সিন্ডিকেট, বিত্তবৈভব, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য : হেফাজত নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ, পুলিশের ভাষ্য

‘সিন্ডিকেটের’ মাধ্যমে ওয়াজ নিয়ন্ত্রণ, মাদ্রাসার গরিব ছাত্রদের ‘ব্যবহার করে বিত্তবৈভবের মালিক’ এবং ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ কর্মকাণ্ড পরিচালনা-হেফাজতে ইসলামের গ্রেপ্তার করা নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্তে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি পুলিশের। তারা বলেন, ‘রাবেতাতুল ওয়ায়েজীন’ নামে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলাম সারাদেশে ওয়াজ মাহফিল নিয়ন্ত্রণ করছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম তার কার্যালয়ে অনির্ধারিত এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। ‘সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আয়োজকদের বাধ্য করা হয় হেফাজত নেতাদের বিভিন্ন ওয়াজে নেয়ার জন্য। এর মাধ্যমে তারা উগ্রবাদ প্রচার করতে পারছে,’ বলেন মাহবুব আলম।

সম্প্রতি হেফাজতের ১৪ জন কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান ডিবির এই যুগ্ম কমিশনার। নাশকতার সাম্প্রতিক ১২টি মামলা এবং ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের ঘটনায় হওয়া ৫৩টিসহ মোট ৬৫টি মামলার তদন্ত করছে ডিবি।

মাহবুব আলম বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ‘কোরআন-হাদিস বোঝেন, জানেন এমন তদন্ত কর্মকর্তাদের’ নিয়ে তিনটি দল গঠন করে দেয়া হয়েছে। ‘তদন্তে নাশকতার মূল উদ্দেশ্য কী, কারা করছে, কেন করছে, তা জানার চেষ্টা করছেন তারা।’

হেফাজতের অর্থের জোগানদাতা কারাÑ এ প্রশ্নে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা (হেফাজত নেতারা) বলেছেন বাইরে থেকেই বেশিরভাগ অর্থ আসে। রাজনৈতিক দল থেকে এ সময় কোন ফান্ড নেয়া হয়েছে কিনা, এ ধরনের কোন বিষয় এখনও পাওয়া যায়নি।’ হেফাজতের সাম্প্রতিক আন্দোলনে বাইরে থেকে অর্থ এসেছে কিনা, সে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখনও নিশ্চিত নই।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারাদেশে যে নাশকতা হয়েছে তাতে হেফাজত ছাড়াও বহুলোক জড়িতÑ এমন তথ্য জিজ্ঞাসাবাদে হেফাজত নেতারা দিয়েছেন বলেন মাহবুব।

তিনি বলেন, হেফাজত নিজেদের অরাজনৈতিক দল দাবি করলেও তাদের অনেকেই কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।’ বলেন মাহবুব।

ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হয়ে হেফাজত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। অনেকেই মনে করেন যে, হেফাজত ‘একমাত্র প্ল্যাটফর্ম যেটা ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি’ হিসেবে কাজে লাগতে পারে। ‘মাদ্রাসার ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অপচেষ্টা করছে বা নাশকতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এটা তদন্তে অনেকটাই পরিষ্কার হয়েছে,’ বলেন মাহবুব।

এসব তথ্য জিজ্ঞাসাবাদ করে পেয়েছেন বলে জানান ডিবির এই যুগ্ম কমিশনার। ২০১৩ সালে বাবুনগরী ‘১৬৪ ধারায় জবানবন্দী’ দিয়েছিলেন। কিছুদিন আগে মুফতি ফখরুল ‘জবানবন্দী’ দিয়েছেন। সেখানে পুলিশ এসব ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরেছে বলে বলছে পুলিশ।

মাহবুব আলম বলেন, রাজনৈতিক দল তাদের এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়ন করতে চায় হেফাজতকে দিয়ে। ‘হেফাজত এমনই এক সংগঠন যার ডাকে মাদ্রাসার ছাত্রদের আনা ও ব্যাপক লোক সমাগম সম্ভব হয়।’

উগ্রবাদের সঙ্গে জড়িতরা সম্প্রতি যে নাশকতা করেছে সেগুলোর ভিডিও ফুটেজ, অডিও কথোপকথন এবং জিজ্ঞাসাবাদে যে তথ্যগুলো এসেছে সেগুলোর মাধ্যমে সাক্ষ্য-প্রমাণের চেষ্টা চলছে বলেও জানান ডিবির এই কর্মকর্তা। মাদ্রাসার গরিব ছাত্রদের ব্যবহার করে হেফাজত নেতারা বিপুল পরিমাণ বিত্তবৈভব ও গাড়ি-বাড়ি করেছেন’- তদন্তে এসব বিষয়ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

রবিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২১ , ১২ বৈশাখ ১৪২৮ ১২ রমজান ১৪৪২

সিন্ডিকেট, বিত্তবৈভব, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য : হেফাজত নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ, পুলিশের ভাষ্য

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

‘সিন্ডিকেটের’ মাধ্যমে ওয়াজ নিয়ন্ত্রণ, মাদ্রাসার গরিব ছাত্রদের ‘ব্যবহার করে বিত্তবৈভবের মালিক’ এবং ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ কর্মকাণ্ড পরিচালনা-হেফাজতে ইসলামের গ্রেপ্তার করা নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্তে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি পুলিশের। তারা বলেন, ‘রাবেতাতুল ওয়ায়েজীন’ নামে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলাম সারাদেশে ওয়াজ মাহফিল নিয়ন্ত্রণ করছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম তার কার্যালয়ে অনির্ধারিত এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। ‘সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আয়োজকদের বাধ্য করা হয় হেফাজত নেতাদের বিভিন্ন ওয়াজে নেয়ার জন্য। এর মাধ্যমে তারা উগ্রবাদ প্রচার করতে পারছে,’ বলেন মাহবুব আলম।

সম্প্রতি হেফাজতের ১৪ জন কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান ডিবির এই যুগ্ম কমিশনার। নাশকতার সাম্প্রতিক ১২টি মামলা এবং ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের ঘটনায় হওয়া ৫৩টিসহ মোট ৬৫টি মামলার তদন্ত করছে ডিবি।

মাহবুব আলম বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ‘কোরআন-হাদিস বোঝেন, জানেন এমন তদন্ত কর্মকর্তাদের’ নিয়ে তিনটি দল গঠন করে দেয়া হয়েছে। ‘তদন্তে নাশকতার মূল উদ্দেশ্য কী, কারা করছে, কেন করছে, তা জানার চেষ্টা করছেন তারা।’

হেফাজতের অর্থের জোগানদাতা কারাÑ এ প্রশ্নে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা (হেফাজত নেতারা) বলেছেন বাইরে থেকেই বেশিরভাগ অর্থ আসে। রাজনৈতিক দল থেকে এ সময় কোন ফান্ড নেয়া হয়েছে কিনা, এ ধরনের কোন বিষয় এখনও পাওয়া যায়নি।’ হেফাজতের সাম্প্রতিক আন্দোলনে বাইরে থেকে অর্থ এসেছে কিনা, সে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখনও নিশ্চিত নই।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারাদেশে যে নাশকতা হয়েছে তাতে হেফাজত ছাড়াও বহুলোক জড়িতÑ এমন তথ্য জিজ্ঞাসাবাদে হেফাজত নেতারা দিয়েছেন বলেন মাহবুব।

তিনি বলেন, হেফাজত নিজেদের অরাজনৈতিক দল দাবি করলেও তাদের অনেকেই কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।’ বলেন মাহবুব।

ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হয়ে হেফাজত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। অনেকেই মনে করেন যে, হেফাজত ‘একমাত্র প্ল্যাটফর্ম যেটা ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি’ হিসেবে কাজে লাগতে পারে। ‘মাদ্রাসার ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অপচেষ্টা করছে বা নাশকতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এটা তদন্তে অনেকটাই পরিষ্কার হয়েছে,’ বলেন মাহবুব।

এসব তথ্য জিজ্ঞাসাবাদ করে পেয়েছেন বলে জানান ডিবির এই যুগ্ম কমিশনার। ২০১৩ সালে বাবুনগরী ‘১৬৪ ধারায় জবানবন্দী’ দিয়েছিলেন। কিছুদিন আগে মুফতি ফখরুল ‘জবানবন্দী’ দিয়েছেন। সেখানে পুলিশ এসব ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরেছে বলে বলছে পুলিশ।

মাহবুব আলম বলেন, রাজনৈতিক দল তাদের এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়ন করতে চায় হেফাজতকে দিয়ে। ‘হেফাজত এমনই এক সংগঠন যার ডাকে মাদ্রাসার ছাত্রদের আনা ও ব্যাপক লোক সমাগম সম্ভব হয়।’

উগ্রবাদের সঙ্গে জড়িতরা সম্প্রতি যে নাশকতা করেছে সেগুলোর ভিডিও ফুটেজ, অডিও কথোপকথন এবং জিজ্ঞাসাবাদে যে তথ্যগুলো এসেছে সেগুলোর মাধ্যমে সাক্ষ্য-প্রমাণের চেষ্টা চলছে বলেও জানান ডিবির এই কর্মকর্তা। মাদ্রাসার গরিব ছাত্রদের ব্যবহার করে হেফাজত নেতারা বিপুল পরিমাণ বিত্তবৈভব ও গাড়ি-বাড়ি করেছেন’- তদন্তে এসব বিষয়ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।