শপিংমল দোকানপাট কাল থেকে খোলা

২৮ এপ্রিলের পর শিথিল হচ্ছে বিধিনিষেধ : প্রতিমন্ত্রী 

চলমান বিধিনিষেধের মধ্যেই কাল থেকে দোকানপাট ও শপিংমল খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল খোলা থাকবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে বেচাকেনা করতে হবে। রোববার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

এদিকে, করোনাভাইরাস সংক্রমণে জারি করা চলমান বিধিনিষেধের শর্ত শিথিল হতে যাচ্ছে। ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত জারি করা এই কঠোর বিধিনিষেধের মেয়াদ আর বাড়ছে না। শীঘ্রই এ বিষয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত জানাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গতকাল জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, বিধিনিষেধের বদলে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ কর্মসূচি আরও কঠোরভাবে পালনে গুরুত্ব দেবে সরকার। সেই সঙ্গে গুরুত্ব দেয়া হবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে। এ ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধের বিষয় আর সেভাবে থাকবে না।

গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় প্রতিমন্ত্রী এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, জীবন-জীবিকা, অর্থনীতিসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়েই এ ধরনের চিন্তা বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে সরকার।

মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানলে আমরা জীবন ও জীবিকা দু’টোই চালাতে পারব। সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পর থেকে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে বলে বার্তায় জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমরা সচেতন হলে এই সংক্রমণ আরও কমবে। তাই বিধিনিষেধ শিথিল করে জনগণকে সচেতন করা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে গুরুত্ব দেয়া হবে। এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ২৮ এপ্রিলের মধ্যে জানানো হবে। গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়ার বিষয়েও ভাবা হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনুমতি দেয়া হলেও তাদের কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তবে তখন জীবনযাত্রার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়ে আগামী ২৮ এপ্রিলের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সেখানে প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা, পরিবহন কীভাবে চলবে, সে সম্পর্কে নির্দেশনা থাকবে।

এর আগে, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণে ব্যাপক ঊর্ধ্বগতি দেখা দিলে ২৯ মার্চ ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে সরকার। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর লকডাউন আরোপের পরামর্শ দিচ্ছিলেন। পরে সরকার ৫ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত গণপরিবহন বন্ধ, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়া, শপিং মল ও দোকানপাট বন্ধ রাখার মতো বিধিনিষেধ জারি করে। একদিন পর অবশ্য সিটি করপোরেশন এলাকায় সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। এর পরদিন শপিং মল ও দোকানপাটও খুলে দেয়া হয়।

সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সরকার ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ আরোপ করে। সেই বিধিনিষেধ পরে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই বিধিনিষেধের আওতায় গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নাগরিকদের বাইরে বের হতেও নিষেধ করা আছে। এই বিধিনিষেধের আওতায় কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়া শপিং মল ও দোকানপাটও বন্ধ ছিল। লকডাউনের মধ্যে ব্যাংকে লেনদেন করা যাচ্ছে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। সতর্কতার অংশ হিসেবে সীমিত জনবল দিয়ে বিভিন্ন শাখা চালু রেখেছে ব্যাংকগুলো। তবে শেষ দফায় লকডাউন ঘোষণার আগে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনায় ও ঈদ সামনে রেখে তা শিথিল করার ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে দোকানপাট খোলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

গতকালের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘ব্যাপকসংখ্যক মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয় বিবেচনা করে নির্দেশনা জারি করা হলো, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বাজার/সংস্থার ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

এদিকে, লকডাউনের মধ্যে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় গতকাল রাজধানীতে যানবাহনের চাপ ছিল অনেক কম। অন্যদিনের তুলনায় চেকপোস্টগুলোতেও অনেকটা ঢিলাঢালা ভাব লক্ষ্য করা যায়। তবে যেসব চেকপোস্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্বে ছিলেন সেখানে বাইরে বের হওয়া অনেককে জেরার মুখে পড়তে হয়েছে। তাদের বের হওয়ার পেছনে যৌক্তিক কারণ আছে কিনা বা মুভমেন্ট পাস আছে কিনা তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, লোকজন কম বের হয়েছেন রাস্তায়। যানবাহনের চাপ ছিল অনেক কম। প্রধান প্রধান সড়কে কদাচিৎ সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা চলতে দেখা গেছে। মোটরসাইকেলে দুজন আরোহী থাকলে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। পরিবারের সদস্য না হলে জরিমানা ও মামলা দেয়া হচ্ছে। তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সার্জেন্ট চন্দন চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রয়োজন মেটাতে অনেকেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন। আমরা তাদের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি জিজ্ঞাসাবাদ করছি। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। যুক্তিসঙ্গত কোন কারণ না পেলে জরিমানা কিংবা মামলা করছি।’

শনিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২১ , ১১ বৈশাখ ১৪২৮ ১১ রমজান ১৪৪২

শপিংমল দোকানপাট কাল থেকে খোলা

২৮ এপ্রিলের পর শিথিল হচ্ছে বিধিনিষেধ : প্রতিমন্ত্রী 

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

চলমান বিধিনিষেধের মধ্যেই কাল থেকে দোকানপাট ও শপিংমল খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল খোলা থাকবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে বেচাকেনা করতে হবে। রোববার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

এদিকে, করোনাভাইরাস সংক্রমণে জারি করা চলমান বিধিনিষেধের শর্ত শিথিল হতে যাচ্ছে। ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত জারি করা এই কঠোর বিধিনিষেধের মেয়াদ আর বাড়ছে না। শীঘ্রই এ বিষয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত জানাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গতকাল জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, বিধিনিষেধের বদলে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ কর্মসূচি আরও কঠোরভাবে পালনে গুরুত্ব দেবে সরকার। সেই সঙ্গে গুরুত্ব দেয়া হবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে। এ ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধের বিষয় আর সেভাবে থাকবে না।

গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় প্রতিমন্ত্রী এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, জীবন-জীবিকা, অর্থনীতিসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়েই এ ধরনের চিন্তা বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে সরকার।

মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানলে আমরা জীবন ও জীবিকা দু’টোই চালাতে পারব। সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পর থেকে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে বলে বার্তায় জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমরা সচেতন হলে এই সংক্রমণ আরও কমবে। তাই বিধিনিষেধ শিথিল করে জনগণকে সচেতন করা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে গুরুত্ব দেয়া হবে। এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত ২৮ এপ্রিলের মধ্যে জানানো হবে। গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়ার বিষয়েও ভাবা হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনুমতি দেয়া হলেও তাদের কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তবে তখন জীবনযাত্রার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়ে আগামী ২৮ এপ্রিলের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সেখানে প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা, পরিবহন কীভাবে চলবে, সে সম্পর্কে নির্দেশনা থাকবে।

এর আগে, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণে ব্যাপক ঊর্ধ্বগতি দেখা দিলে ২৯ মার্চ ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে সরকার। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর লকডাউন আরোপের পরামর্শ দিচ্ছিলেন। পরে সরকার ৫ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত গণপরিবহন বন্ধ, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়া, শপিং মল ও দোকানপাট বন্ধ রাখার মতো বিধিনিষেধ জারি করে। একদিন পর অবশ্য সিটি করপোরেশন এলাকায় সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। এর পরদিন শপিং মল ও দোকানপাটও খুলে দেয়া হয়।

সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সরকার ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ আরোপ করে। সেই বিধিনিষেধ পরে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই বিধিনিষেধের আওতায় গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নাগরিকদের বাইরে বের হতেও নিষেধ করা আছে। এই বিধিনিষেধের আওতায় কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের দোকান ছাড়া শপিং মল ও দোকানপাটও বন্ধ ছিল। লকডাউনের মধ্যে ব্যাংকে লেনদেন করা যাচ্ছে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। সতর্কতার অংশ হিসেবে সীমিত জনবল দিয়ে বিভিন্ন শাখা চালু রেখেছে ব্যাংকগুলো। তবে শেষ দফায় লকডাউন ঘোষণার আগে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনায় ও ঈদ সামনে রেখে তা শিথিল করার ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে দোকানপাট খোলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।

গতকালের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘ব্যাপকসংখ্যক মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয় বিবেচনা করে নির্দেশনা জারি করা হলো, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বাজার/সংস্থার ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

এদিকে, লকডাউনের মধ্যে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় গতকাল রাজধানীতে যানবাহনের চাপ ছিল অনেক কম। অন্যদিনের তুলনায় চেকপোস্টগুলোতেও অনেকটা ঢিলাঢালা ভাব লক্ষ্য করা যায়। তবে যেসব চেকপোস্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্বে ছিলেন সেখানে বাইরে বের হওয়া অনেককে জেরার মুখে পড়তে হয়েছে। তাদের বের হওয়ার পেছনে যৌক্তিক কারণ আছে কিনা বা মুভমেন্ট পাস আছে কিনা তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, লোকজন কম বের হয়েছেন রাস্তায়। যানবাহনের চাপ ছিল অনেক কম। প্রধান প্রধান সড়কে কদাচিৎ সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা চলতে দেখা গেছে। মোটরসাইকেলে দুজন আরোহী থাকলে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। পরিবারের সদস্য না হলে জরিমানা ও মামলা দেয়া হচ্ছে। তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সার্জেন্ট চন্দন চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রয়োজন মেটাতে অনেকেই ঘর থেকে বের হচ্ছেন। আমরা তাদের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি জিজ্ঞাসাবাদ করছি। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। যুক্তিসঙ্গত কোন কারণ না পেলে জরিমানা কিংবা মামলা করছি।’