারও কিছুটা কমেছে। পাশাপাশি নমুনা পরীক্ষাও কমেছে। পরীক্ষার সংখ্যা যদি না কমত, তাহলে বলা যেত শনাক্তের সংখ্যা বা হার কমেছে। এখন যতগুলো নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে সে অনুপাতে রোগী শনাক্ত হচ্ছে। পরীক্ষা বেশি হলে শনাক্তের হার কমেছে কিনা সেটি বুঝা যেত।’

‘খুব শীঘ্রই ভালো কিছু দেখতে পাব’, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে এই জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, লকডাউন যেভাবেই বাস্তবায়ন হোক না কেন, এতে গণভাবে মানুষের চলাচল কমেছে। এতে সংক্রমণের চক্র কিছুটা হলেও দুর্বল হচ্ছে।

গত কয়েকদিন ধরে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘এখন যারা মারা যাচ্ছেন, তারা আক্রান্ত হয়েছিলেন দুই-তিন সপ্তাহ আগেই। তারা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন... ঘুরতে গিয়েছিলেন। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই মৃত্যুও কমে আসবে বলে আশা করা যায়।’

শনাক্তের সংখ্যা কমতে থাকায় গত চার-পাঁচদিনে রাজধানীর ‘কোভিড ডেডিকেটেড’ হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির চাপও এর আগেই দুই সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তবে ‘আইসিইউ’ শয্যার সংকট রয়েই গেছে। রাজধানীর প্রায় সবকটি ‘কোভিড ডেডিকেটেড’ সরকারি হাসপাতালেই গতকাল পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাধারণ শয্যা খালি ছিল।

রাজধানীর হাসপাতালের চিত্র

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ৪৮৫টি সাধারণ শয্যার মধ্যে খালি ছিল ২৪৮টি। এর আগে ১৯ এপ্রিল খালি ছিল ২৩৩টি, ১৮ এপ্রিল ২২৫টি, ১৭ এপ্রিল ২১৫টি এবং ১৬ এপ্রিল খালি ছিল ১৮৯টি সাধারণ শয্যা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার ১৩টি সরকারি এবং কেরানীগঞ্জের একটি, নারায়ণগঞ্জের একটি এবং গাজীপুরের একটিসহ ‘কোভিড ডেডিকেটেড’ ১৬টি সরকারি হাসপাতালে তিন হাজার ৫২৩টি সাধারণ শয্যার মধ্যে এক হাজার ২৯৭টি শয্যা খালি ছিল। এসব হাসপাতালের ২২০টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে খালি ছিল ৪৬টি।

রাজধানীর ‘কোভিড ডেডিকেটেড’ হাসপাতালগুলোতে বিপুল সংখ্যক শয্যা খালি থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘করোনার প্রকোপ কমেছে, এটা বলার সময় এখনও আসেনি। তবে ঢাকায় করোনার পেশেন্ট (রোগী) কিছুটা কমেছে। নতুন হাসপাতাল করা হয়েছে, বিদ্যমান হাসপাতালগুলোতেও বেড (শয্যা) বাড়ানো হয়েছে।’

আগামী ৭-৮ দিনের মধ্যে সংক্রমণ আরও কমে আসবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে সিভিল সার্জন বলেন, ‘কিছুদিন আগেও দৈনিক ছয় থেকে সাত হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে, এখন এটি চার হাজারের কাছাকাছি নেমে এসেছে। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করলে, সবাই মাস্ক পরলে, সচেতন থাকলে সংক্রমণ কমে আসবে।’

সর্বোচ্চ মৃত্যু হলেও শনাক্ত নিচে নেমেছে গত ৫ দিনে

গত পাঁচ দিনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৬ এপ্রিল থেকে দৈনিক শনাক্ত পাঁচ হাজারের নিচেই রয়েছে। তবে ১৬ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত এই পাঁচদিনই রেকর্ড শতাধিক করে মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

গত ১৬ এপ্রিল চার হাজার ৪১৭ জনের করোনা শনাক্ত ও ১০১ জনের মৃত্যু হয়, ওইদিন শনাক্তের হার ছিল ২৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ১৭ এপ্রিল শনাক্তের সংখ্যা তিন হাজার ৪৭৩ জন, শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং করোনায় মৃত্যু হয় ১০১ জনের।

এরপর গত ১৮ এপ্রিল তিন হাজার ৬৯৮ জনের করোনা শনাক্ত এবং ১০২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওইদিন শনাক্তের হার ছিল ১৯ দশমিক ০৬ শতাংশ। ১৯ এপ্রিল শনাক্তের সংখ্যা চার হাজার ২৭১ জন, রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যু এবং শনাক্তের হার ছিল ১৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। সর্বশেষ গতকাল চার হাজার ৫৫৯ জনের করোনা শনাক্ত এবং ৯১ জনের মৃত্যু হয়। গতকাল নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় করোনা শনাক্তের হার ছিল ১৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

২৪ ঘণ্টার সংক্রমণ ও মৃত্যু

গতকাল বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ২৬৫টি ল্যাবে ২৭ হাজার ৫৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৫২ লাখ ২১ হাজার ২৭৫টি নমুনা।

ওই ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে চার হাজার ৫৫৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েেেছ। এ নিয়ে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো সাত লাখ ২৭ হাজার ৭৮০ জনে।

গত একদিনে সুস্থ হয়েছেন ছয় হাজার ৮১১ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ছয় লাখ ২৮ হাজার ১১১ জনে।

২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৬ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

গত মার্চের শুরুতেই দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। এরপর কয়েক দিন দৈনিক ছয় হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়ে আসছিল। গত ৭ এপ্রিল রেকর্ড সাত হাজার ৬২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে করোনা শনাক্তের দিক থেকে ৩৩তম এবং মৃত্যুর সংখ্যায় ৩৮তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

গত একদিনে মৃত্যু হওয়া লোকজনের মধ্যে পুরুষ ৫৮ জন এবং নারী ৩৩ জন। তাদের ৫২ জন সরকারি হাসপাতালে, ৩৬ জন বেসরকারি হাসপাতালে, দু’জন বাড়িতে এবং একজন হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৯১ জনের মধ্যে ৫৪ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ১৮ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, ১১ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর, সাত জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর এবং একজনের বয়স ছিল ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।

বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হওয়া লোকজনের সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগের, ৬০ জন। অন্যদের মধ্যে ১৭ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, তিনজন রাজশাহী বিভাগের, পাঁচজন খুলনা বিভাগের, চারজন বরিশাল বিভাগের এবং দুইজন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

এ পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যু হওয়া দশ হাজার ৫৮৮ জনের মধ্যে পুরুষ সাত হাজার ৮২৭ জন এবং নারী দুই হাজার ৭৬১ জন।