করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর রেকর্ড ভারতে

অক্সিজেন সংকট, দিল্লিতে ২৫ রোগীর মৃত্যু, শঙ্কায় ৬০

কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারত। দৈনিক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩ লাখের গণ্ডিও ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যুতেও রেকর্ড গড়েছে দেশটি। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ২২০০-এরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা এযাবতকালে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। টাইমস অব ইন্ডিয়া

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে নতুন করে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৩০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এই সময়ে মারা গেছেন ২ হাজার ২৬৩ জন। যেটি দৈনিক মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড। বর্তমানে দেশটিতে ২৪ লাক একটিভ রোগী রয়েছেন।

আগের দিন দেশটিতে রেকর্ডসংখ্যক ২ হাজার ১০৪ জন করোনায় মারা যান। তার আগের দিন রেকর্ডসংখ্যক ২ হাজার ২৩ জন মারা যান। এর আগে ভারতে গত বছরের ১৬ জুন এক দিনে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

ভারত সরকারের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৬২ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত ভারতে করোনায় মারা গেছেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৯২০ জন।

বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে ভারত। ভারতের পর রয়েছে ব্রাজিল। সংক্রমণের দিক দিয়ে সম্প্রতি ব্রাজিলকে টপকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে ভারত।

সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দিল্লিসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। আইসিইউ বেড না থাকায় অনেক রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারত কোভিড-১৯ সংক্রমণ এবং মৃত্যুর রেকর্ড করছে যার ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, এই বিস্তার রোধে কেন্দ্রীয় সরকার আরও একটি দেশব্যাপী লকডাউন বাস্তবায়ন করতে বাধ্য হতে পারে।

এদিকে দিল্লির গঙ্গা রাম হাসপাতাল এক বিবৃতিতে জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় গুরুতর অসুস্থ ২৫ জন রোগী মারা গেছেন। দুই ঘণ্টা পর অক্সিজেন ফুরিয়ে যাবে। ভ্যান্টিলেটর ও বাইপ্যাপগুলো কার্যকরভাবে কাজ করছে না। সম্ভবত বড় সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। আরও ৬০ জন গুরুতর অসুস্থ রোগীর জীবন হুমকিতে আছে, দ্রুত উদ্যোগ নেয়া দরকার।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় গুরুতর অসুস্থ ২৫ জন রোগী মারা গেছেন। দুই ঘণ্টা পর অক্সিজেন ফুরিয়ে যাবে। ভ্যান্টিলেটর ও বাইপ্যাপগুলো কার্যকরভাবে কাজ করছে না। সম্ভবত, বড় সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। আরও ৬০ জন গুরুতর অসুস্থ রোগীর জীবন হুমকিতে আছে, দ্রুত উদ্যোগ নেয়া দরকার।’

বিবিসি লিখেছে, দিল্লির ছয়টি হাসপাতালে অক্সিজেন এরই মধ্যে পুরোপুরি ফুরিয়ে গেছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, অন্যান্য হাসপাতালে যে পরিমাণ অক্সিজেন আছে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা ফুরিয়ে যাবে।

অক্সিজেনের অপেক্ষায় এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। প্রতিটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যাগুলোতে ৯৯ শতাংশের বেশি রোগী ভর্তি আছে। এদের বেশির ভাগই কোরানা রোগী।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে ভারত। প্রতিনিয়তই দেশটিতে করোনা শনাক্তে বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে। এদিন তিন লাখের বেশি শনাক্ত দেখেছে ভারত।

সৌরভ ভরদ্বাজ নামে ভারতের এক রাজনীতিক দিল্লির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অক্সিজেনের জন্য সাহায্য চেয়ে হিন্দি ভাষায় একটি টুইট করেছেন তিনি।

টুইটে লিখেছেনÑ ‘অনেক মানুষ অক্সিজেনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। অক্সিজেন ছাড়া মানুষগুলো পানিহীন মাছের মতোই মারা পড়বে। এখন সময় একসঙ্গে কাজ করার।’

ভারতের বিবিসি প্রতিনিধি যোগিতা লিমায়ে জানান, ভারতের সবচেয়ে ভালো স্বাস্থ্য অবকাঠামো হলো দিল্লির। কিন্তু করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তা এখন ভেঙে পড়েছে।

শনিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২১ , ১১ বৈশাখ ১৪২৮ ১১ রমজান ১৪৪২

করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর রেকর্ড ভারতে

অক্সিজেন সংকট, দিল্লিতে ২৫ রোগীর মৃত্যু, শঙ্কায় ৬০

image

কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারত। দৈনিক আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩ লাখের গণ্ডিও ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যুতেও রেকর্ড গড়েছে দেশটি। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ২২০০-এরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা এযাবতকালে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। টাইমস অব ইন্ডিয়া

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে নতুন করে ৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৩০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এই সময়ে মারা গেছেন ২ হাজার ২৬৩ জন। যেটি দৈনিক মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড। বর্তমানে দেশটিতে ২৪ লাক একটিভ রোগী রয়েছেন।

আগের দিন দেশটিতে রেকর্ডসংখ্যক ২ হাজার ১০৪ জন করোনায় মারা যান। তার আগের দিন রেকর্ডসংখ্যক ২ হাজার ২৩ জন মারা যান। এর আগে ভারতে গত বছরের ১৬ জুন এক দিনে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

ভারত সরকারের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৬২ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত ভারতে করোনায় মারা গেছেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৯২০ জন।

বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে ভারত। ভারতের পর রয়েছে ব্রাজিল। সংক্রমণের দিক দিয়ে সম্প্রতি ব্রাজিলকে টপকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে ভারত।

সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দিল্লিসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। আইসিইউ বেড না থাকায় অনেক রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারত কোভিড-১৯ সংক্রমণ এবং মৃত্যুর রেকর্ড করছে যার ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, এই বিস্তার রোধে কেন্দ্রীয় সরকার আরও একটি দেশব্যাপী লকডাউন বাস্তবায়ন করতে বাধ্য হতে পারে।

এদিকে দিল্লির গঙ্গা রাম হাসপাতাল এক বিবৃতিতে জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় গুরুতর অসুস্থ ২৫ জন রোগী মারা গেছেন। দুই ঘণ্টা পর অক্সিজেন ফুরিয়ে যাবে। ভ্যান্টিলেটর ও বাইপ্যাপগুলো কার্যকরভাবে কাজ করছে না। সম্ভবত বড় সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। আরও ৬০ জন গুরুতর অসুস্থ রোগীর জীবন হুমকিতে আছে, দ্রুত উদ্যোগ নেয়া দরকার।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় গুরুতর অসুস্থ ২৫ জন রোগী মারা গেছেন। দুই ঘণ্টা পর অক্সিজেন ফুরিয়ে যাবে। ভ্যান্টিলেটর ও বাইপ্যাপগুলো কার্যকরভাবে কাজ করছে না। সম্ভবত, বড় সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। আরও ৬০ জন গুরুতর অসুস্থ রোগীর জীবন হুমকিতে আছে, দ্রুত উদ্যোগ নেয়া দরকার।’

বিবিসি লিখেছে, দিল্লির ছয়টি হাসপাতালে অক্সিজেন এরই মধ্যে পুরোপুরি ফুরিয়ে গেছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, অন্যান্য হাসপাতালে যে পরিমাণ অক্সিজেন আছে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা ফুরিয়ে যাবে।

অক্সিজেনের অপেক্ষায় এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। প্রতিটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যাগুলোতে ৯৯ শতাংশের বেশি রোগী ভর্তি আছে। এদের বেশির ভাগই কোরানা রোগী।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে ভারত। প্রতিনিয়তই দেশটিতে করোনা শনাক্তে বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে। এদিন তিন লাখের বেশি শনাক্ত দেখেছে ভারত।

সৌরভ ভরদ্বাজ নামে ভারতের এক রাজনীতিক দিল্লির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অক্সিজেনের জন্য সাহায্য চেয়ে হিন্দি ভাষায় একটি টুইট করেছেন তিনি।

টুইটে লিখেছেনÑ ‘অনেক মানুষ অক্সিজেনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। অক্সিজেন ছাড়া মানুষগুলো পানিহীন মাছের মতোই মারা পড়বে। এখন সময় একসঙ্গে কাজ করার।’

ভারতের বিবিসি প্রতিনিধি যোগিতা লিমায়ে জানান, ভারতের সবচেয়ে ভালো স্বাস্থ্য অবকাঠামো হলো দিল্লির। কিন্তু করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তা এখন ভেঙে পড়েছে।