ওষুধের অপব্যবহার রোধ করা জরুরি

ওষুধ বা Drug মূলত কোন রোগ নির্ণয় এবং সে রোগ প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত হয়। যাতে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বা চিকিৎসা নিমিত্তে ব্যবহূত দ্রব্য হিসেবে সম্বোধন করা হয়। বর্তমান বাংলাদেশে ঔষধ শিল্প একটি ভাল অবস্থানে রয়েছে। ১৯৮২সালে ঔষধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ আইন প্রণয়নের পর এই শিল্প উন্নতির মুখ দেখেছে বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে ঔষধ শিল্পের শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ বাজার প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার উপরে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ৬৫০ কোটি টাকারও বেশি। একটি শিল্প খাতে যদি কোনো ধরনের উন্নতি করতে চায় তাহলে তার প্রবৃদ্ধির হার তুলনামূলক অনেক বেশি হতে হয়। আর এই শিল্পে বর্তমানে প্রবৃদ্ধির হার ৯ শতাংশের উপর। এই থেকে পরিলক্ষিত হয় ঔষধ শিল্পে অতীত ও বর্তমান অবস্থার পার্থক্য। অতীতে একটা সময় ছিল যখন শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশ বাইরে থেকে প্রচুর টাকার ওষুধ আমদানি করতে হতো। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে এই শিল্পে ভালো একটি অবস্থান অর্জন করতে পেরেছে।

বর্তমানে দেশি-বিদেশি মিলে সরকার অনুমোদিত ওষুধ কারখানা রয়েছে ২৫২টি। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে ২৬৮টি ইউনানি, ২০১টি আয়ুর্বেদি, ৯টি হারবাল ও ৭৯টি হোমিওপ্যাথি ও বায়োকেমিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মিল দেশের ৯৮ শতাংশ ওষুধ ল চাহিদা পূরণ করে এবং বিশ্বের ১৬০টির ও বেশি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। এক সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে বর্তমানে প্রায় ২০০ কোটি টাকার মতো ওষুধ উৎপাদন হয়। দেশের অর্থনীতিতে যা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বিদেশি কোম্পানি থাকা সত্ত্বেও ঔষধ ব্যবসার ৭৫শতাংশের ও বেশি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে দেশীয় কোম্পানিগুলোর হাতে। এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এতগুলো কোম্পানি থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ২০টি কোম্পানি ঔষধ উৎপাদনে মূখ্য ভূমিকা পালন করে। তবে তন্মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে মাত্র ৬টি। যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় খুবই স্বল্প। একটা ওষুধ উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ সব কিছুর তত্ত্বাবধানে থাকে ঔষধ-প্রশাসন সংক্রান্ত আইন। এই আইনের মূল ভিত্তি হচ্ছে ১৯৪০ সালের ড্রাগ এ্যাক্ট আইন এবং এই আইনের উপর ভিত্তি করে তৈরি বিধিবিধান।

তবে বর্তমানে ঔষধের অপব্যবহার মারাত্মক আকার ধারণ করছে। যা উন্নত, অনুন্নত, উন্নয়নশীল প্রত্যেকটি দেশকে গ্রাস করছে। বাংলাদেশে এই সমস্যা প্রকট। এমন কিছু ওষুধ রয়েছে যা বেআইনিভাবে তৈরি করা হয় এবং চোরাচালানের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে এবং বর্হিদেশে পাঠানো হয়। এসব দিক নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যতটুকু কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা নিতে না পারায় এই সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। কিছু ওষুধ রয়েছে যা চড়া বাজার মূল্য এবং পাশ্চাত্যদেশের গোপন বাজারগুলোতে চাহিদা প্রচুর থাকায় এসব ওষুধ অবৈধভাবে পাচার করা হয়। ফলে ওষুধ উৎপাদনে যেসব ড্রাগ ব্যবহৃত হয় তা ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

একটা সময় উৎপাদনকারী দেশ ভোক্তাদেশে পরিণত হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। ওষুধের অপব্যবহারের ফলে মানুষ বিষণœতায় ভোগে, মানসিক সমস্যা দেখা দেয়, আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ে। অনেক সময় কোন ওষুধ একটানা কেউ সেবন করলে সেই ওষুধের প্রতি তার মারাত্মক আসক্তির জন্ম হয়। যেমন কেউ যদি কয়েকদিন ঘুমের ওষুধ সেবন করে তাহলে তার ক্ষেত্রে সেই ওষুধ অন্যরকম আসক্তি তৈরি করবে। আবার দীর্ঘ দিন ধরে কেউ যদি ব্যথার জন্য ওপিওড নিয়ে থাকে তার মধ্যে ও আসক্তি দেখা দিবে। এতে ওষুধের মাধ্যমে উপকার নয় বরং ক্ষতি দেখা দিবে। তাই সরকারের উচিত দ্রুত ওষুধের অপব্যবহার রোধ করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া। নাহয় অদূর ভবিষ্যতে ওষুধ শিল্প ক্ষতির মুখে পড়বে।

ইসরাত জাহান

শনিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২১ , ১১ বৈশাখ ১৪২৮ ১১ রমজান ১৪৪২

ওষুধের অপব্যবহার রোধ করা জরুরি

ওষুধ বা Drug মূলত কোন রোগ নির্ণয় এবং সে রোগ প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত হয়। যাতে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বা চিকিৎসা নিমিত্তে ব্যবহূত দ্রব্য হিসেবে সম্বোধন করা হয়। বর্তমান বাংলাদেশে ঔষধ শিল্প একটি ভাল অবস্থানে রয়েছে। ১৯৮২সালে ঔষধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ আইন প্রণয়নের পর এই শিল্প উন্নতির মুখ দেখেছে বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে ঔষধ শিল্পের শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ বাজার প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার উপরে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ৬৫০ কোটি টাকারও বেশি। একটি শিল্প খাতে যদি কোনো ধরনের উন্নতি করতে চায় তাহলে তার প্রবৃদ্ধির হার তুলনামূলক অনেক বেশি হতে হয়। আর এই শিল্পে বর্তমানে প্রবৃদ্ধির হার ৯ শতাংশের উপর। এই থেকে পরিলক্ষিত হয় ঔষধ শিল্পে অতীত ও বর্তমান অবস্থার পার্থক্য। অতীতে একটা সময় ছিল যখন শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশ বাইরে থেকে প্রচুর টাকার ওষুধ আমদানি করতে হতো। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে এই শিল্পে ভালো একটি অবস্থান অর্জন করতে পেরেছে।

বর্তমানে দেশি-বিদেশি মিলে সরকার অনুমোদিত ওষুধ কারখানা রয়েছে ২৫২টি। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে ২৬৮টি ইউনানি, ২০১টি আয়ুর্বেদি, ৯টি হারবাল ও ৭৯টি হোমিওপ্যাথি ও বায়োকেমিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মিল দেশের ৯৮ শতাংশ ওষুধ ল চাহিদা পূরণ করে এবং বিশ্বের ১৬০টির ও বেশি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। এক সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে বর্তমানে প্রায় ২০০ কোটি টাকার মতো ওষুধ উৎপাদন হয়। দেশের অর্থনীতিতে যা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বিদেশি কোম্পানি থাকা সত্ত্বেও ঔষধ ব্যবসার ৭৫শতাংশের ও বেশি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে দেশীয় কোম্পানিগুলোর হাতে। এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এতগুলো কোম্পানি থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ২০টি কোম্পানি ঔষধ উৎপাদনে মূখ্য ভূমিকা পালন করে। তবে তন্মধ্যে বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে মাত্র ৬টি। যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় খুবই স্বল্প। একটা ওষুধ উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ সব কিছুর তত্ত্বাবধানে থাকে ঔষধ-প্রশাসন সংক্রান্ত আইন। এই আইনের মূল ভিত্তি হচ্ছে ১৯৪০ সালের ড্রাগ এ্যাক্ট আইন এবং এই আইনের উপর ভিত্তি করে তৈরি বিধিবিধান।

তবে বর্তমানে ঔষধের অপব্যবহার মারাত্মক আকার ধারণ করছে। যা উন্নত, অনুন্নত, উন্নয়নশীল প্রত্যেকটি দেশকে গ্রাস করছে। বাংলাদেশে এই সমস্যা প্রকট। এমন কিছু ওষুধ রয়েছে যা বেআইনিভাবে তৈরি করা হয় এবং চোরাচালানের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে এবং বর্হিদেশে পাঠানো হয়। এসব দিক নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যতটুকু কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা নিতে না পারায় এই সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। কিছু ওষুধ রয়েছে যা চড়া বাজার মূল্য এবং পাশ্চাত্যদেশের গোপন বাজারগুলোতে চাহিদা প্রচুর থাকায় এসব ওষুধ অবৈধভাবে পাচার করা হয়। ফলে ওষুধ উৎপাদনে যেসব ড্রাগ ব্যবহৃত হয় তা ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

একটা সময় উৎপাদনকারী দেশ ভোক্তাদেশে পরিণত হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। ওষুধের অপব্যবহারের ফলে মানুষ বিষণœতায় ভোগে, মানসিক সমস্যা দেখা দেয়, আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ে। অনেক সময় কোন ওষুধ একটানা কেউ সেবন করলে সেই ওষুধের প্রতি তার মারাত্মক আসক্তির জন্ম হয়। যেমন কেউ যদি কয়েকদিন ঘুমের ওষুধ সেবন করে তাহলে তার ক্ষেত্রে সেই ওষুধ অন্যরকম আসক্তি তৈরি করবে। আবার দীর্ঘ দিন ধরে কেউ যদি ব্যথার জন্য ওপিওড নিয়ে থাকে তার মধ্যে ও আসক্তি দেখা দিবে। এতে ওষুধের মাধ্যমে উপকার নয় বরং ক্ষতি দেখা দিবে। তাই সরকারের উচিত দ্রুত ওষুধের অপব্যবহার রোধ করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া। নাহয় অদূর ভবিষ্যতে ওষুধ শিল্প ক্ষতির মুখে পড়বে।

ইসরাত জাহান