বরিশালে ডায়রিয়া মহামারী রূপ নিচ্ছে

প্রতিদিন ছয় জেলায় আক্রান্ত হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার মানুষ

দক্ষিণাঞ্চলের ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনা তো দূরের কথা আক্রান্তদের সামাল দিতেই স্বাস্থ্য বিভাগকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চিকিৎসকরা দিন-রাতে এই রোগীদের জীবন বাঁচাতেই হয়রান হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে আগের দিনের ওলাওঠার (কলেরা) ভীতি দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একটি প্রতিনিধি দল বরিশাল ও বরগুনায় ডায়রিয়া উপদ্রুত এলাকায় বিভিন্ন উৎসের পানি এবং রোগীর মল নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা করে তাতে ডায়রিয়ার জীবাণুর অস্তিত্ব পেয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামীণ জনপদে দৈনন্দিন ঘর গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত পানিতে ডায়রিয়ার জীবাণু পাওয়া গেছে। এছাড়াও পানি ও রোগীর মলে শনাক্ত হয়েছে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া। এ ব্যাকটেরিয়ার কারণে ডায়রিয়া মারাত্মক আকার ধারণ করছে। বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করার এটাই কারণ বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের গবেষক দল।

প্রতিদিনই বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় প্রায় দেড় হাজার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতিদিনই জেলা-উপজেলায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়ার রোগী। শুক্রবার বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালসহ বিভাগের ৬ জেলায় নতুন করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৪২ জন। বৃহস্পতিবার ৬ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫৪২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ভোলা জেলায় ৩৭৮ জন। গত ৭ দিনে ৬ জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ১১৫ জন। এর বিপরীতে সুস্থ হয়েছেন ৮ হাজার ৬৮৮ জন রোগী। তবে শনিবার আক্রান্তের সংখ্যা কম বলে সরকারিভাবে বলা হয়েছে।

প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে জেলা সদর ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স কর্তৃপক্ষের। পর্যাপ্ত শয্যা, ওষুধ ও আইভি স্যালাইন না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। হঠাৎ করে ডায়রিয়ার রোগী বাড়তে থাকায় দিশেহারা অবস্থা বিভাগীয় ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের। পরিস্থিতি সামাল দিতে বরিশালসহ অপর ৫ জেলায় কাজ করছে ৪০৬টি বিশেষ মেডিকেল টিম। উপরে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের যে হিসাবটি দেয়া হয়েছে তা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তিদের উপর নির্ভর করে করা হয়েছে। যারা বাসায় ব্যক্তিগত চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের পরিসংখ্যানটি এর মধ্যে ধরা হয়নি। তবে চিকিৎসকদের মতে যাদের আর্থিকভাবে সামর্থ্য আছে তারা হাসপাতালে না এসে ব্যক্তিগত উদ্যোগে চিকিৎসা নেয়ায় প্রকৃত আক্রান্ত অনেক বেশি।

বরিশাল বিভাগ তথা দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার বর্তমান অবস্থাকে মহামারী বলা যায় কিনা জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিকে মহামারী বলতে চাই না। তবে প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (অব.) ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, মহামারীর সজ্ঞা অনুযায়ী গত বছরের এই সময়ের চেয়ে যদি এ বছর রোগী বেশি হয় তাহলে সেটাকে মহামারী বলা যায়। ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, যতদূর জানি এ বছর ডায়রিয়ার রোগী গতবারের থেকে দ্বিগুণেরও বেশি। তাই ডায়রিয়ার এই পরিস্থিতিকে অবশ্যই মহামারী বলা যায়। বরিশালের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. মিজানুর রহমান বলেছেন, ডায়রিয়ার বর্তমান অবস্থা মহামারীর শামিল।

এদিকে আইইডিডিসিআরের ৬ সদস্যের গবেষক দল গত ১৯ এপ্রিল থেকে বরিশাল, বরগুনার প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করেছেন। তারা বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে রোগীদের মল, বিভিন্ন উৎসের পানির নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনায় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করেছেন। একই সঙ্গে মানুষের খাদ্যাভাস ও জীবনযাপনে নানা বিষয় সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন। এ গবেষক দলে রয়েছেন ৩ জন রোগতত্ত্ববিদ ও ৩ জন কারিগরি সহায়ক। নেতৃত্বে আছেন রোগতত্ত্ববিদ জাহিদুর রহমান। প্রতিনিধি দলের রোগতত্ত্ববিদ সুব্রত মালাকার বলেন, আমরা ডায়রিয়ার উৎস বা কারণ খুঁজতে কাজ করছি। সংগ্রহ করা নমুনা ঢাকায় অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বোঝা যাবে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার প্রকৃত কারণ।

আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দল প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি সুপারিশও পাঠিয়েছে। সুপারিশগুলোর অন্যতম হচ্ছে- খাওয়ার ও ঘর গৃহস্থালির কাজে নিরাপদ পানি ব্যবহার নিশ্চিত করা, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় গভীর নলকূপের সংখ্যা বাড়ানো, খাল-নদীর পানি ফুটিয়ে অথবা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিয়ে পানি নিরাপদ করে ব্যবহার করা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দলের বরাত দিয়ে জানান, বরগুনা থেকে সংগ্রহ করা পানির নমুনায় সেখানকার পুকুর ও খালের পানিতে ডায়রিয়ার জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

ডা. বাসুদেব বলেন, যে এলাকায় ডায়রিয়ায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে সেখানকার পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষা করছে আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দল। বরগুনার গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানকার ৯৪ ভাগ মানুষ নলকূপের পানি পান করলেও শতকরা ৭১ ভাগ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে খাল ও পুকুরের পানি ব্যবহার করছেন। অপরদিকে গভীর নলকূপের পানি ব্যবহারের আওতায় এসেছেন মাত্র ২০ ভাগ মানুষ। তিনি আরও বলেন, প্রধানত দুটি কারণে ডায়রিয়া ছড়াচ্ছে। গ্রামীণ জনপদের মানুষ এখনও পান্তা ভাত খাওয়ায় অভ্যস্ত। ওই পান্তা ভাতে ব্যবহার করা হয় নদী, খাল ও পুকুরের পানি। পান্তা ভাতে ব্যবহৃত ওই পানি থেকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়া।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিসংখ্যানবিদ এ এস এম আহসান কবির জানান, ১ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল শুক্রবার পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৪৬৮ জন। সর্বাধিক আক্রান্ত ভোলায় ৯ হাজার ৩৫৫ জন। এছাড়া বরিশাল জেলায় ৪ হাজার ৯৮৯ জন, পটুয়াখালীতে ৮ হাজার ২৯০ জন, পিরোজপুরে ৪ হাজার ২০৪ জন, বরগুনায় ৫ হাজার ৭৩৪ জন এবং ঝালকাঠী ৩ হাজার ৮৯৬ জন। আর বরিশাল বিভাগের অনুমিত সুস্থ হওয়ার সংখ্যা দেখিয়েছে ৩৫ হাজার ২২৯ জন। এ পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে জানিয়েছেন পরিসংখ্যানবিদ আহসান হাবিব। এর মধ্যে বরিশালে সর্বোচ্চ ৫ জন, পটুয়াখালীতে ৩ জন ও বরগুনায় ২ জন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র থেকে জানা যায়, প্রতিবছর এই সময়ে দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার রোগীর সংখ্যা একটু বাড়ে। তবে এবছর অন্যান্য বছরের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা দেড়-দুইগুণ বেশি। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার মধ্যে আক্রান্তের দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে ভোলা। দ্বিতীয় স্থানে পটুয়াখালী ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে বরগুনা।

অধিকাংশ ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসার প্রধান ওষুধ আইভি স্যালাইন। বরিশালসহ বিভাগে ব্যাপকহারে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে আইভি ও খাবার স্যালাইন সংকট। বরিশালে সরকারিভাবে আইভি স্যালাইনের সংকট দেখা দেয়ায় বেসরকারি পর্যায়ে ৯০ টাকার আইভি স্যালাইন এখন ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি কোন কোন স্থানে আইভি স্যালাইন পাওয়ায় যাচ্ছে না। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে দাবি করা হয়েছে, বরিশালসহ বিভাগের অপর ৫ জেলার কোথাও আইভি স্যালাইন সংকট নেই। বরিশাল জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, প্রত্যেক রোগীকে ৩-৪টি করে স্যালাইন সরবরাহ করা হয়। এর বেশি লাগলে তাদের বাইরে থেকে কেনার পরমর্শ দেয়া হয়। ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, তার হাসপাতালে আইভি স্যালাইনের তেমন সংকট নেই।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, বরিশালসহ বিভাগের কোথাও আপাতত আইভি স্যালাইন সংকট নেই। আরও ৩৫ হাজার ব্যাগ স্যালাইন ২-১ দিনের মধ্যে বরিশালে এসে পৌঁছাবে। এদিকে গত মঙ্গলবার আইভি ও খাবার স্যালাইনের সংকটের মুখে বরিশালের ৬ জেলার জন্য ৩০ হাজার খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার বরিশাল সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনদের কাছে খাবার স্যালাইন হস্তান্তর করেন বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ খাবার স্যালাইন সংগ্রহ ও বিতরণ করেছেন। বৃহস্পতিবার বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল অপসো স্যালাইনের সহযোগিতায় বরিশাল, বরগুনা ও পিরোজপুর জেলার জন্য ১ হাজার আইভি স্যালাইন বিতরণ করেছেন।

ভাণ্ডারিয়ায় পরিস্থিতির চরম অবনতি

২ জনের মৃত্যু

প্রতিনিধি, ভাণ্ডারিয়া (পিরোজপুর) জানান, পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় ডায়রিয়া পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মমতাজ বেগম (৪৫) এবং ৯ মাসের শিশুপুত্র জাহিদ হাসান মারা যান। মমতাজ বেগম দক্ষিণ ভাণ্ডারিয়া মহল্লার মো. ফজলুল হকের স্ত্রী এবং শিশু জাহিদ হাসান পার্শ্ববর্তী কাঁঠালিয়া উপজেলার দক্ষিণ চেঁচরী গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা, ডায়রিয়া রোগীর চাপে তিল ধারণের ঠাঁই নাই প্রতিটি ওয়ার্ড, মেঝে, বারান্দায় কোথাও জায়গা ফাঁকা নেই। প্রতিদিনই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ৪৫ জন রোগী। গত এক সপ্তাহে ভর্তি হয়েছে ২১৭ জন রোগী। তবে আক্রান্তদের মধ্যে শিশু, মহিলা এবং বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি। চিকিৎসকরা চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যদিকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রোগীর স্বজনরা।

ভাণ্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত নারী-শিশু-পুরুষ মিলে গত এক সপ্তাহে ২১৭ রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং একমাসে মোট ৭২৯ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড না থাকায় মেঝে, করিডর এমনকি বারান্দাসহ যে যেখানে পারছেন চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডায়রিয়া রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড না থাকায় রোগ নিরাময় ও নিয়ন্ত্রণ সহজ হচ্ছে না। চিকিৎসাধীন কয়েক রোগী জানান, হাসপাতালে রোগীর চাপ এবং বেড না পেয়ে অতিকষ্টে বাধ্য হয়ে মেঝেতে তাদের থাকতে হচ্ছে।

এতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এছাড়া হাসপাতালে টয়লেট সংখ্যা সীমিত, যা আছে তাও ব্যবহারের অনুপযোগী। টয়লেটে যাওয়ার জন্য রোগীদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। যা ডায়রিয়া রোগীদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের। রোগী সালমা বেগম জানান, সকালে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। কোন জায়গা না পেয়ে ফ্লোরে আছি। হাসপাতাল থেকে ওষুধ ও কলেরা স্যালাইন দেয়া হচ্ছে।

আরও খবর
রাশিয়ার ‘স্পুটনিক’ চীনের ‘সিনোভ্যাক ও সিনোফার্ম’ টিকা ব্যবহারের উদ্যোগ বাংলাদেশের
টাকা নেয়ার পর টিকা আটকানোর অধিকার সেরামের নেই
আজ খুলছে দোকানপাট মুভমেন্ট পাস নেয়ার অনুরোধ
ক্যান্ডির ব্যাটিং পিচে টাইগার বোলারদের হতাশার দিন
করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন সাড়ে ২১ লাখ মানুষ
সংক্রমণ হার নিচে নামলেও মৃত্যু এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে
সিন্ডিকেট, বিত্তবৈভব, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য : হেফাজত নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ, পুলিশের ভাষ্য
হেফাজতকে জঙ্গি সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধের দাবি ৫৫১ আলেমের
‘আল্লাহ আমাকে নিয়ে যান তবু আমার ছেলে ও বউয়ের প্রাণভিক্ষা দেন’
বেঁচে যাওয়ারা ভয়-আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারছে না

রবিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২১ , ১২ বৈশাখ ১৪২৮ ১২ রমজান ১৪৪২

বরিশালে ডায়রিয়া মহামারী রূপ নিচ্ছে

প্রতিদিন ছয় জেলায় আক্রান্ত হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার মানুষ

মানবেন্দ্র বটব্যাল, বরিশাল

দক্ষিণাঞ্চলের ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনা তো দূরের কথা আক্রান্তদের সামাল দিতেই স্বাস্থ্য বিভাগকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চিকিৎসকরা দিন-রাতে এই রোগীদের জীবন বাঁচাতেই হয়রান হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে আগের দিনের ওলাওঠার (কলেরা) ভীতি দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একটি প্রতিনিধি দল বরিশাল ও বরগুনায় ডায়রিয়া উপদ্রুত এলাকায় বিভিন্ন উৎসের পানি এবং রোগীর মল নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা করে তাতে ডায়রিয়ার জীবাণুর অস্তিত্ব পেয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামীণ জনপদে দৈনন্দিন ঘর গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত পানিতে ডায়রিয়ার জীবাণু পাওয়া গেছে। এছাড়াও পানি ও রোগীর মলে শনাক্ত হয়েছে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া। এ ব্যাকটেরিয়ার কারণে ডায়রিয়া মারাত্মক আকার ধারণ করছে। বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করার এটাই কারণ বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের গবেষক দল।

প্রতিদিনই বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় প্রায় দেড় হাজার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতিদিনই জেলা-উপজেলায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়ার রোগী। শুক্রবার বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালসহ বিভাগের ৬ জেলায় নতুন করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৪২ জন। বৃহস্পতিবার ৬ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫৪২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ভোলা জেলায় ৩৭৮ জন। গত ৭ দিনে ৬ জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ১১৫ জন। এর বিপরীতে সুস্থ হয়েছেন ৮ হাজার ৬৮৮ জন রোগী। তবে শনিবার আক্রান্তের সংখ্যা কম বলে সরকারিভাবে বলা হয়েছে।

প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে জেলা সদর ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স কর্তৃপক্ষের। পর্যাপ্ত শয্যা, ওষুধ ও আইভি স্যালাইন না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। হঠাৎ করে ডায়রিয়ার রোগী বাড়তে থাকায় দিশেহারা অবস্থা বিভাগীয় ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের। পরিস্থিতি সামাল দিতে বরিশালসহ অপর ৫ জেলায় কাজ করছে ৪০৬টি বিশেষ মেডিকেল টিম। উপরে ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের যে হিসাবটি দেয়া হয়েছে তা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ব্যক্তিদের উপর নির্ভর করে করা হয়েছে। যারা বাসায় ব্যক্তিগত চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের পরিসংখ্যানটি এর মধ্যে ধরা হয়নি। তবে চিকিৎসকদের মতে যাদের আর্থিকভাবে সামর্থ্য আছে তারা হাসপাতালে না এসে ব্যক্তিগত উদ্যোগে চিকিৎসা নেয়ায় প্রকৃত আক্রান্ত অনেক বেশি।

বরিশাল বিভাগ তথা দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার বর্তমান অবস্থাকে মহামারী বলা যায় কিনা জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিকে মহামারী বলতে চাই না। তবে প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (অব.) ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, মহামারীর সজ্ঞা অনুযায়ী গত বছরের এই সময়ের চেয়ে যদি এ বছর রোগী বেশি হয় তাহলে সেটাকে মহামারী বলা যায়। ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, যতদূর জানি এ বছর ডায়রিয়ার রোগী গতবারের থেকে দ্বিগুণেরও বেশি। তাই ডায়রিয়ার এই পরিস্থিতিকে অবশ্যই মহামারী বলা যায়। বরিশালের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. মিজানুর রহমান বলেছেন, ডায়রিয়ার বর্তমান অবস্থা মহামারীর শামিল।

এদিকে আইইডিডিসিআরের ৬ সদস্যের গবেষক দল গত ১৯ এপ্রিল থেকে বরিশাল, বরগুনার প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করেছেন। তারা বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে রোগীদের মল, বিভিন্ন উৎসের পানির নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনায় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করেছেন। একই সঙ্গে মানুষের খাদ্যাভাস ও জীবনযাপনে নানা বিষয় সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন। এ গবেষক দলে রয়েছেন ৩ জন রোগতত্ত্ববিদ ও ৩ জন কারিগরি সহায়ক। নেতৃত্বে আছেন রোগতত্ত্ববিদ জাহিদুর রহমান। প্রতিনিধি দলের রোগতত্ত্ববিদ সুব্রত মালাকার বলেন, আমরা ডায়রিয়ার উৎস বা কারণ খুঁজতে কাজ করছি। সংগ্রহ করা নমুনা ঢাকায় অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বোঝা যাবে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার প্রকৃত কারণ।

আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দল প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি সুপারিশও পাঠিয়েছে। সুপারিশগুলোর অন্যতম হচ্ছে- খাওয়ার ও ঘর গৃহস্থালির কাজে নিরাপদ পানি ব্যবহার নিশ্চিত করা, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় গভীর নলকূপের সংখ্যা বাড়ানো, খাল-নদীর পানি ফুটিয়ে অথবা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিয়ে পানি নিরাপদ করে ব্যবহার করা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দলের বরাত দিয়ে জানান, বরগুনা থেকে সংগ্রহ করা পানির নমুনায় সেখানকার পুকুর ও খালের পানিতে ডায়রিয়ার জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

ডা. বাসুদেব বলেন, যে এলাকায় ডায়রিয়ায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে সেখানকার পানি সংগ্রহ করে পরীক্ষা করছে আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দল। বরগুনার গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানকার ৯৪ ভাগ মানুষ নলকূপের পানি পান করলেও শতকরা ৭১ ভাগ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে খাল ও পুকুরের পানি ব্যবহার করছেন। অপরদিকে গভীর নলকূপের পানি ব্যবহারের আওতায় এসেছেন মাত্র ২০ ভাগ মানুষ। তিনি আরও বলেন, প্রধানত দুটি কারণে ডায়রিয়া ছড়াচ্ছে। গ্রামীণ জনপদের মানুষ এখনও পান্তা ভাত খাওয়ায় অভ্যস্ত। ওই পান্তা ভাতে ব্যবহার করা হয় নদী, খাল ও পুকুরের পানি। পান্তা ভাতে ব্যবহৃত ওই পানি থেকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়া।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিসংখ্যানবিদ এ এস এম আহসান কবির জানান, ১ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল শুক্রবার পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৪৬৮ জন। সর্বাধিক আক্রান্ত ভোলায় ৯ হাজার ৩৫৫ জন। এছাড়া বরিশাল জেলায় ৪ হাজার ৯৮৯ জন, পটুয়াখালীতে ৮ হাজার ২৯০ জন, পিরোজপুরে ৪ হাজার ২০৪ জন, বরগুনায় ৫ হাজার ৭৩৪ জন এবং ঝালকাঠী ৩ হাজার ৮৯৬ জন। আর বরিশাল বিভাগের অনুমিত সুস্থ হওয়ার সংখ্যা দেখিয়েছে ৩৫ হাজার ২২৯ জন। এ পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে জানিয়েছেন পরিসংখ্যানবিদ আহসান হাবিব। এর মধ্যে বরিশালে সর্বোচ্চ ৫ জন, পটুয়াখালীতে ৩ জন ও বরগুনায় ২ জন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র থেকে জানা যায়, প্রতিবছর এই সময়ে দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার রোগীর সংখ্যা একটু বাড়ে। তবে এবছর অন্যান্য বছরের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা দেড়-দুইগুণ বেশি। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার মধ্যে আক্রান্তের দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে ভোলা। দ্বিতীয় স্থানে পটুয়াখালী ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে বরগুনা।

অধিকাংশ ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসার প্রধান ওষুধ আইভি স্যালাইন। বরিশালসহ বিভাগে ব্যাপকহারে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারি হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে আইভি ও খাবার স্যালাইন সংকট। বরিশালে সরকারিভাবে আইভি স্যালাইনের সংকট দেখা দেয়ায় বেসরকারি পর্যায়ে ৯০ টাকার আইভি স্যালাইন এখন ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি কোন কোন স্থানে আইভি স্যালাইন পাওয়ায় যাচ্ছে না। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে দাবি করা হয়েছে, বরিশালসহ বিভাগের অপর ৫ জেলার কোথাও আইভি স্যালাইন সংকট নেই। বরিশাল জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, প্রত্যেক রোগীকে ৩-৪টি করে স্যালাইন সরবরাহ করা হয়। এর বেশি লাগলে তাদের বাইরে থেকে কেনার পরমর্শ দেয়া হয়। ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, তার হাসপাতালে আইভি স্যালাইনের তেমন সংকট নেই।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস বলেন, বরিশালসহ বিভাগের কোথাও আপাতত আইভি স্যালাইন সংকট নেই। আরও ৩৫ হাজার ব্যাগ স্যালাইন ২-১ দিনের মধ্যে বরিশালে এসে পৌঁছাবে। এদিকে গত মঙ্গলবার আইভি ও খাবার স্যালাইনের সংকটের মুখে বরিশালের ৬ জেলার জন্য ৩০ হাজার খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার বরিশাল সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনদের কাছে খাবার স্যালাইন হস্তান্তর করেন বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ খাবার স্যালাইন সংগ্রহ ও বিতরণ করেছেন। বৃহস্পতিবার বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল অপসো স্যালাইনের সহযোগিতায় বরিশাল, বরগুনা ও পিরোজপুর জেলার জন্য ১ হাজার আইভি স্যালাইন বিতরণ করেছেন।

ভাণ্ডারিয়ায় পরিস্থিতির চরম অবনতি

২ জনের মৃত্যু

প্রতিনিধি, ভাণ্ডারিয়া (পিরোজপুর) জানান, পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় ডায়রিয়া পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মমতাজ বেগম (৪৫) এবং ৯ মাসের শিশুপুত্র জাহিদ হাসান মারা যান। মমতাজ বেগম দক্ষিণ ভাণ্ডারিয়া মহল্লার মো. ফজলুল হকের স্ত্রী এবং শিশু জাহিদ হাসান পার্শ্ববর্তী কাঁঠালিয়া উপজেলার দক্ষিণ চেঁচরী গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা, ডায়রিয়া রোগীর চাপে তিল ধারণের ঠাঁই নাই প্রতিটি ওয়ার্ড, মেঝে, বারান্দায় কোথাও জায়গা ফাঁকা নেই। প্রতিদিনই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ৪৫ জন রোগী। গত এক সপ্তাহে ভর্তি হয়েছে ২১৭ জন রোগী। তবে আক্রান্তদের মধ্যে শিশু, মহিলা এবং বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি। চিকিৎসকরা চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন। অন্যদিকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রোগীর স্বজনরা।

ভাণ্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত নারী-শিশু-পুরুষ মিলে গত এক সপ্তাহে ২১৭ রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং একমাসে মোট ৭২৯ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড না থাকায় মেঝে, করিডর এমনকি বারান্দাসহ যে যেখানে পারছেন চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডায়রিয়া রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড না থাকায় রোগ নিরাময় ও নিয়ন্ত্রণ সহজ হচ্ছে না। চিকিৎসাধীন কয়েক রোগী জানান, হাসপাতালে রোগীর চাপ এবং বেড না পেয়ে অতিকষ্টে বাধ্য হয়ে মেঝেতে তাদের থাকতে হচ্ছে।

এতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এছাড়া হাসপাতালে টয়লেট সংখ্যা সীমিত, যা আছে তাও ব্যবহারের অনুপযোগী। টয়লেটে যাওয়ার জন্য রোগীদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। যা ডায়রিয়া রোগীদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের। রোগী সালমা বেগম জানান, সকালে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। কোন জায়গা না পেয়ে ফ্লোরে আছি। হাসপাতাল থেকে ওষুধ ও কলেরা স্যালাইন দেয়া হচ্ছে।