ভুয়া কাগজে ২০ প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় মোস্তফা গ্রুপ

কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ভুয়া এলসির বিপরীতে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) আরব বাংলাদেশ ব্যাংক (এবি ব্যাংক) পূবালী ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংকসহ ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মোস্তফা গ্রুপ। ঋণ নেয়া এসব অর্থ কৌশলে আত্মসাৎ করে তা ভিন্ন কাজে লাগিয়ে মোস্তফা গ্রুপকে এখন লুজার প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখানো হচ্ছে। বিডিবিএল থেকে ভুয়া এলসির বিপরীতে ৭৫ কোটি টাকা আত্মসাতের একটি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান জানিয়েছেন, ২০১২ সালে মোস্তফা গ্রুপের সয়াবিন ও পামওয়েল রিফাইনকারী প্লান্ট এমএম ভেজিটেলব ওয়েল প্রোডাক্টস লিমিটেড তেল আমাদানি দেখিয়ে ভুয়া এলসি খুলে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল ) থেকে ৭৯ কোটি ৫৫ লাখ ৭ হাজার ৪২০ টাকা হাতিয়ে নেয়। যা সুদে আসলে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৭৪ কোটি ৬১ লাখ ৮৮ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ পেলে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। মামলাটি তদন্ত করে জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে দুদক। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মোস্তফা গ্রুপের কর্ণধার, বিডিবিএল-এর প্রিন্সিপাল শাখার সাবেক ম্যানেজার সৈয়দ নুরুর রহমান কাদরীসহ সংশ্লিষ্টদের আসামি করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে কমিশনে। কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে শ্রীঘ্রই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এমএম ভেজিটেবল ওয়েল প্রোডাক্টস লি. দেশের স্বনামধন্য মোস্তফা গ্রুপ অব ইন্ডট্রিজের একটি প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে স্থাপিত প্রকল্পটি একটি সয়াবিন অয়েল এবং পাম অয়েল রিফাইনারি প্লান্ট। এমএম ভেজিটেবল অয়েল প্রোডাক্টস সাইট এলসি দেয় মেসার্স গ্লোব ইন্টারন্যাশনাল ও লুসিডা ট্রেডিংকে। এর মধ্যে গ্লোব ইন্টারন্যাশনালকে ৫৪ কোটি ৩১ লাখ ৮৮ হাজার ১শ’ টাকা এবং লুসিডাকে এলসি দেয় ২৫ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার ৩২০ টাকার। এলসির শর্ত অনুসারে মালামাল দিয়েছে মর্মে বেনিফিসিয়ারি ব্যাংককে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার কর্মকর্তারা এমএম ভেজিটেবল অয়েল প্রোডাক্টস লি. ওই বেনিফিসিয়ারি থেকে মালামাল বুঝে পেয়েছে কিনা তা নিশ্চিত না হয়েই শুধু বেনিফিসিয়ারি ব্যাংক থেকে পাঠানো ডকুমেন্টসের ওপর ভিত্তি করেই একসেপ্টেন্স দিয়ে দেয়। তদন্তকালে রেকর্ডপত্রাদি বিশ্লেষণ এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, মেসার্স গ্লোব ইন্টারন্যাশনাল ও লুসিডা ট্রেডিং নামীয় বাস্তবে কোন প্রতিষ্ঠান নেই। এটা মূলত মোস্তফা গ্রুপেরই কাগুজে প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে পত্র দিয়েও প্রতিষ্ঠানসমূহের অস্তিত্ব মেলেনি বলে জানিয়েছে।

বিডিবিএল থেকে তিন সদস্যের টিম সরেজমিন পরিদর্শন করে ওই প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। যে ট্রাকের মাধ্যমে মালামাল পরিবহন দেখানো হয়েছে, সেখানে ট্রাকের রেজি. সঠিক আছে কিনা চট্টগ্রাম বিআরটিএকে পত্র দেয়া হলে তারা জানিয়েছে, এ নামে কোন ট্রাকের রেজি. নেই। তদন্তকারী কর্মকর্তা সরেজমিন লিবার্টি ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। বিডিবিএল থেকে তিন সদস্যের টিম সরেজমিন পরিদর্শন করেও ওই প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি বলে দন্তকারী কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে জানান। সুতরাং ভুয়া রেকর্ডপত্রাদি তৈরি করে মালামাল প্রদান এবং গ্রহণ দেখিয়ে বিডিবিএল থেকে ওই টাকা ট্রাস্ট ব্যাংক লি. ও ঢাকা ব্যাংক লি.-এ স্থানান্তর ও তা উত্তোলন করে স্থানান্তর, রূপান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে, যা দন্ডবিধি ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সম্পৃক্ত ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সূত্রে জানা যায়, মোস্তফা গ্রুপের সিস্টার কনসার্ন হিসেবে মেসার্স গ্লোব ইন্টারন্যাশনালের নাম রয়েছে। মোস্তফা গ্রুপ এবি ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় ঋণ রিসিডিউলের আবেদনে মেসার্স গ্লোব ইন্টারন্যাশনালকে তাদের সিস্টার কনসার্ন হিসেবে উল্লেখ করে আবেদন করে। মেসার্স গ্লোব ইন্টারন্যাশনাল ও লুসিডা ট্রেডিং যদি মালামাল প্রকৃতপক্ষে এমএম ভেজিটেবল ওয়েলকে প্রদান করে, তাহলে মালামাল প্রদানের বিপরীতে বেনিফিসিয়ারি ঢাকা ব্যাংক লি. ও ট্রাস্ট ব্যাংক লি,কে এমএম ভেজিটেবলের ব্যাংক বিডিবিএল থেকে টাকা পরিশোধ করার কথা। বিডিবিএল টাকা পরিশোধ করেছে ঠিকই, কিন্তু ওই অর্থ বিডিবিএল থেকে ঢাকা ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক লি.-এ যেদিন পরিশোধ হয়েছে, তার পরের দিনই বেশিরভাগ অর্থ আবার এমএম ভেজিটেবলের হিসাবে স্থানান্তর হয়েছে অর্থাৎ, মেসার্স গ্লোব ইন্টারন্যাশনাল ও লুসিডা ট্রেডিং মূলত মোস্তফা গ্রুপেরই কাগুজে প্রতিষ্ঠান এবং জালিয়াতির আশ্রয়ে বিডিবিএল থেকে ১৭৪ কোটি টাকা উত্তালন করে আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং করা হয়েছে। তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা সৈয়দ নুরুর রহমান কাদরীকে জিজ্ঞেস করেন, ৭৫ কোটি টাকা তেল ক্রয় করতে দুই শতাধিক ট্রাক লাগার কথা। এ বিশাল পণ্য এক দিনেই কিভাবে বিদেশ থেকে আমদানি করা হলো- এ বিষয়টি খেয়াল করলেন না কেন? তিনি জানান, পার্টিকে অন্ধ বিশ্বাস করেই তিনি ভুল করেছেন।

তদন্তে জানা গেছে, সৈয়দ নুরুর রহমান কাদরী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লি., বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল শাখায় ম্যানেজার হিসেবে কর্মকালে এমএম ভেজিটেবলের হিসাব খোলেন। এর আগে এমএম ভেজিটেবল বিডিবিএলে কোন এলসি খোলেননি। হিসাব খোলার পরেই দুটি ৭৫ কোটি টাকার এলসি খোলেন। ওই দুটি এলসি খোলার পর আর কোন এলসি তারা বিডিবিএল থেকে খোলেননি। এলসি খোলার পরের দিনই বেনিফিসিয়ারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স গ্লোব ইন্টারন্যাশনাল ও লুসিডা ট্রেডিং মালামাল এমএম ভেজিটেবলকে দিয়েছেন মর্মে তাদের ব্যাংক ঢাকা ব্যাংক লি. ও ট্রাস্ট ব্যাংক লি. এসব রেকর্ডপত্র একসেপটেন্স দেয়ার জন্য বিডিবিএলে পাঠায়। বিডিবিএল এলসি খোলার পরের দিনই মালামাল এমএম ভেজিটেবল গ্রহণ করেছে কিনা বা রেকর্ডসমূহ সঠিক কিনা বা মেসার্স গ্লোব ইন্টারন্যাশনাল ও লুসিডা ট্রেডিং-এর বাস্তব অস্তিত্ব আছে কিনা তা যাচাই ছাড়াই বিডিবিএল হতে ৭৯ কোটি ৫৫ লাখ ৭ হাজার ৪২০ টাকা (সুদসহ ১৭৪ কোটি ৬১.৮৮ লাখ) টাকা ঢাকা ব্যাংক লি. ও ট্রাস্ট ব্যাংক লি.’কে দিয়ে দেয়, যা পরে আবার মোস্তফা গ্রুপ তাদের হিসাবে স্থানান্তর করে নেন যা দন্ডবিধি ও মানিলন্ডারিং-এর সম্পৃক্ত ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সূত্রে জানা যায়, মেসার্স গ্লোব ইন্টারন্যাশনাল ও লুসিডা ট্রেডিং নামীয় কাগুজে প্রতিষ্ঠান দিয়ে একই কায়দায় এবি ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা হতে মোস্তফা গ্রুপ ১৭৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে। এছাড়া সাউথ ইস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংকসহ প্রায় ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মোট এক হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে, যা ফেরত দেয়ার মতো অবস্থায় নেই মোস্তফা গ্রুপ। ভাইদের কোন্দলে এক সময়ের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান আজ মৃতপ্রায়। এক প্রতিষ্ঠানে জালিয়াতি করে অর্থ বের করে অন্য প্রতিষ্ঠানের দেনা শোধ করার চেষ্ঠায় শেষে ২০টি প্রতিষ্ঠানে জালিয়াতির আশ্রয়ে হাজার কোটি টাকা বের করে নেয়া হয়েছে, যার বিপরীতে মর্টগেজ একেবারেই অপ্রতুল। ফলে ঋণ পরিশোধ হওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল ২০২১ , ১০ বৈশাখ ১৪২৮ ১০ রমজান ১৪৪২

ভুয়া কাগজে ২০ প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় মোস্তফা গ্রুপ

সাইফ বাবলু

কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ভুয়া এলসির বিপরীতে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) আরব বাংলাদেশ ব্যাংক (এবি ব্যাংক) পূবালী ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংকসহ ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মোস্তফা গ্রুপ। ঋণ নেয়া এসব অর্থ কৌশলে আত্মসাৎ করে তা ভিন্ন কাজে লাগিয়ে মোস্তফা গ্রুপকে এখন লুজার প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখানো হচ্ছে। বিডিবিএল থেকে ভুয়া এলসির বিপরীতে ৭৫ কোটি টাকা আত্মসাতের একটি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান জানিয়েছেন, ২০১২ সালে মোস্তফা গ্রুপের সয়াবিন ও পামওয়েল রিফাইনকারী প্লান্ট এমএম ভেজিটেলব ওয়েল প্রোডাক্টস লিমিটেড তেল আমাদানি দেখিয়ে ভুয়া এলসি খুলে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল ) থেকে ৭৯ কোটি ৫৫ লাখ ৭ হাজার ৪২০ টাকা হাতিয়ে নেয়। যা সুদে আসলে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৭৪ কোটি ৬১ লাখ ৮৮ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ পেলে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। মামলাটি তদন্ত করে জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে দুদক। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মোস্তফা গ্রুপের কর্ণধার, বিডিবিএল-এর প্রিন্সিপাল শাখার সাবেক ম্যানেজার সৈয়দ নুরুর রহমান কাদরীসহ সংশ্লিষ্টদের আসামি করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে কমিশনে। কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে শ্রীঘ্রই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এমএম ভেজিটেবল ওয়েল প্রোডাক্টস লি. দেশের স্বনামধন্য মোস্তফা গ্রুপ অব ইন্ডট্রিজের একটি প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে স্থাপিত প্রকল্পটি একটি সয়াবিন অয়েল এবং পাম অয়েল রিফাইনারি প্লান্ট। এমএম ভেজিটেবল অয়েল প্রোডাক্টস সাইট এলসি দেয় মেসার্স গ্লোব ইন্টারন্যাশনাল ও লুসিডা ট্রেডিংকে। এর মধ্যে গ্লোব ইন্টারন্যাশনালকে ৫৪ কোটি ৩১ লাখ ৮৮ হাজার ১শ’ টাকা এবং লুসিডাকে এলসি দেয় ২৫ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার ৩২০ টাকার। এলসির শর্ত অনুসারে মালামাল দিয়েছে মর্মে বেনিফিসিয়ারি ব্যাংককে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখার কর্মকর্তারা এমএম ভেজিটেবল অয়েল প্রোডাক্টস লি. ওই বেনিফিসিয়ারি থেকে মালামাল বুঝে পেয়েছে কিনা তা নিশ্চিত না হয়েই শুধু বেনিফিসিয়ারি ব্যাংক থেকে পাঠানো ডকুমেন্টসের ওপর ভিত্তি করেই একসেপ্টেন্স দিয়ে দেয়। তদন্তকালে রেকর্ডপত্রাদি বিশ্লেষণ এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, মেসার্স গ্লোব ইন্টারন্যাশনাল ও লুসিডা ট্রেডিং নামীয় বাস্তবে কোন প্রতিষ্ঠান নেই। এটা মূলত মোস্তফা গ্রুপেরই কাগুজে প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে পত্র দিয়েও প্রতিষ্ঠানসমূহের অস্তিত্ব মেলেনি বলে জানিয়েছে।

বিডিবিএল থেকে তিন সদস্যের টিম সরেজমিন পরিদর্শন করে ওই প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। যে ট্রাকের মাধ্যমে মালামাল পরিবহন দেখানো হয়েছে, সেখানে ট্রাকের রেজি. সঠিক আছে কিনা চট্টগ্রাম বিআরটিএকে পত্র দেয়া হলে তারা জানিয়েছে, এ নামে কোন ট্রাকের রেজি. নেই। তদন্তকারী কর্মকর্তা সরেজমিন লিবার্টি ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। বিডিবিএল থেকে তিন সদস্যের টিম সরেজমিন পরিদর্শন করেও ওই প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি বলে দন্তকারী কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে জানান। সুতরাং ভুয়া রেকর্ডপত্রাদি তৈরি করে মালামাল প্রদান এবং গ্রহণ দেখিয়ে বিডিবিএল থেকে ওই টাকা ট্রাস্ট ব্যাংক লি. ও ঢাকা ব্যাংক লি.-এ স্থানান্তর ও তা উত্তোলন করে স্থানান্তর, রূপান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে, যা দন্ডবিধি ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের সম্পৃক্ত ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সূত্রে জানা যায়, মোস্তফা গ্রুপের সিস্টার কনসার্ন হিসেবে মেসার্স গ্লোব ইন্টারন্যাশনালের নাম রয়েছে। মোস্তফা গ্রুপ এবি ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় ঋণ রিসিডিউলের আবেদনে মেসার্স গ্লোব ইন্টারন্যাশনালকে তাদের সিস্টার কনসার্ন হিসেবে উল্লেখ করে আবেদন করে। মেসার্স গ্লোব ইন্টারন্যাশনাল ও লুসিডা ট্রেডিং যদি মালামাল প্রকৃতপক্ষে এমএম ভেজিটেবল ওয়েলকে প্রদান করে, তাহলে মালামাল প্রদানের বিপরীতে বেনিফিসিয়ারি ঢাকা ব্যাংক লি. ও ট্রাস্ট ব্যাংক লি,কে এমএম ভেজিটেবলের ব্যাংক বিডিবিএল থেকে টাকা পরিশোধ করার কথা। বিডিবিএল টাকা পরিশোধ করেছে ঠিকই, কিন্তু ওই অর্থ বিডিবিএল থেকে ঢাকা ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক লি.-এ যেদিন পরিশোধ হয়েছে, তার পরের দিনই বেশিরভাগ অর্থ আবার এমএম ভেজিটেবলের হিসাবে স্থানান্তর হয়েছে অর্থাৎ, মেসার্স গ্লোব ইন্টারন্যাশনাল ও লুসিডা ট্রেডিং মূলত মোস্তফা গ্রুপেরই কাগুজে প্রতিষ্ঠান এবং জালিয়াতির আশ্রয়ে বিডিবিএল থেকে ১৭৪ কোটি টাকা উত্তালন করে আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং করা হয়েছে। তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা সৈয়দ নুরুর রহমান কাদরীকে জিজ্ঞেস করেন, ৭৫ কোটি টাকা তেল ক্রয় করতে দুই শতাধিক ট্রাক লাগার কথা। এ বিশাল পণ্য এক দিনেই কিভাবে বিদেশ থেকে আমদানি করা হলো- এ বিষয়টি খেয়াল করলেন না কেন? তিনি জানান, পার্টিকে অন্ধ বিশ্বাস করেই তিনি ভুল করেছেন।

তদন্তে জানা গেছে, সৈয়দ নুরুর রহমান কাদরী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লি., বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল শাখায় ম্যানেজার হিসেবে কর্মকালে এমএম ভেজিটেবলের হিসাব খোলেন। এর আগে এমএম ভেজিটেবল বিডিবিএলে কোন এলসি খোলেননি। হিসাব খোলার পরেই দুটি ৭৫ কোটি টাকার এলসি খোলেন। ওই দুটি এলসি খোলার পর আর কোন এলসি তারা বিডিবিএল থেকে খোলেননি। এলসি খোলার পরের দিনই বেনিফিসিয়ারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স গ্লোব ইন্টারন্যাশনাল ও লুসিডা ট্রেডিং মালামাল এমএম ভেজিটেবলকে দিয়েছেন মর্মে তাদের ব্যাংক ঢাকা ব্যাংক লি. ও ট্রাস্ট ব্যাংক লি. এসব রেকর্ডপত্র একসেপটেন্স দেয়ার জন্য বিডিবিএলে পাঠায়। বিডিবিএল এলসি খোলার পরের দিনই মালামাল এমএম ভেজিটেবল গ্রহণ করেছে কিনা বা রেকর্ডসমূহ সঠিক কিনা বা মেসার্স গ্লোব ইন্টারন্যাশনাল ও লুসিডা ট্রেডিং-এর বাস্তব অস্তিত্ব আছে কিনা তা যাচাই ছাড়াই বিডিবিএল হতে ৭৯ কোটি ৫৫ লাখ ৭ হাজার ৪২০ টাকা (সুদসহ ১৭৪ কোটি ৬১.৮৮ লাখ) টাকা ঢাকা ব্যাংক লি. ও ট্রাস্ট ব্যাংক লি.’কে দিয়ে দেয়, যা পরে আবার মোস্তফা গ্রুপ তাদের হিসাবে স্থানান্তর করে নেন যা দন্ডবিধি ও মানিলন্ডারিং-এর সম্পৃক্ত ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সূত্রে জানা যায়, মেসার্স গ্লোব ইন্টারন্যাশনাল ও লুসিডা ট্রেডিং নামীয় কাগুজে প্রতিষ্ঠান দিয়ে একই কায়দায় এবি ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা হতে মোস্তফা গ্রুপ ১৭৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে। এছাড়া সাউথ ইস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংকসহ প্রায় ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মোট এক হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে, যা ফেরত দেয়ার মতো অবস্থায় নেই মোস্তফা গ্রুপ। ভাইদের কোন্দলে এক সময়ের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান আজ মৃতপ্রায়। এক প্রতিষ্ঠানে জালিয়াতি করে অর্থ বের করে অন্য প্রতিষ্ঠানের দেনা শোধ করার চেষ্ঠায় শেষে ২০টি প্রতিষ্ঠানে জালিয়াতির আশ্রয়ে হাজার কোটি টাকা বের করে নেয়া হয়েছে, যার বিপরীতে মর্টগেজ একেবারেই অপ্রতুল। ফলে ঋণ পরিশোধ হওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।