চিঠিপত্র : চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় আমরা কি প্রস্তুত

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় আমরা কি প্রস্তুত

১৯৬৯ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের আবির্ভাবে তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের সময় তথ্যপ্রযুক্তির সহজ ও দ্রুত বিনিময় শুরু হলে সারা বিশ্বের গতি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এরপরে আসছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ক্লাউড কম্পিউটিং, ব্লক চেইন প্রযুক্তি, বিগ ডেটা অ্যানালাইটিক, থ্রিডি প্রিন্টিংসহ ইন্টারনেট অব থিংস বা যন্ত্রের ইন্টারনেট যা কিনা সম্পূর্ণ রূপেই মানবসম্পদের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে! এ বিপ্লব নিয়েই আজ সারা দুনিয়ায় তোলপাড় চলছে। এই ডিজিটাল বিপ্লবকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বলা হচ্ছে।

আগামীতে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব পুড়োপুড়ি বাস্তবায়ন হলে বিশ্বব্যাপী মানুষ কর্মহীনতার ঝুঁকিতে পড়বে। কেননা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানে মানুষের পরিবর্তে রোবট ও মানুষবিহীন উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এতে করে শিল্প বিপ্লবের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে কর্মবাজারে। অটোমেশন প্রযুক্তির ফলে ক্রমশ শিল্প কারখানা হয়ে পড়বে যন্ত্রনির্ভর। টেক জায়ান্ট কোম্পানি অ্যাপলের হার্ডওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফক্সকন ইতোমধ্যে ৬০ হাজার কর্মী ছাটাই করে তার পরিবর্তে রোবটকে কর্মী হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে। বিগত বছরগুলোতে চীনের কারখানাগুলোতে রোবট ব্যবহারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০.৮%। ম্যাককিনস গ্লোবাল ইন্সটিটিউটের তথ্যমতে, ২০৩০ সালের মধ্যে চাকরি হারানো মানুষের সংখ্যা হবে প্রায় ৮০ কোটি। ফরচুন ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্তত ৫০০টি নেতৃস্থানীয় কোম্পানি তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ছেড়ে দিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাতে, অর্থাৎ যন্ত্র এখন মানুষকে নিয়োগ দিচ্ছে।

বাংলাদেশের জন্য চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়তে পারে। কেননা দেশের প্রধান রপ্তানি ক্ষাত তৈরি পোশাক শিল্প কলকারখানায় যদি শ্রমিকের পরিবর্তে রোবট বা উন্নতমানের যন্ত্রের ব্যবহার হয় তাহলে এই দেশের মানুষ কর্মহীনতায় ভুক্তভোগী হতে পারে। এমনিতে দেশে বেকারত্বের সংখ্যা বেশি। এছাড়া আমাদের অধিক অংশ শ্রমিক বিদেশে তথা মালোশিয়া সিঙ্গাপুর ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছে। সেখান থেকে দেশে সিংহভাগ রেমিটেন্স আমাদের রাষ্ট্রীয় কষাগারে জমা হয়। আর যদি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ফলে যেসব দেশে শ্রমিক রপ্তানি হচ্ছে সেসব দেশে মানুষের পরিবর্তে রোবটের ব্যবহার হলে শ্রমিক রপ্তানি হ্রাস পাবে। আর তখন আমাদের দেশে কর্মহীনতা ও অর্থসংকট সৃষ্টি হতে পারে। তবে এমন আশাঙ্খা থেকে উত্তোলনের উপায় হতে পারে কারিগরি শিক্ষার বিস্তার ও বাস্তবমুখী শিক্ষাব্যবস্থার বাস্তবায়ন। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত মানের হলেও কর্মমুখী শিক্ষা এখনো প্রচলন করা সম্ভব হয়নি। তাই তরুণদের বাস্তবমুখী শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেদিয়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে মোকাবিলা করতে হবে। কেননা আগামী পৃথিবী হবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যেখানে প্রতিনিয়ত কর্মপরিবর্তন ও নতুন নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব ও পুড়ো বিশ্বের গতিপথের পরিবর্তন সাধিত হবে। যা কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা বা প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ব গড়ে উঠবে।

বিপ্লব আলী

ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আরও খবর

শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল ২০২১ , ১০ বৈশাখ ১৪২৮ ১০ রমজান ১৪৪২

চিঠিপত্র : চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় আমরা কি প্রস্তুত

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় আমরা কি প্রস্তুত

১৯৬৯ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের আবির্ভাবে তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের সময় তথ্যপ্রযুক্তির সহজ ও দ্রুত বিনিময় শুরু হলে সারা বিশ্বের গতি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এরপরে আসছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ক্লাউড কম্পিউটিং, ব্লক চেইন প্রযুক্তি, বিগ ডেটা অ্যানালাইটিক, থ্রিডি প্রিন্টিংসহ ইন্টারনেট অব থিংস বা যন্ত্রের ইন্টারনেট যা কিনা সম্পূর্ণ রূপেই মানবসম্পদের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে! এ বিপ্লব নিয়েই আজ সারা দুনিয়ায় তোলপাড় চলছে। এই ডিজিটাল বিপ্লবকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বলা হচ্ছে।

আগামীতে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব পুড়োপুড়ি বাস্তবায়ন হলে বিশ্বব্যাপী মানুষ কর্মহীনতার ঝুঁকিতে পড়বে। কেননা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানে মানুষের পরিবর্তে রোবট ও মানুষবিহীন উন্নতমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এতে করে শিল্প বিপ্লবের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে কর্মবাজারে। অটোমেশন প্রযুক্তির ফলে ক্রমশ শিল্প কারখানা হয়ে পড়বে যন্ত্রনির্ভর। টেক জায়ান্ট কোম্পানি অ্যাপলের হার্ডওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফক্সকন ইতোমধ্যে ৬০ হাজার কর্মী ছাটাই করে তার পরিবর্তে রোবটকে কর্মী হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে। বিগত বছরগুলোতে চীনের কারখানাগুলোতে রোবট ব্যবহারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০.৮%। ম্যাককিনস গ্লোবাল ইন্সটিটিউটের তথ্যমতে, ২০৩০ সালের মধ্যে চাকরি হারানো মানুষের সংখ্যা হবে প্রায় ৮০ কোটি। ফরচুন ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্তত ৫০০টি নেতৃস্থানীয় কোম্পানি তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ছেড়ে দিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাতে, অর্থাৎ যন্ত্র এখন মানুষকে নিয়োগ দিচ্ছে।

বাংলাদেশের জন্য চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়তে পারে। কেননা দেশের প্রধান রপ্তানি ক্ষাত তৈরি পোশাক শিল্প কলকারখানায় যদি শ্রমিকের পরিবর্তে রোবট বা উন্নতমানের যন্ত্রের ব্যবহার হয় তাহলে এই দেশের মানুষ কর্মহীনতায় ভুক্তভোগী হতে পারে। এমনিতে দেশে বেকারত্বের সংখ্যা বেশি। এছাড়া আমাদের অধিক অংশ শ্রমিক বিদেশে তথা মালোশিয়া সিঙ্গাপুর ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছে। সেখান থেকে দেশে সিংহভাগ রেমিটেন্স আমাদের রাষ্ট্রীয় কষাগারে জমা হয়। আর যদি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ফলে যেসব দেশে শ্রমিক রপ্তানি হচ্ছে সেসব দেশে মানুষের পরিবর্তে রোবটের ব্যবহার হলে শ্রমিক রপ্তানি হ্রাস পাবে। আর তখন আমাদের দেশে কর্মহীনতা ও অর্থসংকট সৃষ্টি হতে পারে। তবে এমন আশাঙ্খা থেকে উত্তোলনের উপায় হতে পারে কারিগরি শিক্ষার বিস্তার ও বাস্তবমুখী শিক্ষাব্যবস্থার বাস্তবায়ন। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত মানের হলেও কর্মমুখী শিক্ষা এখনো প্রচলন করা সম্ভব হয়নি। তাই তরুণদের বাস্তবমুখী শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেদিয়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে মোকাবিলা করতে হবে। কেননা আগামী পৃথিবী হবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যেখানে প্রতিনিয়ত কর্মপরিবর্তন ও নতুন নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব ও পুড়ো বিশ্বের গতিপথের পরিবর্তন সাধিত হবে। যা কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা বা প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ব গড়ে উঠবে।

বিপ্লব আলী

ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়