হেফাজত নেতা সাথী ও আইয়ুবী গ্রেপ্তার

১৬ মামলার তদন্তে পিবিআই

হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের সহ-দপ্তর সম্পাদক ও ইসলামী ছাত্র সমাজের সাধারণ সম্পাদক ইহতেশামুল হক সাথীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে বংশাল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলমের দাবি ‘২০১৩ সালে শাপলা চত্বর এলাকায় নাশকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি (ইহতেশাম)। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে ঘিরে যে সহিংসতা হয়েছে, তার সঙ্গেও এই নেতার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। ইহতেশামকে শুক্রবার আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

এদিকে র‌্যাব মানিকগঞ্জের সিংগাইর থেকে গতকাল হেফাজতে ইসলামের নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবীকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার আইয়ুবী পল্টন থানায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি বলে দাবি করেছে র‌্যাব।

র‌্যাবের সহকারী পরিচালক জানান, গত ৫ এপ্রিল পল্টন থানায় দায়ের মামলায় র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে একটি টিম অভিযান চালিয়ে আইয়ুবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে পল্টন থানায় হস্তান্তর করা হবে।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটিতে আছেন এমন ডজনখানেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় হেফাজতে ইসলামের জেলা ও উপজেলা কমিটির অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৮শ ছাড়িয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে।

অপর একটি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার অভিযানের মধ্য দিয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব অস্তিত্ব সংকটে পড়তে যাচ্ছে। একের পর এক কেন্দ্রীয় নেতারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন বিভিন্ন মামলায়। যেসব মামলায় হেফাজত ইসলামের নেতারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন এর বেশিরভাগ মামলাই সহিংসতা, নাশকতা, সরকারি সম্পদ বিনষ্ট করা, মানুষের জানমালের ক্ষতি, সরকারি কাজে বাধা, সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রসহ বিভিন্ন অভিযোগে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হেফাজতে ইসলামের নেতাদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে হেফাজতে ইসলামের নানা তথ্য প্রকাশ করছে পুলিশ।

সিআইডির পর এবার পিবিআইয়ের কাছে হেফাজতের ১৬ মামলা

দেশের বিভিন্ন জেলায় হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার মধ্যে এবার ১৬ মামলা তদন্ত দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় দায়ের হওয়া এসব মামলা গত ২৬ মার্চের পর করা হয়েছে। এসব মামলায় হেফাজতে ইসলামের গ্রেপ্তার যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুলহকসহ শীর্ষ নেতারা আসামির তালিকায় রয়েছে। এছাড়া হেফাজতের স্থানীয় নেতারাও এসব মামলায় আসামি।

পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনোজ কুমার মজুমদার বলেন, গত ২৬ মার্চের পর মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু মামলা দায়ের হয়। ওইসব মামলার মধ্যে ১৬টি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পিবিআই। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের সোনাগাঁয়ে রিসোর্টের ঘটনা-পরবর্তী মামলাও রয়েছে।

ডিআইজি বনোজ কুমার বলেন, নাশকতা, হত্যার চেষ্টা, ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের করা ওই সব মামলার তদন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে দ্রুতই দোষীদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। ডিআইজি বলেন, গত ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের যেসব জায়গায় হেফাজতে ইসলাম সহিংসতার ঘটনা ঘটায়। সেই ঘটনার সূত্র ধরে পরবর্তীতে আরও বিভিন্ন জেলায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। পিবিআই শুরু থেকেই প্রতিটি মামলার ঘটনায় ঘটনাস্থল অনুসারে স্থিরচিত্র ও ভিডিওচিত্র ধারণ করে রাখতে চেষ্টা করেছে। এসব ঘটনায় অনেক মামলা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে পিবিআই ১৬টি মামলার তদন্তভার পেয়েছে। বনোজ কুমার বলেন, বেশিরভাগ মামলার ডকেট আমরা পেয়েছি, দুই-একটি পাওয়ার অপেক্ষায়। এসব মামলায় কিছু ভিডিওচিত্র রয়েছে অনেকের কাছেই সেগুলো আনার চেষ্টা করছি। পিবিআই এসব ঘটনায় যারা জড়িত তাদের শনাক্ত করতে চেষ্টা করবে। যারা সহিংসতাকান্ডে জড়িত ছিলেন না তাদের এসব মামলায় কোনভাবেই সম্পৃক্ত করবে না পিবিআই।

উল্লেখ, এর আগে দেশের বিভিন্ন জেলায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কে ২৩ মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। সেই মামলা ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। ওই মামলায় সিআইডি হেফাজতে যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড হেফাজতে আনার চিন্তা করছে। মাওলানা মামুনুল মোহাম্মদপুরের এক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশ হেফাজতে আছে। তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এদিকে এ পর্যন্ত পুরনো ও নতুন মামলায় হেফাজতে ইসলামের ডজনখানেক কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার এসব নেতাকে বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল ২০২১ , ১০ বৈশাখ ১৪২৮ ১০ রমজান ১৪৪২

হেফাজত নেতা সাথী ও আইয়ুবী গ্রেপ্তার

১৬ মামলার তদন্তে পিবিআই

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের সহ-দপ্তর সম্পাদক ও ইসলামী ছাত্র সমাজের সাধারণ সম্পাদক ইহতেশামুল হক সাথীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে বংশাল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলমের দাবি ‘২০১৩ সালে শাপলা চত্বর এলাকায় নাশকতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি (ইহতেশাম)। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে ঘিরে যে সহিংসতা হয়েছে, তার সঙ্গেও এই নেতার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। ইহতেশামকে শুক্রবার আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

এদিকে র‌্যাব মানিকগঞ্জের সিংগাইর থেকে গতকাল হেফাজতে ইসলামের নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবীকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার আইয়ুবী পল্টন থানায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি বলে দাবি করেছে র‌্যাব।

র‌্যাবের সহকারী পরিচালক জানান, গত ৫ এপ্রিল পল্টন থানায় দায়ের মামলায় র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে একটি টিম অভিযান চালিয়ে আইয়ুবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে পল্টন থানায় হস্তান্তর করা হবে।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটিতে আছেন এমন ডজনখানেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় হেফাজতে ইসলামের জেলা ও উপজেলা কমিটির অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৮শ ছাড়িয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে।

অপর একটি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার অভিযানের মধ্য দিয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব অস্তিত্ব সংকটে পড়তে যাচ্ছে। একের পর এক কেন্দ্রীয় নেতারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন বিভিন্ন মামলায়। যেসব মামলায় হেফাজত ইসলামের নেতারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন এর বেশিরভাগ মামলাই সহিংসতা, নাশকতা, সরকারি সম্পদ বিনষ্ট করা, মানুষের জানমালের ক্ষতি, সরকারি কাজে বাধা, সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রসহ বিভিন্ন অভিযোগে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হেফাজতে ইসলামের নেতাদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে হেফাজতে ইসলামের নানা তথ্য প্রকাশ করছে পুলিশ।

সিআইডির পর এবার পিবিআইয়ের কাছে হেফাজতের ১৬ মামলা

দেশের বিভিন্ন জেলায় হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার মধ্যে এবার ১৬ মামলা তদন্ত দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় দায়ের হওয়া এসব মামলা গত ২৬ মার্চের পর করা হয়েছে। এসব মামলায় হেফাজতে ইসলামের গ্রেপ্তার যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুলহকসহ শীর্ষ নেতারা আসামির তালিকায় রয়েছে। এছাড়া হেফাজতের স্থানীয় নেতারাও এসব মামলায় আসামি।

পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনোজ কুমার মজুমদার বলেন, গত ২৬ মার্চের পর মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু মামলা দায়ের হয়। ওইসব মামলার মধ্যে ১৬টি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পিবিআই। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের সোনাগাঁয়ে রিসোর্টের ঘটনা-পরবর্তী মামলাও রয়েছে।

ডিআইজি বনোজ কুমার বলেন, নাশকতা, হত্যার চেষ্টা, ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের করা ওই সব মামলার তদন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে দ্রুতই দোষীদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। ডিআইজি বলেন, গত ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের যেসব জায়গায় হেফাজতে ইসলাম সহিংসতার ঘটনা ঘটায়। সেই ঘটনার সূত্র ধরে পরবর্তীতে আরও বিভিন্ন জেলায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। পিবিআই শুরু থেকেই প্রতিটি মামলার ঘটনায় ঘটনাস্থল অনুসারে স্থিরচিত্র ও ভিডিওচিত্র ধারণ করে রাখতে চেষ্টা করেছে। এসব ঘটনায় অনেক মামলা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে পিবিআই ১৬টি মামলার তদন্তভার পেয়েছে। বনোজ কুমার বলেন, বেশিরভাগ মামলার ডকেট আমরা পেয়েছি, দুই-একটি পাওয়ার অপেক্ষায়। এসব মামলায় কিছু ভিডিওচিত্র রয়েছে অনেকের কাছেই সেগুলো আনার চেষ্টা করছি। পিবিআই এসব ঘটনায় যারা জড়িত তাদের শনাক্ত করতে চেষ্টা করবে। যারা সহিংসতাকান্ডে জড়িত ছিলেন না তাদের এসব মামলায় কোনভাবেই সম্পৃক্ত করবে না পিবিআই।

উল্লেখ, এর আগে দেশের বিভিন্ন জেলায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) কে ২৩ মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। সেই মামলা ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। ওই মামলায় সিআইডি হেফাজতে যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড হেফাজতে আনার চিন্তা করছে। মাওলানা মামুনুল মোহাম্মদপুরের এক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে পুলিশ হেফাজতে আছে। তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এদিকে এ পর্যন্ত পুরনো ও নতুন মামলায় হেফাজতে ইসলামের ডজনখানেক কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার এসব নেতাকে বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।