অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে সচেতনতার বিকল্প নেই

শীতকাল শেষ হয়ে বসন্তের শুষ্ক মৌসুম শুরু হয়েছে এবং সামনে আসছে গ্রীষ্মকাল পুরোটাই শুষ্ক মৌসুম। দেশে সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটে। কারণ এ সময় সবকিছু বেশ দাহ্য থাকে। এ সময় সামান্য আগুনেই সবকিছু দাউদাউ করে জ্বলে এবং চারদিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিগত বছরগুলোতে রাজধানীসহ সারাদেশে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন দুর্যোগের মধ্যে অগ্নিকাণ্ড অন্যতম এবং অগ্নিকাণ্ডের ফলে অল্পসময়ের মধ্যে নিমিষেই ধ্বংস হয়ে যায় বহু মূল্যবান সম্পদ, ঘটে প্রাণহানি।

এক সময় পাট ও তুলার গুদামে বেশ আগুন লাগার খবর পাওয়া যেত। এখন বেশি আগুন লাগে মার্কেট ও গার্মেন্টসে। তাও প্রধানত রাজধানী ও আশপাশে। এমনকি অত্যাধুনিক ও ডিজিটাল বলে দাবিদার সুপার মার্কেটেও একাধিকবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তীতে তদন্তে দেখা যায়, বহু আধুনিক মার্কেটেও মেটাল ডিটেক্টরসহ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই; এমনকি পানিও না। আসলে জরুরি অবস্থা ও ব্যবস্থার কোনো ধারণাই গড়ে ওঠেনি ভবন নির্মাণসহ অগ্নিনির্বাপণ কিংবা অন্যবিধ দুর্ঘটনা মোকাবেলায়। এ বিষয়ে কারও কোনো প্রশিক্ষণও নেই বললেই চলে। যে কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিপুল প্রাণহানিসহ সম্পদের ক্ষতি দেখে যাওয়া ছাড়া আর যেন কিছুই করার নেই। এ অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।

এসব দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে, যার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যথাসাধ্য সীমিত অবস্থায় থাকে। তাদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখ্য। প্রতিটি দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়, তার মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে করণীয় নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

তবে অগ্নিকাণ্ড যখন কোনও জনবহুল এলাকা বা শিল্প-কারখানাতে ঘটে, তখনই আগুনের ভয়াবহতা আমাদেরকে নাড়া দেয়, কর্তৃপক্ষও নড়েচড়ে বসে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঢাকার চকবাজারস্থ চুড়িহাট্টা ও বনানীর এফ আর টাওয়ারের ঘটনা পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে শুধুমাত্র চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে মারা যায় ৭২ জন এবং বনানীর এফআর টাওয়ারে ২৮ জন।

অগ্নিকাণ্ডের প্রধান কারণসমূহের মধ্যে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ ও জরুরি নির্গমন বিষয়ে জ্ঞান না থাকা, দাহ্য ও বিস্ফোরক পদার্থের অনুমোদনহীন গুদামজাতকরণ। এছাড়া শহর ও গ্রামে রান্নার পর আগুন সম্পূর্ণ নিভিয়ে না দিলে, বাতাসে উড়ে গিয়ে সেই আগুন বাড়ির বেড়ায় লাগতে পারে; ছাইয়ের আগুন বাতাসে উড়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে; চুলার উপর খড়ি শুকাতে দিলে খড়িতে আগুন লেগে যেতে পারে, সে আগুন বাড়িঘর পুড়িয়ে দিতে পারে; সিগারেট, বিড়ি ও হুঁকার আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে বলে বিভিন্ন তদন্তে প্রমাণিত।

শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে বিশেষ সতর্কতায় থাকে। তবে শুধুমাত্র তাদের উপরে ভরসা না করে অগ্নিকাণ্ডের উপরোক্ত কারণগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখে বুঝে জনগণকে সদা সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। তাহলেই সম্ভাব্য অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষা পেতে পারে বহু মূল্যবান সহায় সম্পত্তি ও জানমাল।

জিল্লুর রহমান

সতিশ সরকার রোড, গেন্ডারিয়া, ঢাকা।

বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল ২০২১ , ৯ বৈশাখ ১৪২৮ ৯ রমজান ১৪৪২

অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে সচেতনতার বিকল্প নেই

শীতকাল শেষ হয়ে বসন্তের শুষ্ক মৌসুম শুরু হয়েছে এবং সামনে আসছে গ্রীষ্মকাল পুরোটাই শুষ্ক মৌসুম। দেশে সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটে। কারণ এ সময় সবকিছু বেশ দাহ্য থাকে। এ সময় সামান্য আগুনেই সবকিছু দাউদাউ করে জ্বলে এবং চারদিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিগত বছরগুলোতে রাজধানীসহ সারাদেশে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন দুর্যোগের মধ্যে অগ্নিকাণ্ড অন্যতম এবং অগ্নিকাণ্ডের ফলে অল্পসময়ের মধ্যে নিমিষেই ধ্বংস হয়ে যায় বহু মূল্যবান সম্পদ, ঘটে প্রাণহানি।

এক সময় পাট ও তুলার গুদামে বেশ আগুন লাগার খবর পাওয়া যেত। এখন বেশি আগুন লাগে মার্কেট ও গার্মেন্টসে। তাও প্রধানত রাজধানী ও আশপাশে। এমনকি অত্যাধুনিক ও ডিজিটাল বলে দাবিদার সুপার মার্কেটেও একাধিকবার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তীতে তদন্তে দেখা যায়, বহু আধুনিক মার্কেটেও মেটাল ডিটেক্টরসহ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই; এমনকি পানিও না। আসলে জরুরি অবস্থা ও ব্যবস্থার কোনো ধারণাই গড়ে ওঠেনি ভবন নির্মাণসহ অগ্নিনির্বাপণ কিংবা অন্যবিধ দুর্ঘটনা মোকাবেলায়। এ বিষয়ে কারও কোনো প্রশিক্ষণও নেই বললেই চলে। যে কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিপুল প্রাণহানিসহ সম্পদের ক্ষতি দেখে যাওয়া ছাড়া আর যেন কিছুই করার নেই। এ অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।

এসব দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে, যার কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যথাসাধ্য সীমিত অবস্থায় থাকে। তাদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখ্য। প্রতিটি দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়, তার মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে করণীয় নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

তবে অগ্নিকাণ্ড যখন কোনও জনবহুল এলাকা বা শিল্প-কারখানাতে ঘটে, তখনই আগুনের ভয়াবহতা আমাদেরকে নাড়া দেয়, কর্তৃপক্ষও নড়েচড়ে বসে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঢাকার চকবাজারস্থ চুড়িহাট্টা ও বনানীর এফ আর টাওয়ারের ঘটনা পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে শুধুমাত্র চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে মারা যায় ৭২ জন এবং বনানীর এফআর টাওয়ারে ২৮ জন।

অগ্নিকাণ্ডের প্রধান কারণসমূহের মধ্যে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ ও জরুরি নির্গমন বিষয়ে জ্ঞান না থাকা, দাহ্য ও বিস্ফোরক পদার্থের অনুমোদনহীন গুদামজাতকরণ। এছাড়া শহর ও গ্রামে রান্নার পর আগুন সম্পূর্ণ নিভিয়ে না দিলে, বাতাসে উড়ে গিয়ে সেই আগুন বাড়ির বেড়ায় লাগতে পারে; ছাইয়ের আগুন বাতাসে উড়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে; চুলার উপর খড়ি শুকাতে দিলে খড়িতে আগুন লেগে যেতে পারে, সে আগুন বাড়িঘর পুড়িয়ে দিতে পারে; সিগারেট, বিড়ি ও হুঁকার আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে বলে বিভিন্ন তদন্তে প্রমাণিত।

শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে বিশেষ সতর্কতায় থাকে। তবে শুধুমাত্র তাদের উপরে ভরসা না করে অগ্নিকাণ্ডের উপরোক্ত কারণগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখে বুঝে জনগণকে সদা সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। তাহলেই সম্ভাব্য অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষা পেতে পারে বহু মূল্যবান সহায় সম্পত্তি ও জানমাল।

জিল্লুর রহমান

সতিশ সরকার রোড, গেন্ডারিয়া, ঢাকা।