জাতীয়করণ হলে শিক্ষায় ফিরবে প্রাণ

প্রদীপ কুমার দেবনাথ

শিক্ষায় গতি আনয়নের ক্ষেত্রে জাতীয়করণের বিকল্প নেই। জাতিয়করণ হলেই শিক্ষায় গতি আসবে শতভাগ। বর্তমান শিক্ষা বাজেটের যে অতিরিক্ত বরাদ্দ তার অর্ধেক খরচ করেই জাতীয়করণ সম্ভব। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সরকারি বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বরাদ্দ ৫ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা বেশি। বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপে শিক্ষা কার্যক্রমসহ প্রায় প্রতিটি সেক্টরে সাধারণ কার্যক্রম প্রায় নেই বললেই চলে। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলায় বাজেটের প্রাক্কলিত ব্যয়হ্রাস পাওয়াটা স্বাভাবিক। করোনার কারণে অন্যান্য বছরের মতো প্রকল্প, প্রশিক্ষণ, ভ্রমণ, অবকাঠামো উন্নয়ন এগুলো নেই বললেই চলে। আর যেহেতু সামাজিক দূরত্ব মানা, স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী আমাদের এ মুহূর্তে চলা উচিত তাই এ বছর প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কার্যক্রম প্রায় অসম্ভব। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এবার শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের হাহাকার ঘোচাবার সুযোগ আছে। প্রয়োজন শুধু আন্তরিকতার। এবার এ বিপুল বাজেটের আংশিক খরচের মাধ্যমে জাতীয়করণ করা সম্ভব। মানসম্মত শিক্ষা ও মেধাবী জাতি গঠনে জাতীয়করণের বিকল্প নেই। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের তুলনায় শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে আমাদের অবস্থান তলানীতে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা হাস্যরসের খোরাক হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। সর্বোচ্চ পর্যায়ে শিক্ষাখাতকে প্রাধান্য দেয়া, মাধ্যমিক শিক্ষাকে গতিশীল করা, মাধ্যমিক পর্যায়ে মেধাবিকাশে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা চালুকরণ জাতীয়করণ ছাড়া সম্ভব নয়।

বর্তমানে শিক্ষকতার পেশাটাকে মুখে মুখে সম্মানজনক পেশা বলা হলেও গ্রেড অনুপাতে বেতন, কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর বোর্ডের আচরণ, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা আর সিকি উৎসবভাতা কিন্তু অন্যটা প্রমাণ করে। আমরা যে শতভাগ অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার তা কিন্তু এই বেতন ও সামান্য সুবিধা প্রমাণ করে। এই পেশার এই অবমূল্যায়ন আর সিকি সুবিধা প্রত্যক্ষ করে মেধাবীরা এ পেশায় আসতে চায় না। অন্যান্য চাকরি বঞ্চিত হলে একান্ত বাধ্য হয়ে তারা এ পেশায় এলেও বেতন, ভাতা ও মূর্খ পরিচালনা কমিটি দেখে পড়ানোর মানসিকতা পরিবর্তন করে তারা এটাকে চাকরি হিসেবে বেছে নেয় সেবা হিসেবে নয়। এটা জাতির জন্য অশনিসংকেত।

অভাবগ্রস্ত শিক্ষকরা মানসিক ভাবেও বিপদগ্রস্ত। অভাব যখন চারদিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকে তখন নিদারুণ কষ্টের ভাণ্ডার থেকে সৃজনশীল কিছু পাওয়ার চিন্তাই বৃথা। তাই অতিশীঘ্র জাতীয়করণ না হলে এ শিক্ষা ব্যবস্থায় অরাজকতা বৃদ্ধি পাবে, শিক্ষায় প্রতিযোগিতা আরও কমবে এবং এসব সেক্টরে প্রচণ্ড অসন্তুষ্টি দেখা দেবে। আমাদের দেশের চেয়েও অনুন্নত বেশ কয়েকটি এশিয়ান রাষ্ট্রে শিক্ষা খাতে সর্বনিম্ন জিডিপি ৩.৫০ বা ৪ শতাংশ সেখানে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হয়েও আমাদের জিডিপি ২.০৯ শতাংশ। এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। দেশের মাধ্যমিক, উচ্চ শিক্ষা ও মাদ্রাসাসহ সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাণবন্ত করতে, আশানুরূপ ফলাফল পেতে জাতীয়করণ একান্ত প্রয়োজন। বিশাল বাজেটের আংশিক এবং প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের আয় জমা নিয়ে জাতীয়করণ করলে শিক্ষক/শিক্ষার্থী যেমন উপকৃত হবে তেমনি আমাদের শিক্ষায় আন্তর্জাতিক মান ও কৌশল অবলম্ব^ন করে বাস্তবিক প্রয়োগ সম্ভব হবে। বেসরকারি শিক্ষকদের হাহাকার নিরসনে এবারই জাতীয়করণের মোক্ষম সুযোগ। করোনা মহামারীর কারণে বাজেট ব্যয় সম্পূর্ণ হওয়ার সুযোগ নেই। তাই ব্যয়ের অতিরিক্ত অর্থে জাতীয়করণ সম্ভব। মেধাবীদের শিক্ষকতায় আনতে, শিক্ষায় প্রাণ ফিরাতে জাতীয়করণের বিকল্প নেই।

[ লেখক : শিক্ষক, গণমাধ্যমকর্মী ও কলামিস্ট ]

আরও খবর

বুধবার, ২১ এপ্রিল ২০২১ , ৮ বৈশাখ ১৪২৮ ৮ রমজান ১৪৪২

জাতীয়করণ হলে শিক্ষায় ফিরবে প্রাণ

প্রদীপ কুমার দেবনাথ

শিক্ষায় গতি আনয়নের ক্ষেত্রে জাতীয়করণের বিকল্প নেই। জাতিয়করণ হলেই শিক্ষায় গতি আসবে শতভাগ। বর্তমান শিক্ষা বাজেটের যে অতিরিক্ত বরাদ্দ তার অর্ধেক খরচ করেই জাতীয়করণ সম্ভব। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সরকারি বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বরাদ্দ ৫ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা বেশি। বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপে শিক্ষা কার্যক্রমসহ প্রায় প্রতিটি সেক্টরে সাধারণ কার্যক্রম প্রায় নেই বললেই চলে। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলায় বাজেটের প্রাক্কলিত ব্যয়হ্রাস পাওয়াটা স্বাভাবিক। করোনার কারণে অন্যান্য বছরের মতো প্রকল্প, প্রশিক্ষণ, ভ্রমণ, অবকাঠামো উন্নয়ন এগুলো নেই বললেই চলে। আর যেহেতু সামাজিক দূরত্ব মানা, স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী আমাদের এ মুহূর্তে চলা উচিত তাই এ বছর প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কার্যক্রম প্রায় অসম্ভব। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এবার শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের হাহাকার ঘোচাবার সুযোগ আছে। প্রয়োজন শুধু আন্তরিকতার। এবার এ বিপুল বাজেটের আংশিক খরচের মাধ্যমে জাতীয়করণ করা সম্ভব। মানসম্মত শিক্ষা ও মেধাবী জাতি গঠনে জাতীয়করণের বিকল্প নেই। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের তুলনায় শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে আমাদের অবস্থান তলানীতে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা হাস্যরসের খোরাক হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। সর্বোচ্চ পর্যায়ে শিক্ষাখাতকে প্রাধান্য দেয়া, মাধ্যমিক শিক্ষাকে গতিশীল করা, মাধ্যমিক পর্যায়ে মেধাবিকাশে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা চালুকরণ জাতীয়করণ ছাড়া সম্ভব নয়।

বর্তমানে শিক্ষকতার পেশাটাকে মুখে মুখে সম্মানজনক পেশা বলা হলেও গ্রেড অনুপাতে বেতন, কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর বোর্ডের আচরণ, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা আর সিকি উৎসবভাতা কিন্তু অন্যটা প্রমাণ করে। আমরা যে শতভাগ অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার তা কিন্তু এই বেতন ও সামান্য সুবিধা প্রমাণ করে। এই পেশার এই অবমূল্যায়ন আর সিকি সুবিধা প্রত্যক্ষ করে মেধাবীরা এ পেশায় আসতে চায় না। অন্যান্য চাকরি বঞ্চিত হলে একান্ত বাধ্য হয়ে তারা এ পেশায় এলেও বেতন, ভাতা ও মূর্খ পরিচালনা কমিটি দেখে পড়ানোর মানসিকতা পরিবর্তন করে তারা এটাকে চাকরি হিসেবে বেছে নেয় সেবা হিসেবে নয়। এটা জাতির জন্য অশনিসংকেত।

অভাবগ্রস্ত শিক্ষকরা মানসিক ভাবেও বিপদগ্রস্ত। অভাব যখন চারদিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকে তখন নিদারুণ কষ্টের ভাণ্ডার থেকে সৃজনশীল কিছু পাওয়ার চিন্তাই বৃথা। তাই অতিশীঘ্র জাতীয়করণ না হলে এ শিক্ষা ব্যবস্থায় অরাজকতা বৃদ্ধি পাবে, শিক্ষায় প্রতিযোগিতা আরও কমবে এবং এসব সেক্টরে প্রচণ্ড অসন্তুষ্টি দেখা দেবে। আমাদের দেশের চেয়েও অনুন্নত বেশ কয়েকটি এশিয়ান রাষ্ট্রে শিক্ষা খাতে সর্বনিম্ন জিডিপি ৩.৫০ বা ৪ শতাংশ সেখানে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হয়েও আমাদের জিডিপি ২.০৯ শতাংশ। এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। দেশের মাধ্যমিক, উচ্চ শিক্ষা ও মাদ্রাসাসহ সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাণবন্ত করতে, আশানুরূপ ফলাফল পেতে জাতীয়করণ একান্ত প্রয়োজন। বিশাল বাজেটের আংশিক এবং প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের আয় জমা নিয়ে জাতীয়করণ করলে শিক্ষক/শিক্ষার্থী যেমন উপকৃত হবে তেমনি আমাদের শিক্ষায় আন্তর্জাতিক মান ও কৌশল অবলম্ব^ন করে বাস্তবিক প্রয়োগ সম্ভব হবে। বেসরকারি শিক্ষকদের হাহাকার নিরসনে এবারই জাতীয়করণের মোক্ষম সুযোগ। করোনা মহামারীর কারণে বাজেট ব্যয় সম্পূর্ণ হওয়ার সুযোগ নেই। তাই ব্যয়ের অতিরিক্ত অর্থে জাতীয়করণ সম্ভব। মেধাবীদের শিক্ষকতায় আনতে, শিক্ষায় প্রাণ ফিরাতে জাতীয়করণের বিকল্প নেই।

[ লেখক : শিক্ষক, গণমাধ্যমকর্মী ও কলামিস্ট ]