সর্বাত্মক লকডাউন উপেক্ষিত

বাজারে জনসমাগম, সড়কে যানজট

দ্বিতীয় দফায় সর্বাত্মক লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বৃদ্ধির পর রাজধানীর সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, অটোরিকশার চলাচল আরও বেড়েছে। দিন যত গড়াচ্ছে ততই দুর্বল হয়ে পড়ছে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ। সর্বাত্মক কঠোর বিধিনিষেধের গতকাল অষ্টম দিনে নগরজুড়ে যানবাহনের ব্যাপক চলাচল দেখা গেছে। এছাড়া নগরীর অনেক এলাকায় ট্রাফিক সিগন্যাল পয়েন্টে যানজটও তৈরি হতে দেখা গেছে। শুধু বাস ছাড়া সব ধরনের পরিবহন চলাচল করছে। সড়কে গাড়ির চাপ বেশি থাকায় ট্রাফিক সিগন্যালে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। সেই তুলনায় পুলিশ চেক পোস্টগুলোতেও বিরাজ করছিল শীতলতা। এছাড়া করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে রাজধানীর বিভিন্ন হাটবাজার, দোকানপাট, উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি একেবারেই মানা হচ্ছে না। কেউ কেউ মানতে চাইলেও পাশের জনের অসচেতনতার কারণে মানা সম্ভব হচ্ছে না। বিধিনিষেধ মানতে মানুষকে বাধ্য করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও জোরালো তাৎপরতা নেই। ফলে সবকিছুতেই এক ধরনের শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে বের হলে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বাস্তবে দেখা মিলেছে উল্টো চিত্র। এতে করোনার সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গতকাল সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, জনসাধারণের অযাচিত ঘোরাফেরা বন্ধ করতে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকলেও তাদের তৎপর আর আগের মতো দেখা যাইনি। ছিল যদিও অনেকে দাবি করেছেন, জরুরি কাজে বেরিয়েও তাদের জরিমানার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কেউ কেউ আবার বের হয়েছেন কাজ ছাড়াও।

গতকাল রাজধানীর মিরপুর এলাকায় দেখা গেছে, কঠোর বিধিনিষেধ জারির শুরুতে সড়কে নির্দিষ্ট দূরত্বে পর পর পুলিশি চেকপোস্ট থাকলেও আস্তে আস্তে তা কমতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে সড়কে গণপরিবহন ছাড়া, অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, রিকশা ও মাঝে মধ্যে বিআরটিসির বাস চলতে দেখা গেছে।

সকাল থেকে নগরীর ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে যানবাহনের ব্যাপক চাপ দেখা যায়। সকালে ফকিরাপুল ট্রাফিক সিগন্যালে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছে চলাচলরত যানবাহনকে। এ সময় ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, ভ্যান, সিএনজি ও মোটরসাইকেলসহ সবধরনের যানবাহন চলতে দেখা যায়।

একই চিত্র দেখা গেছে বাংলামোটর এলাকায়। সেখানেও যানবাহনের ভিড় ছিল। একইসঙ্গে আশপাশের ফুটপাতসহ অন্যান্য স্থানেও মানুষের ভিড় চোখে পড়েছে। কোথাও পুলিশের তৎপরতা দেখা যায়নি।

নগরীর শাজাহানপুর চেকপোস্টেও ছিল যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। এখানে রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়িই বেশি দেখা গেছে। পাশাপাশি মোটরসাইকেল ও সিএনজিও ছিল চোখে পড়ার মতো। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা যানবাহন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছিলেন।

সকালে নগরীর অনেক ট্রাফিক সিগন্যাল পয়েন্টে যানজটও তৈরি হয়। লকডাউনে চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন স্থানে বসানো পুলিশের চেকপোস্টে তৈরি হচ্ছে যানজট। চেকপোস্টের কারণে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে মানুষকে। এছাড়া কারখানা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় পরিবহন সংকটেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সড়কে অধিকাংশ মানুষ মাস্ক পরলেও কারও কারও মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদাসীনতা দেখা গেছে। গাড়ির চাপ সামলাতে লকডাউনের মধ্যেই সিগন্যালগুলোতে দেখা গেছে ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতাও।

তাদের ভাষ্য, দিন যত গড়াচ্ছে রাস্তায় গাড়ির চাপও তত বাড়ছে। অন্যদিকে, ব্যাপকহারে মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছেন। তাদের থামাতে জরিমানাও করছে ভ্রাম্যমাণ আদালতগুলো।

গতকাল রাজধানীর মিরপুর রোড এবং গাবতলী পুলিশ চেকপোস্টে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, ব্যাপকসংখ্যক গাড়ি এই চেকপোস্ট দিয়ে পার হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে প্রাইভেটকার। এসব গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করছে পুলিশ। এর পাশাপাশি রয়েছে মোটরসাইকেল এবং পণ্যবোঝাই ট্রাক। এছাড়া রাজধানীর সড়কগুলোতে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং বাইসাইকেলও ছিল চোখে পড়ার মতো।

গাবতলী চেকপোস্টে থাকা রাজধানীর দারুসসালাম থানার উপ-পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, যত গাড়ি এই পথ দিয়ে যাচ্ছে আমরা প্রত্যেককে চেষ্টা করছি জিজ্ঞেস করতে। কারণ অনেকে ভুয়া স্টিকার লাগিয়ে চলাচলের চেষ্টা করে। সেখান থেকে আমরা দেখেছি, কারও মুভমেন্ট পাস আছে, কেউ রপ্তানি পণ্যের কাজে বাইরে যাচ্ছে, কেউ ওষুধ কোম্পানির কাজে আবার কেউবা গার্মেন্টসের কাজে। শুধু তাই নয়, বেশিরভাগই বলছে সাভার থেকে সর্বোচ্চ আশুলিয়া পর্যন্ত যাবে। আসলে সত্যিকারার্থে তারা কতদূর যাবে, এটা বোঝা মুশকিল। তারা শুধু কাছে বলেই চেকপোস্টগুলো পার হচ্ছে। সময় যত যাচ্ছে, গাড়ির চাপ তত বাড়ছে। তবে কোন গণপরিবহন চলছে না। নিজস্ব পরিবহনগুলো নিজস্ব প্রয়োজনে চলছে।

এদিকে, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। সেখানে ব্যক্তিগত সিএনজিতে তিনজন গাদাগাদি করে যাওয়ায় তিন সিএনজিচালককে জরিমানা করা হয়। সেই সঙ্গে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া একই মোটরসাইকেলে দুজন, বিভিন্ন গাড়িতে গাদাগাদি করে লোক এবং সরকারের আদেশ অমান্য করে কোন যানবাহন চলাচল করছে কিনা, সে বিষয়গুলো তদারকি করতেই এখানে এই আদালত বসিয়েছে বিআরটিএ।

পুরান ঢাকার এক বাসিন্দা বলেন, কঠোর লকডাউন হলেও রাস্তায় সবকিছুই চলছে। শুধু বাস ছাড়া আর বাস না চলায় প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল চালকরা একপ্রকার ডাকাতি শুরু করেছে। আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তারা কয়েক গুণ বেশি ভাড়া চাচ্ছে। আমি মহাখালী যাব। সিএনজি বলছে ৫০০ টাকার নিচে যাবে না। আর বাইকাররা বলছে ৪০০ টাকা লাগবে। সবই যেহেতু চলছে, তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চললে অন্তত আমাদের মতো যাত্রীদের পকেট কাটা যেতো না।

অন্যদিকে, কঠোর বিধিনিষেধের অষ্টম দিনেও ঢাকা ছাড়ছে কর্মজীবী মানুষ। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শুরু থেকেই প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস বা মোটরসাইকেলে করে যাত্রীরা ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে এসব পরিবহনের ভাড়া বেশি হওয়ায় এখন অনেকেই ট্রাক বা পিকআপে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। যাত্রীরা বলছেন, ট্রাক বা পিকআপের ভাড়া অন্যান্য পরিবহনের তুলনায় অনেক কম। তাই কম টাকায় বাড়ি যাওয়ার মাধ্যম হিসেবে ট্রাকই ভরসা। গাবতলী গরুর হাটসংলগ্ন এলাকায় পুলিশের কড়া নজরদারি থাকায় বেশিরভাগ যাত্রী আমিনবাজার ব্রিজের ওপরে গিয়ে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল কিংবা পিকআপে করে বাড়ি ফিরছেন।

সরকারের নির্দেশনায় খোলা স্থানে কাঁচাবাজার স্থাপনের নির্দেশ থাকলেও তা মানা হয়নি। সিটি করপোরেশনের কাঠামোতেই কাঁচাবাজারসহ নিত্যপণ্যের বাজার বসছে। এতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। পাড়া-মহল্লা, এমনকি উন্মুক্ত স্থানেও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। মাস্ক পরা তো দূরের কথা মানা হচ্ছে না কোন ধরনের সামাজিক দূরত্ব। হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা রাখলেও বসে খেতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কিন্তু এগুলোতে বসে খেতে দেখা গেছে।

রাজধানীর গ্রিন রোড ছাড়াও কলাবাগান, পান্থপথ ও বাংলামোটর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনেক দোকানেই বিক্রি চলছে। এসব দোকানের ভেতরে একজনকে রেখে সামনে দোকানি ও কর্মচারীরা ঘোরাফেরা করেন। কোন ক্রেতা এলে তারা দ্রুত শাটার খুলে মালামাল বিক্রি করে আবার বন্ধ করে দেন। স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষকে বাধ্য করতে প্রশাসনের তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। কিছু স্থানে মোবাইল কোর্ট ও পুলিশের তদারকি থাকলেও তা ছিল খুবই সীমিত সময়ের জন্য। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি না মানার জন্য প্রশাসন মানুষের অসচেতনতাকে দায়ী করেছে।

উল্লেখ্য, চলমান লকডাউনে নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাট নির্ধারিত সময় পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা থাকলেও অন্যান্য দোকান ও শপিংমল পুরোপুরি বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সরকার গত ৫ এপ্রিল থেকে সাতদিনের জন্য গণপরিবহন চলাচল বন্ধসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ জারি করে। পরে তা আরও দুইদিন বাড়ানোর পর গত ১৪ এপ্রিল থেকে গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে সরকারি বিধিনিষেধ। বৃহস্পতিবার থেকে নতুন করে আরও সাতদিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। তবে বিধিনিষেধের সময় বাড়ালেও কিছু শর্ত শিথিল হতে পারে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সরকার দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেয়ার চিন্তা করছে।

বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১ , ৯ বৈশাখ ১৪২৮ ৯ রমজান ১৪৪২

সর্বাত্মক লকডাউন উপেক্ষিত

বাজারে জনসমাগম, সড়কে যানজট

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

রাজধানীর বনানীতে বিমানবন্দর সড়কে গতকাল দুপুরে ছিল প্রাইভেট কার জট। নানা অজুহাতে সড়কে নামছে কার -সংবাদ

দ্বিতীয় দফায় সর্বাত্মক লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বৃদ্ধির পর রাজধানীর সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, অটোরিকশার চলাচল আরও বেড়েছে। দিন যত গড়াচ্ছে ততই দুর্বল হয়ে পড়ছে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ। সর্বাত্মক কঠোর বিধিনিষেধের গতকাল অষ্টম দিনে নগরজুড়ে যানবাহনের ব্যাপক চলাচল দেখা গেছে। এছাড়া নগরীর অনেক এলাকায় ট্রাফিক সিগন্যাল পয়েন্টে যানজটও তৈরি হতে দেখা গেছে। শুধু বাস ছাড়া সব ধরনের পরিবহন চলাচল করছে। সড়কে গাড়ির চাপ বেশি থাকায় ট্রাফিক সিগন্যালে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। সেই তুলনায় পুলিশ চেক পোস্টগুলোতেও বিরাজ করছিল শীতলতা। এছাড়া করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে রাজধানীর বিভিন্ন হাটবাজার, দোকানপাট, উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি একেবারেই মানা হচ্ছে না। কেউ কেউ মানতে চাইলেও পাশের জনের অসচেতনতার কারণে মানা সম্ভব হচ্ছে না। বিধিনিষেধ মানতে মানুষকে বাধ্য করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও জোরালো তাৎপরতা নেই। ফলে সবকিছুতেই এক ধরনের শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে বের হলে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বাস্তবে দেখা মিলেছে উল্টো চিত্র। এতে করোনার সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গতকাল সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, জনসাধারণের অযাচিত ঘোরাফেরা বন্ধ করতে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকলেও তাদের তৎপর আর আগের মতো দেখা যাইনি। ছিল যদিও অনেকে দাবি করেছেন, জরুরি কাজে বেরিয়েও তাদের জরিমানার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কেউ কেউ আবার বের হয়েছেন কাজ ছাড়াও।

গতকাল রাজধানীর মিরপুর এলাকায় দেখা গেছে, কঠোর বিধিনিষেধ জারির শুরুতে সড়কে নির্দিষ্ট দূরত্বে পর পর পুলিশি চেকপোস্ট থাকলেও আস্তে আস্তে তা কমতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে সড়কে গণপরিবহন ছাড়া, অটোরিকশা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, রিকশা ও মাঝে মধ্যে বিআরটিসির বাস চলতে দেখা গেছে।

সকাল থেকে নগরীর ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে যানবাহনের ব্যাপক চাপ দেখা যায়। সকালে ফকিরাপুল ট্রাফিক সিগন্যালে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হয়েছে চলাচলরত যানবাহনকে। এ সময় ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, ভ্যান, সিএনজি ও মোটরসাইকেলসহ সবধরনের যানবাহন চলতে দেখা যায়।

একই চিত্র দেখা গেছে বাংলামোটর এলাকায়। সেখানেও যানবাহনের ভিড় ছিল। একইসঙ্গে আশপাশের ফুটপাতসহ অন্যান্য স্থানেও মানুষের ভিড় চোখে পড়েছে। কোথাও পুলিশের তৎপরতা দেখা যায়নি।

নগরীর শাজাহানপুর চেকপোস্টেও ছিল যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। এখানে রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়িই বেশি দেখা গেছে। পাশাপাশি মোটরসাইকেল ও সিএনজিও ছিল চোখে পড়ার মতো। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা যানবাহন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছিলেন।

সকালে নগরীর অনেক ট্রাফিক সিগন্যাল পয়েন্টে যানজটও তৈরি হয়। লকডাউনে চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন স্থানে বসানো পুলিশের চেকপোস্টে তৈরি হচ্ছে যানজট। চেকপোস্টের কারণে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে মানুষকে। এছাড়া কারখানা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় পরিবহন সংকটেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সড়কে অধিকাংশ মানুষ মাস্ক পরলেও কারও কারও মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদাসীনতা দেখা গেছে। গাড়ির চাপ সামলাতে লকডাউনের মধ্যেই সিগন্যালগুলোতে দেখা গেছে ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতাও।

তাদের ভাষ্য, দিন যত গড়াচ্ছে রাস্তায় গাড়ির চাপও তত বাড়ছে। অন্যদিকে, ব্যাপকহারে মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছেন। তাদের থামাতে জরিমানাও করছে ভ্রাম্যমাণ আদালতগুলো।

গতকাল রাজধানীর মিরপুর রোড এবং গাবতলী পুলিশ চেকপোস্টে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, ব্যাপকসংখ্যক গাড়ি এই চেকপোস্ট দিয়ে পার হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে প্রাইভেটকার। এসব গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করছে পুলিশ। এর পাশাপাশি রয়েছে মোটরসাইকেল এবং পণ্যবোঝাই ট্রাক। এছাড়া রাজধানীর সড়কগুলোতে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং বাইসাইকেলও ছিল চোখে পড়ার মতো।

গাবতলী চেকপোস্টে থাকা রাজধানীর দারুসসালাম থানার উপ-পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, যত গাড়ি এই পথ দিয়ে যাচ্ছে আমরা প্রত্যেককে চেষ্টা করছি জিজ্ঞেস করতে। কারণ অনেকে ভুয়া স্টিকার লাগিয়ে চলাচলের চেষ্টা করে। সেখান থেকে আমরা দেখেছি, কারও মুভমেন্ট পাস আছে, কেউ রপ্তানি পণ্যের কাজে বাইরে যাচ্ছে, কেউ ওষুধ কোম্পানির কাজে আবার কেউবা গার্মেন্টসের কাজে। শুধু তাই নয়, বেশিরভাগই বলছে সাভার থেকে সর্বোচ্চ আশুলিয়া পর্যন্ত যাবে। আসলে সত্যিকারার্থে তারা কতদূর যাবে, এটা বোঝা মুশকিল। তারা শুধু কাছে বলেই চেকপোস্টগুলো পার হচ্ছে। সময় যত যাচ্ছে, গাড়ির চাপ তত বাড়ছে। তবে কোন গণপরিবহন চলছে না। নিজস্ব পরিবহনগুলো নিজস্ব প্রয়োজনে চলছে।

এদিকে, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। সেখানে ব্যক্তিগত সিএনজিতে তিনজন গাদাগাদি করে যাওয়ায় তিন সিএনজিচালককে জরিমানা করা হয়। সেই সঙ্গে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া একই মোটরসাইকেলে দুজন, বিভিন্ন গাড়িতে গাদাগাদি করে লোক এবং সরকারের আদেশ অমান্য করে কোন যানবাহন চলাচল করছে কিনা, সে বিষয়গুলো তদারকি করতেই এখানে এই আদালত বসিয়েছে বিআরটিএ।

পুরান ঢাকার এক বাসিন্দা বলেন, কঠোর লকডাউন হলেও রাস্তায় সবকিছুই চলছে। শুধু বাস ছাড়া আর বাস না চলায় প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল চালকরা একপ্রকার ডাকাতি শুরু করেছে। আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তারা কয়েক গুণ বেশি ভাড়া চাচ্ছে। আমি মহাখালী যাব। সিএনজি বলছে ৫০০ টাকার নিচে যাবে না। আর বাইকাররা বলছে ৪০০ টাকা লাগবে। সবই যেহেতু চলছে, তাহলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চললে অন্তত আমাদের মতো যাত্রীদের পকেট কাটা যেতো না।

অন্যদিকে, কঠোর বিধিনিষেধের অষ্টম দিনেও ঢাকা ছাড়ছে কর্মজীবী মানুষ। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় শুরু থেকেই প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস বা মোটরসাইকেলে করে যাত্রীরা ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে এসব পরিবহনের ভাড়া বেশি হওয়ায় এখন অনেকেই ট্রাক বা পিকআপে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। যাত্রীরা বলছেন, ট্রাক বা পিকআপের ভাড়া অন্যান্য পরিবহনের তুলনায় অনেক কম। তাই কম টাকায় বাড়ি যাওয়ার মাধ্যম হিসেবে ট্রাকই ভরসা। গাবতলী গরুর হাটসংলগ্ন এলাকায় পুলিশের কড়া নজরদারি থাকায় বেশিরভাগ যাত্রী আমিনবাজার ব্রিজের ওপরে গিয়ে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল কিংবা পিকআপে করে বাড়ি ফিরছেন।

সরকারের নির্দেশনায় খোলা স্থানে কাঁচাবাজার স্থাপনের নির্দেশ থাকলেও তা মানা হয়নি। সিটি করপোরেশনের কাঠামোতেই কাঁচাবাজারসহ নিত্যপণ্যের বাজার বসছে। এতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। পাড়া-মহল্লা, এমনকি উন্মুক্ত স্থানেও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। মাস্ক পরা তো দূরের কথা মানা হচ্ছে না কোন ধরনের সামাজিক দূরত্ব। হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা রাখলেও বসে খেতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কিন্তু এগুলোতে বসে খেতে দেখা গেছে।

রাজধানীর গ্রিন রোড ছাড়াও কলাবাগান, পান্থপথ ও বাংলামোটর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনেক দোকানেই বিক্রি চলছে। এসব দোকানের ভেতরে একজনকে রেখে সামনে দোকানি ও কর্মচারীরা ঘোরাফেরা করেন। কোন ক্রেতা এলে তারা দ্রুত শাটার খুলে মালামাল বিক্রি করে আবার বন্ধ করে দেন। স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষকে বাধ্য করতে প্রশাসনের তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। কিছু স্থানে মোবাইল কোর্ট ও পুলিশের তদারকি থাকলেও তা ছিল খুবই সীমিত সময়ের জন্য। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি না মানার জন্য প্রশাসন মানুষের অসচেতনতাকে দায়ী করেছে।

উল্লেখ্য, চলমান লকডাউনে নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাট নির্ধারিত সময় পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা থাকলেও অন্যান্য দোকান ও শপিংমল পুরোপুরি বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সরকার গত ৫ এপ্রিল থেকে সাতদিনের জন্য গণপরিবহন চলাচল বন্ধসহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ জারি করে। পরে তা আরও দুইদিন বাড়ানোর পর গত ১৪ এপ্রিল থেকে গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে সরকারি বিধিনিষেধ। বৃহস্পতিবার থেকে নতুন করে আরও সাতদিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। তবে বিধিনিষেধের সময় বাড়ালেও কিছু শর্ত শিথিল হতে পারে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সরকার দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেয়ার চিন্তা করছে।