অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি স্কপের

নিজেদের জীবন হারানোর মতো ঝুঁকি তৈরি হওয়া ছাড়া পুলিশ নির্বিচারে গুলি করতে পারে না। এস আলম গ্রুপের ভাড়াটিয়া কোন বাহিনীর দায় পুলিশকে সামনে এনে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে কিনা, সেটি এখন সংশয়ের বিষয়। যদি ওই শ্রমিকদের বুকে পুলিশ গুলি চালিয়ে থাকে তাহলে খুনের অপরাধে পুলিশের ওই সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

বাঁশখালীর গ-ামারায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচ শ্রমিককে হত্যার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে শ্রমিক হয়রানি বন্ধ, নিহত শ্রমিকদের আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ, আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত ১০ দফা দাবি মেনে নেয়ারও দাবি জানায় সংগঠনটি।

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, এস আলম গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ, রোজার মধ্যে ১০ ঘণ্টার পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস বাস্তবায়ন, শুক্রবারের ডিউটির সময় ৮ ঘণ্টার পরিবর্তে ৪ ঘণ্টা নির্ধারণসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছিল। বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকের প্রতিনিধিরা আগের দিন শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়ে পরদিন তা অস্বীকার করায় শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। কাজে যোগদানে কর্তৃপক্ষ শক্তি প্রয়োগ করলে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা। ওই সময় নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫ জনকে হত্যা এবং অর্ধশতাধিক শ্রমিককে আহত করা হয়।

তারা আরও বলেন, তবে তদন্ত ছাড়াই ঘটনা প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের ভূমিকা দেখে মনে হচ্ছে, তারা প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন। তাই প্রশাসন বা পুলিশের তদন্ত নয়, প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন ও অপরাধীদের চিহ্নিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। দেশের দ্বিতীয় প্রধান শিল্প শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে শ্রম আইন লঙ্ঘন করে কর্মকা- পরিচালনার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রম দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভূমিকা কী ছিল তাও তদন্ত করে দেখতে হবে।

বক্তারা বলেন, একই প্রকল্পে ৫ বছর আগেও গুলি করে চারজন মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। পুলিশের ব্যর্থতার কারণে সেই হত্যাকা-ের বিচার হয়নি। তিন লাখ টাকা নয়, নিহত শ্রমিকদের পরিবারপ্রতি আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুসারে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্তত ১০ দফা মেনে নিতে হবে। অধিক স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে শ্রমিকদের রক্ষা করতে শ্রম আইনের কর্মঘণ্টা সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো স্থগিত করে জারি করা প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। একইসঙ্গে করোনা সংকটে কর্মহীন প্রকৃত শ্রমজীবীদের হাতে সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন স্কপের যুগ্ম-সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শহিদুল্লাহ চৌধুরী, স্কপ নেতা ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কামরুল আহসান, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল হক আমিন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম, জাতীয় শ্রমিক লীগের ট্রেড ইউনিয়নবিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ হোসেন, জাতীয় শ্রমিক জোটের যুগ্ম সম্পাদক সালেক আহমেদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল প্রমুখ।

আরও খবর
পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন : পাল্টাচ্ছে প্রচারণার কৌশল তবে প্রাধান্য বিভেদের
লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্রদের জন্য সাড়ে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রধানমন্ত্রীর
দুর্যোগ-সংকটে ‘লিপ সার্ভিস’ নয় বিএনপিকে কাদের
রাত পোহালেই ৬ষ্ঠ দফা ভোট
জনপ্রতি ফিতরা সর্বোচ্চ ২৩১০ সর্বনিম্ন ৭০ টাকা
চলে গেলেন নববিনির্মাণের স্রষ্টা কবি শঙ্খ ঘোষ
শাকিল-সাইফুলদের দিন আর ফেরে না
স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ থেকে গণপরিবহন চালু করতে চান শ্রমিক নেতারা
লকডাউনে সুযোগ নিচ্ছে ভূমিদস্যু খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণ
হেফাজত নেতা সাখাওয়াত ও মঞ্জুরুল ২১ দিনের রিমান্ডে
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে প্রত্যাশিত কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
ধর্ম, জাত, পরিচয়ই কি নিয়ামক?

বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১ , ৯ বৈশাখ ১৪২৮ ৯ রমজান ১৪৪২

বাঁশখালীতে শ্রমিক খুন

অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি স্কপের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

নিজেদের জীবন হারানোর মতো ঝুঁকি তৈরি হওয়া ছাড়া পুলিশ নির্বিচারে গুলি করতে পারে না। এস আলম গ্রুপের ভাড়াটিয়া কোন বাহিনীর দায় পুলিশকে সামনে এনে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে কিনা, সেটি এখন সংশয়ের বিষয়। যদি ওই শ্রমিকদের বুকে পুলিশ গুলি চালিয়ে থাকে তাহলে খুনের অপরাধে পুলিশের ওই সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

বাঁশখালীর গ-ামারায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচ শ্রমিককে হত্যার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে শ্রমিক হয়রানি বন্ধ, নিহত শ্রমিকদের আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ, আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত ১০ দফা দাবি মেনে নেয়ারও দাবি জানায় সংগঠনটি।

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, এস আলম গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ, রোজার মধ্যে ১০ ঘণ্টার পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস বাস্তবায়ন, শুক্রবারের ডিউটির সময় ৮ ঘণ্টার পরিবর্তে ৪ ঘণ্টা নির্ধারণসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছিল। বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকের প্রতিনিধিরা আগের দিন শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়ে পরদিন তা অস্বীকার করায় শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। কাজে যোগদানে কর্তৃপক্ষ শক্তি প্রয়োগ করলে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা। ওই সময় নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫ জনকে হত্যা এবং অর্ধশতাধিক শ্রমিককে আহত করা হয়।

তারা আরও বলেন, তবে তদন্ত ছাড়াই ঘটনা প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের ভূমিকা দেখে মনে হচ্ছে, তারা প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন। তাই প্রশাসন বা পুলিশের তদন্ত নয়, প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন ও অপরাধীদের চিহ্নিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। দেশের দ্বিতীয় প্রধান শিল্প শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে শ্রম আইন লঙ্ঘন করে কর্মকা- পরিচালনার পরিপ্রেক্ষিতে শ্রম দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভূমিকা কী ছিল তাও তদন্ত করে দেখতে হবে।

বক্তারা বলেন, একই প্রকল্পে ৫ বছর আগেও গুলি করে চারজন মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। পুলিশের ব্যর্থতার কারণে সেই হত্যাকা-ের বিচার হয়নি। তিন লাখ টাকা নয়, নিহত শ্রমিকদের পরিবারপ্রতি আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুসারে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্তত ১০ দফা মেনে নিতে হবে। অধিক স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে শ্রমিকদের রক্ষা করতে শ্রম আইনের কর্মঘণ্টা সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো স্থগিত করে জারি করা প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। একইসঙ্গে করোনা সংকটে কর্মহীন প্রকৃত শ্রমজীবীদের হাতে সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন স্কপের যুগ্ম-সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শহিদুল্লাহ চৌধুরী, স্কপ নেতা ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কামরুল আহসান, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল হক আমিন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম, জাতীয় শ্রমিক লীগের ট্রেড ইউনিয়নবিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ হোসেন, জাতীয় শ্রমিক জোটের যুগ্ম সম্পাদক সালেক আহমেদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল প্রমুখ।