স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ থেকে গণপরিবহন চালু করতে চান শ্রমিক নেতারা

আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চালুর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। সারাদেশে যাত্রীবাহী বাস চলাচলের এই দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, পরিবহন খাতের আরও কয়েকজন নেতা ২২ এপ্রিল থেকে সড়কে গণপরিবহন চালুর জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে চাপ তৈরি করে চলেছেন। করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারি নির্দেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। জরুরি সেবাদানে জড়িত চিকিৎসক ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের পরিবহন করছে বিআরটিসির বাস। তবে পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল করছে।

এ অবস্থায় বাস ও মিনিবাস মালিক ও শ্রমিকরা কর্মহীন রয়েছেন। বিষয়টি তুলে ধরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে- দেশের অর্থনীতির অন্যতম খাত পরিবহন শ্রমিকদের এই দুঃসময়ে প্রধানমন্ত্রী আপনাকে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই। করোনার সংক্রমণকে বিশ্বব্যাপী সমস্যার অংশ হিসেবে দেখে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ এবং করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের চলমান প্রচেষ্টাকে সফল করার পাশাপাশি, দুর্যোগ পরবর্তী অর্থনীতি সচল করতে এই শ্রমজীবীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করাও জরুরি। কাজেই পরিবহন শ্রমিকদের রক্ষা করতে দেশব্যাপী ক্রিয়াশীল ট্রেড ইউনিয়ন থেকে তালিকা সংগ্রহ করে তালিকাভুক্ত কর্মহীন পরিবহন শ্রমিকদের জন্য বাস ও ট্রাক টার্মিনালগুলোতে ত্রাণ, আর্থিক অনুদান বা ওএমএস এর পণ্য সরবরাহ অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আগামী ২২ এপ্রিল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলার নির্দেশ দিলে সারাদেশের ৫০ লাখ পরিবহন শ্রমিক কৃতজ্ঞ থাকবে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় জনসমাগম এড়াতে প্রথমে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। পরে এ বিধিনিষেধ আরও দুই দিন বাড়িয়ে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। তবে সে সময় সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্পকারখানা, গণপরিবহন চালু ছিল। এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য অফিস ও সব ধরনের পরিবহন এবং শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ রাখা ছাড়াও বিভিন্ন ইস্যুতে বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। তবে শিল্প-কারখানার কার্যক্রমের বিষয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি।

মঙ্গলবার বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও ৭ দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধ আরোপের সময়সীমা আগামী ২১ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো।

এদিকে, লকডাউনে কর্মহীন, দরিদ্র এবং অসহায় পরিবহনের চালক-শ্রমিকদের ত্রাণ ও নামমাত্র মূল্যে রেশন বিতরণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই দাবি জানান। তিনি বলেন, দেশে পরিবহন সেক্টরকে শিল্পখাত হিসেবে ঘোষণা করে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হলেও এটি এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। এই সেক্টরের ৯৮ শতাংশ চালক-শ্রমিকের নিয়োগপত্র ও সুনির্দিষ্ট বেতন নেই। ফলে তাদের বেশিরভাগই দৈনিক মজুরি পদ্ধতিতে জীবনযাপন করে।

বছরব্যাপী করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘ সময় লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ ছিল। পরে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালুর কয়েক মাসের মাথায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। তাই পুনরায় লকডাউনে এসব অসহায় পরিবহন-শ্রমিকরা আজ অনেকেই অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন। রাজপথে হুইসেল বাজিয়ে বা লাঠি নিয়ে যানবাহন আটকে মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নামে যারা প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি করত, তারাও আজ এসব শ্রমিকদের পাশে নেই। এমন পরিস্থিতিতে অসহায় পরিবহন শ্রমিকদের জীবন বাঁচাতে তাদের ত্রাণ সহায়তা ও নামমাত্র মূল্যে রেশনের দাবি জানিয়েছেন মোজাম্মেল হক। একই সঙ্গে মালিক-শ্রমিক সংগঠন এবং দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের অসহায় পরিবহন শ্রমিকদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

আরও খবর
পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন : পাল্টাচ্ছে প্রচারণার কৌশল তবে প্রাধান্য বিভেদের
লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্রদের জন্য সাড়ে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রধানমন্ত্রীর
দুর্যোগ-সংকটে ‘লিপ সার্ভিস’ নয় বিএনপিকে কাদের
রাত পোহালেই ৬ষ্ঠ দফা ভোট
জনপ্রতি ফিতরা সর্বোচ্চ ২৩১০ সর্বনিম্ন ৭০ টাকা
চলে গেলেন নববিনির্মাণের স্রষ্টা কবি শঙ্খ ঘোষ
শাকিল-সাইফুলদের দিন আর ফেরে না
লকডাউনে সুযোগ নিচ্ছে ভূমিদস্যু খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণ
হেফাজত নেতা সাখাওয়াত ও মঞ্জুরুল ২১ দিনের রিমান্ডে
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে প্রত্যাশিত কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি স্কপের
ধর্ম, জাত, পরিচয়ই কি নিয়ামক?

বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১ , ৯ বৈশাখ ১৪২৮ ৯ রমজান ১৪৪২

স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ থেকে গণপরিবহন চালু করতে চান শ্রমিক নেতারা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চালুর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। সারাদেশে যাত্রীবাহী বাস চলাচলের এই দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, পরিবহন খাতের আরও কয়েকজন নেতা ২২ এপ্রিল থেকে সড়কে গণপরিবহন চালুর জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে চাপ তৈরি করে চলেছেন। করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারি নির্দেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। জরুরি সেবাদানে জড়িত চিকিৎসক ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের পরিবহন করছে বিআরটিসির বাস। তবে পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল করছে।

এ অবস্থায় বাস ও মিনিবাস মালিক ও শ্রমিকরা কর্মহীন রয়েছেন। বিষয়টি তুলে ধরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে- দেশের অর্থনীতির অন্যতম খাত পরিবহন শ্রমিকদের এই দুঃসময়ে প্রধানমন্ত্রী আপনাকে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই। করোনার সংক্রমণকে বিশ্বব্যাপী সমস্যার অংশ হিসেবে দেখে পরিবহন শ্রমিকদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ এবং করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের চলমান প্রচেষ্টাকে সফল করার পাশাপাশি, দুর্যোগ পরবর্তী অর্থনীতি সচল করতে এই শ্রমজীবীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করাও জরুরি। কাজেই পরিবহন শ্রমিকদের রক্ষা করতে দেশব্যাপী ক্রিয়াশীল ট্রেড ইউনিয়ন থেকে তালিকা সংগ্রহ করে তালিকাভুক্ত কর্মহীন পরিবহন শ্রমিকদের জন্য বাস ও ট্রাক টার্মিনালগুলোতে ত্রাণ, আর্থিক অনুদান বা ওএমএস এর পণ্য সরবরাহ অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আগামী ২২ এপ্রিল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলার নির্দেশ দিলে সারাদেশের ৫০ লাখ পরিবহন শ্রমিক কৃতজ্ঞ থাকবে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় জনসমাগম এড়াতে প্রথমে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। পরে এ বিধিনিষেধ আরও দুই দিন বাড়িয়ে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। তবে সে সময় সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্পকারখানা, গণপরিবহন চালু ছিল। এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য অফিস ও সব ধরনের পরিবহন এবং শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ রাখা ছাড়াও বিভিন্ন ইস্যুতে বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। তবে শিল্প-কারখানার কার্যক্রমের বিষয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি।

মঙ্গলবার বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও ৭ দিন বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধ আরোপের সময়সীমা আগামী ২১ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো।

এদিকে, লকডাউনে কর্মহীন, দরিদ্র এবং অসহায় পরিবহনের চালক-শ্রমিকদের ত্রাণ ও নামমাত্র মূল্যে রেশন বিতরণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই দাবি জানান। তিনি বলেন, দেশে পরিবহন সেক্টরকে শিল্পখাত হিসেবে ঘোষণা করে হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হলেও এটি এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। এই সেক্টরের ৯৮ শতাংশ চালক-শ্রমিকের নিয়োগপত্র ও সুনির্দিষ্ট বেতন নেই। ফলে তাদের বেশিরভাগই দৈনিক মজুরি পদ্ধতিতে জীবনযাপন করে।

বছরব্যাপী করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘ সময় লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ ছিল। পরে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালুর কয়েক মাসের মাথায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। তাই পুনরায় লকডাউনে এসব অসহায় পরিবহন-শ্রমিকরা আজ অনেকেই অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন। রাজপথে হুইসেল বাজিয়ে বা লাঠি নিয়ে যানবাহন আটকে মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নামে যারা প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি করত, তারাও আজ এসব শ্রমিকদের পাশে নেই। এমন পরিস্থিতিতে অসহায় পরিবহন শ্রমিকদের জীবন বাঁচাতে তাদের ত্রাণ সহায়তা ও নামমাত্র মূল্যে রেশনের দাবি জানিয়েছেন মোজাম্মেল হক। একই সঙ্গে মালিক-শ্রমিক সংগঠন এবং দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের অসহায় পরিবহন শ্রমিকদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।