দৈনিক সংক্রমণে বিশ্বরেকর্ড

ভারতে একদিনে মৃত্যু দু’হাজার ছাড়ালো

২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত প্রায় ৩ লাখ

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় রীতিমতো কাঁপছে ভারত। দেশটিতে ভয়াবহভাবে বেড়েই চলেছে ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। গত কয়েকদিন ধরে দেশটির দৈনিক করোনা সংক্রমণ দুই লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সেই সংখ্যা পৌঁছেছে তিন লাখের কাছাকাছি। এক দিনে আক্রান্তের এই সংখ্যা শুধু ভারতে নয় বিশ্বেও সর্বোচ্চ। আনন্দবাজার

একইসঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। ভারতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে বাড়তে গত কয়েকদিনে তা হাজারের ঘর পেরিয়েছে, কিন্তু সেই সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই হাজারের ঘর। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মারা গেছেন রেকর্ড ২ হাজার ২৩ জন।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ২ লাখ ৯৫ হাজার ৪১ জন। যা গত মঙ্গলবারের তুলনায় প্রায় ৩৬ হাজার বেশি। সংক্রমণের এ রেকর্ড বৃদ্ধিতে দেশটিতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখের ঘর। মোট আক্রান্তের দিক দিয়ে বিশ্বে আমেরিকার পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত।

মঙ্গলবার দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ৭৬১ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হলেও গতকাল সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৩ জনে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৩ জনে।

দৈনিক বিপুলসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার কারণে ভারতে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে সক্রিয় রোগী বেড়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৬১ জন। দেশটিতে এখন মোট সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৩৮ জন। যদিও এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে দেশটিতে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা কমে দেড় লাখের নিচে চলে এসেছিল।

কিন্তু এরপর রোগী বাড়তে বাড়তে তা সাড়ে ২১ লাখ ছাড়িয়েছে। ফলে হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সুযোগ ক্রমেই কমে আসছে। অনেক ক্ষেত্রেই একই শয্যায় একাধিক রোগীকে শুয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। অক্সিজেনেরও অভাব সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি। অনেক জায়গায়ই অস্থায়ী করোনা সেন্টার তৈরি করে পরিস্থিতি মোবাবিলার চেষ্টা চালাচ্ছে বিভিন্ন রাজ্য সরকার।

সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউনও জারি করা হয়েছে। রাজধানী দিল্লিতে সোমবার থেকে চলছে লকডাউন। মহারাষ্ট্রেও ‘করোনা কারফিউ’ চলছে। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে সপ্তাহান্তে চলছে লকডাউন। রাত্রিকালীন কারফিউ জারি হয়েছে দেশের বিভিন্ন শহরে।

পরিসংখ্যানবিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে করোনায় মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৫৭০ জনের। আর ১ কোটি ৫৬ লাখ ৯ হাজার ৪ জনের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পরই এখন ভারতের অবস্থান।

ভারতে করোনায় বিপর্যস্ত রাজ্য মহারাষ্ট্রে ৬২ হাজার ৯৭ জনের দেহে ভাইরাস শনাক্ত হয়। ওই দিন রাজ্যে ৫১৯ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়।

মহারাষ্ট্রে এরই মধ্যে করোনার বিস্তার রোধে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তবে দৈনিক সংক্রমণ যে মাত্রায় বাড়ছে, তাতে আরও কড়া ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের কাছে পুরোপুরি লকডাউনের সুপারিশ করেছে। এখন মুখ্যমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

মহারাষ্ট্রের পর ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালা, কর্নাটক, তামিলনাড়– ও অন্ধ্রপ্রদেশে শনাক্তের হার বেশি।

রাজধানী দিল্লিতে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ২৮ হাজার ৩৯৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। কেরালায় ১৯ হাজার ৫৭৭ জনের দেহে ভাইরাসটি পাওয়া যায়। রাজ্যে সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয় ২৮ জনের।

কর্নাটক রাজ্যে মঙ্গলবার রেকর্ড ২১ হাজার ৭৯৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। রাজ্য সরকার করোনা পরিস্থিতি সামলাতে এরই মধ্যে সপ্তাহব্যাপী নৈশ কারফিউর ঘোষণা দিয়েছে। এ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

এদিকে এক ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্য সরকারগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘লকডাউন থেকে দেশকে বাঁচানো জরুরি। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ কাজে না এলেই শুধু লকডাউন দিন।’

বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১ , ৯ বৈশাখ ১৪২৮ ৯ রমজান ১৪৪২

দৈনিক সংক্রমণে বিশ্বরেকর্ড

ভারতে একদিনে মৃত্যু দু’হাজার ছাড়ালো

২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত প্রায় ৩ লাখ

image

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় রীতিমতো কাঁপছে ভারত। দেশটিতে ভয়াবহভাবে বেড়েই চলেছে ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। গত কয়েকদিন ধরে দেশটির দৈনিক করোনা সংক্রমণ দুই লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সেই সংখ্যা পৌঁছেছে তিন লাখের কাছাকাছি। এক দিনে আক্রান্তের এই সংখ্যা শুধু ভারতে নয় বিশ্বেও সর্বোচ্চ। আনন্দবাজার

একইসঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। ভারতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে বাড়তে গত কয়েকদিনে তা হাজারের ঘর পেরিয়েছে, কিন্তু সেই সংখ্যা ছাড়িয়েছে দুই হাজারের ঘর। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মারা গেছেন রেকর্ড ২ হাজার ২৩ জন।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ২ লাখ ৯৫ হাজার ৪১ জন। যা গত মঙ্গলবারের তুলনায় প্রায় ৩৬ হাজার বেশি। সংক্রমণের এ রেকর্ড বৃদ্ধিতে দেশটিতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখের ঘর। মোট আক্রান্তের দিক দিয়ে বিশ্বে আমেরিকার পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত।

মঙ্গলবার দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ৭৬১ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হলেও গতকাল সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৩ জনে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৩ জনে।

দৈনিক বিপুলসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার কারণে ভারতে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে সক্রিয় রোগী বেড়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৬১ জন। দেশটিতে এখন মোট সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৩৮ জন। যদিও এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে দেশটিতে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা কমে দেড় লাখের নিচে চলে এসেছিল।

কিন্তু এরপর রোগী বাড়তে বাড়তে তা সাড়ে ২১ লাখ ছাড়িয়েছে। ফলে হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সুযোগ ক্রমেই কমে আসছে। অনেক ক্ষেত্রেই একই শয্যায় একাধিক রোগীকে শুয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। অক্সিজেনেরও অভাব সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি। অনেক জায়গায়ই অস্থায়ী করোনা সেন্টার তৈরি করে পরিস্থিতি মোবাবিলার চেষ্টা চালাচ্ছে বিভিন্ন রাজ্য সরকার।

সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউনও জারি করা হয়েছে। রাজধানী দিল্লিতে সোমবার থেকে চলছে লকডাউন। মহারাষ্ট্রেও ‘করোনা কারফিউ’ চলছে। উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে সপ্তাহান্তে চলছে লকডাউন। রাত্রিকালীন কারফিউ জারি হয়েছে দেশের বিভিন্ন শহরে।

পরিসংখ্যানবিষয়ক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে করোনায় মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৫৭০ জনের। আর ১ কোটি ৫৬ লাখ ৯ হাজার ৪ জনের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পরই এখন ভারতের অবস্থান।

ভারতে করোনায় বিপর্যস্ত রাজ্য মহারাষ্ট্রে ৬২ হাজার ৯৭ জনের দেহে ভাইরাস শনাক্ত হয়। ওই দিন রাজ্যে ৫১৯ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়।

মহারাষ্ট্রে এরই মধ্যে করোনার বিস্তার রোধে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তবে দৈনিক সংক্রমণ যে মাত্রায় বাড়ছে, তাতে আরও কড়া ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের কাছে পুরোপুরি লকডাউনের সুপারিশ করেছে। এখন মুখ্যমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

মহারাষ্ট্রের পর ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালা, কর্নাটক, তামিলনাড়– ও অন্ধ্রপ্রদেশে শনাক্তের হার বেশি।

রাজধানী দিল্লিতে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ২৮ হাজার ৩৯৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। কেরালায় ১৯ হাজার ৫৭৭ জনের দেহে ভাইরাসটি পাওয়া যায়। রাজ্যে সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয় ২৮ জনের।

কর্নাটক রাজ্যে মঙ্গলবার রেকর্ড ২১ হাজার ৭৯৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। রাজ্য সরকার করোনা পরিস্থিতি সামলাতে এরই মধ্যে সপ্তাহব্যাপী নৈশ কারফিউর ঘোষণা দিয়েছে। এ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

এদিকে এক ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্য সরকারগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘লকডাউন থেকে দেশকে বাঁচানো জরুরি। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ কাজে না এলেই শুধু লকডাউন দিন।’