তৃতীয় ঢেউয়ের শঙ্কা সামাল দেয়া যাবে না বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্বাস্থ্যবিধি না মানায় দেশে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এই পরিস্থিতে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তিনি। আসহায়ত্ব প্রকাশ করে তিনি বলেন, বারবার এমন পরিস্থিতি হলে তা সামাল দেয়া ‘সম্ভব হবে না’।

গতকাল জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ উপলক্ষে ভার্চুয়া?ল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই আশঙ্কার কথা বলেন তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কত চিকিৎসা দেব? কত বেড, কত হাইফ্লো নজেল ক্যানোলা বাড়াব? কত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করব? হাসপাতাল ও হাসপাতালের বেড রাতারাতি বাড়ানো যায় না। তারপরও আমরা আড়াই হাজার বেড থেকে ৭-৮ হাজার বেডে উন্নীত করেছি। যার ফলে দশগুণ রোগীও সামাল দিতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু বারবার এটা সম্ভব হবে না।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউ সামাল দেয়া গেছে। এক সময় দৈনিক মৃত্যু নেমে এসেছিল ৫ থেকে ৭ জনের মতো, সংক্রমণ ছিল সাড়ে তিনশ-চারশর নিচে। মানুষের বেখেয়ালিপনা আর অসতর্কতার কারণে সেটি আবার বেড়েছে।’

জাহিদ মালেক বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কেন এলো, এখনই এর কারণ কী সেটা চিহ্নিত করতে হবে। কারণগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে না পারলে বাংলাদেশ সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের কবলে পড়বে এবং তা সামাল দেয়া কঠিন হবে বলে আশঙ্কা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর।

‘হঠাৎ করে আক্রান্ত কেন ৭ হাজার হলো, মৃত্যু কেন একশ’র বেশি হলো এগুলো দেখার বিষয় আছে। করোনাভাইরাসের ঢেউ এলো কীভাবে, কারা আনলো- এগুলো চিহ্নিত করতে হবে।‘

তিনি বলেন, ‘এই যে আমরা ঘোরাঘুরি করি বেসামালভাবে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় গেলাম, মাস্কপরলাম না, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলাম না। এই কারণে দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে। একই কাজ যদি আমরা আবার করি তাহলে তৃতীয় ঢেউ আবার আসবে।’

এখন যেই বিধিনিষেধ চলছে তা আরও কিছুদিন চললে করোনা সংক্রমণের হার কমে আসবে বলে আশা করেন তিনি।

গত বছরের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর দুই মাসের ‘লকডাউনে’ জনজীবন একপ্রকার অচল ছিল। এরপর সংক্রম কমার সঙ্গে সঙ্গে বিধিনিষেধও ধীরে ধীরে শিথিল হতে থাকে।

এ বছর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে দেশে দৈনিক শনাক্তের হার নেমে এসেছিল তিন শতাংশের নিচে। কিন্তু মার্চের শুরুতে সংক্রমণ আবার দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। ৭ এপ্রিল রেকর্ড সাত হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।

সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে বাড়তে থাকে মৃত্যু। ১৬ থেকে ১৯ এপ্রিল চার দিন দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ছিল একশ’র বেশি। এর মধ্যে সোমবার রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৩২ হাজার ৬০ জনে। তাদের মধ্যে ১০ হাজার ৬৮৩ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস।

বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, পরিবার পকিল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু, জাতীয় পুষ্টিসেবার লাইন ডিরেক্টর ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ ভার্চুয়াল এ সভায় বক্তব্য দেন।

শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল ২০২১ , ১০ বৈশাখ ১৪২৮ ১০ রমজান ১৪৪২

তৃতীয় ঢেউয়ের শঙ্কা সামাল দেয়া যাবে না বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

স্বাস্থ্যবিধি না মানায় দেশে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এই পরিস্থিতে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তিনি। আসহায়ত্ব প্রকাশ করে তিনি বলেন, বারবার এমন পরিস্থিতি হলে তা সামাল দেয়া ‘সম্ভব হবে না’।

গতকাল জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ উপলক্ষে ভার্চুয়া?ল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই আশঙ্কার কথা বলেন তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কত চিকিৎসা দেব? কত বেড, কত হাইফ্লো নজেল ক্যানোলা বাড়াব? কত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করব? হাসপাতাল ও হাসপাতালের বেড রাতারাতি বাড়ানো যায় না। তারপরও আমরা আড়াই হাজার বেড থেকে ৭-৮ হাজার বেডে উন্নীত করেছি। যার ফলে দশগুণ রোগীও সামাল দিতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু বারবার এটা সম্ভব হবে না।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউ সামাল দেয়া গেছে। এক সময় দৈনিক মৃত্যু নেমে এসেছিল ৫ থেকে ৭ জনের মতো, সংক্রমণ ছিল সাড়ে তিনশ-চারশর নিচে। মানুষের বেখেয়ালিপনা আর অসতর্কতার কারণে সেটি আবার বেড়েছে।’

জাহিদ মালেক বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কেন এলো, এখনই এর কারণ কী সেটা চিহ্নিত করতে হবে। কারণগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে না পারলে বাংলাদেশ সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের কবলে পড়বে এবং তা সামাল দেয়া কঠিন হবে বলে আশঙ্কা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর।

‘হঠাৎ করে আক্রান্ত কেন ৭ হাজার হলো, মৃত্যু কেন একশ’র বেশি হলো এগুলো দেখার বিষয় আছে। করোনাভাইরাসের ঢেউ এলো কীভাবে, কারা আনলো- এগুলো চিহ্নিত করতে হবে।‘

তিনি বলেন, ‘এই যে আমরা ঘোরাঘুরি করি বেসামালভাবে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় গেলাম, মাস্কপরলাম না, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলাম না। এই কারণে দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে। একই কাজ যদি আমরা আবার করি তাহলে তৃতীয় ঢেউ আবার আসবে।’

এখন যেই বিধিনিষেধ চলছে তা আরও কিছুদিন চললে করোনা সংক্রমণের হার কমে আসবে বলে আশা করেন তিনি।

গত বছরের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর দুই মাসের ‘লকডাউনে’ জনজীবন একপ্রকার অচল ছিল। এরপর সংক্রম কমার সঙ্গে সঙ্গে বিধিনিষেধও ধীরে ধীরে শিথিল হতে থাকে।

এ বছর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে দেশে দৈনিক শনাক্তের হার নেমে এসেছিল তিন শতাংশের নিচে। কিন্তু মার্চের শুরুতে সংক্রমণ আবার দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। ৭ এপ্রিল রেকর্ড সাত হাজার ৬২৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।

সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে বাড়তে থাকে মৃত্যু। ১৬ থেকে ১৯ এপ্রিল চার দিন দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ছিল একশ’র বেশি। এর মধ্যে সোমবার রেকর্ড ১১২ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৩২ হাজার ৬০ জনে। তাদের মধ্যে ১০ হাজার ৬৮৩ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস।

বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, পরিবার পকিল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু, জাতীয় পুষ্টিসেবার লাইন ডিরেক্টর ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ ভার্চুয়াল এ সভায় বক্তব্য দেন।