বেঁচে যাওয়ারা ভয়-আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারছে না

আরমানিটোলার ‘হাজী মুসা ম্যানশনে’ অগ্নিকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো ঘটনার দু’দিন পরও আগুনের ভয়-আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় অগ্নিদগ্ধ ভবনটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। নিজেদের রুমে প্রবেশ করার জন্য ওই ভবনের অনেক বাসিন্দা জড়ো হয়েছেন।

সংবাদ প্রতিনিধির কথা হয় আগের দিন রাতে আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বেচে যাওয়া কয়েকজনের সঙ্গে।

তৃতীয় তলার বাসিন্দা ছিলেন আবুল বাশার। তিনি জানান, ‘আগুন লাগার পর থেকে এখনো মনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মনে হয় যেন মৃত্যু আমাকে তাড়া করছে। গত রাতে এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলাম আজও থাকতে হবে। ঘুম নেই গোসল নেই শুধু বেঁচে আছি এই টুকুই সান্ত¡না। এই বাসায় আর থাকব না। নতুন বাসা খুঁজছি।’

অনেকের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছায়া থাকলেও আবার নতুন করে সংসার গোছানোর চেষ্টা করছেন। আগুন থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া চারতলার বাসিন্দা হেনা বেগম স্বামী-সন্তানসহ পরিবারের ৬ জন নিয়ে প্রায় এক বছর ধরে বসবাস করছিলেন ওই ভবনে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আগুন লাগার পর থেকে এখন পর্যন্ত দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি। চোখের সামনে ভেসে উঠে আগুনের সেই ভয়াবহ দৃশ্য। এখন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে বেঁচে আছি। আগুন লাগার সময় ঘর ধোঁয়ায় এত অন্ধকার হয়েছিল তখন মনে হয়েছিল এটাই হয়ত জীবনের শেষ দিন।’

এ সময় তৃতীয় তলার বাসিন্দা রাশিদা বেগম সংবাদকে তার বেঁচে যাওয়ার অভিজ্ঞতা জানালেন। তিনি বলেন, বিপদের সময় সাহস রাখতে হয় সেটা ওইদিন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। সাহস আর ধৈর্য যদি না থাকত তাহলে ওই চারজনের মতো আমরাও মারা যেতাম।

তিনি আরও বলেন, ‘যখন রাত তিনটা বাজে তখন সেহেরির রান্না করার জন্য আমি ঘুম থেকে উঠি। তখনই দেখি ধোঁয়া আর ধোঁয়া। তখন আমি আমার দুই ছেলেকে ডেকে তুলি। পরে দুই ছেলে জানালার গ্রিল ভেঙে পেছনের দিকে দিয়ে বের হই। মরণকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। আল্লাহ যেন এ রকম বিপদে আর কাউকে না ফেলেন।’

তারা অভিযোগ করেন, নিমতলী ও চুড়িহাট্টার পর সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় আরমানিটোলার ঘটনা ঘটেছে।

ওই ভবনের ৫ম তলার বাসিন্দা আবির খান সংবাদকে বলেন, ‘প্রত্যেক বছরই কোন না কোন ভবনে রাসায়নিক গুদাম থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। পুরান ঢাকায় বেশ কয়েকটি বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে এই রাসায়নিক গুদাম থেকে। ওইসব ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে আবাসিক ভবনে রাসায়নিক গুদাম বা দোকান স্থাপনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও বাস্তবে তা আজও দেখা যাচ্ছে না।’

তার অভিযোগ, আশপাশের প্রায় সব ভবনেই এ ধরনের গুদাম রয়েছে। আর কত মৃত্যু হলে আবাসিক ভবনগুলোতে রাসায়নিকের গুদাম সরানো হবে এ প্রশ্ন করেন তিনি।

আরও খবর
রাশিয়ার ‘স্পুটনিক’ চীনের ‘সিনোভ্যাক ও সিনোফার্ম’ টিকা ব্যবহারের উদ্যোগ বাংলাদেশের
টাকা নেয়ার পর টিকা আটকানোর অধিকার সেরামের নেই
আজ খুলছে দোকানপাট মুভমেন্ট পাস নেয়ার অনুরোধ
বরিশালে ডায়রিয়া মহামারী রূপ নিচ্ছে
ক্যান্ডির ব্যাটিং পিচে টাইগার বোলারদের হতাশার দিন
করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন সাড়ে ২১ লাখ মানুষ
সংক্রমণ হার নিচে নামলেও মৃত্যু এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে
সিন্ডিকেট, বিত্তবৈভব, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য : হেফাজত নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ, পুলিশের ভাষ্য
হেফাজতকে জঙ্গি সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধের দাবি ৫৫১ আলেমের
‘আল্লাহ আমাকে নিয়ে যান তবু আমার ছেলে ও বউয়ের প্রাণভিক্ষা দেন’

রবিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২১ , ১২ বৈশাখ ১৪২৮ ১২ রমজান ১৪৪২

বেঁচে যাওয়ারা ভয়-আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারছে না

গোলাম মোস্তফা

আরমানিটোলার ‘হাজী মুসা ম্যানশনে’ অগ্নিকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো ঘটনার দু’দিন পরও আগুনের ভয়-আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় অগ্নিদগ্ধ ভবনটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। নিজেদের রুমে প্রবেশ করার জন্য ওই ভবনের অনেক বাসিন্দা জড়ো হয়েছেন।

সংবাদ প্রতিনিধির কথা হয় আগের দিন রাতে আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বেচে যাওয়া কয়েকজনের সঙ্গে।

তৃতীয় তলার বাসিন্দা ছিলেন আবুল বাশার। তিনি জানান, ‘আগুন লাগার পর থেকে এখনো মনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মনে হয় যেন মৃত্যু আমাকে তাড়া করছে। গত রাতে এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলাম আজও থাকতে হবে। ঘুম নেই গোসল নেই শুধু বেঁচে আছি এই টুকুই সান্ত¡না। এই বাসায় আর থাকব না। নতুন বাসা খুঁজছি।’

অনেকের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছায়া থাকলেও আবার নতুন করে সংসার গোছানোর চেষ্টা করছেন। আগুন থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া চারতলার বাসিন্দা হেনা বেগম স্বামী-সন্তানসহ পরিবারের ৬ জন নিয়ে প্রায় এক বছর ধরে বসবাস করছিলেন ওই ভবনে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আগুন লাগার পর থেকে এখন পর্যন্ত দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি। চোখের সামনে ভেসে উঠে আগুনের সেই ভয়াবহ দৃশ্য। এখন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে বেঁচে আছি। আগুন লাগার সময় ঘর ধোঁয়ায় এত অন্ধকার হয়েছিল তখন মনে হয়েছিল এটাই হয়ত জীবনের শেষ দিন।’

এ সময় তৃতীয় তলার বাসিন্দা রাশিদা বেগম সংবাদকে তার বেঁচে যাওয়ার অভিজ্ঞতা জানালেন। তিনি বলেন, বিপদের সময় সাহস রাখতে হয় সেটা ওইদিন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। সাহস আর ধৈর্য যদি না থাকত তাহলে ওই চারজনের মতো আমরাও মারা যেতাম।

তিনি আরও বলেন, ‘যখন রাত তিনটা বাজে তখন সেহেরির রান্না করার জন্য আমি ঘুম থেকে উঠি। তখনই দেখি ধোঁয়া আর ধোঁয়া। তখন আমি আমার দুই ছেলেকে ডেকে তুলি। পরে দুই ছেলে জানালার গ্রিল ভেঙে পেছনের দিকে দিয়ে বের হই। মরণকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। আল্লাহ যেন এ রকম বিপদে আর কাউকে না ফেলেন।’

তারা অভিযোগ করেন, নিমতলী ও চুড়িহাট্টার পর সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় আরমানিটোলার ঘটনা ঘটেছে।

ওই ভবনের ৫ম তলার বাসিন্দা আবির খান সংবাদকে বলেন, ‘প্রত্যেক বছরই কোন না কোন ভবনে রাসায়নিক গুদাম থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। পুরান ঢাকায় বেশ কয়েকটি বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে এই রাসায়নিক গুদাম থেকে। ওইসব ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে আবাসিক ভবনে রাসায়নিক গুদাম বা দোকান স্থাপনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও বাস্তবে তা আজও দেখা যাচ্ছে না।’

তার অভিযোগ, আশপাশের প্রায় সব ভবনেই এ ধরনের গুদাম রয়েছে। আর কত মৃত্যু হলে আবাসিক ভবনগুলোতে রাসায়নিকের গুদাম সরানো হবে এ প্রশ্ন করেন তিনি।