এক ডাক্তার দিয়ে চলছে অষ্টগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স!

কিশোরগঞ্জের হাওড় অধ্যুাষিত অষ্টগ্রাম উপজেলার আড়াই-লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র চিকিৎসার আশ্রয়স্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও লোকবল সঙ্কটের কারণে ভেঙ্গে পড়েছে স্বাস্থ্য সেবা। একজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম তাও আবার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রশাসনিক দায়িত্বে এবং চিকিৎসার দায়িত্ব এক সঙ্গে করতে একদিকে হিমশিম অন্যদিকে বর্তমান করোনার পরিস্থিতিতে সেবার পরির্বতে রোগীদের ভাগ্যে ঝুটছে নানা বিড়ম্বনা। এই উপজেলা হাসপাতালটিতে চিকিৎসক ছাড়াও দিনের পরদিন বছরের পর পর ধরে অসংখ্য পদে লোকবল না থাকায় সমস্যা ও সঙ্কট চরম আকার ধারণ করছে বলে এলাকাবাসীরা জানান। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে যেমন চিকিৎসা সেবা পেতে রোগীদের পড়তে হচ্ছে নানান ভোগান্তিতে তেমনি লোকবলের কারণে চিকিৎসার ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিও নষ্ট হচ্ছে বলে সূত্রে জানা যায়। জানা গেছে, প্রত্যন্ত এই হাওড় উপজেলা ও পার্শ¦বর্তী এলাকার প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষের বসতিপূর্ণ এ এলাকায় ভালো কেন চিকিৎসার ব্যবস্থা বলতে এই উপজেলা সরকারি হাসপাতালটি। জানা গেছে,স্বাধীনতার পর থেকে এই হাসপাতালটি ৩১ শয্যা ছিল গত ৭-৮ বছর আগে ৩১ থেকে ৫০ শয্যা রূপান্তরিত করা হয়েছে কিন্তু বিগত ৭-৮ বছরেও এই হাসপাতালটি ৫১ শষ্যা রুপান্তরিত করা হলেও লোকবল আছে আগের ৩১ শয্যার। এখন পর্যন্ত ৫০ শয্যার লোকবল দেয়া হযনি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান। এই অবস্থায় এই উপজেলা কোন মানুষ যদি মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে ভাগলপুর মেডিকেল, ভৈরব এবং জেলা শহর কিশোরগঞ্জ হাসপাতালে গিয়ে প্রচুর টাকা পয়সা খরচ করে চিকিৎসা করাতে হয় এমন কি গরিব ও অসহায় রোগীদের বিনা চিকিৎসার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করার মতো অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে। এমনকি ঝগড়া-মারামারি রোগীদের চিকিৎসা করা এই উপজেলা থেকে অন্য উপজেলা বা জেলাতে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে বলে স্থানীয় একাধিক লোকজন জানান। বর্তমানে এই মহামারী করোনার সময় হাসপাতালটির এই অবস্থার কারণে স্থানীয় ও সচেতনমহলে লোকজনের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এই হাসপাতালে মঞ্জুরিকৃত চিকিৎসকসহ মোট ১৩৮টি পদের জনবল থাকার কথা থাকলেও পূরণ করা হয়েছিল ৯০টি পদে তাতেও বর্তমানে অতি গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তারসহ ৪৮টি পদে দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। ফলে এই উপজেলা হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবা চরম আকার ধারণ করছে।

বর্তমানে করোনা মহামারীতে হাসপাতালটির এই দূর অবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের চরম উদাসীনতা কারণে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে এবং সরকারি চিকিৎসা সেবার পরির্বতে নানা দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে বলে সচেতনমহলের ভাষ্য। উপজেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই হাসপাতালের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা, জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেস) সার্জারি, মেডিসিন, গাইনী, অর্থো, শিশু, চক্ষু, চর্ম ও যৌন, ইএনটি, কার্ডিও মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার (উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র) ই এম ও, আই এম ও , এ্যানেসথেটিষ্ট, প্যাথলোজিস্ট, ডেন্টাল সার্জন, সহকারী সার্জন, এম ও (ইউনানী)সহ ১৬টি পদ কাগজপত্রে থাকলেও ১৬টি বিপরীতে রয়েছে ৮ জন ডাক্তার। এরমধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) দীর্ঘদিন যাবত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতারে রয়েছেন সংযুক্তিতে। এছাড়াও সহকারী সার্জন আরেকজন রয়েছে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সংযুক্তিতে। বর্তমানে এই উপজেলা হাসপাতালটি শুধুমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা একা। এছাড়াও সঙ্কট রয়েছে নার্স, প্রধান সহকারীর পদও রয়েছে ফাঁকা হিসাবরক্ষক নেই দীর্ঘদিন যাবত, দীর্ঘদিন যাবত পরিছন্নকর্মী না থাকায় স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা রোগীদের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। এই বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবল আহাম্মেদ চিকিৎসকসহ লোকবল সঙ্কটের কথা স্বীকার করে জানান এই বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে এবং যারা পদায়নজনিত বদলি হয়েছে তাদের এখনও ছাড়পত্র দেয়া হয়নি।

এ ব্যপারে কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবর রহমান জানান, এই সঙ্কট বিষয়গুলো নিয়ে ওপরমহলেও কথা হয়েছে বর্তমান করোনার পরিস্থিতির বিবেচনা করে যারা বদলি হয়েছে তাদের ও ছাড়পত্র এখন পযর্ন্ত দেয়া হয়নি এবং এই হাসপাতালে ইতোমধ্যে ৩ জনকে পদায়ন হয়েছে ২-১ দিনের মধ্যে আশাকরি তারা চলে আসবে বলে জানান তিনি।

রবিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২১ , ১২ বৈশাখ ১৪২৮ ১২ রমজান ১৪৪২

এক ডাক্তার দিয়ে চলছে অষ্টগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স!

দেবপদ চক্রবর্তী (অষ্টগ্রাম) কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জের হাওড় অধ্যুাষিত অষ্টগ্রাম উপজেলার আড়াই-লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র চিকিৎসার আশ্রয়স্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও লোকবল সঙ্কটের কারণে ভেঙ্গে পড়েছে স্বাস্থ্য সেবা। একজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম তাও আবার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রশাসনিক দায়িত্বে এবং চিকিৎসার দায়িত্ব এক সঙ্গে করতে একদিকে হিমশিম অন্যদিকে বর্তমান করোনার পরিস্থিতিতে সেবার পরির্বতে রোগীদের ভাগ্যে ঝুটছে নানা বিড়ম্বনা। এই উপজেলা হাসপাতালটিতে চিকিৎসক ছাড়াও দিনের পরদিন বছরের পর পর ধরে অসংখ্য পদে লোকবল না থাকায় সমস্যা ও সঙ্কট চরম আকার ধারণ করছে বলে এলাকাবাসীরা জানান। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে যেমন চিকিৎসা সেবা পেতে রোগীদের পড়তে হচ্ছে নানান ভোগান্তিতে তেমনি লোকবলের কারণে চিকিৎসার ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিও নষ্ট হচ্ছে বলে সূত্রে জানা যায়। জানা গেছে, প্রত্যন্ত এই হাওড় উপজেলা ও পার্শ¦বর্তী এলাকার প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষের বসতিপূর্ণ এ এলাকায় ভালো কেন চিকিৎসার ব্যবস্থা বলতে এই উপজেলা সরকারি হাসপাতালটি। জানা গেছে,স্বাধীনতার পর থেকে এই হাসপাতালটি ৩১ শয্যা ছিল গত ৭-৮ বছর আগে ৩১ থেকে ৫০ শয্যা রূপান্তরিত করা হয়েছে কিন্তু বিগত ৭-৮ বছরেও এই হাসপাতালটি ৫১ শষ্যা রুপান্তরিত করা হলেও লোকবল আছে আগের ৩১ শয্যার। এখন পর্যন্ত ৫০ শয্যার লোকবল দেয়া হযনি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান। এই অবস্থায় এই উপজেলা কোন মানুষ যদি মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে ভাগলপুর মেডিকেল, ভৈরব এবং জেলা শহর কিশোরগঞ্জ হাসপাতালে গিয়ে প্রচুর টাকা পয়সা খরচ করে চিকিৎসা করাতে হয় এমন কি গরিব ও অসহায় রোগীদের বিনা চিকিৎসার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করার মতো অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে। এমনকি ঝগড়া-মারামারি রোগীদের চিকিৎসা করা এই উপজেলা থেকে অন্য উপজেলা বা জেলাতে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে বলে স্থানীয় একাধিক লোকজন জানান। বর্তমানে এই মহামারী করোনার সময় হাসপাতালটির এই অবস্থার কারণে স্থানীয় ও সচেতনমহলে লোকজনের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এই হাসপাতালে মঞ্জুরিকৃত চিকিৎসকসহ মোট ১৩৮টি পদের জনবল থাকার কথা থাকলেও পূরণ করা হয়েছিল ৯০টি পদে তাতেও বর্তমানে অতি গুরুত্বপূর্ণ ডাক্তারসহ ৪৮টি পদে দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। ফলে এই উপজেলা হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবা চরম আকার ধারণ করছে।

বর্তমানে করোনা মহামারীতে হাসপাতালটির এই দূর অবস্থার জন্য সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের চরম উদাসীনতা কারণে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে এবং সরকারি চিকিৎসা সেবার পরির্বতে নানা দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে বলে সচেতনমহলের ভাষ্য। উপজেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই হাসপাতালের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা, জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেস) সার্জারি, মেডিসিন, গাইনী, অর্থো, শিশু, চক্ষু, চর্ম ও যৌন, ইএনটি, কার্ডিও মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার (উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র) ই এম ও, আই এম ও , এ্যানেসথেটিষ্ট, প্যাথলোজিস্ট, ডেন্টাল সার্জন, সহকারী সার্জন, এম ও (ইউনানী)সহ ১৬টি পদ কাগজপত্রে থাকলেও ১৬টি বিপরীতে রয়েছে ৮ জন ডাক্তার। এরমধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) দীর্ঘদিন যাবত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতারে রয়েছেন সংযুক্তিতে। এছাড়াও সহকারী সার্জন আরেকজন রয়েছে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সংযুক্তিতে। বর্তমানে এই উপজেলা হাসপাতালটি শুধুমাত্র উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা একা। এছাড়াও সঙ্কট রয়েছে নার্স, প্রধান সহকারীর পদও রয়েছে ফাঁকা হিসাবরক্ষক নেই দীর্ঘদিন যাবত, দীর্ঘদিন যাবত পরিছন্নকর্মী না থাকায় স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা রোগীদের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। এই বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবল আহাম্মেদ চিকিৎসকসহ লোকবল সঙ্কটের কথা স্বীকার করে জানান এই বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে এবং যারা পদায়নজনিত বদলি হয়েছে তাদের এখনও ছাড়পত্র দেয়া হয়নি।

এ ব্যপারে কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবর রহমান জানান, এই সঙ্কট বিষয়গুলো নিয়ে ওপরমহলেও কথা হয়েছে বর্তমান করোনার পরিস্থিতির বিবেচনা করে যারা বদলি হয়েছে তাদের ও ছাড়পত্র এখন পযর্ন্ত দেয়া হয়নি এবং এই হাসপাতালে ইতোমধ্যে ৩ জনকে পদায়ন হয়েছে ২-১ দিনের মধ্যে আশাকরি তারা চলে আসবে বলে জানান তিনি।