রাজশাহীতে চলমান দাবদাহে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। আবহাওয়া প্রতিকূলতায় ভুগছে সাধারণ মানুষ। তীব্র এ তাপমাত্রায় বিবর্ণ হয়ে উঠেছে রাজশাহীর সবুজ প্রকৃতি! রুক্ষ আবহাওয়ায় গাছের পাতাও যেন নড়ছে না। দাবদাহে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। একটু বৃষ্টি ও শীতল হাওয়ার পরশ পেতে সাধারণ মানুষ যেন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজশাহী মহানগরীর পূর্ব দিকে পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলার কিছু অংশে গত ১১ এপ্রিল ৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর আগে ৯ এপ্রিল দুই মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু রাজশাহী শহরেরই পশ্চিম প্রান্ত থেকে গোদাগাড়ী, তানোর এবং মোহনপুর, পবা, দুর্গাপুর এবং বাগমারায় এখন পর্যন্ত বৃষ্টির খবর পাওয়া যায়নি। ফলে রাজশাহীতে দাবদাহ কমছে না।
রাজশাহীজুড়ে মৃদু থেকে মাঝারি দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। সাধারণ দিনের তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভেতর থাকলে তাকে মাঝারি দাবদাহ হিসেবে ধরা হয়। ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে বলে মৃদু দাবদাহ। আর ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপদাহ হিসেবে ধরা হয়। ফলে রাজশাহীতে এখন মাঝারি তাপপ্রবাহ বইছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রেজাউনুল হক জানান, রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল গত ১৪ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৩ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আপাতত বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা নেই বলেও জানান রাজশাহীর এই আবহাওয়া কর্মকর্তা।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য মতে, এর আগে ২০০০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারপর তাপমাত্রা বাড়লেও এখন পর্যন্ত রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আর ৪২ ডিগ্রি অতিক্রম করেনি। ১৯৪৯ সাল থেকে দেশে তাপমাত্রার রেকর্ড শুরু হয়। এর মধ্যে ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলেও পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে।
একটানা বৃষ্টির দেখা নেই ফলে ধুধু খরায় কমে গেছে খাল-বিলের পানি। শুকনো হয়ে পড়েছে অনেক পুকুরও। এমন অবস্থায় বরেন্দ্র অঞ্চলের উঁচু অঞ্চলগুলোতে খাওয়ার পানির তীব্র সংকটে পড়েছে।
রুক্ষ আবহাওয়ায় হঠাৎ এক বাতাসে গত ৪ এপ্রিল জেলার ২৮ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কেজেএম আবদুল আউয়াল বলেন, তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় এবং বাতাসে আর্দ্রতা না থাকায় বোরো ধানের শীষ মরে যাচ্ছে। একদিন শুধু লু হাওয়ায় পুড়েছে ২৮ হেক্টর জমির ধানের শীষ। তিনি বলেন, বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকলে আমরা যে তাপমাত্রা রেকর্ড করি না কেন, এর চেয়ে অনেক বেশি তাপমাত্রা অনুভূত হবে। তখন মনে হয় লু-হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। এখন বাতাসে আর্দ্রতা কম, তাপমাত্রা বেশি।
তানোরের মুন্ডুমালা এলাকার কৃষক জাহিদুল ইসলাম (৪০) বলেন, তাদের এলাকায় সেচ সংকট। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপ যে পরিমাণ বোরো ধানের জমিতে সেচের চাহিদা পূরণ করতে পারে, তার চেয়েও অনেক বেশি চাষ হয়। তাই মাঠে বোরো ধান থাকা পর্যন্ত তারা বৃষ্টির জন্য আকাশের দিকে চেয়ে থাকেন। কিন্তু এবার মাঠে বোরো ধান লাগানোর পর একবারও বৃষ্টি হয়নি। ফলে জমি সেচ সংকটে পড়ছে। আবার গভীর নলকূপ থেকে সেচের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে বাড়ছে আবাদের খরচ।
বুধবার, ২১ এপ্রিল ২০২১ , ৮ বৈশাখ ১৪২৮ ৮ রমজান ১৪৪২
জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী
রাজশাহীতে চলমান দাবদাহে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। আবহাওয়া প্রতিকূলতায় ভুগছে সাধারণ মানুষ। তীব্র এ তাপমাত্রায় বিবর্ণ হয়ে উঠেছে রাজশাহীর সবুজ প্রকৃতি! রুক্ষ আবহাওয়ায় গাছের পাতাও যেন নড়ছে না। দাবদাহে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। একটু বৃষ্টি ও শীতল হাওয়ার পরশ পেতে সাধারণ মানুষ যেন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজশাহী মহানগরীর পূর্ব দিকে পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলার কিছু অংশে গত ১১ এপ্রিল ৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর আগে ৯ এপ্রিল দুই মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু রাজশাহী শহরেরই পশ্চিম প্রান্ত থেকে গোদাগাড়ী, তানোর এবং মোহনপুর, পবা, দুর্গাপুর এবং বাগমারায় এখন পর্যন্ত বৃষ্টির খবর পাওয়া যায়নি। ফলে রাজশাহীতে দাবদাহ কমছে না।
রাজশাহীজুড়ে মৃদু থেকে মাঝারি দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। সাধারণ দিনের তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভেতর থাকলে তাকে মাঝারি দাবদাহ হিসেবে ধরা হয়। ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে বলে মৃদু দাবদাহ। আর ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপদাহ হিসেবে ধরা হয়। ফলে রাজশাহীতে এখন মাঝারি তাপপ্রবাহ বইছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রেজাউনুল হক জানান, রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল গত ১৪ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৩ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আপাতত বৃষ্টির কোন সম্ভাবনা নেই বলেও জানান রাজশাহীর এই আবহাওয়া কর্মকর্তা।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য মতে, এর আগে ২০০০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারপর তাপমাত্রা বাড়লেও এখন পর্যন্ত রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আর ৪২ ডিগ্রি অতিক্রম করেনি। ১৯৪৯ সাল থেকে দেশে তাপমাত্রার রেকর্ড শুরু হয়। এর মধ্যে ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলেও পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে।
একটানা বৃষ্টির দেখা নেই ফলে ধুধু খরায় কমে গেছে খাল-বিলের পানি। শুকনো হয়ে পড়েছে অনেক পুকুরও। এমন অবস্থায় বরেন্দ্র অঞ্চলের উঁচু অঞ্চলগুলোতে খাওয়ার পানির তীব্র সংকটে পড়েছে।
রুক্ষ আবহাওয়ায় হঠাৎ এক বাতাসে গত ৪ এপ্রিল জেলার ২৮ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কেজেএম আবদুল আউয়াল বলেন, তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় এবং বাতাসে আর্দ্রতা না থাকায় বোরো ধানের শীষ মরে যাচ্ছে। একদিন শুধু লু হাওয়ায় পুড়েছে ২৮ হেক্টর জমির ধানের শীষ। তিনি বলেন, বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকলে আমরা যে তাপমাত্রা রেকর্ড করি না কেন, এর চেয়ে অনেক বেশি তাপমাত্রা অনুভূত হবে। তখন মনে হয় লু-হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। এখন বাতাসে আর্দ্রতা কম, তাপমাত্রা বেশি।
তানোরের মুন্ডুমালা এলাকার কৃষক জাহিদুল ইসলাম (৪০) বলেন, তাদের এলাকায় সেচ সংকট। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একটি গভীর নলকূপ যে পরিমাণ বোরো ধানের জমিতে সেচের চাহিদা পূরণ করতে পারে, তার চেয়েও অনেক বেশি চাষ হয়। তাই মাঠে বোরো ধান থাকা পর্যন্ত তারা বৃষ্টির জন্য আকাশের দিকে চেয়ে থাকেন। কিন্তু এবার মাঠে বোরো ধান লাগানোর পর একবারও বৃষ্টি হয়নি। ফলে জমি সেচ সংকটে পড়ছে। আবার গভীর নলকূপ থেকে সেচের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে বাড়ছে আবাদের খরচ।