শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলার হার কমেছে ২৪ শতাংশ

করোনাভাইরাসের প্রভাবে শিল্পখাতে সার্বিক কর্মকা-ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে সব ধরনের শিল্পের উপকরণ আমদানিতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। নতুন শিল্প স্থাপন বা পুরোনো শিল্প আধুনিকায়নে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, শিল্পপণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য থেকে পূর্ণাঙ্গ পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানির পরিমাণ বেশ কমে গেছে। এতে একদিকে নতুন শিল্প স্থাপনের গতি কমে গেছে। অন্যদিকে চাহিদা কম থাকায় চলমান শিল্পগুলো সক্ষমতা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি একাধিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলার হার কমেছে ২৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। একই সময়ে আমদানি কমেছে ৩৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা কমেছিল শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ। আমদানি কমেছিল ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ। পুরো অর্থবছরে গড়ে আমদানি কমেছিল ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে আমদানি কমেছিল ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ, ২০১৮-১৯ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে কমছে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির পরিমাণ। এতে নতুন শিল্প স্থাপনের গতি ও চালু শিল্প আধুনিকায়নের গতি কমে গেছে।

প্রতিবেদনের তথ্যে আরও দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। একই সময়ে এলসি খোলা বেড়েছে ৫ দশমিক ০৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এলসি খোলা কমেছিল ১ দশমিক ২৪ শতাংশ। আমদানি বেড়েছিল ১ দশমিক ৬০ শতাংশ। কিন্তু পুরো অর্থবছরের হিসাবে এ খাতের আমদানি কমেছিল ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন শিল্প স্থাপন ও চালু শিল্প আধুনিকায়ন কম হওয়ায় শিল্পের কাঁচামালের চাহিদা কমেছে। এছাড়া করোনার কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমায় পণ্য বিক্রি কম হচ্ছে। এতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো পুরো সক্ষমতা কাজে লাগাতে পারছে না। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা বেড়েছে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। একই সময়ে আমদানি কমেছে ১৪ দশমিক ০৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে আমদানি কমেছিল ১৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, অনেক শিল্প মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানি করে তা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ পণ্য তৈরি করে। এ খাতের শিল্পগুলো সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছে না চাহিদা কমার কারণে। রপ্তানিমুখী শিল্পগুলো ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানি করে। সেগুলো দিয়ে পণ্য তৈরির পর রপ্তানি করে। গত দুই অর্থবছর ধরে এ খাতের কাঁচামাল আমদানিতেও মন্দা চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আমদানি কমেছে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এলসি খোলা কমেছিল ৭ দশমিক ০২ শতাংশ এবং আমদানি কমেছিল ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

শনিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২১ , ১১ বৈশাখ ১৪২৮ ১১ রমজান ১৪৪২

শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলার হার কমেছে ২৪ শতাংশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

করোনাভাইরাসের প্রভাবে শিল্পখাতে সার্বিক কর্মকা-ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে সব ধরনের শিল্পের উপকরণ আমদানিতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। নতুন শিল্প স্থাপন বা পুরোনো শিল্প আধুনিকায়নে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, শিল্পপণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য থেকে পূর্ণাঙ্গ পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানির পরিমাণ বেশ কমে গেছে। এতে একদিকে নতুন শিল্প স্থাপনের গতি কমে গেছে। অন্যদিকে চাহিদা কম থাকায় চলমান শিল্পগুলো সক্ষমতা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি একাধিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলার হার কমেছে ২৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। একই সময়ে আমদানি কমেছে ৩৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা কমেছিল শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ। আমদানি কমেছিল ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ। পুরো অর্থবছরে গড়ে আমদানি কমেছিল ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে আমদানি কমেছিল ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ, ২০১৮-১৯ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে কমছে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির পরিমাণ। এতে নতুন শিল্প স্থাপনের গতি ও চালু শিল্প আধুনিকায়নের গতি কমে গেছে।

প্রতিবেদনের তথ্যে আরও দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। একই সময়ে এলসি খোলা বেড়েছে ৫ দশমিক ০৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এলসি খোলা কমেছিল ১ দশমিক ২৪ শতাংশ। আমদানি বেড়েছিল ১ দশমিক ৬০ শতাংশ। কিন্তু পুরো অর্থবছরের হিসাবে এ খাতের আমদানি কমেছিল ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন শিল্প স্থাপন ও চালু শিল্প আধুনিকায়ন কম হওয়ায় শিল্পের কাঁচামালের চাহিদা কমেছে। এছাড়া করোনার কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমায় পণ্য বিক্রি কম হচ্ছে। এতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো পুরো সক্ষমতা কাজে লাগাতে পারছে না। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা বেড়েছে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। একই সময়ে আমদানি কমেছে ১৪ দশমিক ০৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে আমদানি কমেছিল ১৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, অনেক শিল্প মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানি করে তা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ পণ্য তৈরি করে। এ খাতের শিল্পগুলো সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছে না চাহিদা কমার কারণে। রপ্তানিমুখী শিল্পগুলো ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানি করে। সেগুলো দিয়ে পণ্য তৈরির পর রপ্তানি করে। গত দুই অর্থবছর ধরে এ খাতের কাঁচামাল আমদানিতেও মন্দা চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আমদানি কমেছে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এলসি খোলা কমেছিল ৭ দশমিক ০২ শতাংশ এবং আমদানি কমেছিল ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ।