লকডাউনে নিম্নআয়ের মানুষের বিকল্প ভাবনা

ভুট্টা গাছের পাতা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা

লকডাউনে কাজ-কর্ম না থাকায় উত্তরের সীমান্ত জেলা লালমনিরহাটের নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। এ অবস্থায় চরাঞ্চলের কর্মহীন নিম্ন আয়ের এসব মানুষ ভুট্টা গাছের মাথা ও পাতা ছিঁড়ে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন। দাম কম হওয়ায় অনেকেই গোখাদ্য হিসেবে ভুট্টার পাতা কিনছেন।

এ জেলার প্রধান অর্থকারী ফসল ভুট্টা। এ বছর জেলায় ভুট্টা চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে গেছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ফলনও ভাল হবে। ইতোমধ্যে চর এলাকাগুলোতে ভুট্টা তোলা শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে ভুট্টা তোলা শুরু হবে।

এলাকাবাসী জানান, প্রতিবিঘা ভুট্টা ক্ষেতের পাতা ও গাছের মাথা কাটতে ২ জন করে শ্রমিক লাগে কিন্তু তা এখন আর লাগছে না। নি¤œ আয়ের লোকজন বিনামূল্যে পাতা ছিঁড়ে ও মাথা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এখন মাঠে কাজ না থাকায় দিনমজুর শ্রেণি পরিবারের সবাই মিলে ভুট্টা গাছের পাতা ছিঁড়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছে। দামে কম হওয়ায় অনেকেই গো-খাদ্য হিসেবে ভুট্টার পাতা কিনছেন। এতে একদিকে নি¤œ আয়ের লোকজনের আয় হচ্ছে, অন্যদিকে কম দামে বিভিন্ন গবাদিপশু খামারিরা পশুর খাদ্য পাচ্ছেন ও কৃষকের ভুট্টা উৎপাদনে খরচও কমে যাচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ঘুন্টি, পারুলিয়া, হাতীবান্ধাহাট, কালীগঞ্জ উপজেলার ভুল্ল্যারহাট, ভোটমারীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ভুট্টা পাতার হাট বসছে।

জেলার ভোটমারী এলাকার দিনমজুর কোনা মিয়া বলেন, বর্তমানে এলাকায় কোন কাজ নেই। তাই আমি ও আমার স্ত্রী প্রতিদিন সকালে ডাউয়াবাড়ীর চরে গিয়ে ভুট্টা পাতা ছিঁড়ে ভোটমারী বাজারে বিক্রি করি। এতে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এ দিয়ে কোন রকম সংসার চলছে। পাতার জন্য ক্ষেত মালিকদের কোন টাকা দিতে হয় না। কয়েকদিন পর ভুট্টা তোলা শুরু হলে তখন ভুট্টা তোলার কাজ করবো।

ভোটমারী বাজার ঘুরে দেখা যায়, সাদেকুল নামে এক ছেলে যার এখন খেলাধুলা করার কথা কিন্তু তার দিনমজুর বাবা-মা সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়ায় সে বাজারে ভুট্টার পাতা বিক্রি করছে। বাজারে ভুট্টা পাতা বিক্রি করতে আসা সজীব বলে, সে ভোটমারী স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে, অভাবের সংসারে বাবা-মাসহ সারাদিন ভুট্টা গাছের পাতা ছেঁড়ে। স্কুল বন্ধ থাকায় বিকেলে ভুট্টা পাতা নিয়ে বাজারে এসে সেটি বিক্রি করে।

হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তার চর এলাকার কৃষক লুৎফর রহমান জানান, ভুট্টা তোলার ১৫/২০ দিন আগে গাছের পাতা ও মাথা কেটে দিতে হয়। এতে ভুট্টায় সূর্যের আলো পড়লে রং ভালো হয়। প্রতিবিঘা ভুট্টা ক্ষেতে পাতা ও মাথা কাটতে ২ জন করে শ্রমিক লাগে কিন্তু এখন তা লাগছে না। অনেকেই পাতা ও গাছের মাথা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে একদিকে আমাদের উৎপাদন খরচ কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে নি¤œ আয়ের লোকজন তাদের জীবিকার পথ পেয়েছে।

ডাউয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রেজ্জাকুল ইসলাম কায়েদ জানান, এ সময়টা কাজ না থাকায় চরাঞ্চলের নি¤œ আয়ের লোকজন বেকার হয়ে পড়ে। কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে- ভুট্টার পাতা ও ভুট্টা গাছের মাথা বিক্রি হচ্ছে। ফলে কিছু লোক কয়েক দিনের জন্য হলেও তাদের কর্মসংস্থান পায়। অন্যদিকে ভুট্টা উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ার পাশাপাশি পশু খামারিরা কম দামে তাদের গো-খাদ্য কিনতে পারছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, এ সময় এ অঞ্চলের শ্রমিকরা দক্ষিণাঞ্চলে কাজ করতে যান কিন্তু লকডাউন চলায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন তারা। আর তাই ভুট্টা পাতা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন তারা।

বুধবার, ২১ এপ্রিল ২০২১ , ৮ বৈশাখ ১৪২৮ ৮ রমজান ১৪৪২

লকডাউনে নিম্নআয়ের মানুষের বিকল্প ভাবনা

ভুট্টা গাছের পাতা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা

মনিরুজ্জামান সরকার, লালমনিরহাট

image

লকডাউনে কাজ-কর্ম না থাকায় উত্তরের সীমান্ত জেলা লালমনিরহাটের নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। এ অবস্থায় চরাঞ্চলের কর্মহীন নিম্ন আয়ের এসব মানুষ ভুট্টা গাছের মাথা ও পাতা ছিঁড়ে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন। দাম কম হওয়ায় অনেকেই গোখাদ্য হিসেবে ভুট্টার পাতা কিনছেন।

এ জেলার প্রধান অর্থকারী ফসল ভুট্টা। এ বছর জেলায় ভুট্টা চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে গেছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ফলনও ভাল হবে। ইতোমধ্যে চর এলাকাগুলোতে ভুট্টা তোলা শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে ভুট্টা তোলা শুরু হবে।

এলাকাবাসী জানান, প্রতিবিঘা ভুট্টা ক্ষেতের পাতা ও গাছের মাথা কাটতে ২ জন করে শ্রমিক লাগে কিন্তু তা এখন আর লাগছে না। নি¤œ আয়ের লোকজন বিনামূল্যে পাতা ছিঁড়ে ও মাথা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এখন মাঠে কাজ না থাকায় দিনমজুর শ্রেণি পরিবারের সবাই মিলে ভুট্টা গাছের পাতা ছিঁড়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছে। দামে কম হওয়ায় অনেকেই গো-খাদ্য হিসেবে ভুট্টার পাতা কিনছেন। এতে একদিকে নি¤œ আয়ের লোকজনের আয় হচ্ছে, অন্যদিকে কম দামে বিভিন্ন গবাদিপশু খামারিরা পশুর খাদ্য পাচ্ছেন ও কৃষকের ভুট্টা উৎপাদনে খরচও কমে যাচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ঘুন্টি, পারুলিয়া, হাতীবান্ধাহাট, কালীগঞ্জ উপজেলার ভুল্ল্যারহাট, ভোটমারীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ভুট্টা পাতার হাট বসছে।

জেলার ভোটমারী এলাকার দিনমজুর কোনা মিয়া বলেন, বর্তমানে এলাকায় কোন কাজ নেই। তাই আমি ও আমার স্ত্রী প্রতিদিন সকালে ডাউয়াবাড়ীর চরে গিয়ে ভুট্টা পাতা ছিঁড়ে ভোটমারী বাজারে বিক্রি করি। এতে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এ দিয়ে কোন রকম সংসার চলছে। পাতার জন্য ক্ষেত মালিকদের কোন টাকা দিতে হয় না। কয়েকদিন পর ভুট্টা তোলা শুরু হলে তখন ভুট্টা তোলার কাজ করবো।

ভোটমারী বাজার ঘুরে দেখা যায়, সাদেকুল নামে এক ছেলে যার এখন খেলাধুলা করার কথা কিন্তু তার দিনমজুর বাবা-মা সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়ায় সে বাজারে ভুট্টার পাতা বিক্রি করছে। বাজারে ভুট্টা পাতা বিক্রি করতে আসা সজীব বলে, সে ভোটমারী স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে, অভাবের সংসারে বাবা-মাসহ সারাদিন ভুট্টা গাছের পাতা ছেঁড়ে। স্কুল বন্ধ থাকায় বিকেলে ভুট্টা পাতা নিয়ে বাজারে এসে সেটি বিক্রি করে।

হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তার চর এলাকার কৃষক লুৎফর রহমান জানান, ভুট্টা তোলার ১৫/২০ দিন আগে গাছের পাতা ও মাথা কেটে দিতে হয়। এতে ভুট্টায় সূর্যের আলো পড়লে রং ভালো হয়। প্রতিবিঘা ভুট্টা ক্ষেতে পাতা ও মাথা কাটতে ২ জন করে শ্রমিক লাগে কিন্তু এখন তা লাগছে না। অনেকেই পাতা ও গাছের মাথা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে একদিকে আমাদের উৎপাদন খরচ কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে নি¤œ আয়ের লোকজন তাদের জীবিকার পথ পেয়েছে।

ডাউয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রেজ্জাকুল ইসলাম কায়েদ জানান, এ সময়টা কাজ না থাকায় চরাঞ্চলের নি¤œ আয়ের লোকজন বেকার হয়ে পড়ে। কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে- ভুট্টার পাতা ও ভুট্টা গাছের মাথা বিক্রি হচ্ছে। ফলে কিছু লোক কয়েক দিনের জন্য হলেও তাদের কর্মসংস্থান পায়। অন্যদিকে ভুট্টা উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ার পাশাপাশি পশু খামারিরা কম দামে তাদের গো-খাদ্য কিনতে পারছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, এ সময় এ অঞ্চলের শ্রমিকরা দক্ষিণাঞ্চলে কাজ করতে যান কিন্তু লকডাউন চলায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন তারা। আর তাই ভুট্টা পাতা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন তারা।