প্রতিদিনই বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী

মির্জাগঞ্জে ১৩ ও ঝালকাঠিতে ১ জনের মৃত্যু : স্যালাইন সংকট

মির্জাগঞ্জ

প্রতিনিধি, মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী)

প্রচণ্ড গরম, লবণাক্ত পানির ব্যবহার ও বাইরের খাবার খাওয়ার ফলে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে ডায়রিয়ার প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত চারদিন পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মাদ্রাসা শিক্ষক ও এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। তবে এদের মধ্যে কেউ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছিলেন না বলে জানা যায়। মৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই পঞ্চাশোর্ধ।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সকালে উপজেলার মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের মির্জাগঞ্জ গ্রামের আলম গোলদার (৫৫) ও গত সোমবার রাতে পশ্চিম কালিকাপুর হোসাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক এবং আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের উত্তর ঝাটিবুনিয়া গ্রামের সুলতান আহমেদ (৫২) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান ।

এর আগে তিনদিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিরা হলেন, মাধবখালী ইউনিয়নের কাঁঠালতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ও সমাদ্দারকাঠি গ্রামের রাকিব খন্দকারের মেয়ে সাহারা সানফুল (১৫), উত্তর মাধবখালী গ্রামের মৃত মহবত আলী হাওলাদারের ছেলে মন্নাফ হাওলাদার (৫০), মাধবখালী গ্রামের মৃত্যু বন্দে আলী সিকদারের ছেলে নুর মোহাম্মদ সিকদার (৮০), উত্তর মাধবখালী গ্রামের দেনছে আলী সিকদারের স্ত্রী কহিনুর বেগম (৫৫), মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের মৃত ফরমান সিকদারের ছেলে আলীম উদ্দিন সিকদার (৭৫), একই গ্রামের মৃত গনি হাওলাদারের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৭০), মৃত করিম নেগাবানের মেয়ে ফরিদা বেগম(৫০), ভাজনা কদমতলা গ্রামের মৃত আজাহার হাওলাদারের ছেলে সোবাহান হাওলাদার(৫৬) পিপড়াখালি গ্রামের ইউনুস সরকারের স্ত্রী কদভানু বেগম(৭০), ঘটকের আন্দুয়া গ্রামের রাখাল চন্দ্র মালির স্ত্রী বিরেন মালী(৫৫) ও মজিদবাড়িয়া ইউনিয়নের তারাবুনিয়া গ্রামের মৃত একরাম সিকদারের ছেলে আলেক সিকদার (৫০)। তাদের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার বিষয়টি তাদের পরিবার নিশ্চিত করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৫০ শয্যার উপজেলা হাসপাতালে বেড সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে রোগীদের বারান্দার মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেককে ডাস্টবিনের পাশে ও ময়লাযুক্ত স্থানে শয্যা পেতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালের বারান্দায়সহ টয়লেটও নোংরা অবস্থায় দেখা গেছে।

প্রতিদিনই আসছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। অপরদিকে হাসপাতালে ও বাইরে কলেরা স্যালাইনের মারাত্মক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জরুরী প্রয়োজনেও স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না এমন অভিযোগ রোগীর স্বজনদের।

মির্জাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৯৪ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে এবং ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮৭ জন। এ নিয়ে গত ৭ দিন উপজেলায় ডায়রিয়ার আক্রান্তের সংখ্যা ৫২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে ২৬৮ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে ।

মির্জাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুল হক লিটন শিকদার জানান, আমার ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি ঘরেই ডায়রিয়ার রোগী রয়েছে। নদ-নদীর লবণাক্ত পানি ব্যবহার করার ফলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা বলেন, হাসপাতাল ভর্তি কোন ডায়রিয়ার রোগী এখন পর্যন্ত মারা যায়নি। তবে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কয়েকজন রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তিনি আরও জানান, বিগত বছরগুলোতে কখনও এত পরিমাণ ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে আসে নাই। রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে স্যালাইন সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। তবে জেলা প্রশাসক মহোদয় হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে ১১শত ব্যাগ স্যালাইন দিয়েছেন। এর আগে সিভিল সার্জন অফিস থেকে ১ হাজার ব্যাগ ও স্থানীয়ভাবে কিছু স্যালাইন সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন আমাদের কোন স্যালাইন সঙ্কট নেই পর্যাপ্ত পরিমাণ স্যালাইন মজুদ রয়েছে।

ঝালকাঠি

জেলা বার্তা পরিশেক, ঝালকাঠি

ঝালকাঠি জেলায় ১ সপ্তাহ ধরে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। এ পরিস্থিতিতে হাসপাতালগুলোতে আইভি স্যালাইন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বেডের অভাবে রোগীদের হাসপাতালের করিডোরে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এদিকে গত মঙ্গলবার সকালে আমুয়া হাসপাতালে ডায়রিয়ায় মানিক বেপারী নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।

বিগত ১০-১২ বছরের মধ্যে বর্তমানে চলমান ডায়রিয়ার ব্যাপকতা দেখা যায়নি। এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রোগ নিয়ন্ত্রণ সেলের কর্মকর্তারা মাঠ নেমেছেন। মাঠ পর্যায় এসে সুগন্ধা ও বিষখালি নদী এবং পুকুর জলাশয় থেকে পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য নিয়ে গেছেন। ষাট দশক থেকে সত্তর দশক পর্যন্ত দক্ষিণ অঞ্চলের জেলাগুলোতে কলেরার প্রাদুর্ভাবের কারণে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পরবর্তীতে দীর্ঘ এক দশক ধরে স্বাস্থ্যবিভাগের কলেরা জীবাণু নির্মূল কর্মসূচির সফলতা হিসেবে এ ভাইরাসের জীবাণু নির্মূল হয়েছিল। বর্তমান ডায়রিয়ার পরিস্থিতিতে কারণ অনুসন্ধানে নদ-নদীর পানিতে কলেরার জীবাণু সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে তার জন্যই পানি পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ জেলার মধ্যে সদর উপজেলা ও নলছিটি উপজেলায় আক্রান্তদের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। জেলার অন্য দু’টি উপজেলা রাজাপুর ও কাঠালিয়ায় আক্রান্তদের হার তুলনামূলক কম হলেও কাঠালিয়া উপজেলার বাঁশবুনিয়ায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার সকালে আমুয়া হাসপাতালে মানিক বেপারী নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।

মাত্রাতিরিক্ত রোগীদের জন্য ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেড না থাকায় হাসপাতালের বারান্দায় রেখে এদের যথাসাধ্য চিকিৎসা দিতে ডাক্তার ও নার্সরা হিমশিম খাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় আইভি স্যালাইনের মজুদ সীমিত হয়ে আসায় রোগীদের দু’হাজার মিলি লিটার করে প্রাথমিকভাবে দেয়া হচ্ছে। এরপরও কোন রোগীর চাহিদা থাকলে তাদের মধ্যে গরিব রোগীদের দেয়া হচ্ছে। তবে সচ্ছল পরিবারভুক্ত রোগীদের দু’একটি করে বাহির থেকে কিনে দিতে বলা হচ্ছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ১০৪ জন ও মঙ্গলবার বেলা ১২টা পর্যন্ত আরও ৫৩ জন ভর্তি হয়েছে এবং নলছিটি উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬০ জন আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬০ ভাগ রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন। জেলায় গত ১ সপ্তাহে হাসপাতালগুলোতে ৩ হাজারের মতো রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সুস্থ হয়েছে। বর্তমানে রাজাপুর উপজেলায়ও ডায়রিয়া মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে মর্মে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে। এই উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সিমটমের মধ্যে ডায়রিয়াও অনন্য উপসর্গ। এজন্য ডায়রিয়া রোগীদের মধ্যে সোমবার করোনা পরীক্ষার জন্য প্রাথমিকভাবে ১০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে বরিশাল শেবাচিম করোনা ইউনিটের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে এবং তাদের সকলের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। মঙ্গলবার আরও ১০ জনের কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত কি-না নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বরিশাল করোনা ইউনিটের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী জানান, হঠাৎ এই ডায়রিয়ার প্রকোপ জেলাজুড়ে বেড়ে যাওয়ায় স্যালাইনের মজুদ শেষ হয়ে আসছে। ঢাকায় অধিদপ্তরে আইভি স্যালাইনের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে ঝালকাাঠির সংসদ সদস্য জননেতা আমির হোসেন আমু ১ হাজার ব্যাগ আইভি স্যালাইন ও বিভাগীয় কমিশনারের দেয়া ৫ হাজার ব্যাগ আইভি স্যালাইন জেলা প্রশাসক স্বাস্থ্যবিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছেন। ফলে এই হারে যে পরিমাণ প্রতিদিন স্যালাইন প্রয়োজন হয় তা আরও কয়েকদিন সামাল দেয়া যাবে।

বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১ , ৯ বৈশাখ ১৪২৮ ৯ রমজান ১৪৪২

প্রতিদিনই বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী

মির্জাগঞ্জে ১৩ ও ঝালকাঠিতে ১ জনের মৃত্যু : স্যালাইন সংকট

image

মির্জাগঞ্জ

প্রতিনিধি, মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী)

প্রচণ্ড গরম, লবণাক্ত পানির ব্যবহার ও বাইরের খাবার খাওয়ার ফলে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে ডায়রিয়ার প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত চারদিন পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মাদ্রাসা শিক্ষক ও এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। তবে এদের মধ্যে কেউ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছিলেন না বলে জানা যায়। মৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই পঞ্চাশোর্ধ।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার সকালে উপজেলার মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের মির্জাগঞ্জ গ্রামের আলম গোলদার (৫৫) ও গত সোমবার রাতে পশ্চিম কালিকাপুর হোসাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক এবং আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের উত্তর ঝাটিবুনিয়া গ্রামের সুলতান আহমেদ (৫২) ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান ।

এর আগে তিনদিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিরা হলেন, মাধবখালী ইউনিয়নের কাঁঠালতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ও সমাদ্দারকাঠি গ্রামের রাকিব খন্দকারের মেয়ে সাহারা সানফুল (১৫), উত্তর মাধবখালী গ্রামের মৃত মহবত আলী হাওলাদারের ছেলে মন্নাফ হাওলাদার (৫০), মাধবখালী গ্রামের মৃত্যু বন্দে আলী সিকদারের ছেলে নুর মোহাম্মদ সিকদার (৮০), উত্তর মাধবখালী গ্রামের দেনছে আলী সিকদারের স্ত্রী কহিনুর বেগম (৫৫), মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের মৃত ফরমান সিকদারের ছেলে আলীম উদ্দিন সিকদার (৭৫), একই গ্রামের মৃত গনি হাওলাদারের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৭০), মৃত করিম নেগাবানের মেয়ে ফরিদা বেগম(৫০), ভাজনা কদমতলা গ্রামের মৃত আজাহার হাওলাদারের ছেলে সোবাহান হাওলাদার(৫৬) পিপড়াখালি গ্রামের ইউনুস সরকারের স্ত্রী কদভানু বেগম(৭০), ঘটকের আন্দুয়া গ্রামের রাখাল চন্দ্র মালির স্ত্রী বিরেন মালী(৫৫) ও মজিদবাড়িয়া ইউনিয়নের তারাবুনিয়া গ্রামের মৃত একরাম সিকদারের ছেলে আলেক সিকদার (৫০)। তাদের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার বিষয়টি তাদের পরিবার নিশ্চিত করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৫০ শয্যার উপজেলা হাসপাতালে বেড সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে রোগীদের বারান্দার মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেককে ডাস্টবিনের পাশে ও ময়লাযুক্ত স্থানে শয্যা পেতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালের বারান্দায়সহ টয়লেটও নোংরা অবস্থায় দেখা গেছে।

প্রতিদিনই আসছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। অপরদিকে হাসপাতালে ও বাইরে কলেরা স্যালাইনের মারাত্মক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জরুরী প্রয়োজনেও স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না এমন অভিযোগ রোগীর স্বজনদের।

মির্জাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৯৪ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে এবং ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮৭ জন। এ নিয়ে গত ৭ দিন উপজেলায় ডায়রিয়ার আক্রান্তের সংখ্যা ৫২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে ২৬৮ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে ।

মির্জাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুল হক লিটন শিকদার জানান, আমার ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি ঘরেই ডায়রিয়ার রোগী রয়েছে। নদ-নদীর লবণাক্ত পানি ব্যবহার করার ফলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা বলেন, হাসপাতাল ভর্তি কোন ডায়রিয়ার রোগী এখন পর্যন্ত মারা যায়নি। তবে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কয়েকজন রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তিনি আরও জানান, বিগত বছরগুলোতে কখনও এত পরিমাণ ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে আসে নাই। রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে স্যালাইন সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। তবে জেলা প্রশাসক মহোদয় হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে ১১শত ব্যাগ স্যালাইন দিয়েছেন। এর আগে সিভিল সার্জন অফিস থেকে ১ হাজার ব্যাগ ও স্থানীয়ভাবে কিছু স্যালাইন সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন আমাদের কোন স্যালাইন সঙ্কট নেই পর্যাপ্ত পরিমাণ স্যালাইন মজুদ রয়েছে।

ঝালকাঠি

জেলা বার্তা পরিশেক, ঝালকাঠি

ঝালকাঠি জেলায় ১ সপ্তাহ ধরে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। এ পরিস্থিতিতে হাসপাতালগুলোতে আইভি স্যালাইন সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বেডের অভাবে রোগীদের হাসপাতালের করিডোরে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এদিকে গত মঙ্গলবার সকালে আমুয়া হাসপাতালে ডায়রিয়ায় মানিক বেপারী নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।

বিগত ১০-১২ বছরের মধ্যে বর্তমানে চলমান ডায়রিয়ার ব্যাপকতা দেখা যায়নি। এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রোগ নিয়ন্ত্রণ সেলের কর্মকর্তারা মাঠ নেমেছেন। মাঠ পর্যায় এসে সুগন্ধা ও বিষখালি নদী এবং পুকুর জলাশয় থেকে পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য নিয়ে গেছেন। ষাট দশক থেকে সত্তর দশক পর্যন্ত দক্ষিণ অঞ্চলের জেলাগুলোতে কলেরার প্রাদুর্ভাবের কারণে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পরবর্তীতে দীর্ঘ এক দশক ধরে স্বাস্থ্যবিভাগের কলেরা জীবাণু নির্মূল কর্মসূচির সফলতা হিসেবে এ ভাইরাসের জীবাণু নির্মূল হয়েছিল। বর্তমান ডায়রিয়ার পরিস্থিতিতে কারণ অনুসন্ধানে নদ-নদীর পানিতে কলেরার জীবাণু সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে তার জন্যই পানি পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ জেলার মধ্যে সদর উপজেলা ও নলছিটি উপজেলায় আক্রান্তদের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। জেলার অন্য দু’টি উপজেলা রাজাপুর ও কাঠালিয়ায় আক্রান্তদের হার তুলনামূলক কম হলেও কাঠালিয়া উপজেলার বাঁশবুনিয়ায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার সকালে আমুয়া হাসপাতালে মানিক বেপারী নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।

মাত্রাতিরিক্ত রোগীদের জন্য ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেড না থাকায় হাসপাতালের বারান্দায় রেখে এদের যথাসাধ্য চিকিৎসা দিতে ডাক্তার ও নার্সরা হিমশিম খাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় আইভি স্যালাইনের মজুদ সীমিত হয়ে আসায় রোগীদের দু’হাজার মিলি লিটার করে প্রাথমিকভাবে দেয়া হচ্ছে। এরপরও কোন রোগীর চাহিদা থাকলে তাদের মধ্যে গরিব রোগীদের দেয়া হচ্ছে। তবে সচ্ছল পরিবারভুক্ত রোগীদের দু’একটি করে বাহির থেকে কিনে দিতে বলা হচ্ছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ১০৪ জন ও মঙ্গলবার বেলা ১২টা পর্যন্ত আরও ৫৩ জন ভর্তি হয়েছে এবং নলছিটি উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬০ জন আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৬০ ভাগ রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন। জেলায় গত ১ সপ্তাহে হাসপাতালগুলোতে ৩ হাজারের মতো রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সুস্থ হয়েছে। বর্তমানে রাজাপুর উপজেলায়ও ডায়রিয়া মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে মর্মে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে। এই উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সিমটমের মধ্যে ডায়রিয়াও অনন্য উপসর্গ। এজন্য ডায়রিয়া রোগীদের মধ্যে সোমবার করোনা পরীক্ষার জন্য প্রাথমিকভাবে ১০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে বরিশাল শেবাচিম করোনা ইউনিটের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে এবং তাদের সকলের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। মঙ্গলবার আরও ১০ জনের কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত কি-না নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বরিশাল করোনা ইউনিটের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. রতন কুমার ঢালী জানান, হঠাৎ এই ডায়রিয়ার প্রকোপ জেলাজুড়ে বেড়ে যাওয়ায় স্যালাইনের মজুদ শেষ হয়ে আসছে। ঢাকায় অধিদপ্তরে আইভি স্যালাইনের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে ঝালকাাঠির সংসদ সদস্য জননেতা আমির হোসেন আমু ১ হাজার ব্যাগ আইভি স্যালাইন ও বিভাগীয় কমিশনারের দেয়া ৫ হাজার ব্যাগ আইভি স্যালাইন জেলা প্রশাসক স্বাস্থ্যবিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছেন। ফলে এই হারে যে পরিমাণ প্রতিদিন স্যালাইন প্রয়োজন হয় তা আরও কয়েকদিন সামাল দেয়া যাবে।