বনবিভাগের অব্যবহৃত জমিতে ঠাঁই হচ্ছে না ভিটেহারা ঢালচরের ভূমিহীনদের

চরফ্যাসনের সাগর মোহনার ঢালচরে বনবিভাগের দখলে থাকা অব্যবহৃত প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর সরকারি জমি অর্ধশত বছর ধরে অব্যবহৃত পড়ে আছে। পাশাপাশি মেঘনার ভাঙনে গত ১০ বছরে এই ঢালচরের ৩ হাজার পরিবারের ১০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। বনবিভাগের ছড়িয়ে দেয়া আইনি জালের ফাঁস গলিয়ে অব্যবহৃত সরকারি এই জমিতে গৃহহীনদের ঠাঁই মিলছে না। ফলে মেঘনার ভাঙনে সর্বহারা ভূমিহীন পরিবারগুলো জোয়ার-ভাটায় প্লাবিত সাগরকূলে ভাসমান জীবন-যাপন করছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাগর মোহনার ঢালচর ২০১০ সালে চরফ্যাসন উপজেলার ১৯ নং ইউনিয়ন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। দুর্ভাগ্যবশত ইউনিয়নের মর্যাদা পাওয়ার পর প্রমত্তা মেঘনা ঢালচরের প্রতি বিরূপ হয়। মেঘনার থাবায় গত এক দশকে ঢালচর ইউনিয়নের দুই-তৃতীয়াংশ মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। মেঘনায় হারিয়ে যাওয়া ঢালচরের ৩ হাজার পরিবারের ১০ হাজার মানুষ গৃহহীন ও ভূমিহীন হয়ে পড়ে। গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারগুলো জোয়ার-ভাটায় প্লাবিত সগারপাড়ে আশ্রয় নিয়েছে।

পূর্ব ঢালচর এবং দক্ষিণ-পশ্চিম ঢালচরে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর জমি ফাঁকা পড়ে থাকলেও বনবিভাগের দেয়া আইনি ফাঁক গলে ওই জমিতে গৃহহীন ভাসমান মানুষের ঠাঁই মিলছে না। ভূমিহীন কৃষক আবদুল কালাম মেম্বার জানান, প্রায় অর্ধশত বছর আগে পূর্ব ঢালচর এবং দক্ষিণ-পশ্চিম ঢালচরের তারুয়ায় বনবিভাগ বনায়ন করে। বনায়নের সময় নতুন জেগে উঠা চরের চারপাশে বনায়ন করলেও বিস্তৃত চরের মাঝখানে শতশত একর জমি ফাঁকা রাখা হয়েছে। এভাবে দুটি চরের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর জমি অর্ধশত বছর ধরে ফাঁকা পড়ে আছে। যে জমি বনবিভাগের বনায়নের কাজে আসেনি আবার বনবিভাগের বাঁধার কারণে গৃহহীন মানুষের ঠিকানাও হতে পারেনি।

স্থানীয় ভূমিহীনরা জানান, বনবিভাগের এই অব্যবহৃত জমিতে বসতির ইস্যুতে আদালত ভূমিহীনদের অনুকূলে ওই জমি বন্দোবস্ত প্রদানের রায় দিয়েছেন। কিন্ত ভোলা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আদালতের সেই রায় কার্যকর করা যায়নি। একদিকে সাড়ে ৪ হাজার একর সরকারি জমি অব্যবহৃত পড়ে আছে। অন্যদিকে ১০ হাজার গৃহহীন পরিবার সাগারের পানিতে ভাসছে। এই বাস্তবতায় গৃহহীন পরিবারগুলোর মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে।

চরফ্যাসন উপজেলা বন কর্মকর্তা আলাউদ্দিন জানান, পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম ঢালচরে সাড়ে ৪ হাজার একর খাসজমি অব্যবহৃত আছে, যেখানে ঢালচরের মেঘনার ভাঙনে আশ্রয়হীন সব পরিবারের বসতি সম্ভব। কিন্তু বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ছাড়া আমার একার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব না। চরফ্যাসন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিপন বিশ^াস জানান, বিষয়টি বন ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের যৌথ সিদ্ধান্তের ব্যাপর। আমরা স্থানীয় প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করব।

ভোলা জেলা প্রশাসক তৌফিক এলাহী চৌধুরী জানান, আমি ভোলাতে সদ্য যোগদান করেছি। শাখা অফিসে খবর নিলে বিষয়টি জানতে পারবেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মামুন আল ফারুক জানান, ওই জমিগুলো বনবিভাগ তাদের গেজেটভুক্ত জমি হিসেবে দাবি করছে । যতদিন পর্যন্ত ওই জমি খাস খতিয়ানভুক্ত না হবে ততদিন পর্যন্ত বন্দবস্ত দেয়া যাবে না তবে আমরা ঢালচরের নদী ভাঙনে গৃহহীনদের মধ্যে ওই জমি যাতে বন্দবস্ত দেয়া যায় সে প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছি।

শনিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২১ , ১১ বৈশাখ ১৪২৮ ১১ রমজান ১৪৪২

বনবিভাগের অব্যবহৃত জমিতে ঠাঁই হচ্ছে না ভিটেহারা ঢালচরের ভূমিহীনদের

প্রতিনিধি, চরফ্যাসন (ভোলা)

চরফ্যাসনের সাগর মোহনার ঢালচরে বনবিভাগের দখলে থাকা অব্যবহৃত প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর সরকারি জমি অর্ধশত বছর ধরে অব্যবহৃত পড়ে আছে। পাশাপাশি মেঘনার ভাঙনে গত ১০ বছরে এই ঢালচরের ৩ হাজার পরিবারের ১০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। বনবিভাগের ছড়িয়ে দেয়া আইনি জালের ফাঁস গলিয়ে অব্যবহৃত সরকারি এই জমিতে গৃহহীনদের ঠাঁই মিলছে না। ফলে মেঘনার ভাঙনে সর্বহারা ভূমিহীন পরিবারগুলো জোয়ার-ভাটায় প্লাবিত সাগরকূলে ভাসমান জীবন-যাপন করছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাগর মোহনার ঢালচর ২০১০ সালে চরফ্যাসন উপজেলার ১৯ নং ইউনিয়ন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। দুর্ভাগ্যবশত ইউনিয়নের মর্যাদা পাওয়ার পর প্রমত্তা মেঘনা ঢালচরের প্রতি বিরূপ হয়। মেঘনার থাবায় গত এক দশকে ঢালচর ইউনিয়নের দুই-তৃতীয়াংশ মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। মেঘনায় হারিয়ে যাওয়া ঢালচরের ৩ হাজার পরিবারের ১০ হাজার মানুষ গৃহহীন ও ভূমিহীন হয়ে পড়ে। গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারগুলো জোয়ার-ভাটায় প্লাবিত সগারপাড়ে আশ্রয় নিয়েছে।

পূর্ব ঢালচর এবং দক্ষিণ-পশ্চিম ঢালচরে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর জমি ফাঁকা পড়ে থাকলেও বনবিভাগের দেয়া আইনি ফাঁক গলে ওই জমিতে গৃহহীন ভাসমান মানুষের ঠাঁই মিলছে না। ভূমিহীন কৃষক আবদুল কালাম মেম্বার জানান, প্রায় অর্ধশত বছর আগে পূর্ব ঢালচর এবং দক্ষিণ-পশ্চিম ঢালচরের তারুয়ায় বনবিভাগ বনায়ন করে। বনায়নের সময় নতুন জেগে উঠা চরের চারপাশে বনায়ন করলেও বিস্তৃত চরের মাঝখানে শতশত একর জমি ফাঁকা রাখা হয়েছে। এভাবে দুটি চরের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর জমি অর্ধশত বছর ধরে ফাঁকা পড়ে আছে। যে জমি বনবিভাগের বনায়নের কাজে আসেনি আবার বনবিভাগের বাঁধার কারণে গৃহহীন মানুষের ঠিকানাও হতে পারেনি।

স্থানীয় ভূমিহীনরা জানান, বনবিভাগের এই অব্যবহৃত জমিতে বসতির ইস্যুতে আদালত ভূমিহীনদের অনুকূলে ওই জমি বন্দোবস্ত প্রদানের রায় দিয়েছেন। কিন্ত ভোলা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আদালতের সেই রায় কার্যকর করা যায়নি। একদিকে সাড়ে ৪ হাজার একর সরকারি জমি অব্যবহৃত পড়ে আছে। অন্যদিকে ১০ হাজার গৃহহীন পরিবার সাগারের পানিতে ভাসছে। এই বাস্তবতায় গৃহহীন পরিবারগুলোর মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে।

চরফ্যাসন উপজেলা বন কর্মকর্তা আলাউদ্দিন জানান, পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম ঢালচরে সাড়ে ৪ হাজার একর খাসজমি অব্যবহৃত আছে, যেখানে ঢালচরের মেঘনার ভাঙনে আশ্রয়হীন সব পরিবারের বসতি সম্ভব। কিন্তু বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ছাড়া আমার একার পক্ষে কিছুই করা সম্ভব না। চরফ্যাসন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিপন বিশ^াস জানান, বিষয়টি বন ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের যৌথ সিদ্ধান্তের ব্যাপর। আমরা স্থানীয় প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করব।

ভোলা জেলা প্রশাসক তৌফিক এলাহী চৌধুরী জানান, আমি ভোলাতে সদ্য যোগদান করেছি। শাখা অফিসে খবর নিলে বিষয়টি জানতে পারবেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মামুন আল ফারুক জানান, ওই জমিগুলো বনবিভাগ তাদের গেজেটভুক্ত জমি হিসেবে দাবি করছে । যতদিন পর্যন্ত ওই জমি খাস খতিয়ানভুক্ত না হবে ততদিন পর্যন্ত বন্দবস্ত দেয়া যাবে না তবে আমরা ঢালচরের নদী ভাঙনে গৃহহীনদের মধ্যে ওই জমি যাতে বন্দবস্ত দেয়া যায় সে প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছি।