খুলেছে বিপণিবিতান

প্রথম দিনে ক্রেতা সংকটে হতাশ বিক্রেতা

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের মধ্যে গতকাল খুলেছে দোকানপাট ও শপিংমল। ব্যবসায়ীদের লোকশান এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের ‘কঠোর’ লকডাউনের মধ্যেই খুলে দেয়া বিপণিবিতানের প্রথম দিনই শপিং মলগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতি দেখা গেছে কম।

গত ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই লকডাউনের বিধি নিষেধ গতকাল একাদশ দিনে এসে শিথিল করা হয়েছে মানুষের ‘জীবন-জীবিকার’ বিবেচনায়। এখন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার।

গতকাল সকালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শপিং মল খোলার পাশাপাশি ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ পোশাকের দোকানও চালু হয়ে গেছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় গুটিকয় বিপণিবিতান এখনও বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। বিক্রেতারা বলছেন, মার্কেটের নিয়ম শিথিল হলেও গণপরিবহন বন্ধ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ রাস্তাঘাটে বের হচ্ছে না। ফলে বিপণিবিতান খুললেও ক্রেতা সেভাবে নেই। ঈদের আগে ভালো বেচাকেনার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। বিপণিবিতান খোলার অনুমতি দেয়া হলেও বাইরে বের হতে আগের মতই ‘মুভমেন্ট পাস’ লাগবে বলে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে গতকাল ক্রেতা কিংবা বিক্রেতা কাউকেই মুভমেন্ট পাসের জন্য আটকাতে দেখা যায়নি।

সকালে রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, এলিফেন্ট রোড, নিউমার্কেট এলাকার বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা একেবারেই কম। অধিকাংশ মার্কেটে বিক্রেতারা দোকান পরিষ্কার আর পণ্য গোছগাছ করে সময় কাটাচ্ছেন। মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটির পাশে টোকিও স্কয়ারের বিভিন্ন ফ্লোরে প্রসাধনী, শাড়ি, কাপড়ের দোকানগুলোতে দেখা গেল কর্মচারীরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যস্ত। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হাত পরিষ্কার করার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

এ মার্কেটের একটি প্রসাধনীর দোকানের মালিক সালাম বলেন, ‘এখন আর কী বেচাকেনা হবে বলেন, লকডাউনের ভয় তো সবার মধ্যেই আছে। চারদিকে রোগ বাড়ছে। কিন্তু আমরা তো মাসের পর মাস বসে থাকতে পারি না। যতটুকু সম্ভব নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে হবে।’

টোকিও মার্কেটের বাইরেই সড়কের ওপরে ভ্যানগাড়িতে শার্টপ্যান্টের পসরা সাজিয়ে বসেছেন মোহাম্মদ হোসেন। এমনিতে তার বেচাবিক্রি দিয়ে দিনের খরচ চলে। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে ভালোই চাপে পড়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যে বেকার ছিলাম। এখন দোকান খুলে বসছি। কিন্তু সন্ধ্যার আগেই ওঠে যেতে হবে। আমার বেচাকেনাটা হয় মূলত সন্ধ্যার পরে। গরিব মানুষজন পোশাক কেনে। মানুষের মাঝে খুব ভয় কাজ করছে। বাইরে যানবাহনও কম। বেচাকেনার অবস্থা ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে না।’

ঢাকা নিউ মার্কেটের দুই নম্বর ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই সামনে পড়বে ফ্যাশন হাউজ লিলি স্টোর। দোকানের ব্যবস্থাপক মঈনুদ্দিন বলেন, ‘মহামারীতে প্রতিবেশী দেশে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির খবর আসছে, তাতে বাংলাদেশের মানুষের মনেও ভয় কাজ করছে। ভয় আমারও আছে। তবু সরকারি অনুমতি পেয়ে সাহস করে দোকানে এলাম। কিন্তু বেচাবিক্রি নেই।’

রাজধানীর ব্যস্ত এলাকা হিসাবে পরিচিত নিউমার্কেট গতকাল ছিল অনেকটাই শান্তি। রাস্তায় সেই চিরচেনা যানজট নেই, ফুটপাত, অলিগলিতে মানুষের আনাগোনাও সেভাবে নেই। এর মধ্যেও সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় পরিবারসহ কেনাকাটা করতে এসেছিলেন মাহবুব নামের একজন। তিনি জানালেন, সরকার লকডাউন তুলে দিলেই সপরিবারে গ্রামের বাড়িতে যাবেন। সে কারণে ভিড় বাড়ার আগেই কিছু কেনাকাটা সেরে নিতে এসেছেন।

সকালে মিরপুর-২ নম্বরে মিরপুর শপিং সেন্টারে গিয়ে দেখা গেল, স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের অংশ হিসেবে সেখানে জীবাণু প্রতিরোধী ‘টানেল’ তৈরি করছে কর্তৃপক্ষ। তবে মার্কেটের ভেতরে ব্যস্ততা নেই। শপিং সেন্টারের বাইরে ফুটপাতে ভ্যানগাড়িতে কাঠের তৈজসপত্র সাজিয়ে বসেছেন জাফর আহমেদ নামের এক ফেরিওয়ালা। তিনি বলেন, ‘গত ১০ দিন ধরে একেবারে বেকার বসে আছি। এক টাকাও উপার্জন নাই। আজ সকালেই এখানে আসলাম। কিন্তু রাস্তায় তো মানুষজন নাই। বেচাকেনাও নাই।’

সোমবার, ২৬ এপ্রিল ২০২১ , ১৩ বৈশাখ ১৪২৮ ১৩ রমজান ১৪৪২

খুলেছে বিপণিবিতান

প্রথম দিনে ক্রেতা সংকটে হতাশ বিক্রেতা

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের মধ্যে গতকাল খুলেছে দোকানপাট ও শপিংমল। ব্যবসায়ীদের লোকশান এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের ‘কঠোর’ লকডাউনের মধ্যেই খুলে দেয়া বিপণিবিতানের প্রথম দিনই শপিং মলগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতি দেখা গেছে কম।

গত ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এই লকডাউনের বিধি নিষেধ গতকাল একাদশ দিনে এসে শিথিল করা হয়েছে মানুষের ‘জীবন-জীবিকার’ বিবেচনায়। এখন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার।

গতকাল সকালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শপিং মল খোলার পাশাপাশি ফুটপাতে ভ্রাম্যমাণ পোশাকের দোকানও চালু হয়ে গেছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় গুটিকয় বিপণিবিতান এখনও বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। বিক্রেতারা বলছেন, মার্কেটের নিয়ম শিথিল হলেও গণপরিবহন বন্ধ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ রাস্তাঘাটে বের হচ্ছে না। ফলে বিপণিবিতান খুললেও ক্রেতা সেভাবে নেই। ঈদের আগে ভালো বেচাকেনার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। বিপণিবিতান খোলার অনুমতি দেয়া হলেও বাইরে বের হতে আগের মতই ‘মুভমেন্ট পাস’ লাগবে বলে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে গতকাল ক্রেতা কিংবা বিক্রেতা কাউকেই মুভমেন্ট পাসের জন্য আটকাতে দেখা যায়নি।

সকালে রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, এলিফেন্ট রোড, নিউমার্কেট এলাকার বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা একেবারেই কম। অধিকাংশ মার্কেটে বিক্রেতারা দোকান পরিষ্কার আর পণ্য গোছগাছ করে সময় কাটাচ্ছেন। মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটির পাশে টোকিও স্কয়ারের বিভিন্ন ফ্লোরে প্রসাধনী, শাড়ি, কাপড়ের দোকানগুলোতে দেখা গেল কর্মচারীরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যস্ত। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হাত পরিষ্কার করার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

এ মার্কেটের একটি প্রসাধনীর দোকানের মালিক সালাম বলেন, ‘এখন আর কী বেচাকেনা হবে বলেন, লকডাউনের ভয় তো সবার মধ্যেই আছে। চারদিকে রোগ বাড়ছে। কিন্তু আমরা তো মাসের পর মাস বসে থাকতে পারি না। যতটুকু সম্ভব নিজেকে বাঁচিয়ে চলতে হবে।’

টোকিও মার্কেটের বাইরেই সড়কের ওপরে ভ্যানগাড়িতে শার্টপ্যান্টের পসরা সাজিয়ে বসেছেন মোহাম্মদ হোসেন। এমনিতে তার বেচাবিক্রি দিয়ে দিনের খরচ চলে। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে ভালোই চাপে পড়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যে বেকার ছিলাম। এখন দোকান খুলে বসছি। কিন্তু সন্ধ্যার আগেই ওঠে যেতে হবে। আমার বেচাকেনাটা হয় মূলত সন্ধ্যার পরে। গরিব মানুষজন পোশাক কেনে। মানুষের মাঝে খুব ভয় কাজ করছে। বাইরে যানবাহনও কম। বেচাকেনার অবস্থা ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে না।’

ঢাকা নিউ মার্কেটের দুই নম্বর ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই সামনে পড়বে ফ্যাশন হাউজ লিলি স্টোর। দোকানের ব্যবস্থাপক মঈনুদ্দিন বলেন, ‘মহামারীতে প্রতিবেশী দেশে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির খবর আসছে, তাতে বাংলাদেশের মানুষের মনেও ভয় কাজ করছে। ভয় আমারও আছে। তবু সরকারি অনুমতি পেয়ে সাহস করে দোকানে এলাম। কিন্তু বেচাবিক্রি নেই।’

রাজধানীর ব্যস্ত এলাকা হিসাবে পরিচিত নিউমার্কেট গতকাল ছিল অনেকটাই শান্তি। রাস্তায় সেই চিরচেনা যানজট নেই, ফুটপাত, অলিগলিতে মানুষের আনাগোনাও সেভাবে নেই। এর মধ্যেও সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় পরিবারসহ কেনাকাটা করতে এসেছিলেন মাহবুব নামের একজন। তিনি জানালেন, সরকার লকডাউন তুলে দিলেই সপরিবারে গ্রামের বাড়িতে যাবেন। সে কারণে ভিড় বাড়ার আগেই কিছু কেনাকাটা সেরে নিতে এসেছেন।

সকালে মিরপুর-২ নম্বরে মিরপুর শপিং সেন্টারে গিয়ে দেখা গেল, স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের অংশ হিসেবে সেখানে জীবাণু প্রতিরোধী ‘টানেল’ তৈরি করছে কর্তৃপক্ষ। তবে মার্কেটের ভেতরে ব্যস্ততা নেই। শপিং সেন্টারের বাইরে ফুটপাতে ভ্যানগাড়িতে কাঠের তৈজসপত্র সাজিয়ে বসেছেন জাফর আহমেদ নামের এক ফেরিওয়ালা। তিনি বলেন, ‘গত ১০ দিন ধরে একেবারে বেকার বসে আছি। এক টাকাও উপার্জন নাই। আজ সকালেই এখানে আসলাম। কিন্তু রাস্তায় তো মানুষজন নাই। বেচাকেনাও নাই।’